somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাস্টেইনিবিলিটি এবং তৎসম্পর্কীয় প্যাঁচাল

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

Sustainable Development-খুবই জনপ্রিয় একটা টার্ম যারা পরিবেশ নিয়ে কাজ করেন তাদের জন্য। কারণটা সহজেই অনুমেয়। পরিবেশ চটকদার কোন বিষয় যেমন ধরা যাক- নির্বাচনী ইশতেহার তেমনটা নয়। নির্বাচনী ইশতেহারের প্রসঙ্গটা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের প্রেক্ষিতে আনি নি বরং এর চটকদারিতার জন্যই আনা। আমার মনে হয় ইশতেহার প্রত্যেক দলের নেতা-নেত্রীদের একটা কল্পরাজ্য যেখানে তারা হুট-হাট যেকোন উন্নয়ন করে ফেলেন, দেশকে উন্নয়নের সূঁচ দিয়ে এফোঁড়-ওফোঁড় করে ফেলেন। অর্থাৎ, শর্ট-কাট একটা সল্যুশান তাদের মাথায় কাজ করে। এই যে শর্ট-কাট- এর ভয়াবহতার কারণেই সাস্টেইনেবল কথাটার তাৎপর্য।
এবার আসা যাক, আজকে হঠাৎ কোন কারণে এ নিয়ে কচকচানি শুরু করলাম।
সত্যি কথা বলতে কি যেকোন মুহূর্তের আপতকালীন একটা ব্যবস্থা হিসেবে “শর্ট-কাট” পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে, অন্যথা এটা একটা রাবিশ ধারণা। খুব ছোট্ট একটা উদাহরণ বিবেচনা করা যাক- ধরা যাক, বন্যায় নদী উপকূলবর্তী একটি বিশাল এলাকা প্লাবিত হয়ে গেল। ফলে উপকূলবর্তী এলাকার মানুষদের সেখান থেকে অন্যত্র স্থানান্তরের প্রয়োজন। স্বাভাবিকভাবেই তাদের সেখান থেকে স্থানান্তরিত করা হলো এবং পানি যখন নেমে এল তখন তারা দেখলো যে তারা যেসব জমি বা উপকূলবর্তী যেসব মৎস্য খামারে তারা কাজ করতো সেসব আর পূর্ব অবস্থায় নেই অর্থাৎ সোজা কথায় তা আর ব্যবহার উপযোগী অবস্থায় নেই। এখন যদি প্রশাসন এই অবস্থা কাটিয়ে উঠতে তাদের হাতে কিছু টাকা ধরিয়ে দেয় দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে তবে তা হবে “শর্ট-কাট” একটি পদ্ধতি কেননা পাঠক চিন্তা করুন, স্বাভাবিকভাবেই গ্রামের অসহায় উপকূলবর্তী গ্রামীণ মানুষ যারা সমবায় সমিতি বা এরকম কনসেপ্টগুলোর সাথে পরিচিত নয় তারা সে টাকা দিয়ে হয়তো কয়েকদিন বড়জোড় কয়েক মাস চলতে পারলো। তারপর তাদের কি হবে?
প্রশাসন হয়তো বলতে পারে যে, তারা তো তাদের টাকা দিয়ে দায়িত্ব পালন করেছে কিন্তু আসলে কি সে দায়িত্ব পালন “যথার্থভাবে” সম্পন্ন হয়েছে? না হয় নি। কারণ বন্যা তাদের যে ক্ষতি করেছে সে ক্ষতি তারা কাটিয়ে উঠতে পারে নি। কিন্তু যদি তাদের যতটাকা দেয়া হয়েছিলো তা দিয়ে কৃষি বিভাগের সহায়তায় জমি পুনঃ ব্যবহারোপযোগী করার উদ্যোগ নেয়া হতো কিংবা ধরা যাক, তাদের মৎস্য খামারের জন্য প্রয়োজনীয় কারিগরি সহায়তা দেয়া হতো তবে তাদের এতোটা অসহায়তার সম্মুখীন হতে হত না। কারণ বন্যায় তাদের জীবিকার যে ক্ষতিটি হয়েছিলো তা দুর্যোগ-পূর্ব অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়া সম্ভব হয়েছে। খুব ভালো করে লক্ষ করুন, সরকারী টাকার বিন্দুমাত্র অতিরিক্ত ব্যয় হয় নি কিন্তু ঠিকই গ্রামবাসীর জন্য একটি সুন্দর ব্যবস্থা করে দেয়া গিয়েছে। আর এটাই হলো সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্ট!!
