তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ার সময় প্রথম তিন গোয়েন্দার “মাকড়সার জাল” দিয়ে গোয়েন্দা কাহিনীর জগতে আমার প্রবেশ। সেই যে শুরু একে একে তিন গোয়েন্দার মোটামুটি হেস্তনেস্ত করে সপ্তম শ্রেণীতে মাসুদ রানার “রুদ্রঝড়”- নতুন আরেকটি স্বপ্নরাজ্যে বিচরণ আরম্ভ। মাসুদ রানা বিদেশী বইয়ের ছায়া নিয়ে রচিত জানার পরেও এই ভালোবাসা এতটুকু কমেনি। বরং গর্বের সাথে বলতে পারি তিন গোয়েন্দা, মাসুদ রানা-ই গোয়েন্দা কাহিনীর প্রতি আমার দুর্বলতাকে বাড়িয়ে দিয়েছে। তারপর ধীরে ধীরে পরিচিত হলাম ফেলুদা, কুয়াশা, টেনিদা, ঘনাদা, ঋজুদা, ব্যোমকেশ বক্সী, প্রোফেসর শংকু-র সাথে। আনন্দের সাথে লক্ষ্য করলাম বাংলা সাহিত্যে মৌলিক গোয়েন্দা কাহিনীরও অভাব নেই বরং এখনো লিস্টি এত লম্বা যে কবে শেষ করবো তার ঠিক নেই। এখানে আমার নিজের পড়া কিছু গোয়েন্দা চরিত্রের পরিচিতি দেবার চেষ্টা করেছি, এর বাইরেও আরো অনেক চরিত্র আছে যেগুলো পড়া হয়ে উঠেনি। কিরিটী রায়, কর্ণেল, ছোটকাকু, বিশ্বমামা, আহমদ মুসা, কুমার-বিমল, হালের বাস্টার্ড-জেফরি বেগ সহ আরো অনেককে পর্যাপ্ত তথ্যের অভাবে এখানে স্থান দিতে পারিনি। অনেকগুলো বিশুদ্ধ গোয়েন্দাকাহিনীর চরিত্র নয় তারপরও রহস্যের ছোঁয়া থাকায় জায়গা করে দিতে হয়েছে। আরেকটি কথা, এখানে প্রকাশকাল অনুসারে চরিত্রগুলোর ক্রমবর্ননা করা হয়েছে।
ব্যোমকেশ বক্সী
বাংলা সাহিত্যের অন্যতম গোয়েন্দা চরিত্র ব্যোমকেশ বক্সী-র স্রষ্টা শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়। লেখক ব্যোমকেশ বক্সীকে নিয়ে ১৯৩২ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত মোট ৩৩ টি কাহিনী লিখেছেন। ব্যোমকেশের প্রথম বই ‘সত্যান্বেষী’। ব্যোমকেশের আছে অনবদ্য বিশ্লেষণী দক্ষতা। ধারালো নাক, লম্বা চেহারা, নাতিস্থুল অবয়বের অধিকারী ব্যোমকেশ শুধু বুদ্ধি দিয়ে যাবতীয় জটিল রহস্যের জট খোলে। সে পুলিশের চাকরী করে না, শুধু খেয়ালের বশে শখ করে সত্যান্বেষী হয়ে উঠে। ব্যোমকেশ স্বল্পভাষী, বাইরে থেকে দেখে তার ভেতরের জ্ঞানের গভীরতা বোঝা যায় না। বন্ধু অজিত ব্যোমকেশের সহযোগী। সত্যবতী ব্যোমকেশের স্ত্রী, এই কৃশাঙ্গীর সাথে একটি খুনের মামলা তদন্ত করতে যেয়ে তার পরিচয়। ব্যোমকেশের সবগুলো কাহিনী আনন্দ পাবলিশার্স প্রকাশিত ‘ব্যোমকেশ সমগ্র’-তে পাওয়া যায়। ব্যোমকেশ বক্সীকে নিয়ে টিভি সিরিজ, মুভি ও রেডিও অনুষ্ঠান নির্মিত হয়েছে।
টেনিদা
