কয়েকদিন অগে দেখলাম, হিরো আলম মনোনয়নপত্র তুলেছে। বিষয়টি নিয়ে মিডিয়া বেশ সরগরম। কয়েকটি চ্যানেল তো হিরো আলমকে স্টুডিওতে ডেকে এন সাক্ষাৎকার নিলো, সেখানে হিরো আলম বেশ আবেগঘন উত্তর দিলো। সেই উত্তর শুনে অনেকেই হয়ত হিরো আলমকে এমপি হওয়ার যোগ্যতার সার্টিফিকেট দিয়ে দিয়েছেন।
একটা বিষয়, আমি সব সময় দেখি। বাঙালীরা সব কিছু আবেগ দিয়ে জাজ করে। এটা ভুল। আবেগ দিয়ে সব কিছুর বিচার করা যায় না। একটা উদহরণ দেই-
কিছুদিন আগে ঘটে গেলো নিরাপদ সড়ক আন্দোলন। সব পাবলিক মাঠে নামলো। সবাই ড্রাইভারের লাইসেন্স চায়, গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট চায়। ধরুন, তখন যদি কোন ড্রাইভার বলতো-
“আমি গরীব মানুষ, ছোট বেলায়ে আমার মা আমাকে মানুষের বাড়িতে কাজ করে খাওয়াইছে, আমি যদি পড়ালেখার সুযোগ পাইতাম তবে ড্রাইভিং সার্টিফিকেট নিতাম, ভালোভাবে গাড়ি চালাতে পারতাম, ফিটনেস সার্টিফিকেট নিতাম। এই বলে সে কেন্দে দিলো।”
ড্রাইভারের এত সুন্দর আবেগঘন কথা শুনে কি আপনি লাইসেন্স-ফিটনেসের দাবি তুলে নিতেন ?
গাড়ি ছেড়ে দিতেন ?
অবশ্যেই নয়। কারণ গাড়ি ড্রাইভিং সিটে যে বসে থাকে তার ইতিহাস-কাহিনী শুনে লাভ নেই। সে যদি সঠিকভাবে গাড়ি চালাতে না পারে, তবে শত শত মানুষের জীবন হুমকির মুখে পড়বে, তাই এ ধরনের লোকদের গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়াটাই উচিত।
তাহলে একটা গাড়ি চালতে যদি এত যোগ্যতা লাগে, আবেগের মূল্য না থাকে, তবে একটা এলাকার জনগণের ড্রাইভার মানে এমপি হতে গেলে কেন যোগ্যতা লাগবে না ? কেন সেখানে আবেগ দিয়ে কুপোকাত হতে হবে ?
কোন কাজ করতে গেলে দুটো যোগ্যতা লাগে-
১) জ্ঞান
২) দক্ষতা
হিরো আলমকে যদি প্রশ্ন করা হতো- “আচ্ছা এমপি শব্দের অর্থ কি ?”
কিংবা পার্লামেন্ট মেম্বার বানান করে বলেন তো ?
কিংবা একজন এমপি’র কাজ কি ?
কিংবা আপনার কাজ হবে আইন প্রণয়ন করা, এই আইন বলতে আপনি কি বুঝেন ?
যদি হিরো আলম এ প্রশ্নগুলোর উত্তর না দিতে পারতো, তখন বলতে পারতেন, আপনার ‘এমপি’ খায় না মাথায় সে বিষয়ে কোন জ্ঞান নেই, তাহলে আপনি এমপি মনোনয়ন নিলেন কিভাবে ?
সত্যিই বলতে হিরো আলমকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। এক দৃষ্টিতে সে ঠিক কাজই করেছে।
বাস্তবে হিরো আলম হচ্ছে একটা জোকার, যার অভিনয় দেখে, কথা শুনে মানুষ হাসির খোরাক পায়,
কিন্তু সেই হিরো আলাম যখন টিভিতে সংসদে এমপি-মন্ত্রীদের কার্যক্রম দেখে, এমপি-মন্ত্রীদের লাগামহীন জোকারিপনা দেখে, তখন সে নিজেই ভাবে, “এখানে তো আমার থেকে আরো বড় বড় জোকার আছে, তাহলে আমার এমপি হতে সমস্যা কোথায় ?
