প্রমিথিউসের মানবপ্রীতি দেখে জিউস সহ্য করতে পারল না। সে মানবজাতিকে বিপদের ফেলার জন্য নীল নকশা আঁকতে শুরু করল। হেফেস্টাস ও এথেনাকে নির্দেশ দিল এমন একজন মানব নারী বানাতে, যে হবে প্রচণ্ড ছলাকলাময়ী। হেফেস্টাস ও এথেনা সেই অনুযায়ী একটি নারী দেহ সৃষ্টি করে তাতে প্রাণ দিল। সেই মানব নারীর নাম দেয়া হয় প্যান্ডোরা। বলা হয়ে থাকে এই প্যান্ডোরাই প্রথম মানব নারী। যাকে দেবতারা সরাসরি বানিয়েছেন। প্যান্ডোরার দেহে প্রান দেয়ার পর সকল প্রধান দেবদেবীরা প্যান্ডোরার চরিত্রের মধ্যে তাদের নিজ নিজ গুণ ও দোষ ঢুকিয়ে দেয়। তারপর প্যান্ডোরাকে পৃথিবীতে পাঠানো হয় এপিমিথিউসের সাথে বিয়ে দেবার জন্য। দেবতা হার্মিস প্যান্ডোরাকে এপিমিথিউসের কাছে নিয়ে যায়। এপিমিথিউসকে বলে দেয়া হয় যে প্যান্ডোরা হবে উর্বরতা, মানব প্রান সঞ্চারের এবং সংস্কৃতির ও সৃজনশীলতার উৎস। সেই সূত্রে বলা যেতে পারে প্রমিথিউস আগে মানুষ সৃষ্টি করলেও মানুষের মধ্যে যৌন মিলনের মাধ্যমে প্রজনন হতো না, মেয়েরা ছিলো বন্ধ্যা অথবা প্রমিথিউসের সৃষ্টি মানুষরা সবাই পুরুষ। যাই হোক প্যান্ডোরার মাধ্যমে প্রথম মানব শিশুর আগমন ঘটে পৃথিবীতে। এপিমিথিউসের সাথে প্যান্ডোরার বিয়েতে দেবতাদের তরফ থেকে একটি জার বা বয়াম (বোতল)যৌতুক হিসেবে দেয়া হয় এবং তাকে কঠোর ভাবে নির্দেশ দেয়া থাকে যে, সে যেন কোন অবস্থাতেই সেই বয়ামের মুখ না খোলে। কিন্তু হেফেস্টাস ও এথেনা প্যান্ডোরাকে তৈরির সময় এমন ভাবে তার প্রবৃত্তি সৃষ্টি করে দিল যাতে করে প্যান্ডোরা অত্যন্ত কৌতূহলী হয়। এবং তাই হল। প্রবৃত্তিকে দমন করতে ব্যর্থ হয়ে প্যান্ডোরা সেই বয়ামের মুখ খুলে ফেলল। এবং সাথে সাথেই মানবজাতির জন্য ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনে। পুরাণে কথিত আছে যে প্যান্ডরাকে যে বয়াম দেয়া হয় তার ভেতর আটকিয়ে রাখা ছিলো সকল দুঃখ-দুর্দশা, রোগ, জরা, ঝড়-ঝঞ্ঝা, হতাশা এবং দূর্ভাগ্যসহ সকল বিপদ। এবং তার সাথেই আটকে ছিলো এইসকল বিপদ থেকে মানবজাতির মুক্তির আশা। প্যান্ডোরা যখন সেই বয়ামের মুখ খুলে দেয়, এক ঝলকে সব দুঃখ-দুর্দশা বিপদ বের হয়ে পৃথিবীতে ছড়িয়ে পরে। প্যান্ডোরা যখন বুঝতে পারল সে বিরাট ভুল করে ফেলেছে ঠিক তখনই তাড়াতাড়ি করে বয়ামের মুখ বন্ধ করে দেয় প্যান্ডোরা। কিন্তু ততক্ষণে সব খারাপ এবং বিপদের জিনিষ বয়াম থেকে বের হয়ে গেছে। কেবল একটা জিনিষই বের হতে বাকি ছিলো, সেটা হল আশা। কিন্তু সেটা বের হবার আগ মুহুর্তে প্যান্ডোরা বয়ামের মুখ বন্ধ করে দেয় এবং তারপর থেকেই মানব জাতি অনন্ত
দুঃখ-দুর্দশা ভোগ করে যাচ্ছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১:১৯