“যাব তাক হ্যায় জান” দেখার পর যা মনে হইছে তাতে বাংলাদেশে একটি ক্যাচাল না লাগলেই না। সামনে ইলেকশন তাতেও যদি ঘরে ঘরে এখনি জিয়াকে নিয়ে গান বাজে তাতে তো বিরাট সমস্যা। কখন জানি আবার কোন রুল জারি হয়ে যায়। আর আজকাল সারাদেশের হরতাল অবরোধও তো মনে হয় কনফিডেন্স নিয়া হইতেছে। তারা ভাবছে ঘরে ঘরে এখন জিয়াকে নিয়ে গান চলে তাইলে আর কি, আমরাও মাঠে নামি। এ আর রহমান যে বিএনপি করেন তাতে আর কোন সন্দেহ নাই। নামের শেষেও তো ‘রহমান’ আছে তাঁর মাহাত্ম্য যে কোন্দিকে টার্ণ নিয়া আছে তা আর বুঝতে কারো বাকি থাকার কথা না।
যাউজ্ঞা, যা বলতে এসেছি। সবাইকে আমি দলে দলে মুভিটি দেখতে বলছি। আওয়ামীলীগ পন্থীরা ঐ গানের অংশটুকু কেটে দেখতে পারেন। তা না হলে টিভির উপর হামলা হলে কেউ দায়ী নন। গানটাতে এমন কিছু ছিল না, বোকা সোকা মেয়েটা নিজেকে একটু চালাক হিসেবে দেখাতে চাইছিল। পোষ্টের ফটোটে মেয়েটাকে এট্ট খানি দেখালেও রোল ছিল বিরাট। পুরা মুভির অর্ধেকেরও বেশি সময় একে সহ্য করতে হইছে। আনুশকা শর্মাকে দেখলে যাদের হাতির পুলের ‘শর্মা হাউজের’ শর্মার কথা মনে পড়ে তারা আবার বেশি আহ্লাদ করে “শর্মা খেতে খেতে শর্মাকে দেখা যাবে” ভেবে হাতিরপুলের দিকে পা বাড়াইছেন তো পুরা লস খাইছেন। কেননা, হাতির পুল যাওয়ার রিকশা ভাড়া+শর্মা হাউজ থেকে শর্মা কেনা+হাতিরপুল থেকে বাড়ি ফেরা বাবদ প্রচুর খরচ পড়ে যাবে, আর যদি মুভিটা সিডি/ডিভিডি কিনে নেন তাহলে তো আরো বেশি। আর যদি ইন্টারনেট থেকে নামান তাহলে খরচটা কম হবে। যাউজ্ঞা, খরচের কথা কেন বলছি সেটা আগে বলি, মুভি দেখতে দেখতে খুবই মজা পাবেন, তবে শুধু শর্মাটাই (দু-ই শর্মাই হতে পারে)। তাই আগে থেকে সতর্ক করলাম, শর্মা কিনবেন কি কিনবেন না। খরচ বাচাবেন কি বাচাবেন না।
শর্মা শর্মা করে তো সসের কথাই ভুলে গেছি। সস ছাড়া কি আর শর্মা জমে? কিং ব্র্যান্ডের সস সমর আনন্দ (শাহরুখ খান) বোমা বিশেষজ্ঞ, মানে বোমা নিস্ক্রিয় করে আরকি। ভালবেসে ফেলে ‘মেয়োনিজ’ মিরা (ক্যাট্রিনা) নামের একটি মেয়েকে। মিরা কে কোথা থেকে আসল, শাহরুখের সাথে ক্যামনে পরিচয় এ সব আপনাদের দ্বায়িত্ব, নিজে দেখে বুঝে নিবেন। মিরা আবার কসম কাটায় বেশ ওস্তাদ। “এক কসমে জীবন পার” নীতিতে বিশ্বাসী মিরা তাদের ভালবাসা চলাকালীন সময়ে সমর আনন্দ (শাহরুখ) হঠাৎ এক্সিডেন্ট করে, মিরা ঐ এক্সিডেন্ট দেখে কান্না-কাটি রেখে কসম করে বসে “আনন্দ যাতে বেঁচে যায়, বেঁচে গেলে মিরা আনন্দের সাথে কাভি নেহি মিলতে হ্যা”।
পুরা সিনেমার এইটাই কাহিনী, মিরার কসমের কারণে শর্মার কপাল খুলে গেল, যশ চোপড়ার মুভিতে তাঁর এন্ট্রি হল, প্রায় দুই ঘন্টা তাঁর নাচানাচি, ছবি তোলা তুলি, সসের সাথে মাখামাখি দেখেই কেটে গেল। এখানে আপনি রিয়ালাইজ করবেন, “সস ছাড়া শর্মা জমে না, মেয়োনিজ না থাকলেও চলে”।
