এই মাত্র পিকে দেখে শেষ করলাম। রাজকুমার হিরানী যে ইন্ডিয়ার অন্যতম সেরা পরিচালক আর আমির যে সত্যিই মিস্টার পারফেকশনিস্ট তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই, রিভিউ না লিখে আর থাকতে পারছি না। আমির খান তার জীবনে যত মুভিতে অভিনয় করেছে, তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ মুভি এই "পিকে"। এটা মুভি দেখার পর আপনাকে মানতেই হবে।
পিকে বাকি সবার থেকে আলাদা। আর তাই তার মাথায় অদ্ভুদ অদ্ভুদ সব প্রশ্ন জন্ম নেয়। আর সেই প্রশ্নগুলো জগ্গুকেও নাড়া দেয়। আর সেই কৌতুহল নিরসনেই একটি যাত্রা শুরু করে পিকে ও জগ্গু। আর এই যাত্র ঘিরেই গল্প এগোতে থাকে। সুশান্ত সিং রাজপুত, সঞ্জয় দত্ত, বোমান ইরানি এবং সৌরভ শুক্লা কী চরিত্রে অভিনয় করছেন এবং কীভাবে তারা পিকের মুখোমুখি হয় তা জানতে হলে গিয়ে ছবিটি দেখতে হবে। বিশ্বাস করুন হতাশ হবেন না।
প্রত্যাশিতভাবেই এই ছবির পুরো লাইমলাইটটা শুষে নিয়েছেন আমির খান। তাঁর সবুজ চোখ, অস্বাভাবিকভাবে বেরিয়ে থাকা কান, তাঁর হাস্যকর ভোজপুরী উচ্চারণ এই ছবির রক্তমাংস। সত্যিই তাঁর জীবনের সেরা অভিনয়টা উজাড় করে দিয়েছেন আমির। নিজের মিষ্টি মেয়ে ইমেজটা বজায় রেখে যথার্থ অভিনয় করেছেন অনষ্কা। এই ছবিতে ছোট একটি চরিত্রে দেখা গিয়েছে বোমান ইরানিকে। বোমান বড় অভিনেতা। ছোট চরিত্রতেও তা প্রমাণ করতে অসুবিধা হয়নি তার। সঞ্জয় দত্তর গেস্ট অ্যাপিয়ারেন্স নিয়েও কিছু বলার জায়গা নেই। বলতে হলে বলব সুশান্তের কথা। বড় অল্প সময়ের জন্য পর্দায় দেখা গিয়েছে তাঁকে। সুশান্তকে আর একটু দেখার সুযোগ পেলে মন্দ হতো না।
পিকে মুল রিভিউঃ
মুভির কাহিনী শুরু ভিন গ্রহের এক ফ্লাইং সসার নিয়ে। যেটা পৃথিবীতে আসে একটা গবেষণা করতে। আমির একদম ন্যাংটা হিসেবে পৃথিবীতে পা রাখে। কারণ, আমিরের সেই গ্রহের সবাই ন্যাংটা থাকে! তো পৃথিবীতে নেমেই সে ভুজপুরের এক রেল লাইনের পাশে এক ব্যক্তির সামনে পড়ে। সে তো ন্যাংটা দেখে অবাক হয়ে যায়। তার উপর আমিরের বুকে আবার সেই ডিভাইস। যেটা দেখে তার গ্রহের সবাই তাকে ডিটেক্ট করতে পারবে, তাকে আবার ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। তো সেই ব্যক্তি ভয়ে আমিরের বুক থেকে সেই ডিভাইস নিয়েই দেয় ভোদৌর। আমির ও পিছু নেয় তার। কিন্তু ডিভাইস নিতে পারে না। ওই ব্যক্তি তার রেডিও টা রেখে যায়। সেখান থেকে আমির বিভিন্ন জায়গা থেকে চুরি করে পোশাক পরে, বিভিন্ন মানুসের সাথে মজার সব ঘটনার মাধ্যমে সে জানতে পারে কিভাবে বাজার করতে হয়, কিভাবে কাপড় পরতে হয় ইত্যাদি ইত্যাদি। হটাত সঞ্জয় দত্তের গাড়ির সাথে ধাক্কা খায়। সঞ্জয় দত্ত তাকে বাড়ির কথা জিজ্ঞেস করলেও সে বলতে পারে না। সঞ্জয় ভাবে তার স্মৃতি নস্ট হয়ে গেছে। পরে ঘটনা চক্রে আমির কে এক মহিলার সাথে রাত কাটাতে পাঠায়। আমির সেখানে গিয়ে পান খাওয়া শেখে। এই মুভিতে এটা একটা বিশেষ দিক, কারণ এর জন্যে আমির কে নাকি ১০০০ এর উপরে পান খেতে হয়েছে
