somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রুম নাম্বার ১৪৫(আনুষ্ঠানিক প্রথম দিন)- ৩য় পর্ব

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সকালে আমি আর মাহিন ঘুম থেকে উঠে নিচে নেমে দেখলাম কেউই রুমে নাই। মোটামুটি রাগ হতে লাগলো যে আমাদের ফেলেই স্মৃতিসৌধে চলে গেলো নাকি। ফোন দিলাম মরিনহোকে। তিনি জানালেন তারা বটতলায় খাবারের সন্ধানে। অতঃপর সেখানে গমন। এরই মধ্যে মাহিন আমাকে জানালো রাত্রে ঘুমানোর সময় সে খাট থেকে পড়ে গিয়ে কোমড় ভাঙ্গার অবস্থা করে রেখেছে।

আবারো ফতোয়া জারি হলো। সাড়ে আটটার আগেই স্মৃতিসৌধে পৌঁছাতে হবে নইলে ঘুরে এসে ডিবেট করা যাবে না। আমরা কোনমতে মুখ ধুয়ে কাপড় পালটিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বের হলাম। এক বিআরটিসি’র বাসে করে নবীনগর। এখানে বলে রাখা ভালো, স্মৃতিসৌধ জায়গাটা নবীনগরে কিন্তু ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে রাস্তার কোনদিকের বাসে উঠতে হবে সে ব্যাপারে আমাদের কোন ধারণাই নাই কাজেই এবারো আমরা মহান কবি ভাইয়ের মাহাত্ম্য বুঝলাম। কারণ আমাদের মাথায় গুঁতা মেরে বাসে উঠালেন তিনি। যাই হোক, আমরা পৌঁছলাম। ঢুকেই মাথা খারাপের মতো অবস্থা। এত্ত বড় জায়গা। “Travel broadens our mind”- মর্মার্থ হাড়ে-মাংসে উপলব্ধি করলাম।

ঢুকেই আমার কেমন কেমন লাগলো। যে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এত কিছু সে যুদ্ধের বীরদের সৌধে আমরা। অনুভূতি একটু না; অনেকখানিই অন্যরকম। কে যেন জুতা নিয়ে আরো ভিতরে ঢুকে যাচ্ছিলো- সৌম্য না হয় টেলি- আমি স্মৃতিসৌধেই গালিগালাজ করলাম। তবে কবি ভাইয়ের ব্যাপার-স্যাপার আলাদা। তিনি মুডের মানুষ কাজেই কথায় না কাজে বিশ্বাসী; তক্ষুণি মাথায় গাঁট্টা। সত্যি বলতে কি স্মৃতিসৌধের আরো আগে কয়েকজন নাম না জানা মুক্তিযোদ্ধার কবরে এপিটাফের মতো করে লেখা “এক সাগর রক্তের বিনিময়ে, বাংলার স্বাধীনতা আনলো যারা, আমরা তোমাদের ভুলবো না”- দেখে মনটা হয়তো একটু বেশি-ই আবেগাপ্লুত হয়ে গিয়েছিলো; আমাদের সবারই। আমি লিখে দিতে পারি, যে কারোরই চোখের কোণাটা একটু হলেও চিকচিক করবে!

তবে আমাদের ছবি তোলার পালা শুরু হলো। এতো দূর এসেছি, এতো বড় একটা জায়গায় এসেছি, আর ছবি তুলবো না, তা কি হয় নাকি। ফটোগ্রাফারের ভূমিকায় আবারো হোসে মরিনহো। আমরা তার মাহাত্ম্য উপলব্ধি করে তাকে আবারো ধন্য করলাম। স্মৃতিসৌধের খালের পানিতে এতো ময়লা দেখে সরকারের চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করে আমরা জ্বালাময়ী ভাষণ দিলাম। এবং ফটোগ্রাফারের নির্দেশে নানা ভঙ্গিমায় নানা ছবি তুললাম। তারপর নিষেধ থাকা সত্বেও সৌধের ভিতরে ঢুকে পড়লাম। অনুপ্রেরণা অবশ্যই কবি ভাই। সে যাই হোক, কবি ভাই অনেক ছবি তুলেছে এরপর আমাদের ঋণ শোধ করার পালা। আমরা তার ছবি তুলে দিলাম। স্মৃতিসৌধকেও মানুষ ডেটিং প্লেস বানিয়ে ফেলেছে দেখে মানুষকে কতক্ষণ গালিগালাজ করলাম। তবে টেলি অতিশয় উত্তেজিত হয়ে গেলো। ফেরার পালা। আবারো বাসে করে ক্যাম্পাসে ফেরত আসলাম। গিয়ে দেখি মিলনায়তনে কেউ নেই। বুঝলাম র্যা লি ১০ টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সবাই কিছুক্ষণ আগেই উদ্বোধনী র্যা লিতে গিয়েছে। আমরা বসে রইলাম। এবারে মাহিনকে যন্ত্রণা দেয়ার পালা। আমরা তার ইশমার্ট ফোন নিয়ে ফ্রুট স্লাইসে মজে গেলাম। সবার মধ্যেই নতুন প্রতিযোগীতা শুরু হলো কে কাকে ফ্রুট স্লাইসে হারাতে পারে। বেশিরভাগ খেলায় এগিয়ে ছিলো “ভার্চুয়াল অ্যাথলেট” সৌম্য।

