বাসে উঠে যাত্রী নয় লাগেজ হয়ে; ঘামে, গন্ধে মাখামাখি করে রাত নটায় বাড়ি পৌছলাম আত্মীয় পরিজনদের সাথে ঈদের খুশি ভাগাভাগি করতে। আমাদের বাড়ীর পিছনের মাঠটি যেখানে শেষ হয়েছে, যেখানে ছোটবেলায় রোজ বিকেলে ফুটবল টর্ণামেন্ট হত জাম্বুরা (ফল) দিয়ে তার শেষ মাথায় একমাত্র কুড়েঘড়ে থাকেন ন্যাংড়া দা(দা)। যিনি আমাদেক ছোটবেলায় কোলেপিঠে করে মানুষ করেছেন এবং যিনি আমাদেক শিখিয়েছেন 'সবার উপরে মানুষ সত্য' তার বিবাহযোগ্য দু'মেয়ে নিয়ে থাকেন ঐ একমাত্র কুড়েঘরটিতে। হাতমুখ ধুয়ে কোনকিছু মুখে না দিয়েই মনের টানেই ছুটে গেলাম ন্যাংড়াদা'র বাড়ী, খোজ খবর নিতে আর ঈদ মোবারক জানাতে।
ধুধু নির্জন মাঠের মধ্যিখানের ঔ নির্জন কুটিরে টিমটিমে কেরসিনের কুপির চারদিকে গোল হয়ে বসে ন্যাংড়া দা'র বৌ তার দু' কন্যাকে নিয়ে গল্প করছেন। ভাবীকে জিজ্ঞাস করলাম 'দাদা কেথায়?' নিস্প্রান গলায় ভাবী বললো কাজের জন্য কুমিল্লা গেছেন দাদা। বড় একটা ধাক্কা খেলাম। আমারা যখন সাত সমুদ্দুর পারি দিয়ে ঈদ করতে বাড়ী আসছি, এ মানুষটি তখন জীবনের প্রয়োজনে থেকে গেছেন অন্যের বাড়ীতে। ভাবীকে বললাম 'ঈদ...." কথা শেস করতে না দিয়েই ভাবী বললেন, দশ দিন আগে তিনশ' টাকা পাঠিয়েছিলেন ঈদের জন্য তার দুশো টাকা ধার শোধ করেছেন পঞ্চাশ টাকা রেখেছেন বিপদের জন্য বাকী পঞ্চাশ টাকায় ঈদের বাজার করেছেন।
ম্লান বদনে ন্যাংড়া দা'র বাড়ী থেকে ফিরছি। মনে মনে হিসাব করছি এক পোয়া চিনি পনের টাকা, এক প্যাকেট সেমাই বিশ পচিশ নাকি চল্লিশ টাকা, সেমাই রান্না করতে কী দুধ লাগে কিংবা তেজপাতা। মাথা ঘুরে উঠছে। হিসাব মিলছে না। ঈদে কী কী লাগে নতুন জামা, জুতো,পাঞ্জাবী, শাড়ী, লুংগি, টুপি, চিকন চাল, কিসমিস, লাচ্ছা, মুরগি গরু, খাসি কিংবা অন্য কিছু?