somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অবশেষে তিমি দর্শন :)

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ১:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তিমি দর্শন উপক্রমনিকা

ঘুম থেকে উঠে আবার ক্ষুধা লেগে গেলো । ফ্রেন্চ টাইপে রান্নায় দেখলাম ক্রিমের ব্যবহার অনেক বেশি । আর যেটুকুই রান্না করে , যত্ন করে আর সুন্দর ভাবে পরিবেশন করে ।
এখানে একটা মজার ব্যাপার বলা ভালো -- এ ধরনের ফ্রেন্চ প্রচলিত অন্চলে আমারই সবচে ইংরেজি জানা লোক :D । ফ্রেন্চ ভাষা বেশ চমৎকার --
কার বই এ পড়েছিলাম -- বাংলা হলো উপমহাদেশের ফ্রেন্চ --
যদিও কোন মিল খুজে পাই নাই -- ফ্রেন্চ বলার মধ্যে লালিত্য আছে একটা -- এক্সোটিক । তো আমরা বেশ ভাব গম্ভীর ভাব নিয়ে লোকজনের সাথে কথা বলছিলাম -- আর কথায় কথায়
"মার্সি" "মার্সি" । "বনজোর" আর "মার্সি" পর্যন্তই আমাদের ফ্রেন্চের চালান । কালো চামড়া লোক তাদুসসাকের যাওয়ার রাস্তার মধ্যে একটাও নজরে পরে নাই -- আমরাই একমাত্র নিদর্শন -- প্রথমে ভেবেছি লোকজনের ব্যবহার কেমন না কেমন হবে -- ভুল ভেবেছিলাম । মানুষজন খুবই বন্ধুবাৎসল --টুরিজম ই এখানকার প্রধান আয় -- সুতরাং বন্ধবাৎসল না হয়ে উপায় নেই ।

পেটপুজো সেরে এবার ঘুরতে বেরুলাম -- যাওয়ার তো তেমন কোন জায়গা নাই -- তাছাড়া গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছিলো । এক জায়গা দেখলাম বেশ হৈ হুল্লোড় হচ্ছে -- আমরাও ভীড়ে গেলাম সেখানে -- লোকজন গিটার নিয়ে গালি গলায় গান গাচ্ছিলো --
ফ্রেন্চ তো জানি না -- সুর গুলো মন্দ না ।
আবার কিছুক্ষন পর ডিজে একটা ভাংগা প্লেয়ার দিয়ে বিভিন্ন ভাষার গান নিয়ে হাজির হলো -- কেউ কেউ দেখলাম নাচ শুরু করে দিসে -- এক লোকের সাথে পরিচয় হলো -- তার কাছে হোটেলে থাকার পয়সা নাই -- মোটর সাইকেলে করে দেশ ভ্রমনে বের হয়েছে -- ফ্রান্স থেকে আসা কিছু পোলাপানের সাথে কথা হলো ।
এরপর শুরু হলো যেটা কখনো দেখবো বলে ভাবিনি --
"বেলী ডান্স" । তবে ইরোটিক কিছু না -- ভদ্র গোছেরই বলা যায় -- আমার তো আক্কেল গুরুম অবস্থা -- :-B B:-/ !:#P । কোন এক ফ্রেন্চ কাউন্টিতে এসে বেলী ডান্স দেখবো স্বপ্নেও ভাবিনি ।
তারপর শুরু হলো সামনের ইয়ার্ডের আগুনের খেলা -- ওরা আসলে এত দূরে আসা আমাদের মতো পাবলিকদের এন্টারটেইন করতে চায় ।
কাল সকালে উঠতে হবে তাই তাড়াতাড়ি ফেরত এসে ঘুমিয়ে পড়লাম ।

সকালে উঠেই টিকেট কেটে সোজা জাহাজে। বেশ বড় জাহাজই ।২০০ জনের এরেন্জমেন্ট । মেঘলা আবহাওয়া ক্যান্সেল করে দিবে কিনা চিন্তা করছিলাম । এর মধ্যে গাইড কে প্রশ্ন করে করে অস্থির করে ফেল্লাম দুজনে --- কোন আবহাওয়া তিমি দেখা যায় -- ও কই থাকে -- টুরিষ্ট সিজন শেষ হলে কি করে -- কতদূর যাওয়া লাগবে তিমি দেখতে যেতে -- কোন কোন ধরনের তিমি দেখা যায় -- ছেলেটা বেশ আন্তরিক ভাবেই উত্তর দিলো ।

জাহাজে সবাই ক্যামারা নিয়ে রেডি। ছবি তোলার উৎসব শুরু হয়েছে -- আমি তাড়াতাড়ি জাহাজের পিছনের দিকে ছাউনীর কোনায় একটা সুবিধা মতো জায়গা ঘাপটি মারলাম । কারন পূর্বঅভিজ্ঞতা থেকে জানি শেষে ভীড়ে কাছে ঘেসা যাবে না । তাছাড়া বড় বড় ঢেউ ছিলো -- এটা মোহানার মধ্যে হলেও অপর পাড় দেখা যাবার প্রশ্নই উঠে না -- মাঝ সাগরে মতো লাগছিলো -- কেউ কেউ দেখলাম দুলুনী সহ্য করতে না পেরে সীটে আশ্রয় নিয়েছে -- জাহাজে মন্ট্রিয়াল থেকে আশা কিছু বাংগালী আর ভারতীয় ছিলো -- এরা দিনের ট্রিপ সেরে দিনেই ফিরে যাবে ।