দেখলেন তো, ছোট্ট একটি সুন্দর ধারার চিন্তা পুরো অবস্থাকে বদলে দিলো। যেখানে “শর্ট-কাট” পদ্ধতির প্রয়োগ পুরো অবস্থাকে শোচনীয় করে তুলতো সেখানে সামান্য সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্টের কনসেপ্ট পুরো দৃশ্যপট পালটে দিলো। ঠিক এ কারণেই এর এত গুরুত্ব।

যাইহোক, সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্টের পিছনে এতো লেখা লিখলাম আজকে আলোচ্য বিষয়ের গুরুত্বটা একটু পরিষ্কার করে বুঝানোর জন্য।
মৌসুম এখন শীতকাল। চারদিকে শৈত্য প্রবাহের কথা-বার্তা শোনা যায়। টিভি খুললেই সুদর্শন সংবাদ পাঠক কত সহজেই আমাদের এই ভয়ঙ্কর তথ্যটি দিয়ে দেয়। আমি থাকি দক্ষিণাঞ্চলের দিকে কাজেই শীতের প্রকোপ এখানে উত্তরবঙ্গের মতো প্রকট নয় আর সেকারণেই হয়তো এর প্রকটতা কিংবা ভয়াবহতা আমাকে ততোটা অনুভব করতে হয় না। তবে এতে আমার “শীতানুভূতিতে” বিন্দুমাত্র প্রভাব পড়ে নি কারণ আমি ব্যক্তিগতভাবে খুবই শীতকাতুরে মানুষ! বাসায় যখন সবাই কাঁথা দিয়ে ঘুমায় আমি তখন লেপ-কম্বল দুইটা মিশিয়েই শীত নিবারণের অব্যর্থ প্রচেষ্টা চালাই!
কাজের কথায় আসি, সেটা হলো একটা সংবাদ আমাকে খুবই ভাবায়। শীতের মাঝামাঝি সময় শৈত্য প্রবাহের সময়গুলোতে উত্তরবংগ থেকে খবর ভেসে আসে, “শীতের ভয়াবহতায় অত সংখ্যক মানুষের মৃত্যু”। জিনিসটা ভাবায় ঠিক একারণেই যে, চিন্তা করা যায়, শীত কতোটা তীব্র হলে একজন মানুষ তার কষ্ট আর সহ্য করতে না পেরে ইহলীলা সাঙ্গ করে?! এ উত্তর আমার কাছে নেই। ঠিক উত্তরবঙ্গেই বা কেন যেতে হয়, আমি বাসা থেকে বের হলেই তো হয়, শীতের সকালে মানুষ কতোই না আপ্রাণ চেষ্টা করে শীত নিবারণের। এক টুকরো কাপড়ের অভাবে তাদের জিড়জিড়ে হাড় কাঁপে। চিন্তা করা যায়, শুধু একটুকরো কাপড়ের জন্য। একরত্তি কম্বলের জন্য উত্তরবঙ্গে আমার এক অসহায় চাচা মৃত্যুকে আলিংগন করেন? আমার জানা নেই। আমার জানতে ভয় হয়!
