- এই হিমু ওঠ। সময় হয়েছে ওঠ।
হিমু চোখ মেলে তাকায়। কিছু বুঝে উঠতে পারে না ও।
- বাবা কোথায় যাব?
- আমরা সবাই যেখানে যাব।
- আমরা কোথায় যাব?
- এক জায়গায়। ওখানে আমরা সবাই একসাথে থাকব।
- কে কে?
- আমি, তুই, মাজেদা, রূপা, বাদল, তোর খালু.....
হিমু ধরফর করে ওঠে বসে। বাবার পাশে নীল শাড়ি পড়ে বসে আছে রূপা।
- রূপা তুমি নীল শাড়ি পড়েছো কেন?
- আজকে আমার অনেক আনন্দের দিন।
- আনন্দের?
- হুম। এখন থেকে আমরা সবাই একসাথে এক জায়গায় থাকব।
- সবাই একসাথে কোথায় থাকব?
- তা তো জানি না। রূপা মিষ্টি করে হাসে। মাজেদা খালা হাসি হাসি মুখে এগিয়ে আসে।
- জানিস হিমু, তোর জন্য একটা মেয়ে খুঁজে পেয়েছি। এবার তোর বিয়ে দিব।
- আমি বিয়ে করব না। আমি হিমু।
- ধুর পাগল। সারাজীবন খালি পায়ে হেঁটে হেঁটে জোত্স্না খেয়ে বেড়াবি নাকি? বিয়ে তোকে করতেই হবে। আর সবচেয়ে মজার কথা কি জানিস? আমি এতদিন পর বুঝতে পারলাম একমাত্র রূপার সাথেই তোকে মানায়।
- খালা, তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। আমি হিমু। আমি বিয়ে করব না। রূপা সুন্দরী মেয়ে, ও কেন একজন হিমুকে বিয়ে করবে? ওর ভবিষ্যত্ আছে।
মাজেদা খালা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
- আর ভবিষ্যত্ ! সবকিছু এখন একজায়গায় স্থীর হয়ে গেছে রে হিমু।
- ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে তোমরা একেকবার যা বলে যাচ্ছ না? বাদল কোথায়?
- এই যে, আমি এখানে।
হিমু দেখে বাদল কোন একটা বিষয় নিয়ে অস্থির হয়ে আছে।
- কি হয়েছে বাদল তোর?
- আর বলো না। পায়ে ব্যাথা করছে। আর এরমধ্যে সবাই বলছে কোথায় যেন যেতে হবে। যন্ত্রনায় বাঁচতেছি না। আর সবাই যা শুরু করল না!
হিমু ওঠে গিয়ে বাদলের কাঁধে হাত রাখে।
- পা থাকলে পা ব্যাথা করবে। এটা নিয়ে এত অস্থিরতার কিছু নাই।
খালু একেএকে চা খেয়েই যাচ্ছে। মাজেদা খালা হাসি হাসি মুখে তার সামনে এসে দাড়ালো।
- কি গো। তুমি এখনো রেডি হও নি? একের পর এক চা খেয়েই যাচ্ছ?
- কি করব বলো। আমি বুঝতেছি না এত চা কোত্থেকে আসে। আমি চায়ের কথা ভাবছি ওমনি চা এসে কাপে হাজির হচ্ছে। আজব না বল? বাধ্য হয়ে খেতেই হচ্ছে।
- এটা আসলে একটা সাইকোলজিক্যাল ব্যাপার। আপনি ব্যাপারটা ধরতে পারছেন না।
হঠাত্ অপরিচিত কন্ঠ শুনে সবাই চমকে তাকায়। ঘরের ভিতর আলাদা করে এ মানুষটির উপস্থিতি এতক্ষন কেউ টের পায়নি। মাজেদা খালা বললেন,
- আপনি কে?
- আমি মিসির আলী।
- ও আচ্ছা আচ্ছা। আপনিই সেই যে বিরাট বিরাট রহস্যের সমাধান একমুহুর্তে করে ফেলেন?
- আমি কোন রহস্যের সমাধান করি না। আমি শুধুমাত্র প্যারাসাইকোলজি নিয়ে পড়াশুনা করেছি। এই দেখুন আজ সকালে আপনি ফ্লাক্স ভর্তি চা বানিয়েছেন সবার জন্য। কিন্তু তাড়াহুড়ায় কাউকে চা দেওয়া হয়নি শুধুমাত্র উনাকে ছাড়া। (হিমুর খালুকে নির্দেশ করে বললেন মিসির আলী)। আর উনার চায়ের তেষ্টা পেয়েছে প্রচুর। ফ্লাক্স থেকে নিজেই একের পর এক চা ঢেলে খাচ্ছেন, অথচ বলছেন উনি চায়ের কথা ভাবছেন বলেই কাপে চা এসে হাজির হচ্ছে। খেয়াল করুন উনার বাম হাতটি এখনো ফ্লাক্সের হাতল ধরে আছেন। আজ একটি অন্যরকম দিন। সবাইকে যেতে হবে বলে উনি সবকিছু গুলিয়ে ফেলছেন। উনার মস্তিস্কের একটা অংশ ঠিকভাবে কাজ করছে না। এটাকে বলে মস্তিস্কের Provisional discord. অর্থাত্ সাময়িক বিচ্যুতি। সমস্যা কেটে গেলে ঠিক হয়ে যাবে।
- আর ঠিক হওয়া লাগবে না। চলো সবাই বেড়িয়ে পড়ি।
- হ্যা চলুন।
- ওমা আপনিও যাবেন নাকি আমাদের সাথে?
- হুম। যেতে তো হবেই। আজ সবাইকেই যেতে হবে।
এতক্ষন হিমু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দাড়িয়ে ছিল। হঠাত্ রূপা ওর পাশে এসে দাড়াল, হাত বাড়িয়ে দিল হিমুর দিকে। হিমু যেন একটা ঘোরের মধ্যে আছে। আলতো করে রূপার হাতটি ধরল। রূপার মুখে মিষ্টি হাসি। আজ ওকে সত্যিই খুব সুন্দর লাগছে। মাজেদা খালার তাড়া খেয়ে সবাই রওনা দিল। কিন্তু এ পথের কোন দিক নেই। অজানা, অচেনা একটা পথে ওরা শুধু মৌন মিছিলের মত করে একসাথে হাটতে লাগল। একটু ভাল করে খেয়াল করলে বোঝা যাবে ওদের অনেক সামনে বেশ দূরত্ব রেখে হেঁটে যাচ্ছে একজন। ওরা শুধু তাকেই অনুসরন করছে।
[হুমায়ুন আহমেদের মত করে তাঁর চরিত্রগুলো নিয়ে গল্প তৈরি করার ধৃষ্টতা আমার নেই। আমি কেবল আমার আবেগেকে গল্পাকারে এখানে উপস্থাপন করেছি]
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:৫৯