somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শান্ত হ্রদের স্নিগ্ধ শহরঃ রিভা দেল গার্দা

২১ শে মার্চ, ২০১৯ রাত ২:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



জার্মানির সব শহরেই ছোট বড় রেল স্টেশন ছাড়াও একটা করে কমলাপুর থাকে। সেগুলোকে বলে হপ্ট-বান-হফ। কেন্দ্রীয়-রেল-স্টেশন। আজকে ট্রেন ধরেছি মিউনিখের কমলাপুর থেকে। গন্তব্য, ইটালির ট্রেন্টো অঞ্চলের রিভা ডেল গার্দা। আল্পাইন পাহাড়ঘেরা গার্দা হ্রদের পাড়ের এক শান্ত শহর এই রিভা। ইটালি পৌঁছে রোভেরেতো নামের এক জায়গায় ট্রেন থামলে সেখান থেকে গাড়ি এসে আমাদের রিভা শহরে নিয়ে যাবে। হোটেল বুকিংয়ের সময় গাড়ির ব্যবস্থা করে যাত্রাপথের হাঙ্গামা কমিয়ে ফেলা হয়েছে।

ট্রেনে ছয় আসনের একটা কামরা ভাড়া নিয়েছি। এক দিকে বসেছে মৌরি আপু আর হাদি ভাই। আরেক দিকে আমরা রুমি আর রিম। মাঝখানে মেঝেতে গড়াগড়ি দিচ্ছে দুই অনু পরিবারের দুইজন পারমানবিক সদস্য। তারা যে যার মত গলা সপ্তমে চড়িয়ে চ্যাঁচাচ্ছে। চেঁচামেচিতে অতিষ্ঠ হয়ে বড়দের ব্যাগ থেকে কলা, রুটি আর কেক উঁকি দেয়া শুরু করেছে। রুটি চিবানোর ফাঁকে ফাঁকে হালের মুরাদ টাকলীয় বাংলিশের একনিষ্ঠ ভক্ত হাদি ভাই আনন্দে আত্মহারা ভঙ্গিতে বলছেন, ‘মগা হাবা, মগা হাবা’ (moga haba, moga haba)। মজা তো হবেই। একঘেয়ে ঘানিটানা প্রবাসজীবনের গোয়াল ফাঁকি দিয়ে দড়ি ছেড়া গরুর পাল আজকে বাছুর সমেত পালিয়েছি যে! সামনের কয়েকটা দিন ছাড়া গরুর মতই মাঠ ঘাট দাপিয়ে বেড়াবো। এই না হলে জীবন। মনে মনে আমিও বললাম, ‘জয় বাবা, মগা হাবা!‘

জানালার বাইরে দৃশ্যপট একের পর এক বদলে যাচ্ছে। কখনো শহরতলী, কখনো ছবির মত সাজানো গ্রাম, কখনো বা তুষারে ঢাকা মাঠের পর মাঠ। সবার ভারী জ্যাকেটগুলো ট্রেনের কামরার হুকের সাথে লটপটিয়ে ঝুলছে। কিন্তু আমি বেচারা জ্যাকেট তো খুলিই নি, বরং চেইনটা গলা পর্যন্ত তুলে, ঢাকা কলেজের উল্টো থেকে কেনা নকল কাশ্মীরি শালটা নিশ্ছিদ্রভাবে পেঁচিয়ে জাঁকিয়ে বসেছি। নিজেকে তিব্বতদেশীয় কল্পিত প্রানী ইয়েতি মনে হচ্ছে। আসল কাহিনী হল, ঠান্ডা লেগে চাট্টিবাট্টি গোল অবস্থা। ঘাড় নাড়াতে পারছি না। পেরিফেরাল ভিউ বলে কিছু নেই আর। যেদিকে তাকাতে চাই, ঘাড়-ধড় এক সাথে ঘুড়িয়ে দাঁড়াতে হয়। সামান্য কাশিটা বেড়ে এমন যক্ষা মার্কা চেহারা নিবে, ভুলেও ভাবি নি। মনীষীরা বোধহয় এমন পরিস্থিতির কথা ভেবেই এর নাম দিয়েছেন, ‘মাইনকা চিপা’।