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের সৃষ্ট চরিত্র টেনিদা ওরফে ভজহরি মুখার্জি। কলকাতার পটলডাঙায় টেনিদার বাস। টেনিদা গল্পের রাজা, ফুটবল মাঠের সেরা খেলোয়াড়, ক্রিকেট খেলার ক্যাপ্টেন। লোকের বিপদে সবার আগে সে উপস্থিত হয়ে যায়। তার বিখ্যাত সংলাপ - "ডি-লা গ্রান্ডি মেফিস্টোফিলিস ইয়াক ইয়াক"। মৈনাক পর্বতের মত তার নাক। টেনিদার সঙ্গী প্যালারাম তার কাহিনীগুলো বর্ননা করে। হাবুল সেন ঢাকাই ভাষায় কথা বলে আর ক্যাবলা চারজনের মাঝে সবচেয়ে চালাক। টেনিদা তার টীম নিয়ে বিভিন্ন অভিযানে যায় এবং রহস্যের সমাধান করে। এছাড়াও টেনিদার বীরত্বের অতিরঞ্জিত গল্প নিয়েও কিছু বই লেখা হয়েছে। টেনিদাকে নিয়ে লেখা মোট ৫ টি উপন্যাস, ৩২ টি গল্প আর ১ টি নাটিকা সংকলিত করে আনন্দ পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত হয়েছে টেনিদা সমগ্র। টেনিদার কাহিনী নিয়ে কমিকস, মুভি ও অ্যানিমেটেড সিরিজ নির্মিত হয়েছে।
ঘনাদা
প্রেমেন্দ্র মিত্রের জনপ্রিয় চরিত্র ঘনাদা ওরফে ঘনশ্যাম দাস। ঘনাদার প্রথম গল্প ‘মশা’ প্রকাশিত হয় ১৯৪৫ সালে। ১৯৪৫ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত ঘনাদার মোট পনেরটি বই বের হয়, এই বইগুলো একত্রে আনন্দ পাবলিশার্স হতে ঘনাদা সমগ্র ১ এবং ২ নামে প্রকাশিত হয়। ঘনাদার বইতে সরাসরি অভিযানের দেখা পাওয়া যায় না বরং তাঁর মেসের প্রতিবেশী চার যুবককে নিজের জীবনের নানা অভিযান সম্পর্কে অবিশ্বাস্য ও আজগুবি গল্প মুখে মুখে বানিয়ে শোনান। আবার কিছু গল্প কলকাতা লেকের পাড়ে বসেও বলতে দেখা যায়। ঘনাদার গল্পগুলি বানানো হলেও, এর অধিকাংশ তথ্যই বাস্তব ভিত্তিতে গৃহীত। ঘনাদার বসবাস ৭২ নং বনমালী নস্কর লেনের একটি মেসে। মেসে তাঁর সঙ্গী আরো চারজন বাসিন্দা – শিবু, শিশির, গৌর আর সুধীর। ঘনাদা গল্পগুলোতে তিনি নিজেই নায়ক। গল্পের ঘনাদা বুদ্ধিতে ও শক্তিতে অপরাজেয়। ঘনাদা ভোজনরসিকও বটে। ঘনাদার গল্পে রহস্য-রোমাঞ্চ-ইতিহাস-ঐতিহ্য-বিজ্ঞান কল্পকাহিনী ফুটে উঠেছে। ঘনাদার কাহিনীতে আরো যাদের দেখা পাওয়া যায় তারা হলঃ রাঁধুনি রামভুজ, বানোয়াড়ী, বাপী দত্ত, সুশীল চাকীর।
প্রোফেসর শঙ্কু
সত্যজিৎ রায়ের চরিত্র স্কটিশ চার্চ কলেজের অধ্যাপক প্রোফেসর ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কুর প্রথম কাহিনী ‘ব্যোমযাত্রীর ডায়েরী’ ১৯৬১ সালে সন্দেশ পত্রিকায় বের হয়। শঙ্কু একজন পদার্থবিজ্ঞানী ও আবিষ্কারক। তিনি ৬৯ টি ভাষা জানেন। অকুতোভয়, আত্মভোলা শঙ্কুর কর্মস্থল বিহারের গিরিডিতে। শঙ্কু অবিবাহিত। বিজ্ঞানী হিসেবেও