somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সিনেমা

০৪ ঠা মে, ২০১৬ রাত ৯:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাংলাদেশে সাদাকালো টিভির যাত্রা শুরু সেই ১৯৬৪ সালে, আর রঙিন টিভি ১৯৮০ তে। আমাদের এলাকায় নব্বই এর দশকেও টিভি ছিলনা বললেই চলে। দু'এক জনের বাড়িতে যেটা ছিল তা ব্যক্তিগত ব্যবহারের কোনো সুযোগ ছিলনা, এক একটা সিনেমা হলেরমত সার্ভিস দিত । ভাল ব্রান্ডের টিভি বলতে নিপ্পন সাদাকালো টিভি। অনেকে টিভি পর্দার উপর এক ধরণের রঙিন কাচ সেট করে রঙিন টিভির মজা নিত, এতে করে ছবির বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন রং এর হতো । অদ্ভুত রঙের কম্বিনেশন যেমন একটা মানুষের কপালের দিকে লাল আবার মুখের দিকে হলুদ আবার সরে গেলে ভিন্ন রং। তাতে কী! রঙিন টিভিতো এরকম একটু আধটু হয়।

প্রথম যখন টিভি দেখি তখন আমি ক্লাস থ্রিতে পড়ি। শুক্রবার বিকালে পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবি, ছবিটার নাম মনে নেই তবে টেলি সামাদ ছিল। টেলি সামাদের কমেডি দেখে আমি ভাবছি পাগল, এবার হয়ত টিভির ভিতর থেকে বের হয়ে অামাকে ধরবে, আমিতো ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠে দৌড়।

আমরা ছোট বিধায় টিভির একেবার সামনে আসন দিয়ে (পা মুড়ে) একদল পিচ্চি বসে যেতাম, পেছনে গ্রামের অর্ধেক নারী-পুরুষ। টিভিতে ফুল ভলিউম দেয়া তবুও শেষ মাথায় শব্দ পৌছায়না। সবাই অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছে কখন খবর শেষ হবে। সাথে চলছে খবর পাঠকের চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার, কেন সে খবর তাড়াতাড়ি শেষ করছেনা। বহু ধৈর্য পরীক্ষার পর খবর যদিও শেষ হলো, শুরু হলো বিজ্ঞাপন - আবার গালি। ছোটদের অবশ্য খবর, বিজ্ঞাপন বা ছায়াছবি বাছবিচার নেই, টিভিতে যেটা আসে সেটাই মজার। সবথেকে অদ্ভুত বিষয় এই বাক্সটার মধ্যে মানুষ কিভাবে ঢুকল, শুধু মানুষনা সবকিছুই আছে এর ভিতর, এ এক অদ্ভুত রহস্য।

বহু চড়াই উৎরাই পেরিয়ে উপস্থাপিকা ঘোষণা দিয়ে গেলেন - এখন শুরু হচ্ছে পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবি........ সাথে সাথে হইহই রব এবং সবাই বলছে চুপ...চুপ... । ছবি শুরু অভিনেতা অভিনেত্রীর নাম উঠছে, একজন জোরে জোরে পড়ছেন যেন সবাই বুঝতে পারে, পড়তে না পারলেও নামগুলো সবার খুব পরিচিত ও প্রিয়। অভিনেতাদের নাম শুনেই সবার আগ্রহ চরমে, ছবি খুব জমবে। এর মধ্যেই নিজেদের আসন সংকট নিয়ে সামনে উপবিষ্ট ভদ্রমহোদয়গণ একজন আর একজনকে দিল খামচি, কিল, ঘুষি- কান্নাকাটি চিল্লাপাল্লা শুরু, বড়রা এসে দিল গণহারে পিটুনি, কারণ ছবি শুরু হয়ে গেছে।

ছায়াছবির প্রধান আকর্ষণ ছোটদের জন্য ফাইট, বড়দের জন্য গান। গানের মধ্যে নায়ক নায়িকাকে জড়িয়ে ধরে, যেটা উপস্থিত নারী পুরুষের মেনে নিতে কষ্ট হতো। লজ্জা-লজ্জা, এ লজ্জা থেকে পরিত্রানের উপায়ও বের হতো সাথে সাথেই, এটা হলো রানিং ক্যামেরার কারসাজি। নায়ক নায়িকাকে জড়িয়ে ধরছেনা, এমনকী নায়ক নায়িকাকে টাচ পর্যন্ত করছেনা, নায়ক দূর থেকে হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরারমত ভঙ্গি করছে আর রানিং ক্যামেরা টেনে দেখাচ্ছে নায়ক নায়িকাকে জড়িয়ে ধরেছে। উপস্থিত মহিলাদের লজ্জা কমল, যাক যেটা দেখাচ্ছে সেটা আসলে এমনটা নয়।

ছায়াছবি দেখতে গেলে সমস্যার অন্ত নেই, যেমন এন্টেনায় বাতাস লেগে ছবিতে শুরু হলো ঢেউ, মানুষগুলো যেন পাতলা কাগজ, পানির উপরে ঢেউয়ে আঁকা মানুষ। আবার ধরুন ভিলেন নায়ককে পিটাচ্ছে, নায়ক কোনোভাবেই পারছেনা, আমরা সবাই নায়ককে উৎসাহ দিচ্ছি, পারলে নিজেরাই টিভির ভিতর ঢুকে ভিলেনকে দু'ঘা দিয়ে আসি। নায়ক শক্তি সঞ্চয় করছে এমন সময় বিদ্যুৎ চলে গেল। তখন পল্লী বিদ্যুত আসেনি, PDB এর লাইন - চলত বাঁশের খুটি, গাছের ডালের উপর দিয়ে। বাঁশের লাঠি নিয়ে সবাই দৌড়াত ট্রান্সমিটারে বাড়ি দেয়ার জন্য, আমরা ছুটতাম পেছনে, সে আরএক মজা। ট্রান্সমিটারে যত জোরে বাড়ি দেয়া যাবে তত তাড়াতাড়ি বিদ্যুৎ আসবে।

তখনকার দিনে এত চ্যানেলের ভীড় ছিলনা। টিভি একটা, চ্যানেলও একটাই - বিটিভি। তবে ইন্ডিয়া কাছাকাছি হওয়ায় কায়দা করে এন্টেনা ঘুরাতে পারলে অবশ্য ইটিভি বাংলা বা ডিডি বাংলা ধরত।

সাদাকালো জীবন রঙিন হলো। টিভি ছোট হতে হতে আজ হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। আমাদের জীবনটাও কী এভাবে ছোট হচ্ছে?
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মে, ২০১৬ রাত ৯:২০
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে মৈত্রী হতে পারে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০


২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ সুদে-আসলে সব উসুল করে নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×