পেশাগত ঝুঁকির দায়
হাসপাতালে ১০০ ঘন্টা
প্রতিটি পেশারই একটি বা একাধিক বিশেষ ঝুঁকি রয়েছে। যুদ্ধ করতে গেলে মৃত্যুর ঝুঁকি, খেলতে গেলে ভাঙার ঝুঁকি, চিকিৎসকের রয়েছে- নানা রোগ বালাইয়ে আক্রমণের, সা্ংবাদিকদের আছে বিরাগভাজন হওয়ার ঝুুঁকি বা গুম হওয়ারও ঝুঁকি। প্রতিটি মানুষেরই বসবাস বিপদের মাঝে- ঝুঁকির মাঝে।
শিক্ষকতা করার কারণে কিছু ঝুঁকি একেবারে নাই তাতো নয়, পরীক্ষার হলে নকল থামাতে গিয়েও কতে ধরনের বিপদের আশংকা- কুষ্টিয়া ও কেরানীগঞ্জ থেকে যুদ্ধশেষে ফিরে আসার গল্পও এখনো স্মৃতিতে অম্লান।
কিন্তু মাটি ও মানুষের কাজে বিপদ বা ঝুঁকি? সড়ক দূর্ঘটনা ছাড়া আর কোনোটার কথা কখনো মনে হয় নি। সেটি তো মাটি ও মানুষের কারণ ছাঁড়াও হতে পারে।
২০ জুন শুক্রবার সন্ধ্যায় যখন হাসপাতাল গেলাম প্রায় অজ্ঞান অবস্থায় তখনও আমার পেশাগত কাজে একটি লুকানো ঝুঁকি বা বিপদ আছে যা কখনো ভাবিনি।
২০ তারিখ শুক্রবার বিকেল থেকেই শ্বাস কষ্ট শুরু হয়। আসলে তারো দুই দিন আগে থেকেই কিছু কিছু শ্বাসকষ্ট ছিল। দীর্ঘ ৩৫-৪০ বছরের ধুমপান বছর খানেক আগে ছেড়ে দেওয়ার পর ফুসফুস যে তার দায় বহন করছিল সেটা মনে রেখেই ভাবছিলাম- শ্বাসকষ্টের কথা। ইনহেলার নিতাম, প্রয়োজনে নেবুলাইজরও ব্যবহার করতাম। এর ফলে বিপদটা কেটেই যেতো। ১৯ জুন বৃষ্টিতে ভিজে গেলাম মহাখালী থেকে বাসায় আসতে। রাতে আবার এক লাইভ অনুষ্ঠান ছিল যমুনা টিভিতে। আগের দিনের ঠান্ডা, বৃহস্পতিবারের বুস্টার চাপ আর শুক্রবার পর্যন্ত টিকলো না। হাসপাতালের আইসিইউ পর্যন্ত যেতে হলো। প্রচন্ড শ্বাসকষ্টে শরীর তুলতে পারছিলাম না। বাসায় ছোট খাটো একটি মিটিং ছিল। উপস্থিত ছিল বন্ধুরা। আমার ছোট মামাও সপরিবারে আমার বাসায়। অনেকটা তার এবং স্ত্রীর চাপেই সব মিটিং ভেঙ্গে হাসপাতালে যাওয়া। সঙ্গী হলো বন্ধুরাও। ডাক্তারদের মত- আর ৫/১০ মিনিট দেরী হলেেই নাকি নিয়ন্ত্রণ করা যেতো না।
গল্পটা শেষ নয়। আসলে এ্যাজমা নয়, এলার্জি নয়, আসল কারণ- অত্যধিক ভ্রমণজনিত কারণে শ্বাস নালিতে ও ফুসফুসে ধূলাবালির আস্তরণ। গত ৩২ বছরে মাটি ও মানুষের কাজে কতটা পথ ঘুরেছি, হাজার মাইল ভ্রমণ, কৃষকের মাঠে- তাঁর উঠোনে নানা তৎপরতা এসব কাজে কিছু ধুলোবালি বুকে ঢুকবে না তাতো নয়! সিটি স্ক্যানে তার কিছু নমুনা পাওয়া গেল- এর সাথে ধূমপানের প্রভাব তো ছিল। আর পরিবেশগত বিপত্তি তো ছিল। সব দিক থেকে সাঁড়াশি আক্রমণ এলে নিজেকে বাঁচানো তো আসলেই কষ্ট।
দীর্ঘ ১০০ ঘন্টা হাসপাতালে কাটিয়ে ফিরে এলাম বাসায়।
ডাক্তার বলছিলেন- মাঠে ঘাটে এত কাজ করলেন এখন একটু না হয় কম ঘুরলেন?
কিন্তু কাজ- সেতো জীবন জীবীকা আর মনের আনন্দের জন্য। শরীরের স্বার্থে আনন্দটা না হয় একটু কমই করলাম কিন্তু জীবন জীবীকার কাজটা কি মাঠ ঘাট ছাড়া হবে? অর্থ উপার্জনের সহজ পন্থা হিসেবে চুরি করা বা ক্রীতদাস হওয়ার মতো কোন যোগ্যতাই যে অর্জন করা হয় নাই।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুন, ২০১৪ ভোর ৬:৫৯