শঙ্কুর খ্যাতি বিশ্বজোড়া। তাঁর ৭২ টি আবিষ্কারের মাঝে আছেঃ মিরাকিউরল, স্নাফগান, ম্যাঙ্গোরেঞ্জ, অ্যানাইহিলিন, নার্ভিগার, অমনিস্কোপ, ক্যামেরাপিড ইত্যাদি। শঙ্কু দেশপ্রেমিক, পোষা বিড়াল নিউটন আর চাকর প্রহ্লাদ তাঁর নিত্যসঙ্গী। এছাড়াও দেখা মেলে প্রতিবেশী অবিনাশ চট্টোপাধ্যায় ও হিতাকাঙ্ক্ষী নকুড়বাবুর। সাহারা মরুভুমি, সমুদ্রের তলদেশ, মঙ্গল গ্রহ, ইংল্যান্ড, জার্মানি, জাপান, স্পেন সহ আরো জায়গাজুড়ে তাঁর অভিযান পরিচালনা করেছেন। সত্যজিৎ রায় শঙ্কুকে নিয়ে ১৯৬১ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত মোট ৩৮ টি সম্পুর্ণ ও ২ টি অসম্পুর্ণ কাহিনী লিখেছেন। ১৯৬৫ থেকে ১৯৯৫ সালের মধ্যে শঙ্কু সিরিজের মোট আটটি গল্পগ্রন্থ প্রকাশিত হয়। পরবর্তীকালে আনন্দ পাবলিশার্স কর্তৃক প্রকাশিত গ্রন্থ শঙ্কুসমগ্র-তে সকল গল্প সংকলিত হয়।
কুয়াশা
সুলেখক কাজী আনোয়ার হোসেনের সৃষ্ট চরিত্র কুয়াশা। কুয়াশা-১ নামে এই সিরিজের প্রথম বইটি সেবা প্রকাশনী হতে ১৯৬৪ সালে প্রকাশিত হয়। কুয়াশা বিজ্ঞানী- বিজ্ঞানের সাধনায় নিজেকে উৎসর্গ করেছে। কুয়াশার বাড়ি কুষ্টিয়াতে। সতের বছর বয়সে কুয়াশা জার্মান বিজ্ঞানী কার্ল ব্যান্ডেনবার্গের সাথে বাংলাদেশ ছাড়ে। পনের বছর পর সে আবার দেশে ফিরে আসে তার গোপন গবেষণা চালানোর জন্য। তার একমাত্র ছোট বোন মহুয়া। মানকল্যাণের জন্য কুয়াশা গবেষণা করে আর এর টাকা জোগাড় করতে সে অবৈধ পথ বেছে নিতেও দ্বিধাবোধ করে না। এজন্য কুয়াশা আইনের চোখে অপরাধী, একজন ফেরারী আসামী। কুয়াশার বইগুলোতে অন্যান্য পরিচিত চরিত্র হলঃ শখের গোয়েন্দা শহীদ, কামাল, ডি কস্টা, গফুর, মি সিম্পসন, লিনা, রাসেল, ড ওয়াই। কুয়াশা সিরিজের প্রকাশনা বর্তমানে বন্ধ রয়েছে।
ফেলুদা
সত্যজিৎ রায়ের সৃষ্ট কিংবদন্তী গোয়েন্দা চরিত্র ফেলুদা ওরফে প্রদোষচন্দ্র মিত্র। ফেলুদার প্রথম গল্প ‘ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি’ ১৯৬৫ সালের ডিসেম্বর মাসে সন্দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ১৯৬৫ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত মোত ৩৫ টি সম্পূর্ণ ও ৪ টি অসম্পুর্ণ ফেলুদা কাহিনী বের হয়েছে। ফেলুদা কলকাতার ২১ রজনী সেন রোডে বাস করে। শার্লক হোমসের বিশাল ভক্ত ফেলুদা শারিরীক শক্তি বা অস্ত্রের পরিবর্তে অসামান্য পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা ও বিরল বিশ্লেষণী দক্ষতার মাধ্যমে রহস্য সমাধান করতে পছন্দ করে। ফেলুদার ট্রেডমার্ক চারমিনার সিগারেট। ফেলুদার সঙ্গী তোপসে ওরফে তপেশরঞ্জন মিত্র, যেকিনা যেকিনা ফেলুদার সব অভিযান লিপিবদ্ধ করে। ফেলুদার বন্ধু জনপ্রিয় লেখক লালমোহনবাবু ‘জটায়ু’ শিরোনামে রহস্য উপন্যাস লেখেন। এছাড়াও ফেলুদার বইতে দেখা পাওয়া যায় সিধুজ্যাঠা, মগনলাল মেঘরাজের। ফেলুদার কাহিনী হতে বই, মুভি, টিভি সিরিজ, টেলিফিল্ম নির্মিত হয়েছে।
