আমি দেখতে শুনতে খুব একটা সুবিধার না হলেও আমার বন্ধু বান্ধব আমাকে প্রায়ই বলে আমার মধ্যে নাকি এমন অনেক কিছুই আছে যা মেয়েদের ভাল লাগার জন্য যথেষ্ঠ। আর এটাকে যদি আমি একটু কেয়ার করি তাহলে নাকি আমার পেছনে মেয়েদের লাইন পড়ে যাবে। দরকার কেবল এক্স ফ্যাক্টরের বিষয়টা ডেভেলাপ করা। অবশ্য তাদের কাছে এমনটা শুনে আমি আবেগে গদগদ হবার চাইতে শরমটাই বেশি অনুভব করি। একই শরমের কারনে আমি কোন মেয়ের কাছে আসল কথাটা মুখ ফুটে বলতে পারি নাই। এইটা আমার একটা বিশাল প্রোব্লেম। তবু এক্স ফ্যাক্টর ডেভেলাপ করার মাধ্যমে মেয়ে পটানো বিদ্যা শিখার জন্য আর নিজের শরম শরম ভাব কাটানোর জন্য উঠে পড়ে লাগলাম আমি। সেজন্য আমার কিলার আউডিয়া সম্পন্ন বন্ধু মুন্নার পরামর্শে বই-ইন্টারনেট-মুভি প্রভৃতি ব্যাপক ঘাটাঘাটি শুরু করে দিলাম। কিন্তু এক্স ফ্যাক্টর যেন আমাকে কিছুতেই স্যুট করছিল না। আমিতো সব আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। অবশেষে আমার এক বন্ধুর কাছ থেকে ঐ ‘শরম’ বিষয়কই একটা জোকস শুনে হঠাৎ আমি আশান্বিত হয়ে উঠি। জোকসটা এরকম- এক পার্টিতে একজন মহিলাকে ঘিরে অনেক পুরুষ মানুষের ভিড় ছিল। ঐ পার্টিতে মহিলার স্বামীও উপস্থিত ছিল। তো নিজের স্ত্রীকে ঘিরে এতো ভিড় দেখে মহিলার স্বামী আগ্রহী হয়ে উঠল। তিনি ভিড় থেকে বের হয়ে আসা একটা লোককে ধরলেন। তারপর তার কাছে জিজ্ঞাসা করলেন- ভাই ঘটনাটা কী? ঐ লোক বলল- কোন ঘটনা? মহিলার স্বামী বলল- ঐ মহিলাকে ঘিরে এতো ভীড় কেন? এবার ঐ ভদ্রলোক মৃদু হাসলেন। এরপর বললেন ঐ সুন্দরী মহিলার একটা বিশেষত্ব অছে। তিনি কাউকেই ‘না’ করতে পারেন না। আর এ কারনেই তার পাশে এতো ভীড়। আপনিও ট্রাই করে দেখতে পারেন! বলেই ভদ্রলোক হাঁটা ধরল। সব শুনে মহিলার স্বামীতো রীতিমতো থ’! তিনি একেবারে রেগেমেগে এগিয়ে গেলেন তার স্ত্রীর কাছে। স্ত্রীকে ভীড় থেকে টেনে নিয়ে এলেন একেবারে একটা নির্জন কোণায়। তারপর বললেন- কী ব্যপার কী শুরু করেছো তুমি? স্ত্রী কিছুই হয়নি এমন ভান করে বলল- কী করেছি আমি? স্বামী দ্বিগুন রাগ নিয়ে বলল- তুমি নাকি কাউকেই ‘না’ করতে পারো না? স্ত্রী কোন প্রকার সংকোচ ছাড়াই বলল- ও এই কথা! তুমিতো জানোই আমার মন বিশাল বড়। আর এজন্যই আমি কাউকে না করতে পারি না। স্বামী আরো রেগে বলল- তোমার সমস্যাটা কী? কেন না বলতে পারো না? এবার স্ত্রী লাজুক হেসে বলল- ‘না’ বলতে আমার শরম লাগে!