কাজেই সমস্যা যখন হয় তখন তার এক সমাধানও বের হয়ে আসে। প্রকৃতি তার নিয়মে শূন্যতা পছন্দ করে না। কাজেই সরকারীভাবে যখন কোন উদ্যোগ নেয়া হয় না(সরকারী কোন উদ্যোগ আসলেই নেয়া হয় কিনা সে ব্যাপারে আমার কাছে কোন নির্ভরযোগ্য তথ্য নেই এবং আমিও তা কোনদিন শুনি নি। কাজেই এরকম একটা বার্ডেন চাপিয়ে দেয়ার সাহস পাচ্ছি!) তখন বেসরকারীভাবে অনেক সংগঠন এগিয়ে আসে এসব মানুষদের জন্য। কিংবা বন্ধুদের একটা মোটামুটি সার্কেল এগিয়ে আসে। ফেসবুকে গ্রুপ খোলা হয়, ইভেন্ট খোলা হয় এবং আমাদের বয়সী মানুষজন কি মমতা দিয়ে কি ভালোবাসা দিয়ে শীতের কাপড় বিতরণে এগিয়ে আসে। তাদের চিন্তাধারা কত সুন্দর; কতোই না মমতা তাদের বুকে! রাস্তার পাশের মানুষটাকে একটু উষ্ণতা দেয়ার জন্য তাদের চেষ্টার কোন কমতি থাকে না। সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থ এক কর্মযজ্ঞ শুরু হয়ে যায় শীত আসতে না আসতেই।
তবে একটু খেয়াল করি চলুন। আবারো মাইন্ড প্যালেসে গিয়ে চিন্তা-ভাবনা শুরু করি। ধরা যাক, একজন মানুষকে কম্বল দেয়া হলো। শীতে পারপাস সার্ভ হলো এবং যখন ব্যবহার শেষ তখন তিনি সেই কম্বল দিয়ে কি করবেন? তার নিজেরই তো থাকার জায়গা নেই। কোনদিন স্টেশানে তো কোনদিন সদরঘাটে কিন্তু সেই কম্বলখানা কিন্তু তার সাথে লেগেই থাকে। আমার ঠিক জানা নেই সেই কম্বলখানা পরে কি কাজে আসে। তাহলে পরের শীতেও তাকে একইভাবে কম্বলের পিছনে ছুটতে হয় এবং আবারো সেই Cycle এর সূত্রপাত ঘটে। অর্থাৎ কত সুন্দর একটা প্রচেষ্টা মাঠে মারা যাচ্ছে।
তাহলে দেখুন, আমাদের কর্মউদ্যমী মানুষ আছে, সুন্দর মনের মানুষ আছে, আবেগাক্রান্ত হৃদয় আছে- আর তাই তো নিজের সমস্ত অক্ষমতাকে দূরে ফেলে যার যার অবস্থান থেকে তারা কাজ করছেন। কিন্তু সেটা তো সাস্টেইনেইবল কোন উদ্যোগ না। ফলে বছরের পর বছর চক্রের পুনরাবৃত্তি হয়।
সরকারের সমাজকল্যাণ অধিদপ্তর আছে, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় আছে তাদের তো এসব নিয়েই কাজ, নাকি? কাজেই এই মানুষগুলোকে ব্যবহার কারেই হোক, তাদের সাথে সমন্বয় করেই হোক একটা উদ্যোগ তো গ্রহণ করাই যায়। অবশ্যই সাস্টেইনেবল উদ্যোগ যেটাতে বছর অন্তর অন্তর চাহিদার উদ্ভব হবে না; বরং এককালীন দীর্ঘপ্রচেষ্টায় বহুকালীন অভাবের নিরসন ঘটে। আমার কাছে কোন রূপরেখা নেই তবে সমস্যা চিহ্নিত কিংবা তার দিকে একটু আলো তো ফেলা গেলো। সেটাই বা কম কি!!!
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে মৈত্রী হতে পারে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০


২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ সুদে-আসলে সব উসুল করে নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×