মাসুদ রানা
কাজী আনোয়ার হোসেনের সৃষ্ট চরিত্র মাসুদ রানা- বাংলাদেশ কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স-এর এজেন্ট। গুপ্তচরবৃত্তি তার পেশা, কখনো কখনো পৃথিবীকে বাঁচানোর অথবা বন্ধুকে রক্ষার মিশনেও তাকে দেখা যায়। লেখকের ভাষায় কোমলে-কঠোরে মেশানো, টানে সবাইকে কিন্তু বাঁধনে জড়ায় না। মাসুদ রানা চিরতরুণ। সাংকেতিক নাম এম আর-নাইন। তার পরিচালিত একটি গোয়েন্দা সংস্থা আছে, নাম “রানা এজেন্সী”। মাসুদ রানার পিতা জাস্টিস ইমতিয়াজ চৌধুরী। ইয়ান ফ্লেমিং-এর জেমস বন্ডের আদলে তৈরি মাসুদ রানা। মাসুদ রানার প্রথম বই “ধ্বংস পাহাড়” ১৯৬৬ সালে প্রকাশিত হয়। সেই যে শুরু, এখন পর্যন্ত চার শতাধিক বই বেরিয়েছে। সেবা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত বইগুলোর কয়েকটি বাদে বাকি প্রায় সব বিদেশী বই বা মুভির ছায়া অবলম্বনে রচিত। মৌলিক বইগুলো হল- ধ্বংস পাহাড়, ভারতনাট্যম, হ্যাকার। এলিস্টেয়ার ম্যাকলীন, রবার্ট লুডলাম, জেমস হেডলী চেয, উইলবার স্মিথ , ক্লাইভ কাসলার, ফ্রেডরিক ফরসাইথ- এমন বিখ্যাত লেখকদের বইয়ের ছায়া অবলম্বনে রচিত হয়েছে বইগুলো। বইতে আরো যেসব পরিচিত চরিত্রের দেখা মেলে তারা হলঃ মেজর জেনারেল রাহাত খান, সোহেল, সোহানা, রুপা, গিলটি মিয়া, বিজ্ঞানী কবির চৌধুরী। মাসুদ রানা অবলম্বনে চলচ্চিত্র এবং নাটকও নির্মিত হয়েছে।
দস্যু বনহুর
জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক রোমেনা আফাজের চরিত্র ‘দস্যু বনহুর’ নিয়ে মোট ১৩৬ টি গোয়েন্দা কাহিনী প্রকাশিত হয়েছে। দস্যু সর্দার কালু খাঁ মনিরকে কুড়িয়ে পান ও তাকে পরবর্তীতে দস্যু বনহুর রুপে গড়ে তোলেন। বনহুর যেমন গরীবের বন্ধু তেমনি সন্ত্রাসীদের শত্রু। অত্যাচারীদের সম্পদ লুটে নিয়ে ভাগ করে দেয় বঞ্চিতদের মাঝে। সে অশ্বপৃষ্ঠে জঙ্গলে চলাচল করে। মাথায় বারান্দাওয়ালা টুপি, রুমালে ঢেকে রাখা মুখ। বনহুরের সহযোদ্ধা রহমান ও কায়েস। তার দুইজন স্ত্রী- মনিরা ও নুরী। মোট আটটি সমগ্রে সালমা বুক ডিপো প্রকাশিত দস্যু বনহুরের সবগুলো কাহিনী পাওয়া যায়।
ঋজুদা