একটি বিষয় আপনাকে মানতে হবে,
ঢাবির ফর্ম তুলতে গেলে নূণ্যতম জিপিএ লাগে
বুয়েট ফর্ম তুলতে গেলে নূণ্যতম জিপিএ লাগে
বিসিএস ফর্ম তুলতে গেলে নূণ্যতম যোগ্যতা লাগে
তাহলে এমপি ফর্ম তুলতে গেলে কেন নূণ্যতম যোগ্যতা লাগবে না ?
যে-
আইন কি ? শাসন ব্যবস্থা কেমন ? আইন ও বিচার ব্যবস্থার মধ্যে সম্পর্ক কি ? আইন প্রণয়ন কিভাবে করতে হয়, প্রতিনিধিত্ব কিভাবে করতে হয়, নির্বাহীর দায়িত্বশীলতা কিভাবে দাবি করতে হয়, স্বচ্ছ সিদ্ধান্ত-প্রক্রিয়া ও তদারকব্যবস্থা কিভাবে করতে হয়, এগুলো সম্পর্কে যাদের স্বচ্ছ ধারণা না থাকবে তারা কিভাবে মনোনয়ন পত্র তুলবে ?
আমি একটা কথা সব সময় বলি,
মূর্খ বন্ধুর থেকে শিক্ষিত শত্রু ভালো।
আমরা যারা দেশ দেশ করে মুখে ফেনা তুলি, অমুক পলিসি করলে দেশ ভালো হবে, তমুক পলিসি করলে দেশ খারাপ হবে বলে চিল্লাই,
কিন্তু যারা দেশ চালায়, তারা কি আদৌ সেগুলো বুঝে ? তাদের কি সেসব সম্পর্কে নূণ্যতম জ্ঞান আছে ? সে সব এমপি-মন্ত্রীর শিক্ষাগত যোগ্যতা কি ?
যদি নূন্যতম যোগ্যতা থাকেও তবে মন্ত্রী হওয়ার ক্ষেত্রে তৎসংশ্লিষ্ট এক্সপার্ট হওয়ার মত কোন যোগ্যতা আছে কি না ?
যেমন, বর্তমানে ইংরেজী সাহিত্যে লেখাপড়া করে অর্থমন্ত্রী, সার্টিফিকেটহীন হয়ে শিক্ষামন্ত্রী, মৃত্তিকা বিজ্ঞানে পড়ে বাণিজ্যমন্ত্রী হওয়া গেছে, এ লোকগুলো তাদের স্ব স্ব মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব কতটুকু বুঝবে ?
আসলে, সবকিছুর জন্য যোগ্যতা বেধে দেয়া আছে। শুধু নেই এমপি-মন্ত্রী হওয়ার জন্য যোগ্যতা। এতে রাজনীতির খুটির জোরে আসা অযোগ্য লোকে দেশের ড্রাইভিং সিট হয়েছে সয়লাব। এই সমস্যা নিরসরে এমপি হওয়ার জন্য যেমন নির্দ্দিষ্ট যোগ্যতা বেধে দেয়া উচিত, ঠিক তেমনি মন্ত্রী হওয়ার জন্য তৎসংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হওয়ার যোগ্যতা বেধে দেয়া জরুরী। যত দ্রুত সম্ভব এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে হবে, নয়ত অদূর ভবিষ্যতে সংসদ ভবনের নাম পরিবর্তিত হয়ে ‘জোকার ভবন’ হওয়া স্বাভাবিক।
সব শেষে বলবো, প্রতিক্রিয়াশীল তরুণ প্রজন্মকে এ ব্যাপারে চুপ থাকলে হবে না, জোরালো আওয়াজ তুলতে হবে। মনে রাখতে হবে, “আমরা যদি না জাগি মা, কেমনে সকাল হবে?” চুপ থাকলে অন্ধকার দিনে দিনে ঘণিভূত হতেই থাকবে, তাই অন্ধকার দূর করতে কিছু কিছু দাবী তোলা জরুরী ।
.
.
.
.
লেখক: নয়ন চ্যাটার্জি , ফেসবুক থেকে সংগৃহীত।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:৪১