পর্ব ১
দুই ক্লাসের মাঝের আধা ঘন্টা ফাঁকে কার্জন হলের মাঠে বিশ-একুশের ফর্সা মত যে ছেলেটা নুয়ে নুয়ে বাদামের ঠোঙ্গা আর আইস্ক্রিম-চিপ্সের প্যাকেট কুড়িয়ে বড় একটা কাগজের ব্যাগে পুরে ফেলছে আর বার বার মনের ভুলে শূন্য কব্জিতে ঘড়ি দেখছে, তার নাম নভো। চাইলেই সে নীল জিন্সের পকেট থেকে ফোনটা বের করে সময় দেখতে পারে। কিন্তু ইচ্ছে হচ্ছে না। আর ক্লাসের সময় যে হয়ে এসেছে নভো সেটা বেশ বুঝতে পারছে। কারন, সব মিলিয়ে বাহাত্তরটা ঠোঙ্গা-ঠাঙ্গা তুলেছে সে আজকে। পরশুদিন জ্যুলজি বিভাগের পুকুর পারের সামনে থেকে এরকম একশোটা তুলতে সময় লেগেছিল চল্লিশ মিনিট। সেই থেকে নভোর একটা হিসাব দাঁড়িয়ে গেছে। এই হিসাবের কাছে ঘড়ির টিকটিক এখন ফেল।
কাগজের ব্যাগটা একরকম মুচড়ে বন্ধ করে নভো চওড়া কাঁধে সোজা হয়ে দাঁড়ালো। রুক্ষ-মসৃন গালে এক স্রোত রক্ত এসে জমেছে। শুভ্র কপালে নীল শিরার উঁকিঝুঁকি। আর খাড়া নাকের ডগায় বিন্দু বিন্দু ঘাম। ময়লা হাতে ঘাম মোছারও জো নেই। নভোর চোখে মুখে বিরক্তির বিদ্যুৎ খেলে গেল। ভুরু কুঁচকে ধ্যাৎ না কি যেন একটা বলল, বোঝা গেল না। হাত ধোয়া দরকার। তারপর খুঁজে পেতে দেখলো ফিজিক্স বিভাগের গা ঘেঁষে ছোট্ট কলতলাটা। নভো মাথা ঝুঁকিয়ে বুকে ঠেকিয়ে ক্লান্ত পা বাড়াল সেদিকে। ছেলেটার চেহারায় একটা চমক আছে। সেটা হঠাৎ চোখে পড়ে না। কিন্তু পড়লে দেখা যায় নিকষ কালো মনি ধক্ধক্ করে জ্বলছে। নভো তার চোখের ব্যাপারটা জানে। তাই মাথা ঝুঁকিয়ে এই অবাধ্য বস্তু দু’টোকে লুকাতে সে সদা ব্যস্ত।
নভোর নামটা আকাশ হলে বেশ মানাতো। কিন্তু তার বদলে রাখা হল নভোনীল। বেশি কাব্যিক শোনায় বলে স্কুল-কলেজের বন্ধুরা ক্ষ্যাপানোর অফুরন্ত সুযোগ পেত। ‘এই যে আসছে আমাদের সবেধন নিলমনি নভোনীল... ইত্যাদি। এই ভুল আর করা যাবে না এবার। তাই সে মাঝখান থেকে কাঁচি চালিয়ে নামটা ছোট করে নিয়েছে। ফার্স্ট ইয়ারের এই তিন দিনে বন্ধু তার এখনো তেমন হয়ে ওঠে নি। কিন্তু তীব্র দৃষ্টির সুদর্শন ছেলেটা যে নভো, সেটা সবার জানা হয়ে গেছে। তার উপর একহারা গড়নের জন্যে তাকে আলাদা করে বেশ চেনা যায়। নভোর চেয়েও লম্বা-ঢ্যাঙ্গা আছে জনা কয়েক। কিন্তু ছোটবেলা থেকে ক্রিকেট-ফুটবল, সাঁতার,সাইক্লিং করে বেড়ানো দুরন্ত স্বভাবটা তাকে গড়ে-পিটে এমন এক খেলোয়াড়ী আদল দিয়েছে যে হঠাৎ চোখে পড়লে ধাতস্থ হতে সময় লাগে। তাকে নিয়ে ক্লাসমেট মেয়েগুলোর হালকা ফিসফাস তার কানে এসেছে। কিন্তু পাত্তা দেয়ার ইচ্ছা কিংবা সময় কোনটাই নভোর নেই। অন্তত তার নির্লিপ্ত হাবভাব তো তাই বলে।
এই অদ্ভূত ছেলেটার আজব কারখানা এতক্ষন কৃষ্ণচূড়া গাছটার ছায়ায়, সামান্য আড়াল থেকে চেয়ে চেয়ে দেখেছে আরেকটা অদ্ভূত মেয়ে। তার নাম মৃন। নিজের নাম নিয়ে তার নভোর মতই অস্বস্তি। নামটা আসলে মৃন্ময়ী। নভোর মতই সে ফুলহাতা জামাটা কেটে হাফহাতা বানিয়ে নিয়েছে। নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে কি ছেলেমেয়ের নাম নিয়ে বাবা-মা’রা কোন ধরনে ম্যাস-ক্রিয়েটিভ খেলা খেলেছিলেন বোধহয়।
পর্ব দুই (লেখকঃ ব্লগার পদ্মপুকুর)
পর্ব তিন (লেখকঃ ব্লগার মেঘশুভ্রনীল)
পর্ব চার (লেখকঃ ব্লগার খায়রুল আহসান
পর্ব ৫ লেখার আন্তরিক আহবান জানাই। সৌহার্দ্যের কলম ঘুরে বেড়াক সব ব্লগারের হাত ধরে।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুন, ২০২০ ভোর ৫:১৪