***

যাই হোক, তার পরপরই ফিক্সচার রেডি হবে। আমাদের ডিবেট শুরুতেই পড়লো মতিঝিল গভ. বয়েসের সাথে। তখন থেকেই আমরা খেয়াল করলাম মানুষজন আমাদের দিকে সহানুভূতির দৃষ্টিতে তাকাতে লাগলো। আমরা তখনো কাহিনী বুঝি নাই। পরে দেখলাম, তারা ঢাকার সবচেয়ে ভালো স্কুল টীম আর আমরা চট্টগ্রাম নামের এক বিশেষ গ্রাম থেকে ডিবেট করতে এসে প্রথম চান্সেই বাঁশ খাবো এটা মেনে নেয়া যেকোন মানবিকতাসম্পন মানুষের পক্ষেই মেনে নেয়া কষ্ট। আমাদের সহ-বিতার্কিকরা এতো নির্দয় না কাজেই আমরা হালকা-পাতলা সকরুণ দৃষ্টি উপহার পেলাম। যা হোক এরই মধ্যে ঢাকার বেশ কয়েকজন পুরনো আলাপীর সাথে দেখা হয়ে গেলো। বিশেষভাবে তৃণা আপুর কথা বলতেই হয় যাকে আমরা লিটারেলি হাঁদারাম বানিয়ে ছেড়েছিলাম অনুপম ভাইয়ের বন্ধু বলে (যদিও আমরা তার জুনিয়র!!)।

ডিবেট হলো হাড্ডাহাড্ডি। নাম্বার ব্যবধানে এগিয়ে থেকেও ব্যালটে হেরে গেলাম। তবে “বেস্ট লুজার” এর একটা চান্স থাকায় আমরা আশা হারালাম না। আমাদের জুনিয়রর আমাদের ডিবেট দেখে ভয়ে আধমরা। তাদের টপিকও একই।

মোট টীম খুব সম্ভবত ২৮ টা। নক-আউট ডিবেট শেষ হতে হতে কিভাবে যেন ৩-৪ টা বেজে গেলো। তারপর ফিক্সচার বানাতে ছোটখাটো ঝামেলায় আরো সময়। এরই মধ্যে লাঞ্চ শেষ। শেষমেশ বিকেলে মতিঝিল মডেল হাইস্কুলের সাথে ডিবেট। আমরা মহা উৎসাহে ডিবেট করতে গেলাম। চোখেমুখে “বেস্ট লুজার” হওয়ার তৃপ্তি!!! কিন্তু জুনিয়ররা হেরে গেলো শুরুতেই; তাদের জন্য মন খারাপ হলো। বেচারারা কতো আশা নিয়ে ডিবেট করতে আসছে; আর শুরুতেই কিনা হেরে গেলো। এখানেই জুডোর সাব্বির ভাইয়ের অ্যাডজুডিকেশনে ডিবেট করা আর আমরা সবাই বাঁশ খেয়ে এমন দশা সাব্বির ভাইয়ের নামই দিয়ে দিলাম “বাঁশ বাবা”!! যদিও ডিবেটটা জিতে যাই।

