somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রনন
কবিতা একদিন ভীষণ আহত ছিল; যেন গভীর কোনো জঙ্গলে ডানা ভাঙ্গাআহত পাখিটির মতো; শাদা বকটির মতো! যেন সমুদ্রের পাড়ে পড়েথাকা আহত মাছটির মতো! প্রবল বর্ষণে উদ্ভ্রান্ত পাখির মতো;তার নীড়ের মতো

আভিজাত্য

২৮ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘থাপ্পড় দিয়া তোর বত্রিশ দাঁত ফালাইয়া দিমু হারামজাদি’ বলেই একটা চড় দিয়ে বসে মায়িশার গালে। আচমকা থাপ্পড় খেয়ে বেশ হতভম্ব সে। ফর্সা গাল একদম লাল হয়ে গেছে। গালে হাত ডলতে ডলতে দৌড়ে যায় রান্না ঘরের দিকে এবং মুহূর্তেই ফল কাটার ছুরি হাতে ফিরে এসে আঘাত করার জন্য এগিয়ে আসতেই কিছুটা পেছনে সরে যায় মাহির। ঝাপটে ধরে হাত থেকে ছুরি কেড়ে নিয়ে ছুড়ে ফেলে খাটের নিচে। মায়িশার রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে মুখ দিয়ে যে শব্দ গুলো বেরোয় তা কিছুটা গোঙ্গানির মতো শোনায়।

ছেড়ে দে হারামজাদা। খুন করে ফেলবো আজ তোকে। কুত্তার বাচ্চা আমার গায়ে হাত তুলেছিস! এত্তো বড় সাহস তোর। মাহির আরও ঝাপটে ধরে ওকে। তারপর পাজা কোলে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে বুকে উপগত হয়। কিছুক্ষণ ধস্তাধস্তি এরপর আর কোনো আর শব্দ হয় না। পুরুষ দেহের শক্তির কাছে হার মানে নারীর সমস্ত ক্রোধ। মায়িশার দেহ নিস্তেজ হয়ে পড়ে থাকে ধবধবে শাদা বিছানায়। মাহির অনেকটা বিজয়ের তৃপ্তি চোখে মুখে নিয়ে ওয়াস রুমে প্রবেশ করে এবং কিছুক্ষণ পর বেরিয়ে এসে বারান্দায় যেয়ে হুইস্কি ঢেলে নেয় গ্লাসে এরপর রকিং চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে এক চুমুকে শেষ করে দেয় পুরোটা।

রাত্রি প্রায় তিনটা বাজতে চলেছে। পাশের রুমে ষোল বছরের মেয়ে মাহি কানে হেড ফোন লাগিয়ে হিপহপ মিউজিক শুনছে আর ফেসবুকে বন্ধুর সাথে জমিয়ে চ্যাটিং করছে। বাবা মায়ের মধ্যরাতের এমন নাটকে মোটামুটি অভ্যস্ত সে। আগে খারাপ লাগত কিন্তু এখন আর লাগে না বরং ক্লাসের দিত্যকে নিয়ে বান্ধবীর সাথে কান গরম করা চ্যাটিং করতেই এখন বেশ ভালো লাগে ওর। কেমন লেডি কিলিং লুক দিত্যর! ‘ও গস, ইফ আই ক্যান লে ডাউন হিজ’ এ টুকু বলেই কেমন একটা রোমাঞ্চ অনুভব করে সমস্ত শরীরে! এক সময় সুদৃশ্য দ্বিতল বাড়িটায় আর কোনো শব্দ হয় না। নিস্তব্ধতা নেমে আসলে বোঝা যায় ঘুমিয়ে পড়েছে সবাই।

