ব্লগ ব্লগ পলিটিক্স এইসব নিয়ে আমার লেখালেখি করার আগ্রহ ছিল না কখনো। ঈদের ব্যস্ততায় ব্লগে গত কয়েকদিনের এ বিষয়ক লেখালেখিগুলোও চোখে পড়ে নাই। আজকে হঠাৎ লগইন করার পর, প্রথম পাতার একটা কমেন্টে ক্লিক করতে গিয়ে চোখে পড়ল প্রথমে সাঈফ শেরিফ নামে একজন ব্লগারের লেখা, পরে সেই লেখার লিঙ্ক ধরেই আরো কিছু লেখা পড়ার সুযোগ হল। মানস চৌধুরী, ব্রাত্য রাইসু এবং হাসিবের বর্ষসেরা পোষ্ট বিষয়ের লেখাগুলো। ব্লগ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ব্রিগেট সিক্সটিনের দীর্ঘদিন ধরে চোখের সামনে ঝুলিয়ে রাখা পোষ্টটি আগেই চোখে পড়েছিল, বলা বাহুল্য। ইয়াহু মেসেঞ্জারে আমার কিছু বন্ধু এ বিষয়ে আমাকে বলেছিল যে, এইখানে একটা পলিটিক্স আছে। আমি গা করি নাই, আমার এই ব্লগ পলিটিক্সে আগ্রহ নেই বলে, অথবা এই বিষয়টিরে গৌণ মনে করেছিলাম। কিন্তু, আজকে মানস চৌধুরীর পোষ্টে ক্লিক করে মোটামোটি হতভম্ভ হয়ে গেলাম। এই ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করার পর, সেই বিষয়ে আমার অবস্থানটি জানানোর দায় দাঁড়িয়ে যায়। তাই লিখতেই হচ্ছে।
তার আগে একটি ঘটনা বলি। গতকালকে কৌতুহল বশত প্রথম আলো ব্লগে গিয়ে হঠাৎ চোখে পড়ল, গল্প-উপন্যাস ইত্যাদির সম্মিলিত প্রজেক্ট হাতে নেয়া হয়েছে, সেরা লেখক নির্বাচনের কাজও চলছে। বাংলা ব্লগে নবীনতর, কিন্তু সাম্রাজ্য বিস্তারি অর্থনৈতিক প্রজেক্ট প্রথম আলো ব্লগ বিষয়ে আমার আগ্রহ তেমন তৈরী হয় নাই বিবিধ কারণে। এবং তাদের বিভিন্ন এক্সপেরিমেন্টগুলোকে আমার অনেকটা পিআলো বন্ধুসভার মত, ছেলেপুলেদেরকে লেখালেখি শেখানো, তরুণ লেখক প্রকল্প এই জাতীয় জনহিতৈষি কাজকর্ম মনে হয়েছে। জনহিতৈষি কাজকর্মে আমার অনাগ্রহ নেই, তবে বুঝি, প্রথম আলোকে আরো অনেকদূর যেতে হবে, বাংলা ব্লগে স্থান করে নিতে হলে। এটি পত্রিকা নয়।
কিন্তু, সামহোয়ারইন ব্লগ সেইদিক থেকে সুপ্রাচীন অভিজ্ঞ এবং ব্লগারদের তর্কবিতর্কে নিয়ত উচ্ছ্বল। সামইন বিষয়ে এই ব্যাপারটি আমার প্রাথমিক সন্তুষ্টি হতে পারে, তারপর? তারপরের বিষয়টি নিয়েই আজকের আলোচনা। শুরুতে শুধু একটা নোট দিয়ে নিই। সামইন-কে কি প্রথম আলোর সাথে তাল দেয়ার জন্যই এরকম বর্ষসেরা লেখার নির্বাচনে নামতে হলো? প্রথম আলোর এখন শৈশব পর্ব চলছে, নতুন ব্লগার তৈরী করতে হচ্ছে। নতুন ব্লগার, নতুন ট্রেডিশন। বেশ অনেকদিন অনেকটা চড়ুইভাতি খেলার মতো ব্যাপার। সেখানে অনেক ছেলেমি, ভুলভাল, পুনঃএক্সপেরিমেন্ট এইসব থাকবে। কিন্তু সামইনে কেন?
