স্কুল জীবনে একজনের কাছ থেকে একটি টিয়া এনেছিলাম। একদম পিচ্ছি। ভালো করে হাটতেই পারেনা উড়তে পারবে কোথা থেকে। তাই তাকে বলতে পারলাম না, যা উড়ে যা, তোকে খাঁচায় বন্দী করে রাখতে ইচ্ছে করছে না। কারণ বন্দী করে রাখতে হয় বলেই পাখি পোষতে আমার ইচ্ছে করত না।
যাই হোক, সেই পিচ্ছি কে খাঁচায় রাখতাম শুধুমাত্র রাতের বেলা, বিড়ালের ভয়ে। বাকি সময় আমার কাছেই থাকত। মাঝে মাঝে পায়ে রশি ও বেধে দিতাম। তার পেট কখনই খালি হতে দিতাম না। এমনকি তাকে বাড়ীর পাশের পাকা ধানের ক্ষেতে নিয়ে গিয়েও ধান খাওয়াতাম। ক্ষেতে অনেক গুলো টিয়ার ঝাঁক দেখে নিশ্চয় তার মন খারাপ হতো।
একটু বড় হওয়ার পর নিয়ম করে তাকে প্রতিদিন বাড়ীর উঠোনে উড়া শেখাতাম। কিছু দূর গিয়েই ধপাশ !
সেদিন বিকেলেও তাকে দুহাতে শুন্যে ভাসিয়ে দিয়ে বললাম, যা মুক্ত হাওয়া খেয়ে আয়। শরীরের সব শক্তি ঢেলে দিয়ে সে উড়তে লাগল। কিছুদূর যেতেই পরি পরি অবস্থা। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে সে পড়ল না ! সেভাবেই উড়ে চললই তো চলল। একসময় গাছপালা, ক্ষেত, খাল পেরিয়ে চলে গেল আমার দৃষ্টির বাইরে।
নাহ, সে আর ফিরে আসেনি। অনেক বিকেল তার পথ চেয়ে কাটিয়েছি। যদি সে ফিরে আসে।ঐ সব সোনালি রোদের বিকেলে সে হয়ত মনের আনন্দে ধান খেত। অথবা অনেক গুলো টিয়ার সাথে উড়ে বেড়াত যেখানে খুশি। এরপর বছরের পর বছর কেটে গেল কিন্তু সে আর আসেনি।
সে চলে যাওয়ার পর আমার আর পাখি পোষা হয়নি। অসীম এই আকাশে উড়ে চলার ক্ষমতা যার তাকে ছোট্ট একটি খাঁচায় বন্দী করে রাখতে আমি চাইনা। বন্দিত্বের কষ্ট খুবই বেদনাদায়ক। চোখের জলে হয়না তার লাগব।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মে, ২০১২ রাত ১:০৭