ঢাকা শহর আজকে ছিলো পানির নগরী৷ মানে পানিতে ডুবে যাওয়া নগরী৷ শহরের সব রাস্তা আজ ছিলো পানিতে নিমজ্জিত৷ ডুবন্ত শহরের ভাঙাচূড়া রাস্তায় মানুষের দুর্ভোগ ছিলো অনেক৷ সাংবাদিকেরা দাঁড়িয়ে ছিলো ডুবন্ত রাস্তার ধারে, ক্যামেরা হাতে নিয়ে৷ যখনই পানিতে অদৃশ্য কোনো ম্যানহোলে বা খোলা গর্তে উল্টে পড়েছে মহিলাবাহী কোনো রিকশা, সাংবাদিকের হাতে ধরা ক্যামেরা ক্লিক করে উঠেছে, পরদিন পত্রিকায় ছাপবে বলে৷ মানুষের দুর্দশার ছবি ছাপা হলে পত্রিকার কাটতি হয় ভালো৷ আর পানিতে উল্টে পড়া মহিলার ছবি হলে তো কথাই নেই৷
আজকে রাতেও জমাট বৃষ্টি হচ্ছে, রাস্তায় আরো পানি জমবে৷ ঘরের নিরাপদ আশ্রয়ে বসে বৃষ্টির মধুর শব্দ শুনতে কতোই না ভালো লাগে! তবু এই মধুর শব্দবাহী বৃষ্টিও দুর্ভোগ বয়ে আনে কতো মানুষের৷ যে মানুষেরা রাতের শহরের নিস্তব্ধ ফুটপাতে শুয়ে ঘুমায় তাদের শান্তির ঘুম, এমন বৃষ্টিময় মধুরাতে তারা কি করে? আকাশের দিকে চেয়ে তারা কি অভিশাপ দেয়? কাকে দেয়? "আকাশে বসত মরা ঈশ্বর নালিশ জানাবে ওরা বলো কাকে?"
মাটির নীচের যে ড্রেনেজ দিয়ে রাস্তার পানি চলে যাবার কথা, সে ড্রেনেজ এ শহরে কাজ করবে না কোনোদিন৷ সে আশা করা বৃথা৷ সে চেষ্টা না করে বরঞ্চ যদি মেশিন লাগিয়ে রাস্তার পানি টেনে নিয়ে যাওয়া যেতো, সেও হতো অনেক ভালো৷ শহরের বেশিরভাগ রাস্তার কাছেই পানি টেনে নিয়ে ফেলার মতো জলাশয় খুঁজে পাওয়া কঠিন না৷ আর এ শহর হাতের তালুর মতো ছোট৷ রাস্তা ফাঁকা থাকলে মাত্র আধা ঘন্টায় এ শহরের এক মাথা থেকে অন্য মাথায় যাওয়া যায়৷ মেশিন দিয়ে এ শহরের সব রাস্তা থেকে পানি টেনে অন্য কোথাও ফেলা বড় কোনো ব্যাপার না৷ এভাবে পানি নিস্কাশন করতে পারলে মানুষের দুর্ভোগ অনেক কমতো৷
কিন্তু তাতে কি লাভ হতো? মানুষের দুর্ভোগ কমলে কি লাভ হতো নেতা-নেত্রীদের? দুর্ভোগ আছে বলেই মানুষ তাদের স্মরণ করে, গালি দিয়ে হলেও করে৷ দুর্ভোগ না থাকলে করতো কি?
( ঈশ্বর শব্দটা আমার পছন্দ না৷ বিজাতীয় বিজাতীয় লাগে৷ গানের কথার খাতিরে শব্দটা ব্যবহার করতে হলো৷ )