এই কথাটিতে পরে আবারও আসছি। তারো আগে, যার কারণে এই পোষ্টটির অবতারণা, সেই বিষয়টি নিয়ে আমার কথাটি শেষ করি।
সামইনব্লগে ব্লগারদের প্রতিক্রিয়া জানানোর সুবিধার্তে দুইটি অপশন রাখা হয়েছে। প্রথমত প্লাস মাইনাস, দ্বিতীয়ত মন্তব্য আকারে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ। কারো কোন পোষ্ট ভাল মন্দ লেগে থাকলে তখন তিনি প্লাস মাইনাস দিয়ে সেটি প্রকাশ করতে পারেন। কিন্তু মন্তব্যের অপশনটা ব্লগারদের ইন্টারএকটিভ হওয়ার সুবিধার্তে, মানে তারা নিজেদের মতামত তুলে ধরবে। কথা বলবে, মুক্তভাবে। কথা হলো, এই মতামত প্রদান করার স্বাধীনতা কি কাউকে জুতাপেটা করার ফ্যাসিবাদিতার জন্য উন্মুক্ত থাকতে পারে? যাদের এই সেরা পোষ্ট নির্বাচনের রাজনীতি ভাল লাগে নাই, তারা তা কমেন্ট বা পোষ্ট দিয়ে জানিয়েছেন। কিন্তু তার জন্য তো তারা কেউ গালাগালি বা ইতরামির আশ্রয় নেয় নাই। কিন্তু তার প্রতিক্রিয়ায় জুতাপেটার শাসানি? সুবিধা হতো, এই যে ইতরামির মানসিকতা এইটারে সাইকোলোজিক্যাল বিহেভিয়রের সমস্যা হিশেবে দেখা গেলে। পুরা বিষয়টিরে উড়িয়ে দেওয়া যেত। কিন্তু সেটিতো সম্ভব নয়। কারণ এটি সত্য নয়। এটি হলো প্রতিক্রিয়ার একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক সামাজিক প্রটোটাইপ। তারা মূলতই নিজের মতামতের বিপক্ষে কোন কথা বা আলাপে যেতে চায় না। এটা তাদের পছন্দ বা দাবীর কারণে নয়। তারা মূলতই যা করে সেটি হলো অন্যদেরকে নিজেদের মতামত মেনে নিতে বাধ্য করে। এটি একটি পেশি শক্তির প্রদর্শনেচ্ছা। তারা মানস বা তাঁর মতো যারা বিপরীত অবস্থানে গিয়ে আলাপ করতে চায় তাদেরকে নিজেদের অবস্থানের বিপরীতে কোন জায়গা দিতে ইচ্ছুক নয়। এই শক্তিমত্তার প্রদর্শন প্রয়োজনীয়ভাবেই পলিটিক্যাল ডিটারমিনিজম। কিন্তু প্রশ্ন হলো কোন ধরণের পলিটিক্স? এখানেই আলোচ্য প্রতিক্রিয়ার পদ্ধতি এবং প্রকৃতি বিচার্য। এটি কোন কনভারসেশন সহ্য করে না। এটি একটি ফ্যাসিবাদী অবস্থান। প্রায় অর্ধ বছর আগে এ বিষয়ের একটি বিতর্কে আমি অংশ নিয়েছিলাম, সামইনে। ফাহমিদুল হকের একটি পোষ্ট বিষয়ে একটি আলোচনার অবতারণা করে, ফাহমিদুল হকের বহুলপঠিত একটি পোস্ট এবং ব্লগের লিখিয়েরা: একটি পর্যবেক্ষণ শিরোনামে। সেই পুরো আলোচনাটি এখানে পুনরুক্তি করতে চাই না, শুধু লিঙ্ক দিয়ে দিলাম।
এখন আসা যাক, ব্লগারদের বর্ষসেরা লেখা নির্বাচন এবং তৎসংলগ্ন পলিটিক্স নিয়ে। এই ভোটাভুটির মাধ্যমে জনাব ব্রিগেট সিক্সটিন যদ্দুর বোঝা যায়, শিরোনাম থেকে, ব্লগারদের এ বছরের লেখাগুলোর মধ্যে সেরা লেখা নির্বাচনের প্রয়াস পেয়েছেন। সামহোয়ারও, তার এই অবস্থানকে সমর্থন করেছে নিঃসন্দেহে, পোষ্টটিকে ষ্টিকি করার মাধ্যমে। ব্রিগেট সিক্সটিনের ব্যক্তিগত উদ্যোগ হলে এই আলোচনাটি অন্যভাবে হতে পারত। কিন্তু সামহোয়ার তার পোষ্টটিকে স্টিকি করার মাধ্যমে এটিকে নিজের এজেণ্ডা করে নিয়েছে। যেই এই উদ্যোগের কর্তা হোন, তার কাছেই আমার কিছু প্রশ্ন আছে। এই প্রশ্নগুলি তৈরী হতো না, যদি তারা একটা বিষয় স্পষ্ট করতে পারতেন তাদের পোষ্টে। তা হল, তারা যদি উল্লেখ করতেন এখানে এ বছরের ব্লগারপ্রিয় লেখাগুলো আমরা জড়ো করতে চাই। সেগুলো নোট আকারে নিম্নে দিলাম:
ক. ভোটাভুটি কি কোয়ালিটি নির্ধারণের কোন মানদণ্ড? কোয়ালিটি এবং কোয়ান্টিটির আন্তসম্পর্কটা যদ্দুর বুঝি ঋণাত্মক।
খ. যারা মনোনয়ন দিবেন তারা কিসের ভিত্তিতে এই মনোনয়ন দিবেন তা কি অন্য কেউ জানতে পারবে? একটা কোন কমন বেসিস থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে, সেইটা ফুলফিল করার উপর সেই অনুযায়ী কেউ বলতে পারে যে, এই মানদণ্ড অনুযায়ী এই লেখাটি সেরা মনে হয়েছে আমার।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই নভেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১:৫৫