বুদ্ধদেব গুহের সৃষ্টি ঋজুদা যে তার সঙ্গী রুদ্রকে নিয়ে বনেজঙ্গলে ঘুরে বেড়ায়। ঋজুদা যেমন রহস্যের সমাধান করে তেমনি তার কাহিনীতে পাওয়া যায় এডভেঞ্চার আর শিকারের গল্প। ঋজুদার আরো দুই সঙ্গী তিতির এবং ভটকাই। মজার ব্যাপার হল ঋজুদা কাহিনীর কোনটার পটভূমিই কল্পিত নয়। লেখক নিজে যেসব স্থানে ঘুরতে গেছেন তার পটভূমিতেই রচিত ঋজুদার গল্পগুলো। লেখক নিজেই বলেন যে, “পূর্ব আফ্রিকা থেকে ভারত মহাসাগরের সেশ্যেলস আইল্যান্ডস, বা মণিপুর মিয়ানমার বা আন্দামান আইল্যান্ডস বা ভারতের নানা প্রান্তের সব বনভূমিতে আমি নিজে ঘুরে আসার পরই ঝজুদা কাহিনি লিখতে বসেছি তোমাদের জন্যে। তাই এগুলি শুধুমাত্র গোয়েন্দা বা শিকার কাহিনি নয়, এগুলি পড়লেও বাড়ি সুদ্ধ সকলের নতুন নতুন নানা জায়গাতে বেড়িয়ে আসার সুযোগ হবে এই সব লেখার মাধ্যমে”। ঋজুদার প্রথম বই ‘ঋজুদার সঙ্গে জঙ্গলে’ । আনন্দ পাবলিশার্স হতে ঋজুদার মোট পাঁচটি সমগ্র বেরিয়েছে।
গোয়েন্দা বরদাচরণ
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের সৃষ্টি গোয়েন্দা বরদাচরণ। তার আছে গোয়েন্দার শাণিত বুদ্ধি, অদম্য মনোবল আর প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব। বরদাচরণের দাদু অম্বিকাচরণ যেকিনা ভোররাতে উঠে দেড়শো বুকডন আর তিনশো বৈঠক দেয়- তাঁরও দেখা পাই বরদাচরণের গল্পে। শীর্ষেন্দু বরদাচরণ কে নিয়ে সাতটি গল্প লিখেছেন যা স্থান পেয়েছে ‘নাথ পাবলিশিং’ প্রকাশিত ‘গোয়েন্দা বরদাচরণ সমগ্র ও অন্যান্য’ বইতে।
কাকাবাবু
বাংলা সাহিত্যের অকুতোভয় সাহসী চরিত্র কাকাবাবু ওরফে রাজা রায়চৌধুরী-র স্রষ্টা পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। প্রাক্তন সরকারী চাকুরে কাকাবাবুর একটি পা ভাঙ্গা, হাঁটেন ক্র্যাচে ভর দিয়ে। প্রখর বিশ্লেষণ ক্ষমতা সেই সাথে দুই হাতে প্রবল শক্তি। কাকাবাবু বিয়ে করেননি। রোমাঞ্চপ্রিয় কাকাবাবু রহস্যের খোঁজ পেলেই অভিযানে ছুটে যান। কাকাবাবুর সঙ্গী সন্তু ওরফে সুনন্দ যে তাঁর সব অভিযানের সাক্ষী। সন্তুর বন্ধু জোজো-ও অভিযানে তাঁদের সঙ্গী হয়। জোজো মহা চাপাবাজ, তিলকে তাল বানাতে তার জুড়ি নেই। কাকাবাবুর বইতে অন্যান্য পরিচিত চরিত্র হলঃ দেবলীনা দত্ত, শৈবাল দত্ত, রিনি, নরেন্দ্র ভার্মা। কাকাবাবুর কাহিনী ১৯৭৯ সালে প্রথম প্রকাশিত হয় আনন্দমেলা পত্রিকায়, ‘ভয়ঙ্কর সুন্দর’ শিরোনামে। পরবর্তীতে সমগ্র আকারে প্রকাশিত হয় ভারতের আনন্দ পাবলিশার্স থেকে। ২০১২ সালে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত লেখক মোট ৩৬ টি কাকাবাবুর কাহিনী লিখে গেছেন। কাকাবাবুর কাহিনী হতে মুভি, টিভি সিরিজ, টেলিফিল্ম, এনিমেশন, কমিকস তৈরি হয়েছে।