আধ ঘন্টা চলার পরই এনাউন্সেমেন্ট এলো -- ঘড়ির কাটার ১ টার দিকে একটা তিমিকে শ্বাস নিতে দেখা যাচ্ছে --
বলা মাত্র সব হুড়মুর করে এক দিকে এসে পড়লো। প্রথমে বুঝতে পারিনি -- ১:০০ টা ৫:০০ টা -- ৭:০০ টা বলে কি বোঝাতে চাইছে -- আসলে জাহাজের নাকটাকে ১২ টা ধরে ওরা ঐ দিকে দেখতে বলছিলো --- তারপরই দেখলাম একটা তিমি কে শ্বাস নিতে -- জাহাজ থেকে ২০০ মিটার দূরে হবে ।
ছোট খাট বাষ্প ইন্জিনের মতো ফোস করে শ্বাস ছাড়ছে ।









ছবি তুলতে গিয়ে মুশকিল হলো - - দেখতে দেখতে শ্বাস নিয়ে ডুবে যায় তিমি গুলো X( -- একটাও পোজ দেয় না ঠিক মতো ।
বাচ্চার মতো খেলা করছে একেকটা -- আবার একটা জাহাজের পাশ দিয়েই বের হয়ে গেলো ব্রেষ্ট ষ্ট্রোকের ভংগীতে । B-)
বিশাল সাইজ দেখে অভিভূত হয়ে গিয়েছিলাম ।

বেশীর ভাগ তিমিই মিংকি , কয়েকটা হাম্পব্যাকে কথাও বলল -- আমাদের অনভিজ্ঞ চোখে অবশ্য সব গুলো একরকম লাগছিলো । একটা তিমি অবশ্য বাচ্চা নিয়ে এসেছিলো -- একটা সীল ও চোখে পড়লো ।
জাল দিয়ে না ধরি -- ক্যামারা আর চোখ দিয়ে বিশাল প্রানী গুলো বন্দী করে ফেলেছি B-)

ভিডিও :


আমাদের জাহাজ এখান থেকে ওখানে বাচ্চাদের মতো ছোটাছুটি করছিলো । একটা তিমি ১ বার শ্বাস নিয়ে ২০-৪০ মিনিট পানির নিচে ডুব দেয় । সুতরাং ক্যামেরা তাক করে বসে ছাড়া আর গতি নাই -- শেষে দেখলাম ছবি তুলতে গেলে আমার দেখাই হবে না ঠিক মতো -- তাই ধুত্তরি ছাই বলে
ওদের খেলা দেখলাম ।

আমাদের নদীতে যারা শুশকের ডুব দেখছেন -- তেমনই -- আরো অনেক বড়ো ভার্শন আর কি ।

তিমির বাচ্চাটা দেখে ছোট বেলায় পড়া "তিমির প্রেম" বইটার কথা মনে পড়লো । কি হৃদয়বিদারক কাহিনী ছিলো ।

বড়ো বড়ো ঢেউ এসে ভিজিয়ে দিছ্ছিলো আর খোলা বাতাসে ঠান্ডাও লাগছিলো -- শেষের দিকে জাহাজের দুলুনীতে একটু খারাপ লাগা শুরু হলো -- ততক্ষনে খেলা শেষ --
ফেরার পথে চুপচাপই বসে রইলাম দারুন একটা অভিজ্ঞতা সংগী করে ।

বাড়ী ফেরা পথ নির্ঝন্জাট ই কাটলো । তখন ঐ পাহাড়ের উপর থেকে সাগর দেখার রাস্তাটা ভিডিও বন্দী করে ফেল্লাম ।



ছোটবেলা অনেক কিছু ইচ্ছে করতো -- আমাজন যাবো --
কিংবা আফ্রিকা । মিশরের পিরামিড , তাহিতির নীল সমুদ্র ,
হাওয়াই এর বিশাল ঢেউ -- বৈকাল হ্রদ , অষ্ট্রেলিয়ার রং বদলানো পাহাড় -- গ্রান্ড ক্যানিয়ন --- আরো কতো কিছু । তিমি দেখার ও স্বপ্ন ছিলো -- বয়স একটু বাড়ার পর বুঝলাম স্বপ্ন আর বাস্তবের মতো বিস্তর ফারাক করে রেখেছে টাকা-পয়সা।
তিমি দেখতে পারবো সত্যি সত্যি ভাবিনি কখনো । এখন মনে হচ্ছে আরে হতেও তো পারে -- বাস্তব মাঝে মাঝে দু:স্বপ্নের চে খারাপ হতে পারে -- আবার তেমনি হতে পারে স্বপ্নের চে রংগীন ।
B-)

তাজমহল আর চীনের প্রাচীর দেখা হয়েছে -- কোন একদিন মিশরের পিরামিড ও দেখে ফেলতে পারি !! কে জানে --
এখন যদি অসম্ভব মনে হচ্ছে অনেক কিছুই ।
কে জানে ভবিষৎ এর গর্ভে কোন লুকানো উপহার রাখা আছে ।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ১১:০৩
৬২টি মন্তব্য ৫৩টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×