এবারে ঘটলো এক আশ্চর্য ঘটনা! কোয়ার্টার ফাইনালে আমাদের সাথে আবারো ডিবেট মতিঝিল গভ. বয়েসের সাথে। সত্যি কথা বলতে কি, জুনিয়র ভাইয়ারা এত্ত ভালো ডিবেট করে তা বলার বাইরে। ভার্সিটি লেভেল বললে মোটেও অত্যুক্তি করা হবে না। তবে তাদের প্রতি সম্মান-টম্মান দেখানো সব চুলায় গেলো। আমাদের মতে গত ডিবেটে আজাইরা সংজ্ঞায়ণ দিয়ে ডিবেট নিয়ে গেসে। কাজেই রণমূর্তির একটা ব্যাপার-স্যাপার চলেই আসে। তিন টপিকে একটাতে মৌলবাদ আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র টাইপের হাবিজাবি। কাজেই আমি “হাহ” টাইপের একটা ভাব নিলো। মানসিব চিৎকার দেয়ার চেষ্টা চালাতে গিয়ে পরে আবার নিজেই বললো, “এতো এক্সাইটমেন্ট দেখালে বুঝে যাবে”!! বাই দ্য ওয়ে, আরেকটা ছিলো সংস্কৃতি জীবন-মরণ টাইপের। আমরা ভয়ে এই টপিকে ডিবেট করতে হয় কিনা! এরই মধ্যে টস করতে গেলাম আমি। আমার টস-ভাগ্য মোটামুটি কাজ চালানোর মতো। টস জিতে গেলাম। যথারীতি সেই ভাব নিয়ে গভ. নিলাম। ভাবটা এমন, “গতবার তো প্যাঁচ দিসিলা; এইবার এমুন প্যাঁচ দিমু!! স্ক্রু গজ দেখসো, কিন্তু আমাদের তো আর দেখো নাই”!! আমরা চলে গেলাম মিলনায়তনের সামনের পুকুর লাগোয়া সিড়িতে। এরই মধ্যে মানসিব কোত্থেকে জানি খবর আনলো তাদের সংজ্ঞায়ণ আসে ফোনের ওপার থেকে। তবে এবার যেহেতু গভ কাজেই আর জারিজুরির চান্স নাই। আমরা বসলাম। এমন ভাষা যেন দুইদিকেই কাটে। আমরা মহা উল্লাসে উঠলাম স্টেজে। আবারো ফার্স্ট ডিবেটের স্টেজ। স্বীকার করতে দ্বিধা নাই ছোটভাইরা সেই সংজ্ঞায়ণের এত জটিল ডিফেন্স দিসে আমরা পুরা থ!! আর এই ডিবেটটাই আমার করা সবচেয়ে বেশি সবচেয়ে বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ডিবেট। একটা লজিক আসে; আরেকজন ওইটারে কাটে, একটা আসে, আবার ঐটারে কাটে। লজিকের এরকম ফুলঝুড়ি আমি এখনো কোন ডিবেটে দেখি নাই। সত্যি বলতে কি, এখনো দেখি নাই!!
এদিকে টেনশানে আধ-মরা। এই ডিবেটে হারলে মান-সম্মান কিচ্ছু থাকবে না। কোয়ার্টার ফাইনালেই বিদায় নিয়ে ঘরের ছেলে ঘরে যাইতে হবে। আব্বু-আম্মুকে অনেক কষ্টে ম্যানেজ করা হইসে। কিন্তু কিসের কি; হেরে গেলে তো আম-ছালা প্লাস আম গাছও চলে যাবে!

রেজাল্ট দেয়ার টাইম আসলো। এবং পাঠক...... হ্যাঁ, ডিবেটটা জিতেই গেলাম।

তারপর আর কি! হলের ছেলে হলে ফিরলাম। যথারীতি ক্রাশ খাওয়া পানিতে দশ ঘণ্টাব্যাপী গা ডুবিয়ে গোসল। তারপর আবার বের হলাম ক্যাম্পাস পরিভ্রমণে। রাতের অন্ধকার; কিছুই তাতে দেখা যায় না। তাতে কি! একসাথে ঘুরাঘুরি তো হবে! বটতলায় আবারো রাতের খাবার। মাহিন আর সৌম্যের টানের ব্যাথা উঠলো। আমরা আবারো মাঠে ঘুরাঘুরি করলাম। এক বোতল ফান্টার চেষ্টায় গলদঘর্ম হলাম। কাঠ,খড় সকল প্রকার জ্বালানী পুড়িয়ে অবশেষে ফান্টা উদ্ধার করা গেলো।


*** [লেখা কাটছাঁট করার সময় কবি ভাই আবারো রণমূর্তির ভূমিকায়!!পটলডাঙ্গার টেনিদা তিনি না হলেও আফগানিস্তানের ফতোয়া’দা তো বটেই! সে যাই হোক, তিনি জানালেন সৌম্য তার স্কোর নিয়ে ভাব দেখাতে থাকলে কবি ভাই এক খেলায় তাকে ১৫০ নাম্বারের ব্যবধানে হারিয়ে জয়মাল্য গলায়-হাতে-ঠ্যাঙ্গে-কাঁধে-বুকে-পিঠে সবখানে পরিধান করেন। এই অংশটুকুর দায়িত্ব আমি নিলাম না কারণ দুইজনই ক্রেডিটবাজ!!! ]


"যেটুকু রোদ ছিলো লুকনো মেঘ
দিয়ে বুনি তোমার শালে ভালোবাসা
মার চোখে-ঠোঁটে-গালে তুমি লেগে আছো "

দ্বিতীয় পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ২:০৬
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে মৈত্রী হতে পারে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০


২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ সুদে-আসলে সব উসুল করে নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×