তারপর এক্সময় শাহরুখ আবার এক্সিডেন্ট করল। কখন, কিভাবে, কেন সেটা আবারও আপনাদের দায়িত্বে ছেঁড়ে দিলাম। আগের এক্সিডেন্টের আর এই এক্সিডেন্টের মাঝে দশ বছর পার্থক্য। এই মাঝের দশ বছর শাহরুখ “ঠান্ডা চায়ের মত এক চুমুকে গিলে খেয়ে ফেলল”। তখন জ্ঞান ফিরার সাথে সাথে সে মেয়োনিজকে খুজতে লাগল। ডাক্তার বলল, “মেয়োনিজ ছাড়া শাহরুখের চলেই না”। সিনেমায় তাঁর পার্ট শেষ হয়ে এসেছে জেনেও দুঃখ-কষ্ট সব ভুলে শর্মা গেল মেয়োনিজকে খুজতে। পেয়েও গেল কেননা ও তো কেবল “সিনেমার সেটে বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল, একশন বলার সাথে সাথেই ক্যামেরায় ঢোকার অপেক্ষা”। তারপর শাহরুখের কাছে ক্যাট্রিনা এলে শাহরুখ খুব খুশি হল, মিরা নিজেকে শাহরুক্ষের বউ হিসেবে পরিচয় দিল। শাহরুখ ভাবল, “ইতনি দিন পার হোগ্যায়া!” মিরার সাথে ওর দশ বছর বিয়ে হয়ে গেছে ভেবে ও খুশি হল কি বেজার হল ঠিক বোঝা গেল না।
মিরার দ্বায়িত্ব ছিল আনন্দকে সব খুলে বলা! আনন্দ যাতে ধীরে ধীরে সব মনে করতে পারে। সফল হল মিরা। আনন্দ সব মনে করতে পারল, আর তখন সস আর মেয়নিজ দুজন আলাদা হয়ে গেল! এক্সময় মিরা রিয়ালাইজ করল, আনন্দকে ছাড়া সে আসলে থাকতে পারবে না, যদিও দশ বছর আনন্দকে ছাড়াই থেকেছিল (ইতনি দিন পার হো গ্যায়া ) তারপর আবার সব মিল মহব্বত হয়ে গেল শাহরুখ আর মিরার। কাহিনীর উঠা-নামা, বাকা-ত্যারা, ডান-বাম সব আড়ালে রাখলাম। নিজেরা দেখলেই বুঝবেন খন!
একান্ত নিজের কিছু মতামতঃ এতক্ষন ফাজলামী করলেও সিরিয়াস কিছু কথা না বললেই নয়। মিরার কসম কাঁটার ব্যাপারটাকে কেন্দ্র করেই যখন নায়ক-নায়িকা আলাদা হয়ে যাবে বলে কাহিনীতে ছিল, তাহলে কাহিনীটাকে আরো একটু গভীর করা যেত। মীরার কসম খাওয়াটাকে অন্য কোন লজিকে ভিত্তিতে আরো বেশি জোরালো করা যাতে পারত। নায়ক-নায়িকার মিল হলে সিনেমা ভাল লাগে সত্যি, তবে মাঝে মাঝে মনে দাগ কাটারও প্রয়োজন আছে। শেষ দৃশ্যে যখন মিরা শাহরুখের সাথে দেখা করতে যায়, একটি গুরুত্বপূর্ণ কথার মাঝে শাহরুখের তখন একটা বোমা ডিস্প্লেসড করার জন্য ডাক আসে। শাহরুখ বলল, কাজটা সেরে তারপ্পর সে কথা বলবে। ওদিকে একই সময়ে সাংবাদিক আনিশকা শর্মা শাহরুখের ওপ্র তাঁর ডকুমেন্টরী প্রেজেন্ট করছিল, ডকুমেন্টরীর বিষয় ছিল, The Man who cannot Die। পাশাপাশি দুটো দৃশ্য একই সময়ে। ঠিক এই সময়টাতেই যদি শাহরুখ বোমা ডিস্প্লেসড করতে যেয়ে ‘মারা’ যেত। তবে কাহিনীটা একটু হলেও মনে দাগ কাটত যে মিরা তাঁর প্রমিজের কারণে এতবছর আলাদা থাকার পর যখন আবার সব নতুন করে শুরু করতে চেয়েছে তখনি সব শেষ হয়ে গেল, আনুশকা যখন বলছে The Man who cannot Die, তখনি সে মারা গেল। শাহরুখ খানের মুভি নিয়ে এক্সপেক্তেশন বেশি থাকে। আর ইদানিং ক্যাট্রিনাও অনেক ভাল অভিনয় করে। তাই সার্বিক বিচারে মুভিটাকে নিয়ে একটু আশা ছিল ভাল লাগবে। এগুলো সম্পুর্ণ ই আমার মতামত।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:৫৩