আমেরিকার সাথে যুদ্ধ করে জয়ী হওয়ার জন্য কোন অস্ত্রের প্রয়োজন নেই, শুধুমাত্র ডলারের পতন ঘটিয়ে দাও।
কিভাবে আমেরিকা স্বর্ণ মজুদ ব্যতীত শুধুমাত্র কাগজে ডলার ছাপিয়ে ডলারের চাহিদা ও ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি করছে? আর যতদিন এই ডলারের চাহিদা বিশ্বব্যাপী থাকবে ততদিন আমেরিকাই প্রত্যাক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিশ্বশাসন করবে।
বই রিভিউ, নাম : টাকার গন্ধ, লেখক : ড. মাহমুদ আহমদ, প্রকাশনী : আহসান পাবলিকেশন
.
লেখক বইটিতে টাকার ”গন্ধ” এই গন্ধ বলতে সুদকে বুঝিয়েছেন। আগের দিনে মানুষ স্বর্ণকারের নিকট সোনা জমা দিয়ে নাম-ঠিকানা ও পরিমাণ সহ একটি রশিদ নিতেন। এই রশিদ বিভিন্ন লেনদেনে ব্যবহার হত। স্বর্ণের বিপরীতে সেই রশিদগুলোই একসময় হয়ে উঠল টাকা। চাহিবা মাত্র ইহার বাহককে দিতে বাধ্য থাকিবে। অর্থাৎ আমার কাছে ৫০০/- টাকা আছে মানে সেই পরিমাণ স্বর্ণ জমা আছে।
.
উপরোক্ত সূত্রের উপর ভিত্তি করেই টাকা/ডলার ছাপানো হয়। ১৯৭১ সালে কিছু দেশ তাদের ডলার মজুদের পরিবর্তে যুক্তরাষ্ট্র থেকে স্বর্ণ ফেরত পেতে চেস্টা করে কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ডলারের বিপরীতে স্বর্ণ ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানায়। চাহিবা মাত্র ইহার বাহককে দিতে বাধ্য থাকিবে-- ১৯৪৫ সালের “ব্রেটেন উড কনফারেন্সের” এই চুক্তি লঙ্ঘন করে যুক্তরাষ্ট্র। উপরোক্ত চুক্তি ভঙ্গের ফলে ডলারের গ্রহণযোগ্যতা কমে যাওয়ার কথা কিন্তু কমলোনা কেন ??
.
১৯৭১ সালের ১৫ই আগস্ট #যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ডলারের ‘স্বর্ণ ভিত্তি’ বাতিল করে। কিন্তু স্বর্ণ রিজার্ভ ছাড়া ডলার ছাপালে দেশটিতে মূল্যস্ফিতি দেখা দেয়ার কথা। সেটা কেন হচ্ছে না ?
.
আমেরিকা এটা নিয়ন্ত্রণ করেছে- ডলারের প্রচুর চাহিদা সৃষ্টি ও যোগান হ্রাসের মাধ্যমে। যদি ডলারের প্রচুর চাহিদা সৃষ্টি করা যায়, তবে স্বর্ণ রিজার্ভের প্রসঙ্গটি এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব।
.
ডলারের মান বাড়াতে সৌদি আরবসহ ওপেকভুক্ত তেল রপ্তানীকারক দেশগুলোকে শুধুমাত্র ডলারে তেল বিক্রি করাতে বাধ্য করা হলো।
.
এতে একদিকে আমেরিকা নিজের ছাপানো কাগজ ‘ডলার’ দিয়ে ফ্রি তেল ক্রয় ও পণ্য আমদানীর সুযোগ পেল। অপরদিকে অন্যরাষ্ট্রগুলো তেল কিনতে গিয়ে ডলারের শরনাপন্ন হলো, ফলে ডলারের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়ে ডলারের অবস্থান শক্তিশালী হতেই থাকলো।
.
বিনামূল্যে পণ্য আমদানী ও তেল ক্রয় দেখে ফ্রান্স ও জার্মানীর শাসকদের হিংসে হলো ঐ ক্ষমতায় ভাগ বসাতে। ১৯৯৯ সালে তারা চালু করলো ইউরো মুদ্রা ইউরো মুদ্রা চালু হওয়ার পর ২০০০ সন থেকে সাদ্দাম হোসেন ইউরোতে তেল বিক্রি শুরু করলে ডলারে মান কমতে শুরু করে ফলে ২০০৩ সালে মার্চ মাসে যুক্তরাষ্ট্র ইরাক আক্রমন করে দখল করে পুনরায় ডলারে তেল বিক্রয় শুরু করে।
.
২০০৪ সালে ইরান ইউরোতে তেল বিক্রির ঘোষণা দেয়। ওপেকভুক্ত আরো কিছু দেশ এখন ইউরোতে তেল বিক্রির উদ্যোগ নিচ্ছেন। ইউরোপ চীন ভারত ও জাপান সহ অনেকেই ইউরোতে তেল ক্রয় করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে । ফলে ডলারের চেয়ে ইউরোর মূল্য দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
.
মন্তব্য : এমন একদিন ও একসময় আসবে যেদিন আমেরিকার ডলারের চাহিদা কমে যাবে তথা তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা ভেঙ্গে পরে আফ্রিকার উগান্ডার মত অবস্থা হবে। সেদিন অস্ত্র দিয়ে আমেরিকার সাথে যুদ্ধ করার প্রয়োজন হবে না।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৪৫