somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুভি রিভিউঃ পিঁপড়াবিদ্যা

২৩ শে নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পত্রিকা কালকে প্রেসে যাবে, আজকে বস বললেন- পিঁপড়া নিয়া একটা রিভিউ লেখো। আমি কনফিজড হইলামনা। বস ব্যস্ত মানুষ, ডায়লগ কমপ্লিট করার সময় পাননা অনেক সময়। পিঁপড়াবিদ্যা নিয়ে বাংলায় রিভিউ তো লিখলাম, ইংরেজি করতে গিয়ে অবস্থা হয়ে গেল পিঁপড়াবিদ্যার মিঠুর মত। সেই বদখৎ জিনিষ আপনাদের দেখার দরকার নাই, আপ্নারা বরং বাংলাটাই পড়েন...

আমরা একটি নিরাসক্ত সময়ে প্রবেশ করেছি। পারস্পরিক বন্ধনগুলো কিছুটা আলগা।
ঠিক একারণেই হয়তো সামাজিক বন্ধন/ যোগাযোগের বিষয়টিও পরিবর্তিত হয়ে গেছে।
কিন্তু আমরা যতই সেয়ানা/ স্বয়ংসম্পূর্ণ হইনা কেন- সামাজিক যোগাযোগের একটা চাহিদা আমাদের থাকবেই। গ্লোবালাইজেশনের এই যুগে কোন চাহিদাই অপূর্ণ থাকেনা। ব্যবসায়ীরাতো রীতিমত গবেষণা চালিয়ে, সফটওয়্যার বানিয়ে চাহিদা খুঁজে বেড়াচ্ছে। অবস্থাটা এমন যে কোন পাত্থর উল্টানো আর বাকি নাই, ইংরেজিতে যাকে বলে ‘লিভিং নো স্টোন আন্টারন্ড’।
একটা মোক্ষম চাহিদা মানে একটা নতুন আইডিয়া। একটা নতুন আইডিয়া মানে একটা নতুন বিজনেসের সুযোগ। সামাজিক যোগাযোগের চাহিদা পুরনেও তাই বাজার খুব দ্রুত একগাদা ভেন্ডরে ভর্তি হয়ে গেছে। ফেসবুক, স্মারটফোন, ক্যামেরা- এই পণ্যগুলো কয়টা বেসিক কারনে মানুষ লুফে নিয়েছে- সময় কম লাগে, কষ্ট কমায় দিচ্ছে, যোগাযোগের সুবিধা!
নিউটন সাহেব বহুত আগেই ব্যাপারটি বুঝে ফেলেছিলেন- প্রতিটি ঘটনারই একটা সমান ও বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া থাকে। ফেসবুক, স্মারটফোন, ক্যামেরা- আমাদের জীবনকে সহজ করে দিয়েছে, আবার একই কারনে আমরা একা, অসামাজিক হয়ে যাচ্ছি, কবির ভাষায় যাকে বলে ‘ দ্বীপের ন্যায় বিচ্ছিন্ন’।
ফারুকিকে বর্তমানে বাংলাদেশী তরুণদের আইডল বলা হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলেন এটিই ফারুকির মূল শক্তি। আমি বলি- না! ফারুকির মূল শক্তি তার সাহস।
একটা হাইপোথিসিস দাড় করাই, বর্তমানের পরিবর্তিত সমাজ ব্যবস্থায় একজন পিতা হয়তো তার মাদকাসক্ত পুত্রকে জোর করে ঘরে আটকে রাখতে পারেন, কিন্তু তাতে কি শেষ রক্ষা হয়?
সে ছেলেটি হয়তো ঘরে বসেই অনলাইনে ইয়াবার অর্ডার দিয়ে দিচ্ছে কিংবা ফেসবুকে কোন মেয়েকে উত্যক্ত করছে। ঐশীর ঘটনা মনে আছে?
কিছু করতে না পেরে পিতাটি একসময় নিরাসক্ত হয়ে যায়। সবকিছু দেখেও না দেখার ভান করে।
আমরা এখন সেই নিরাসক্ত সময়েই প্রবেশ করছি। অন্য সবাই যখন নিরাসক্ত ভঙ্গিতে সমাজের প্রবলেমগুলা ওভারলুক করছি- তখন ফারুকি অন্ধ না হয়ে প্রলয়ের মুখোমুখি হবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
ব্যাপারটি খুব সহজ নয়। বাজারে এখন আগের সেই পেটমোটা ঢাউস সাইজের টিভিগুলো পাওয়া যায়না, সে জায়গায় এসেছে স্লিম এলইডি টিভি।
রাজা থাকেনা, রাজ্য থেকে যায়, রয়ে যায় তার প্রভাব।
সেই পেটমোটা টিভগুলা নেই, কিন্তু আমরা যে বহু আগেই সেই চৌকোণা বাক্সের ভেতর আমাদের মস্তিস্ককে বাক্সবন্দী করে ফেলেছি।
ফারুকির গল্প বলার ভঙ্গিটি স্বতন্ত্র। সমস্যা নিয়ে ঘাটাঘাটি করার কারনে অনেকে কিছু মনোটনাস সুর খুঁজে পান। সেক্সের ব্যাপারটা বারবার আসে, এতে অবশ্য দর্শক খুব বেশি আপত্তি করেনা। পিঁপড়া বিদ্যা দেখে অনেকেই কমপ্লেইন করেছেন- শেষটা গতানুগতিক। তাদের কি দোষ দিব! মানুষজন কত কি সাংঘাতিক ব্যাপার স্যাপার দেখে অভ্যস্ত। সে তুলনায় কলিজা না হোক ছোটখাট কোন একটা অর্গান নিয়ে টানাটানির দৃশ্য তো তারা আশা করতেই পারে। ।
ফারুকি এখানেও সাহস দেখিয়েছেন। শেষটা হয়েছে শেষের মতই। আমাদের মধ্যে কয়টা লোকেই বা রাতে ঘুমানোর আগে পরদিনের জন্য পজিটিভ কিছুর স্বপ্ন দেখতে পারে! সারাদিন পদে পদে অপদস্ত হয়ে রাতে ঘরে ফিরে আমরা টেনশনে থাকি- না জানি কি ঠ্যালাটা খাই আবার কালকে!
যাহোক, দর্শক হলে যায় বিনোদনের জন্য। অনেক ক্ষেত্রেই প্রত্যাশা থাকে এমন কিছু দেখার যা তারা বাস্তব জীবনে দেখেনা বা করতে পারেনা। তাদের উপরেও ঠিক চ্যাততে পারিনা।
সাহসের ব্যাপারটি গেলে আমি ধরবো টেকনিক্যাল প্রসঙ্গগুলো। স্ক্রিপ্ট লেখায় ফারুকি বরাবরই সহজাত। ডায়লগ দিয়েই মানুষকে হাঁসিয়েছেন, চমকে দিয়েছেন।
আবার সে ডায়লগের জায়গাটা ফাঁকা রেখেই বানিয়ে ফেলেছেন অন্যরকম একটা কিছু।
একটা দৃশ্যে দেখা যায় মিঠু রিমাকে একপ্রকার সরাসরিই তার অভিপ্রায়ের কথা বলে ফেললো। হতভম্ব রিমা তাকিয়ে থাকে, কিছুটা বিব্রত তো বটেই। উৎসুক দর্শকও তাকিয়ে থাকে।
চতুর ফারুকি দর্শকের ঔৎসুক্য আরো বাড়িয়ে দিলেন নিরবতার মুহূর্তটি প্রলম্বিত করে দিয়ে। নান্দনিকতার বিচারে দুর্দান্ত একটি দৃশ্য।
এমন সব সুক্ষাতিসুক্ষ ইস্যুকে মূল্যায়ন করার মত যথেষ্ট দর্শক এখনও আমাদের তৈরি হয়নি।
তবে হতাশার কিছু দেখছিনা। আমরা দেশের বিভিন্ন স্থানে পিঁপড়া বিদ্যা দেখার জন্য উপচে পড়া দর্শকের ভীড় দেখেছি। মানুষ এখনও পুরোপুরি নিরাসক্ত হয়ে যায়নি। খুব সন্তর্পণে তারা স্বপ্ন দেখে- পরিবর্তনের স্বপ্ন!
কে জানে! ফারুকিই হয়তো সেই পরিবর্তনের শুরুটা করে দিয়েছেন...


সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:০৯
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ওরা সাতজন - বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে প্রধান অন্তরায় !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে মে, ২০২৫ দুপুর ১:২৬


সংকট ঘনীভূত; ড. ইউনূস কে ঘিরে একটি চক্র সক্রিয়-শিরোনামে মানবজমিন পত্রিকা একটা এক্সক্লুসিভ রিপোর্ট করেছে। ড.ইউনূস কে ব্যবহার করে ইন্টেরিম সরকারের ভিতরে চারজন ও বাইরে তিনজন এক... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি - জুলাই বিপ্লবের বিশ্বাসঘাতক

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২৩ শে মে, ২০২৫ বিকাল ৩:০১



ডক্টর ইউনুস এই দেশের ক্ষমতায় আর থাকতে চাচ্ছেন না। তবে এর দায় ভারতের নয়, পলাতক স্বৈরাচারী আওয়ামিলীগেরও নয়। এই দায় সম্পুর্নভাবে এই দেশের বৃহত্তম রাজনৈ্তিক দল বিএনপির। অথচ... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশের দরীদ্র সমাজ এখনো ফুটপাতে ঘুমাচ্ছেন

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২৪ শে মে, ২০২৫ রাত ১:৪৪

বেরিয়েছিলাম উত্তরা যাওয়ার উদ্দেশ্যে। মানিক মানিক মিয়া এভিনিউ পার হওয়ার সময়ে, খামারবাড়ির সামনে গোল চত্বরে হঠাৎ চোখ গেলো। চত্বর ঘিরে সারি সারি মানুষ শুয়ে আছেন। গত সরকারের আমলে আমার এলাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড. ইউনূসের ক্ষমতার ভারসাম্য এবং পিনাকী গং-এর সংঘবদ্ধ মিথ্যাচার ও সামাজিক প্রতারণা

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২৪ শে মে, ২০২৫ ভোর ৫:৪৬


এই পোস্টটি মূলত ঢাবিয়ানের পোস্ট "বিএনপি - জুলাই বিপ্লবের বিশ্বাসঘাতক" এবং জুল ভার্নের পোস্ট "আব তেরা ক্যায়া হোগা কালিয়া!"-এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে লেখা।

বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সংস্কারের দাবির বিষয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওগো ভিনগেরামের নারী, তোরে সোনাল ফুলের বাজু দেবো চুড়ি বেলোয়ারি......

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ২৪ শে মে, ২০২৫ সকাল ১১:২৯


সেই ছোটবেলায় আমার বাড়ির কাছেই একটা বুনো ঝোপঝাড়ে ঠাসা জায়গা ছিলো। একটি দুটি পুরনো কবর থাকায় জঙ্গলে ছাওয়া এলাকাটায় দিনে দুপুরে যেতেই গা ছমছম করতো। সেখানে বাস করতো এলাকার শেষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×