মানুষটাকে আমার মাঝে মাঝে ভালো লাগত। কি নরম মেজাজ! কি ভদ্র! অথচ আওয়ামী লীগকে কি অবলীলায় চালিয়েছিলেন সেই কটা মাস - নেত্রীর অন্তরীন ও প্রবাসী জীবনকালে।
হারালেন স্ত্রীকে কি মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডে! চোখ দিয়ে অশ্রু নেমে এলো, কিন্তু মনে আগুন জ্বলে উঠল না ঘটনার সৃষ্টিকর্তাদের বিরুদ্ধে, যদিও সবাই জানত তারা আসলে কে।
যতবার বঙ্গভবনে গিয়েছি তাঁর নরম হাতের ছোঁয়া আর অস্ফুট শুভেচ্ছা উচ্চারণে মনে হয়েছে - সত্যি কি ভালো মানুষ! শেষদিকে চলাফেরার ক্ষমতাও প্রায় লোপ পেয়েছিল, তবু গেল কুরবানীর ঈদে খাবার ঘরে ঘুরে ঘুরে সবাইকে জিজ্ঞেস করলেন - সব ঠিক আছে?
আবার মাঝে মাঝে রাগ হয় - তিনি ছিলেন হুকুমের দাস। উচ্চতম পদে থেকেও ভৃত্যের মত আজ্ঞা পালন করতে হয়েছে। অন্যায় সব আবদার। ফাঁসীর আসামীকেও ছেড়ে দিয়েছেন। জানি সাংবিধানিক ক্ষমতা নেই। কিন্তু তার বাইরেও তো মানুষের প্রভাব বলয় থাকে। সেটি ব্যবহার করেন নি। বলতে পারতেন - মা, এটা অন্যায়, আমাকে করতে বলো না।
মানসিক অন্তরায় ছিল হয় তো। আইভী তো এই কন্যাসম মহিলারই সমবয়সী ছিলেন। এবং তাঁর ব্যক্তিত্ব ছিল আরো কঠিন। তাই বয়স, পদ, শিক্ষা, বুদ্ধি ছাপিয়ে স্মৃতি হয়ে উঠেছিল আত্মসমর্পনের
বন্ধনরজ্জু। একই সমাধিতে বিলীন। হতে পারতেন এক ঐতিহাসিক চরিত্র। কিন্তু ঊঠতে পারলেন না। বিশ বছরের অতিরিক্ত গুরুভার, দেহের চাইতেও মনে বেশি।
কি ন্যাক্কারজনক ব্যবহার মরণেও। ৪- ৪৭ মিনিটে চলে গেলেন। পরের দিন সাড়ে এগারোটায় ছুটির নির্দেশ, যখন সবাই পূর্ণ উদ্যমে কাজ শুরু করে দিয়েছে। বুদ্ধিহীনতার হাজার নজিরে আরো একটি যুক্ত হলো। তিনি দায়ী নন। তাঁকে সবাই মাফ করে দিন।