সাংসদের নাম মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন। বাংলাদেশের উত্তরের জেলা গাইবান্ধা-১ এর (সুন্দরগঞ্জ উপজেলা) সংসদ সদস্য তিনি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একজন সাংসদ। কী করেছেন তিনি? ৯ বছর বয়সী স্কুল ছাত্র সৌরভকে দুই পায়ে গুলি করেছেন। কেন গুলি করেছেন? প্রকাশিত সংবাদের ভাষ্য, সৌরভের চাচা শাজাহান আলীর অভিযোগ করেছেন, ভোরে তিনি সৌরভকে নিয়ে হাঁটছিলেন। এ সময় সাংসদ মঞ্জুরুল ইসলাম গাড়িতে করে ওই এলাকা দিয়ে যাচ্ছিলেন। গোপালচরণ এলাকায় ব্র্যাক মোড়ে তিনি গাড়ি থামিয়ে ইশারায় তাঁকে (শাজাহান আলী) ডাকেন। একপর্যায়ে গাড়িতে উঠতে বলেন। কিন্তু ওই ব্যক্তি ভয় পেয়ে গাড়িতে না উঠে দৌঁড় দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সাংসদ লিটন সঙ্গে থাকা পিস্তল বের করে তাঁর দিকে গুলি ছোড়েন। এ সময় রাস্তায় থাকা সৌরভের দুই পায়ে গুলি লাগে।
সৌরভের চাচা শাজাহান আলীর ভাষ্য, সৌরভ গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর সাংসদ গাড়ি নিয়ে চলে যান। সৌরভকে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শে সেখান থেকে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। কিন্তু মাতাল সাংসদ লিটন এই ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন।
সকাল ৭টার দিকে রংপুর নেওয়ার পথে সৌরভকে বহনকারী গাড়ি বামনডাঙ্গা এলাকায় আটকে দেয় এমপি লিটনের লোকজন। সুন্দরগঞ্জের ওসি জিন্নাত আলী গণমাধ্যমকে বলেছেন, এমপির লোকজন গাড়ি আটকেছে এমন খবর পেয়ে তিনি সেখানে যান। পরে তিনি গাড়িটি রংপুরে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। সুন্দরগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল হাই মিলটন গণমাধ্যমকে বলছেন, শিশুটিকে রংপুরে নেওয়ার পথে গাড়ি আটকে দেওয়ার খবর পেয়ে তিনিও সেখানে গিয়েছিলেন।
সাংসদ মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন একজন স্কুলছাত্রকে বিনা অপরাধে গুলি করেছেন। স্থানীয় অধিবাসীদের ভাষ্য, ওই সময় এমপি মাতাল ছিলেন। গুলিবিদ্ধ সৌরভকে তিনি হাসপাতালে না নিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে যান। পরে সেই মাতাল সাংসদ ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য নিজের সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে শিশু সৌরভকে বহন করা গাড়ি বামনডাঙ্গায় আটকে দেয়।
এখানে সুস্পষ্টভাবে সাংসদ মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন ডাবল অপরাধ করেছেন। একবার শিশু সৌরভকে পরপর দুই পায়ে গুলি করে। দ্বিতীয়বার সৌরভের চিকিৎসা সেবায় বাধা প্রদান করে। এই দুটো ঘটনাই একজন জনপ্রতিনিধি করেছেন এটা কোনো সুস্থ মানুষ কী একবারও চিন্তা করতে পারেন???
বাংলাদেশের গণতন্ত্রের আসল চেহারা এই মাতাল মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের এমন স্পর্ধার মধ্যেই এখন অনেকটাই সুস্পষ্ট। বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসাবে, একজন ভোটার হিসাবে এই মাতাল সাংসদ মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের এমন অপরাধের জন্য প্রথমেই তার অভিসংশন দাবি করছি। প্রথমে তাকে সংসদ সদস্য পদ থেকে বহিস্কার করতে হবে। তারপর দেশের প্রচলিত আইনে তার বিচার করতে হবে। এমন একজন লোক তো আমার আপনার জন্য সংসদে কী আইন বানাবে, দেশের কী উপকার করবে, তা তার আচরণেই সুস্পষ্ট।
বাংলাদেশে একজন সংসদ সদস্যকে কিভাবে নির্বাচিত করা হয়, সেই পাঠ বা অভিজ্ঞতা আমরা জানি। কিন্তু একজন সংসদ সদস্যকে কিভাবে সংসদ থেকে বহিস্কার করা হবে বা তাকে অভিসংশন করা হবে, সেই অভিজ্ঞতা আমাদের নেই। আওয়ামী লীগের মত একটি বড় রাজনৈতিক দলের একজন সাংসদ এমন একটি অপরাধ করেও যদি সাংসদ হিসেবে টিকে যায়, তাহলে এই বাংলাদেশের কপালে শুধু শিশু সৌরভ নয়, কেউ নিরাপদ নয়। বাংলাদেশ নিরাপদ নয়।
একজন জনপ্রতিনিধি তার এলাকার মানুষের সেবা করার প্রতিশ্রুতি নিয়েই তাদের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সংসদে আসেন। আর এই মাতাল মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন যে ভোটের ব্যাপারটি না মাড়িয়েই সাংসদ বনে গেছেন, এটা সেই ৫ জানুয়ারির ১৫৪ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতা বিনা ভোটের বাহাদুরী দেখানো মাতালের পক্ষেই এটা সম্ভব। ক্ষমতার দাপটে যখন খুশি তখন নিজ এলাকার জনতার উদ্দেশ্য গুলি ছোড়ার এই দুঃসাহস কোথায় পেলেন মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন? তাহলে কী বাংলাদেশে সাংসদদের জন্য কোনো আইন নেই? তারা সবাই আইনের ঊর্ধ্বে??