০২।

গত বছরের মাঝামাঝিতে বিদেশী আর্কিটেক্টে এনে ডিজাইন করিয়ে দেশের খ্যাতনামা নির্মাণ প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে এই দ্বিতল বাড়িটি তৈরি করা হয়েছে। পুরো বাড়িটির দেহ দামি মার্বেল পাথরে মোড়ান। বর্ষায় বৃষ্টি উপভোগ করার জন্য দামি গ্লাস দিয়ে বাড়ির সামনে ছাদ তৈরি করা হয়েছে। একপাশে দেশি-বিদেশি ফুলের বাগান তার মাঝে বসার জায়গা আর অন্য পাশে সুইমিং পুল। বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলে মনে হবে কোনো শৌখিন শিল্পী দিয়ে ভেতরটা সজ্জিত করা হয়েছে।

‘সরি মম আই ক্যান্ট টেক এনিথিং, ইটস নাইন ফিফটি! অলরেডি লেট। ইফ আই ডোন্ট লিভ জাস্ট নাউ, আই উয়িল মিস মাই ইম্পরট্যান্ট ক্লাস’ বলতে না বলতেই ওর এনড্রয়েডটা বেজে উঠে। হালো জারিন আই অ্যাম কামিং উয়িদ ইন ফিফটিন মিনিটস হানি, বলেই ফোনটা কেটে হরহর করে বেরিয়ে পড়ে মাহি। মাহির ডাকতে গিয়েও থেমে পড়ে। জুসের গ্লাসটা শেষ করার ফাঁকে মায়িশার দিকে এমন ভাবে তাকায় যেন গতরাতে কিছুই হয়নি! মায়িশার অভিব্যক্তিও তেমন।

আজ আমার গুরুত্বপূর্ণ একটা মিটিং আছে। ফিরতে রাত হবে বলেই অফিসের ব্যাগটা হাতে নিয়ে বের হয়ে এসে চড়ে বসে সদ্য কেনা বিএমডব্লিউতে। মাসের শুরুতে ভালো একটা প্রজেক্ট শেষ করছে বেশ নির্বিঘ্নে। মোটা অংকের বাণিজ্য হয়েছে। একদম ব্রান্ড নিউ কার। ভাবছে গাজীপুরে কিছু জমি কিনে আরেকটা ইন্ডাস্ট্রি করবে। রাত দেরী হওয়ার কারণ মায়িশা জানে। ভাবলেশহীন হেসে বিদায় জানালেও ওর দেরী হওয়া নিয়ে কোনো আগ্রহ নেই। সেও একটু পর বের হবে। সোসাইটি মিটিং আছে। মিসেস ফারিহাকে বলেছে ঠিক দুটোর মধ্যে লেডিস ক্লাবে উপস্থিত থাকতে। ইদানীং বেশ নাম ডাক হয়েছে মায়িশার। নারীবাদী হিসেবে নিজেকে দিনকে দিন অন্য এক উচ্চতায় নিতে পেরেছেন বলে তার ধারণা। অবশ্য কলিগ মিসেস ফারিহাও সে রকমই মনে করেন। আজ লেডিস ক্লাবে নারীর অধিকার বিষয়ে সেমিনারে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখার কথা তার। ওহ গড! গত রাতে রাইটিংটা শেষ করতে পারিনি মাহিরের জন্য, সিট! বলতে বলতে রাইটিং প্যাড তুলে ব্যাগের ভেতর ভরে নেয়, অফিসে বসে বাকিটা শেষ করবে ভেবে।

০৩।

দুপুর প্রায় দুটো হবে। আধ ঘণ্টা হয়ে গেছে মাহি ক্লাস শেষ করে বাসায় ফিরেছে। এ মুহূর্তে ও ছাড়া আর কেউ নেই। বেডরুমে বসে ভাবছে কী করবে। ভাবতে ভাবতে হঠাৎ উঠে আসে ড্রইং রুমের দিকে। সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে রিমোট হাতে নিয়ে টিভি অন করে। এ চ্যানেল সে চ্যানেল করতে করতে একটিতে স্থির হয়। ইংলিশ মুভি চলছে। বেশ কয়েকটা দৃশ্যের পর একটা দৃশ্যে ওর চোখ আটকে থাকে। ওর চাহনি বলে দেয় বেশ রোমান্টিক কোনো দৃশ্য হয়ত। শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে বুকের ওঠা নামায় তা আর বুঝতে কষ্ট হয় না। কী ভেবে হঠাৎ ওর বেডরুমে চলে এসে ফোন হাতে তুলে নেয়।