সেদিন ডাক্তারের চেম্বার থেকে প্যাঁচ মেরে বলা হয়েছে, ঠান্ডাটা কোন ভাইরাল সংক্রমন হতে পারে আবার ব্যাকটেরিয়াজনিতও হতে পারে। সাত দিনে সারতে পারে, আবার এক সপ্তাহও লাগতে পারে। অধৈর্য আমি মুখ ফসকে জানতে চাইলাম, ‘এত যে কাশছি, হুপিং কফ হয়ে গেল না তো আবার?’ চোরের উপর বাটপারির মত ডাক্তারের উপরও খোদকারি করতে নেই। ডাক্তারের হাসিমুখ দপ্ করে নিভে গেল, ‘হুপিং কফ আবার কি?’ তাড়াহুড়া করে বললাম, ‘কেন, ওই যে বললে, পারটুসিস হবার ভয় আছে?’ ডাক্তার চোখে মুখে চরম অবিশ্বাস নিয়ে অন্তর্জালে হামলে পড়ে গোকুল (পড়ুন গুগল) দৈত্যের প্রদীপে ঘষা মেরে বসল। এদিকে আমি স্বেচ্ছায় ভুলভাল বকছি, ‘হুপিং কফ তো মনে হয়ে ধনুষ্টংকার। বিড়ালে কামড়ে যা হয়, তাই না?‘ আমার আমতা কথা উপেক্ষা করে উজ্জ্বল মুখ তুলে ডাক্তার বলল, ‘আরে না, তুমিই ঠিক। যাহাই পারটুসিস, তাহাই হুপিং কফ!‘

তো চিরকালের ল্যাটিন নাম চেনা জার্মান ডাক্তার আমার সম্ভাব্য হুপিং কফের কোন রকম নিদান ছাড়াই বিগলিত হাসিতে বিদায় দিল সেদিন। তার ভরসায় না থেকে আমি দেশে আমার ডাক্তার ভাইকে ফোন লাগিয়ে রোগ লক্ষন জানিয়ে আলমারির দেরাজে খুঁজে পেতে তিন বড়ির একটা অ্যান্টিবায়োটিকের কোর্স শুরু করে দিলাম। আজকে তার প্রথম দিন। তবে অতি স্বাস্থ্যকর ইতালীয় রিভা শহরে গিয়ে একবার পড়লে বায়ু পরিবর্তনের জোরে কাশির গলায় ফাঁসি পড়বেই। আর আমিও সুস্থ হয়ে হাঁপ ছেড়ে বাঁচবো। সেই আশাতেই ডিসেম্বরের এক বিষন্ন ম্যাটম্যাটে শীতের সকাল পেছনে ফেলে টিকেট মিলিয়ে বগি খুঁজে ইটালির ট্রেনে চেপে বসা। (চলবে)

(বি.দ্র. নতুন চাকরির চিপায় পড়ে সময় মিলছে খুব কম। ইচ্ছে ছিল এক বসায় লেখাটা শেষ করবো। সেই অবসর মিলছে না। তাই পর্ব আকারে লেখার চেষ্টা। নাই মামা-কানা মামা কেস আর কি।)
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ২:৩৭
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজকের ডায়েরী- ১৪৩

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৯ ই জানুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ১:২৭

ছবিঃ আমার তোলা।

আজ সকালের কথা বলি।
ভোর সাড়ে ছয়টায় ঘুম থেকে উঠেছি। আসলে আমি উঠি নাই, সুরভি আমাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলেছে। বিছানা থেকে নামার আগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেগম জিয়া ফিরুক!!

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৯ ই জানুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ২:১০




বেগম জিয়া গুলশান ছেড়ে লন্ডনে চলে গেছেন; ব্লগে বিভিন্ন আলোচনা লেখা-লেখি চলছে,আপোষহীনতার অভাব কখনোই ছিলো না নাকি ;দেখতে শুনতে ভালো,বিদ্যায় টাইটানিক বহন করা মস্তিষ্ক। যাইহোক, বাঙালীদের জন্য এমন রাজনীতিবিদ... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ মূল্যবোধ.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৯ ই জানুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৫:২৬

গল্পঃ মূল্যবোধ.....

নিগারের স্বামী মুকিতকে আমি চিনি। তবে তেমন ঘনিষ্ঠতা না থাকলেও মাঝেমধ্যে কথাবার্তা হয়। নিগার আমাদের দীর্ঘদিনের প্রতিবেশী কালাম ভাইর একমাত্র মেয়ে নিগার। কালাম ভাই আমার বয়োজেষ্ঠ। ছেলেবেলা থেকেই আমরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা কি ইডিয়টের লেভেলে?

লিখেছেন জেনারেশন৭১, ০৯ ই জানুয়ারি, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:১০



আপনি বাংলাদেশে বাস করে, দেশের চলমান রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহকে কি সঠিকভাবে বুঝতেছেন, কিভাবে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিলো, কাহারা দেশ প্রতিষ্ঠা করেছেন, কাহারা কি কারণে ইহার বিরোধীতা করেছিলো, ইহা ঠিক মতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার হাসান মাহবুবের কাছে প্রশ্ন, "আমার 'পরিশুদ্ধ' হওয়ার কি দরকার আছে?"

লিখেছেন জেনারেশন৭১, ০৯ ই জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ১০:০২



**** আমি চাঁদগাজী নিকে ব্লগিং করার সময়, ব্লগার হাসান মাহবুব আমাকে ১টা গালি দিয়েছিলেন; তিনি আমার ১ পোষ্টে মন্তব্য করেছিলেন; মন্তব্যটা ছিলো, "তুমি একটা মাদারচোদ"। আমি বিনিময়ে কিছু বলিনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×