আমরা আওয়ামী লীগের মত একটি বড় রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে তো এমন একজন মাতাল অপদার্থ সাংসদকে মহান জাতীয় সংসদে দেখতে চাই না। আমরা বলতে চাই, এই মাতাল মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনকে শুধু সংসদ থেকে বহিস্কার করলেই চলবে না। তাকে দল থেকেও বহিস্কার করতে হবে। কারণ সংসদে এবং দলে থাকা অবস্থায় এই মাতাল মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের প্রচলিত আইন যে ঠিকমত কাজ করবে না, সেটা আজকে গাইবান্ধার পুলিশ সুপার মো. আশরাফুল ইসলামের এই বিষয়ে মন্তব্য না করার প্রবণতা থেকেই সুস্পষ্ট।
আমরা খুব সুস্পষ্টভাবেই বলতে চাই, আওয়ামী লীগের মত একটি বড় রাজনৈতিক দলে এমপি নোমিনেশান দেবার মত অনেক প্রার্থী আছে। কিন্তু বিনা অপরাধে একটি শিশুকে গুলি করে আবার নিজের সন্ত্রাসীদের দিয়ে সেই শিশুর চিকিৎসার পথ বন্ধ করে দেয় যে মাতাল, এমন একজন জনপ্রতিনিধি দলটি ভবিষ্যতে নিজেদের দলে রাখবে কিনা, বাংলাদেশের মানুষ সেই বিষয়টিও ক্লিয়ারলি দেখতে চায়। সিদ্ধান্ত যা নেবার আওয়ামী লীগ নিক। দেশের মানুষ এই মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের মত মাতালের কাছে এখন জিম্মি। এই সত্য যদি আওয়ামী লীগ উপলব্ধি করতে না পারে, তাহলে সময় নিশ্চয়ই এই দাপটকে দেখে নেবে।
শিশু সৌরভকে কেন বিনা অপরাধে গুলি করলেন সাংসদ মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন, আমরা তার বিচার চাই। কেন সাংসদ মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের লোকজন সৌরভের চিকিৎসা সেবা নেয়ায় বাধা প্রদান করল, তার বিচার চাই। আর এমন একজন মাতাল সাংসদ মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনকে কেন মহান জাতীয় সংসদ থেকে বহিস্কার করা হবে না, তা জানতে চাই। দেশের প্রচলিত আইনে এই মাতালের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া ততক্ষণ যাবে না, যতক্ষণ না এই মাতাল একজন সাংসদ ও আওয়ামী লীগের মত একটি বড় রাজনৈতিক দলের সদস্য থাকবে। আগে এই মাতালের ক্ষমতার উৎসগুলো থেকে ছাটাই করতে হবে। তারপর দেশের প্রচলিত আইনে এই মাতালের বিচার করতে হবে।
আর যদি এই ঘটনা সাংসদ মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের মত আওয়ামী লীগও ধামাচাপা দেবার চেষ্টা করে, এই ঘটনা সারা বাংলাদেশে ছড়াবে। ছড়াবে বাতাসের বেগে। মানুষের মুখে মুখে ছড়াবে। আগামী নির্বাচনে মানুষ এসব বিষয়কে মনে রাখবে। মাতাল সাংসদ মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনকে কেন আইনের আওতায় আনা হবে না, আমরা তা জানতে চাই। দেশের আইন যারা বানাবেন, তাদের চেহারা যদি এই হয়, সেই দেশে কোনো সভ্যতা থাকতে পারে না। শিশু সৌরভের যথাযথ উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকার কেন তৎপর হবে না আমরা তাও দেখতে চাই। প্রয়োজনে শিশু সৌরভকে বিদেশে পাঠিয়ে উন্নত চিকিৎসা দিতে হবে। আর একজন শিশুকে গুলি করার অপরাধে সাংসদ মঞ্জুরুল ইসলাম লিটকে কখন গ্রেফতার করা হবে, আমরা সেই অপেক্ষার প্রহর গুণছি।
.............................
২ অক্টোবর ২০১৫
ঢাকা
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩৮