সন্ধ্যায় বাড়িওয়ালার বাসায়।
আমিঃ আন্টি আমরা বাসা ছেড়ে দিচ্ছি। দুলাভাই বলছে বাসায় উঠার আগে যে দু মাসের এডভান্স দিয়েছিলাম ওটা ফেরত দিতে।
বাড়িওয়ালীঃ বাসা ছেড়ে দিচ্ছ??? ওমা কেন?তোমার আপু বাসায় আছে? আচ্ছা আমি তোমার আপুর সাথে কথা বলব।
আমিঃ জ্বি আচ্ছা। দুলাভাই আংকেলের সাথে দেখা করবে বলেছে।
(বাড়িওয়ালার বাসা থেকে প্রস্থান)
পরদিন দুপরে বাড়িওয়ালী বাসায় এল।
বাড়িওয়ালীঃ কেমন আছ?
আমিঃ জ্বি ভাল।
বাড়িওয়ালীঃ ওমা মুখটা কি শুকিয়ে গেছে। খাওয়া দাওয়া করো না বুঝি? পড়াশুনার খুব চাপ যাচ্ছে?
আমিঃ তা একটু যাচ্ছে।
বাড়িওয়ালীঃ তোমার আপু কোথায়?
আমিঃ আপু তো এ সময় বাসায় থাকে না। অফিসে থাকে।
বাড়িওয়ালীঃ ও। তা তোমরা কেন বাসা ছেড়ে দিচ্ছ। পানির সমস্যা হয়? দেখনা আমাদের পানির লাইনটাতে না কি হয়েছে। আমার মনে হয় বাতাস ঢুকছে। এ জন্য পানি আসে না। আমার প্রতিটি ভাড়াটিয়া আজ ৪-৫ বছর আমার বাড়িতে। কোন দিন কোন অভিযোগ শুনি নি। তোমরাই প্রথম অভিযোগ কর...
হঠাত পাশের বাসার দরজাটা খুলে যায়। আন্টি আপনি এখানে? আপনাকে একটু আগে বাসায় খুজে এলাম। বাসায় ছিলেন না। আজকে সারাদিন পানি ছিল না। একটু পানি ছাড়েন। গোসল করব।
বাড়িওয়ালীঃ দিচ্ছি।
(ভোতা মুখ নিয়ে বাড়িওয়ালীর প্রস্থান)
সন্ধ্যায় বাড়িওয়ালী আবার আমাদের বাসায়।
বাড়িওয়ালীঃ একটা কথা বলতে এলাম। বাসা ছাড়ার কথা আমাদেরকে আরো আগে বলা উচিত ছিল। আমরা কবে টু-লেট লাগাবো। কবে ভাড়াটিইয়া ঊঠবে? তোমাদের এটা আরো আগে বলা উচিত ছিল।
আমিঃ আন্টি, দুলাভাই বাসায় আছে। কথা বলে যান।
বাড়িওয়ালীঃ তোমার দুলাভাইয়ের সাথে কথা বলে আমি কি করব? পুরুষ মানুষের সাথে আমার কি কথা?
আমিঃ আপুও বাসায় আছে।
বাড়িওয়ালীঃ তোমার আপুর সাথে কি কথা বলার আছ? তোমার আপু কি পরিবারের মাথা? এসব ব্যপারে কর্তাদের সাথেই কথা বলতে হয়।তোমার দুলাভাইকে বলে দিও আমি এসব বলেছি।
আমিঃ জ্বি আচ্ছা।
১ সপ্তাহ পর বাড়িওয়ার বাসায়।
আমিঃ আন্টি দুলাভাই পাঠিয়েছে।
বাড়িওয়ালীঃ দেখ বাপু। তোমার দুলাভাই বার বার তোমাকে পাঠায় কেন? তিনি নিজে আসতে পারেন না?
আমিঃ দুলাভাই আংকেলকে ফোন দিয়েছে। আংকেল ফোন ধরছেন না।
বাড়িওয়ালীঃ আংকেলকে ফোন করে কি হবে?আমার সাথে কথা বলতে বলবা। এখন যাও।
আমিঃ আপনি দুলাভাইয়ের সাথে কথা বলবেন?
বাড়িওয়ালীঃ আমি কেন বলব? তোমার দুলাভাই আমার সাথে কথা বলবে। আমি বাড়িওয়ালা। আমার কোন ভাড়াটিয়ার বাসায় যেয়ে জীবনেও আমি কথা বলিনি।উনাকে আমাদের বাসায় আসতে বলবে।
পরদিন বাড়িওয়ালী আমাদের বাসায়।
বাড়িওয়ালীঃ তোমার দুলাভাই বাসায় আছে?
আমিঃ দুলাভাই অফিসে।
বাড়িওয়ালীঃ তোমার আপু কোথায়?
আমিঃ আপু অফিসে।
বাড়িওয়ালীঃ শোন, তোমার দুলাভাইকে বলে দিবা তোমার আংকেলকে ফোন দিতে। এখন ফোনের যুগ থাকতে এত সামনা সামনি কথা বলা লাগে?
আমিঃ দুলাভাই তো ফোন দিয়েছিল।
বাড়িওয়ালীঃ আমার কোন ভাড়াটিয়া বাসা ছাড়ার আগে এত কথা বলে নি। বাসা ছাড়বে ব্যাস ছেঁড়ে দিয়ে চলে গেছে। একমাত্র তোমরাই বেশি ঘুরাচ্ছ আমাদেরকে।
আমিঃ আমরা তো এডভান্সটা চাইতেই গিয়েছিলাম।ওটা দিবেন না?
বাড়িওয়ালীঃ তোমার সাথে এত কথা বলে কি করব?তোমার দুলাভাইর সাথে কথা হবে।
একদিন পর বাড়িওয়ালী আমাদের বাসায়।
বাড়িওয়ালীঃ তোমরা বাসা ছেঁড়ে কোথায় যাচ্ছ?
আমিঃ উত্তরা।
বাড়িওয়ালীঃ মনে হচ্ছে তো দেশ ছেড়েই চলে যাচ্ছ। তোমার দুলাভাইকে বলবা ফোন দিয়ে তোমার আংকেলকে এত ডিস্টার্ব না করতে। আমরা কারো টাকা মেরে খাই না। যেদিন বলে তাঁর পরদিনই দিয়ে দেই। আমরা ব্যবসায়ী মানুষ। প্রতিদিন তোমার আংকেলের লাখ লাখ টাকা লেনদেন হয়। তোমাদের এ কটা টাকা আমরা আটকে রাখব না। আগামী সপ্তাহে তোমার দুলাভাইকে দেখা করতে বলবা।
আমিঃ আমরা তো আজকেই চলে যাচ্ছি।
বাড়িওয়ালীঃ যাচ্ছ তো যাও। ঢাকা শহরেই তো আছ নাকি? আমার কোন ভাড়াটিয়া এডভান্স নিয়ে এমন করে নি। তোমার আংকেল বলছে আমরা বাড়িওয়ালা, আমাদের থেকেও ছোট হয়ে ওরা ক্যমনে আমাকে ফোন করে এডভান্স চায়।তোমার দুলাভাইকে বলবা। বুঝছ?
আমিঃ বুঝছি।
[ওয়াচে থাকাকালীন পোস্ট। অনেকে পড়েন নি তাই আবার শেয়ার করলাম ]
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:৫৬