সেমিনার শুরু হয়ে গেছে। মায়িশা বেশ গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখছে। হাততালি আর শ্রোতার অভিব্যক্তি বলে দিচ্ছে বক্তব্য বেশ ভালো হচ্ছে। সেমিনারে আগত অধিকাংশই নারী। মায়িশা তার বক্তব্যের এক পর্যায়ে আগত মায়েদের উদ্দেশ্যে বলতে শুরু করেন- ছেলে মেয়েরা আবেগের বশে অপরিণত বয়সে অনেক ভুল করে বসে। বাবা মায়ের সে দিকে খুব খেয়াল রাখতে হবে। তাদের অনেক দায়িত্ব কর্তব্য। আমরা আমাদের সন্তানকে বিপথগামী হতে দিতে পারি না তাই প্রত্যেক বাবা মাকে নিজ সন্তানের প্রতি যত্নবান হতে হবে। সন্তান কী করছে, কোথায় যাচ্ছে, কার সাথে মিশছে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। বক্তব্যের এক পর্যায়ে মিসেস ফারিহার দিতে তাকান, তিনি বৃদ্ধাঙ্গুল ঊর্ধ্বে তুলে ধরলে তার বলার গতি আরও বেড়ে যায় এবং একসময় নিজের উপস্থাপনায় নিজেই মুগ্ধ হতে থাকেন।

০৪।

মাহি সেল ফোন হাতে নিয়ে ভাবছে একবার দিত্যকে ফোন করবে। মুভির দৃশ্যটা ওর মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। চোখ বুঝে সে দৃশ্যে নিজেকে একবার ভাবতে চেষ্টা করে। ভাবনার মাঝখানে কেমন একটা শিহরণ অনুভব হয় সমস্ত দেহে। ভাবতে ভাবতে ওর নম্বরে ডায়াল করে বসে। হ্যালো দিত্য তুমি কি ফ্রি আছো? এখন কি আমাদের বাসায় একটু আসতে পারবে। বাবা মা কেউ নেই। আমার একা একা ভালো লাগছে না। প্লিজ চলে আস এক্ষুণি, বলেই লাইন কেটে দিয়ে ড্রেসিং টেবিলের দিকে এগিয়ে যায়। টেবিলে বাহারি ধরণের প্রসাধনী রাখা। সব বিদেশী। ড্রেসিং টেবিলটাও বেশ দামি। বাড়ি তৈরির সময় আসবাবপত্রেরও ডিজাইন করা হয়েছিল। একবার তাকিয়েই বলা যায় বেশ আভিজাত্য আছে প্রতিটি আসবাবপত্রে। কেবল আসবাবপত্র কেন পুরো বাড়িটিই আভিজাত্যে ভরপুর।

দিত্য আসছে, চোখে মুখে তার অভিব্যক্তি। কাজল পড়ে নেয়ার এক ফাঁকে হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠে। মাহি আরেক বার আয়নায় নিজেকে দেখে নেয়। এরপর আসন্ন ঘটনার রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার হাতছানিতে দরজা খোলার উদ্দেশ্যে দুরু দুরু বুকে বেডরুম থেকে পা বাড়ায়। ওদিকে ওর মম তখনও বেশ বলিষ্ঠ কণ্ঠে সেমিনারে বক্তব্য দিয়ে চলেছেন। ছেলে মেয়েরা আবেগের বশে অপরিণত বয়সে অনেক ভুল করে বসে। বাবা মায়ের সে দিকে খুব খেয়াল রাখতে হবে। তাদের অনেক দায়িত্ব কর্তব্য। আমরা আমাদের সন্তানকে বিপথগামী হতে দিতে পারি না।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৩৪
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে মৈত্রী হতে পারে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০


২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ সুদে-আসলে সব উসুল করে নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×