তো খাওয়া শেষে আমির সেই পানের প্রেমে পড়ে যায় আর সেই বাইজি'র হাতে হাত রেখে তার ভেতর কার সমস্ত ডাটা নিজের মধ্যে নিয়ে যায়। এরপর সঞ্জয় দত্তকে গিয়ে বলে তার সেই রিমোট কন্ট্রোল হারিয়ে যাওয়ার কথা। জেটার কারণে সে বাড়ি ফিরতে পারছে না। সঞ্জয় দত্ত তাকে বলে সব চোরাই মাল পাওয়া যায় দিল্লিতে, আমির যায় দিল্লি। সেখানে গিয়ে থানায় গেলে বলে যে ভগবান ছাড়া তার রিমোট কন্ট্রোল আর কেউ ফেরত দিতে পারবে না। আমির যায় মন্দিরে। ভগবানের মূর্তি শুরু হয় নতুন নাটক। এর মধ্যে আনুশকা শর্মা বেলজিয়ামে পড়াশোনা করে। পরিচয় হয় পাকিস্তানের ছেলে সরফরাজ (সুসান্ত সিং রাজপুত) এর সাথে। এরপর প্রেম ও ভুল বুজাবুঝি। এদিকে সুসান্তের এর সাথে প্রেমের কারণে আনুশকার বাবা তাকে বাড়িতে উঠতে দেয় না। সে যোগ দেয় বোমান ইরানির টিভি চ্যানেলে রিপোর্টার হিসেবে। একদিন স্টেশনে আনুশকা দেখে আমির (পিকে, উলটা পালটা প্রশ্নের কারণে সবাই তাকে পিকে নামে ডাকা শুরু করে) লিফলেট বিলি করছে, লক্ষী মিসিং, ভগবান মিসিং, হনুমান মিসিং। তার যুক্তি হচ্ছে, ভগবান যদি ফেরত দিবে তাহলে মূর্তির কাছে চাইব কেন? এই খানে বেশ কিছু অসাধারণ সীন আছে। না দেখলে লিখে বুঝানো যাবে না। তো এই ভাবে আমিরের পিছু নেয় আনুশকা। আর আমিরের কাজ হচ্ছে মন্দির থেকে/ভিখারী থেকে টাকা নিয়ে চলা। টাকা শেষ হলে পুলিশের গাড়ির সামনে হিসু দিবে আর থানায় গিয়ে আরামসে কিছুদিন খেয়ে দেয়ে এসে আবার একই কাজ শুরু করবে।
একবার তো তার সেই রিমোট কন্ট্রোল পেতে পেতে ও হাতছাড়া হয়ে যায়। সব এলিয়েনের ই কিছু বিশেষ ক্ষমতা থাকে। এই মুভিতে আমিরের বিশেষ ক্ষমতা হচ্ছে যে কারো হাতে হাত রেখে সে তার অতীত বর্তমান জেনে নিতে পারে।
আনুশকা পিকে (আমির) কে নিয়ে শুরু করে এক নতুন শো। যেখানে ধর্মের নামে প্রতিনিয়ত মানুষকে ধোঁকা দিয়ে যাচ্ছে কিছু ভন্ড সাধু। আমিরকে দিয়ে শুরু তাদের কে জেরা করা। একের পর এক আমির বের করে তাদের রঙ নাম্বার ডায়ালের কাহিনী। যেখানে চলে ভগবানের নামে মানুষ ঠকানো। দেখানো হয় বোমান ইরানি'র চ্যানেলে। মানুষ হুমড়ি খেয়ে পরে পিকে'র এই "রঙ নাম্বার" সিস্টেম বের করার। প্রত্যেকে তার নিজ নিজ এলাকার ভন্ড সাধু দের বিরুদ্ধে ভিডিও ক্লিপ রেকর্ড করে পাঠিয়ে দেয় টিভি চ্যানেলে। ধীরে ধীরে যা সামাজিক বিপ্লবের দিকে এগিয়ে যায়।
এরই মধ্যে সময়কার বিখ্যাত তপস্বী/সাধু আমিরের সাথে টিভিতে বিতর্কের ঘোষণা দেয়। এর মধ্যে সঞ্জয় দত্ত খুঁজে বের করে আমিরের রিমোট কন্ট্রোল নিয়ে পালিয়ে যাওয়া ব্যক্তিকে। জানতে পারে সেই ডিভাইস বিক্রি করে দিয়েছে এই তপস্বী তথা সাধুর কাছে। আর সাধু এটাকে স্বয়ং ভগবান শিব তাকে দিয়েছে হিমালয়ে। এই কথা প্রচার করে তার ভক্ত বাড়াচ্ছে। আমির বুঝে গেছে তার সেই রিমোট কন্ট্রোল আসলে শিব এর দেয়া তোফা হিসেবে চালচ্ছে ভণ্ড সাধু। এবার? মুখোমুখি তপস্বী বাবা বনাম ভিন গ্রহের এলিয়েন "পিকে"। কে জিতবে আর ফাটবে? আমির কে পারবে তার নিজ গ্রহে ফিরে যেতে? যাওয়ার আগে সে কি এই ধর্মান্ধতা সমাজ থেকে দূর করে যাবে???
জানতে হলে আপনাকে এই মুভি দেখতেই হবে। বিশেষ করে রাজকুমার হিরানী এর সিকুয়্যেল যে নির্মাণ করবে তার একটা সিন রেখে দিয়েছে ছবির শেষে ১ বছর পর আমির ও রনবীর কে প্রেজেন্ট করে। ফিনিশিং টা সত্যিই অসাধারণ। মুভি দেখার পর আপনাদের মতামত আশা করছি।
আমার রেটিংঃ ১০/১০।
আমিরের এমন নিখুঁত অভিনয় দর্শক এর আগে কখনো দেখেনি। আমার মতে, থ্রি ইডিয়টের চেয়েও অনেক ভালো অভিনয় করেছে আমির "পিকে" তে।
মুভিটা দেখলে বুঝা যায়, ভিন গ্রহের কোন প্রাণী যদি পৃথিবীতে আসে, তবে তার কি অবস্থা হবে। ছবির বিভিন্ন দৃশ্য আপনাকে মারাত্মক ভাবে হাসাবে। গ্যারান্টি।
ডাউনলোড করুন । অনলাইনে দেখুন ।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ ভোর ৪:৫১