আজ অনেকদিন পর বৃষ্টি নামলো৷ বৃষ্টি জিনিসটা ঘরের মধ্যে বসে থেকে দেখতে পারলে বেশ ভালো৷ যদি হাতে কোনো কাজ না থাকে, না থাকে বাইরে যাবার তাড়া, ঘরের মধ্যে বসে বাইরের ঝুম বৃষ্টির দিকে চেয়ে থাকার ভালোলাগাই আলাদা৷ দীর্ঘদিনের ভ্যাপসা গরমের পর ঝুম বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই৷ ঘরের নিরাপদ আশ্রয়ে বসে জানালা দিয়ে বাইরের উত্তুঙ্গ বৃষ্টির দিকে চেয়ে থাকা, বৃষ্টির ঝম ঝম শব্দের সাথে রবীন্দ্রনাথের বর্ষার গান (রক উইথ রবীন্দ্রনাথ দলের কারো গাওয়া হলে চলবে না), আর রান্নাঘর থেকে ভেসে আসা খিচুড়ির আশ্চর্য সুবাস, আহ! বেঁচে থাকার আনন্দই আলাদা৷
আরেকটা সময় বৃষ্টি খুব ভালো লাগে৷ আপনার হাতে কোনো কাজ নেই, প্রচণ্ড গরমে হা-পিত্যেশ করছেন, ভাবছেন যদি একটু বৃষ্টি হতো, তবে সাধ মিটায়ে শরীরটা তার তলে দিয়ে জনমের শোধ মিটিয়ে দিতেন৷ এরকম সময়ে সত্যি সত্যি বৃষ্টি নামলে লাফিয়ে সে বৃষ্টিতে ঝাঁপিয়ে পড়ার মজাই আলাদা৷ ঝুম বৃষ্টির মধ্যে জীবনের সব অনিশ্চয়তা, সব ক্ষুদ্রতা-ব্যর্থতা ডুবিয়ে দিয়ে ভিজতে ভিজতে নিজেকে বড় সুখী মনে হয়!
কিন্তু পৃথিবীটা সব সময় এতো রোমান্টিক, এতো মোহময় হয় না৷ আপনি কোথাও বের হচ্ছেন, বা ইতিমধ্যে বের হয়ে গেছেন, রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে আছেন বাস কিংবা রিকশার অপেক্ষায়, অথবা ঠিক করেছেন হেঁটেই যাবেন, তাই হেঁটেই রওনা হয়েছেন, এরকম সময়ে বৃষ্টি নামলে মেজাজটা ঠিক বৃষ্টির অনুকূলে থাকে না৷ বিশেষ করে বৃষ্টিটা যদি হয় টিপ টিপে, ফোটা ফোটা, দেখলে মনে হয় এ বৃষ্টি গায়ে লাগবে না, অথচ পথে নামলে গায়ে পায়ে সব জায়গা লেগে যায়, তবে চীৎকার করে বৃষ্টিকে অভিশাপ দিতে ইচ্ছে করে৷ আর এরকম সময়ে আপনি দেখবেন, বাস কিংবা রিকশা পৃথিবীর দুর্লভতম বস্তু৷ রিকশাগুলো কোথাও যেতে রাজি না, যদিও কচিৎ কোথাও যেতে রাজি হয়, তবে ভাড়া যা হাকবে তা শুনে আপনার দম আঁটকে আসবে৷ সি এন জি ট্যাক্সি তো মনে হয় স্বপ্নের জিনিস, শুধু স্বপ্নেই সেটা পাওয়া যায়৷ আর বাস? সেখানে যা ভীড় দেখবেন তাতে আপনার মনে হবে এই বাসে ঝোলার চাইতে গলায় দড়ি দেয়া অনেক বেশী সহজ৷
তাই পৃথিবীর সবকিছু সব সময় আমাদের মর্জি মাফিক চলে না৷ বরং বেশীরভাগ সময় তা উল্টো হয়৷ আজ অফিসে থেকে বের হওয়ার সময়ই শুরু হলো ঝড়৷ সেই সাথে বৃষ্টি৷ নিয়মানুযায়ী মেজাজটা বেশ বিগড়ে গেলো৷ মেজাজ খারাপ করে অফিসেই বসে রইলাম৷ ঘন্টা খানেক পর ঝড়টা থামতে রাস্তায় নামলাম৷ চোখে দেখে মনে হচ্ছিলো বৃষ্টি নেই, কিন্তু রাস্তায় নামতেই বুঝতে পেলাম বৃষ্টি আছে, ভালোই আছে৷ অগত্যা ভিজতে ভিজতেই রওনা হলাম৷ উপহার হিসেবে পেলাম মেগা জ্যাম৷ ঢাকা শহরের রাস্তায় জ্যাম তো থাকেই, কিন্তু তিন ফোটা বৃষ্টি পড়লেই জ্যামটা মেগা হয়ে যায়৷ বৃষ্টির সাথে জ্যামের সম্পর্ক আমি আজও বের করতে পারিনি৷ এ বড় আশ্চর্য ব্যাপার, তিন ফোটা বৃষ্টি পড়লো তো সাথে সাথে জ্যাম দ্বিগুন হয়ে গেলো! আর তিন ফোটা বৃষ্টি পড়লে ঢাকা শহরের রাস্তার অবস্থা যা দাঁড়ায় না! নরকের পচা গলিও বোধহয় এর চাইতে পরিষ্কার৷ গোটা ঢাকা জুড়ে এখন ইঁদুর মরা গন্ধের মতো পচা গন্ধ৷
কোলকাতার লেখকদের লেখায় পাওয়া যায়, কোলকাতা শহরে ব্যাঙের প্রস্তাবনাতেই জল জমে যায়৷ অর্থাৎ ব্যাঙ ডাকলেই কোলকাতার রাস্তা পানিতে ডুবে যায়৷ আর ঢাকা? না এখানে ব্যাঙের ডাকার প্রয়োজন হয় না, শুধু হা করলেই হয়ে যায়! এ বড় আজব শহর৷
সেই ব্যাঙটারে খুঁজতেছি, যে ব্যাটা আজকে সন্ধ্যায় হা করছিলো!