মেজর রাহাত
মাসুদ রানার বস যার কথা ভাবলেই রানার বুক ধড়ফড় করে্, কাঁচাপাকা ভ্রূর গুরুগম্ভীর চরিত্র মেজর জেনারেল (অবঃ) রাহাত খানকে নিয়েও সেবা প্রকাশনী থেকে বই প্রকাশিত হয়েছে। কাজী আনোয়ার হোসেন, নিয়াজ মোরশেদ, রওশন জামিল, ইফতেখার আমিন প্রমুখের লেখা এই সিরিজটি অনিয়মিতভাবে ১৯৮২ সাল থেকে প্রকাশিত হয়েছে। সবগুলো বই বিশ্ববিখ্যাত লেখকদের ওয়ার থ্রিলার থেকে ছায়া নিয়ে রচিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে ‘ওয়ান্ডার বয়’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া নির্ভিক এক বাঙ্গালী মেজর রাহাত। স্ট্রাইক ফোর্সের নেতৃত্ব দানকারী এই নির্ভীক, অকুতোভয় মেজর একের পর এক শত্রুপক্ষের চক্রান্ত নস্যাৎ করে দেয়। নব্বইয়ের দশকে সিরিজের শেষ বইটি লেখা হয়েছিল।
তিন গোয়েন্দা
তিন গোয়েন্দার বই প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৮৫ সালের আগস্ট মাসে সেবা প্রকাশনী হতে। কিশোর পাশা, রবিন মিলফোর্ড ও মুসা আমান- এই তিনজন মিলেই তিন গোয়েন্দা। রবার্ট আর্থারের ‘থ্রি ইনভেস্টিগেটরস’ সিরিজ এবং এনিড ব্লাইটনের ‘ফেমাস ফাইভ’ সিরিজ সহ অন্যান্য বিদেশী বইয়ের ছায়া নিয়ে রচিত হয়েছে বইগুলো। ‘তিন গোয়েন্দা’ নামে প্রথম বইটি প্রকাশিত হবার পর থেকে রকিব হাসান টানা ১৬০ টি বই লেখেন, পরবর্তীতে শামসুদ্দিন নওয়াব তিন গোয়েন্দার কিছু বই লিখেন। বর্তমানে রকিব হাসান অনিয়মিত ভাবে সেবা প্রকাশনী থেকে তিন গোয়েন্দা লিখছেন। তিন গোয়েন্দার বাস প্রশান্ত মহাসাগরের তীরে আমেরিকার লস অ্যাঞ্জেলস-এর রকি বীচে। কিশোর পাশা বাঙ্গালী, ছোটবেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা-মা মারা যাবার পর হতে চাচা রাশেদ পাশা ও মেরী চাচীর কাছে বড় হয়। রবিন মিলফোর্ড বইপাগল আমেরিকান আর মুসা আমান দলের পেশীশক্তি, আমেরিকান-আফ্রিকান। পাশা স্যালভেজ ইয়ার্ডে পুরনো এক মোবাইল হোমে তাদের হেডকোয়ার্টার। তিন গোয়েন্দার বইতে আরো দেখা মেলে জর্জিনা পার্কার, কুকুর রাফি, চিরশত্রু শুটকি টেরি, হলিউড মুভি পরিচালক ডেভিড ক্রিস্টোফার, গোয়েন্দা ভিক্টর সাইমন, রাঁধুনী নিসান জাং কিম, ক্যাপ্টেন ইয়ান ফ্লেচার, ওমর শেরিফ, ফগর্যাম্পারকটের।
আরো জানার জন্যঃ
১ ব্যোমকেশ বক্সী
২ টেনিদা
৩ ঘনাদা
৪ প্রোফেসর শঙ্কু
৫ ফেলুদা
৬ মাসুদ রানা
৭ কাকাবাবু
৮ তিন গোয়েন্দা
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৩০