তখন মহিলার স্বামীর অবস্থা কী হয়েছিল সেটা জানতে না পারলেও একটা বিষয় আমাকে অতি উৎসাহী করে তুলল। সেটা হলো আমার শরম ভাঙ্গানোর জন্য ঐ মহিলার মতোই শরমওয়ালা ‘না’ বলতে পারে না এমন একটা মেয়ে দরকার। ব্যস, আমার সব বন্ধুদের লাগিয়ে দিলাম কাজে। যেদিন কাজে লাগালাম সেদিন বিকেলেই মুন্না এসে বলল- চল, আমার ক্যাম্পাসে চল। তোর কাজ হয়ে গেছে। আমিতো টাস্কি আর ভয় মিলিয়ে ব্যাপক শরমে পড়ে গেলাম। তবু মেয়ে বলে কথা রাজী হয়ে গেলাম। তারপর মুন্না আমাকে ‘এক্স ফ্যাক্টরের’ বিষয়াদি বুঝিয়ে বলল কিভাবে কথা বলতে হবে, কিভাবে তাকাতে হবে, কিভাবে প্রশংসা করতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। এক্স ফ্যাক্টর হলো যে অদৃশ্য কারনে মেয়েরা ছেলেদের প্রতি অল্পতেই ইমপ্রেসড হয়ে যায় সেই বিষয়গুলি। মুন্নার পরামর্শমতো এগুলো করতে গিয়ে আমি সব তালগোল পাকিয়ে ফেললাম। তারপরও কেন যেন মুন্নার ক্যাম্পাসের মেয়েটি আমার সাথে ডেটিংয়ে যেতে রাজী হয়ে গেল। খুশি মনে ক্যাম্পাস থেকে ফিরলাম। ফেরার পথে মুন্নাকে ইচ্ছামতো খাওয়ালাম। তারপর ওর নিজের দুই মোবাইলে আর ওর গার্লফ্রেন্ডের মোবাইলে টাকা ভরে দিলাম। এসবই হলো মুন্নার গিফ্ট। এবার মুন্নার কাছে প্রথম ডেটিংয়ের এক্স ফ্যাক্টর গুলো জানতে চাইলাম। মুন্না হাতখুলে খরচ করা, খাওয়ানো, গিফ্ট কিনে দেয়া এসবের কথা বললো। এও জানালো প্রথম দিকে আমি এসব করলে নাকি পরবর্তীতে সেও এসব করবে। সব শুনে আমি ব্যাংক থেকে আমার জমানো ছয় হাজার টাকা তুললাম। পরদিন ডেটিং। খুব শরম শরম লাগছিল। বসুন্ধরা সিটির আট তলায় ফুড কোর্টে বসে খুব একাও লাগছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই সাথী এসে আমার পাশে একেবারে গায়ে গা ঘেঁষে ধপ করে বসে পড়ল। আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই ও আমার হাত ধরল এবং বলল- স্যরি একটু দেরী হয়ে গেল! আমারতো তখন উড়াকে পাঙ্খা কন্ডিশন। বলতে ইচ্ছা করছিল- মুন্না, আমিতো শ্যাষ! যাই হোক এরপর সাথীর সঙ্গে খেলাম। এরপর গিফ্ট কিনে দেয়ার জন্য মার্কেটে ঢুকলাম। এটা ওটা কিনে দেয়ার পর পকেটের অবস্থা টের পেয়ে ওকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম। এরপর একটা ট্যাক্সিক্যাব ভাড়া করলাম। আট নাম্বার আর নয় নাম্বার বাস চড়তে চড়তে লাস্ট কবে ট্যাক্সিতে চড়েছিলাম মনে পড়ছিল না। তবু প্রেস্টিজ বলে কথা। ওকে ওদের বাসার পাশের গলিতে নামিয়ে দেখি পকেটে ভাড়াটাও নেই। ভাগ্য ভালো ওখানেই আমার এক কোজ বন্ধুর বাসা ছিল। ওকে ইমার্জেন্সী কল করে দু’শো টাকা ধার করে বাসায় ফিরলাম। ফিরেই সাথীকে ফোন করতে গিয়ে দেখি ওর নাম্বার বন্ধ। আজিব! চিন্তায় পড়ে গেলাম। শুয়ে শুয়ে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম মনে নেই। বিকেলে উঠে আবারো ওকে ফোন করলাম। একি! ওর নাম্বার বিজি তো বিজি। আর ইজি হচ্ছে না! মেজাজটাই বিগড়ে গেল। শালা মুন্নার নাম্বারও বিজি। সাথীকে একে একে চারটা এসএমএস করলাম। কিন্তু কোন রেসপন্স নেই। রাতেও একই দশা। কখনো ফোন বন্ধ কখনো বিজি। আবার কখনো রিং বাজছে কিন্তু রিসিভ করছে না। সিদ্ধান্ত নিলাম পরদিন ওদের ক্যাম্পাসে যাবো। মুন্নাকে জানালাম। সারাটা রাত ওকে ট্রাই করতে করতেই কেটে গেল। সকালে ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখি মুন্নার দেখা নেই। ফোনটাও বন্ধ। যাক্ শেষমেষ সাথীকে দেখে আশ্বস্ত হলাম। কিন্তু ও আমাকে দেখেও না দেখার ভান করায় ভীষণ অস্বস্তিতে পড়ে গেলাম। কী করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। এক্স ফ্যাক্টরের থিওরির কথা চিন্তা করলাম। এরই মধ্যে সাথীকে একা পেয়ে এগিয়ে গেলাম। ব্যাপক স্মার্ট হয়ে একটু ভাব নিয়ে বললাম- এক্সকিউজ মী, আমাকে চিনতে পেরেছেন? আপনি সম্ভবত আমার সাথে ডেটিংয়ে গিয়েছিলেন। একবার অথবা দু’বার। দু’বারের কথাটা একটু ভাব মারার জন্য বলেছিলাম। তৎনাৎ সাথী একটু উপহাসের সাথে বলল- একবারই হবে হয়তো। কারন একই ভুল আমি সাধারনত দুইবার করি না! শুনে আমি কী বলেছিলাম আর মনে নেই। তবে হঠাৎ করেই ঠোঁটে কোকের স্বাদ পেয়ে চোখ খুললাম। দেখি আমি মাটিতে শোয়া। মুন্না কোকের বোতল হাতে আমার সামনে। পানি ছিল না তাই চোখে মুখে কোক ঢেলে আমার জ্ঞান ফেরানো হয়েছে। আমার ভীষন শরম লাগছিল আর চোখ জ্বালা করছিল। তবু এক্স ফ্যাক্টরের প্রভাবে চোখ মেলে সাথীকে খুঁজছিলাম। কিন্তু কোথায় সাথী? সাথী আশে পাশে কোথাও নেই। আছে কেবল এক্স ফ্যাক্টর আর শরম!