ভীষণ ক্লান্ত দুটি চোখ। মুখাবয়বে ফুটে উঠেছে শত অপ্রাপ্তির ছাপ। বাবার কাছে বায়না ধরে কেনা পুতুলটি নিয়েও খেলা হয়নি বেশিদিন। হয়ে গেল সকলের চোখের জল। নাম তার রোসালিয়া লোমবার্ড।
ছোট্ট একটি কফিনে শুয়ে যুগ যুগ ধরে সকল অন্যায় আর অত্যাচারিদের নিরব উপহাস করে চলেছে সে। বুকফাটিয়ে সে হইত বলছে, হে পৃথিবীর মানুষেরা, কেন তোমাদের হৃদয় এতো কঠিন? চারপাশে অনাহারী মানুষ, এতিম দুঃখী শিশু, বার্ধক্যে ন্যুজ ভিখারি, সহায় সম্বলহীন ভাসমান পরিবার, কিন্তু কারো কেন চোখে পড়েনা তাদের? তাদের দুমুঠো অন্নের যোগান তোমাদের ভোগ বিলাসে ছেদ পড়ার জন্য যথেষ্ট নয়। তারপরও কেন তোমরা নির্বাক? একটি পুতুলকে সঙ্গী করেই যদি আমি সেই জীবন কাঁটিয়ে আসতে পারি তাহলে ঐ সব দুঃখীদের দিকে চেয়ে তোমাদের হরেক বাহারি খাবারের এক টুকরোর মায়াও কেন ত্যাগ করতে পারনা? তোমাদের নিরবতা ভাঙতে আরও কতকাল আমাকে বোবা কান্নায় জল ঝরাতে হবে।
পুনশ্চঃ রোসালিয়া লোমবার্ড ১৯১৮ সালে নিউমোনিয়া হয়ে মারা যায়। তার মৃত্যুর পর তার বাবা জেনারেল লোমবার্ড ভীষণ ভাবে ভেঙ্গে পরেন এবং তার মেয়ের মৃত দেহ সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নেন। পরে মেয়েটিকে মমি বানিয়ে সিসিলির ভূগর্ভস্থ সমাধি ক্ষেত্রের গভীরে একটি ছোট কাঁচের কফিনে করে রেখে দেয়া হয়। যুগের পর যুগ পেরিয়ে যাওয়ার পরও আশ্চর্যজনকভাবে তার দেহটি রয়ে যায় প্রায় অক্ষত। তাই তার নাম দেয়া হয় "স্লিপিং বিউটি"।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০১২ রাত ২:৫০