আমি আজ জেগে আছি। কাল হয়ত ঘুমিয়ে পড়বো। মাটি চাপা পড়বে কিছু স্বপ্ন, কিছু আশা, ভালোবাসা। তারাও কি ঘুমিয়ে পরবে আমার সাথে? এসবের আর জেগে থেকে লাভ কি? মাটি খুঁড়ে তো কেউ তাদের দেখতে যাবে না। জানতে ইচ্ছে করে, আমার দায়বন্ধন কি ঘুমাবে? নাকি মাথা জাগিয়ে অপরাধির সারিতে দাঁড় করিয়ে রাখবে আমাকে। কেউ কি আমাকে ক্ষমা করবে? প্রশ্নগুলো অনর্থক। আচ্ছা খুব জানতে ইচ্ছে করে, কেউ কি কাঁদবে আমার জন্যে? আমি জানি কেউ একজন কাঁদবে। সে আমাকে প্রতি প্রহর হৃদয় কোনে ঠাই দিয়েছে। সে আমার জন্মদাত্রী মা। মায়ের চোখের জল কেমন হবে? নিশ্চয়ই নীল নয়? অন্য কেউ কি কাঁদবে? অবশ্য সেরকম অন্য কেউ নেই। ছিল কি না জানি না, তবে হতে পারতো, কিন্তু হয়নি।
“কাঁদিসনে মা আজিকে এমন
করছে যে মন কেমন কেমন
মাগো আমার একটু হাসো
আমায় যদি ভালোবাসো।“
আমি ঘুমের বিছানায় ঘুমিয়ে পড়লে কি সেই মেয়েটির চোখ মনে পড়বে? এখন যেমন মনে পরে, দিবানিশি, এমনকি ঘুমের ঘোরে। সে কি তখন আমায় মুক্তি দেবে না? তাকে মুক্তি দিয়েছি আমি, কিন্তু নিজে কতটুক স্বাধীন হতে পারলাম? সে চলে যাওয়ার সময় আমাকে সেটুক দিয়ে যেতে কি পারতো না? কেন দেয়নি জানিনা, বুঝতে পারিনি। কালো নেকাবে ঢাকা চোখ দুটো কি এমন ছিল? অহরহ নেকাবে ঢাকা চোখ দেখতে পাই। কিন্তু সেই চোখদুটো অবুঝ ছিল এটুক জানি। দুরন্ত চোখ অশান্ত একটি ছেলেকে বধ করে নিয়েছিল। একটু একটু করে গড়ে উঠা ভালোবাসা কোন এক কোনে জমিয়ে রেখেছিলাম, এখনো জমা আছে, কিন্তু কারো অবহেলায় রং পাল্টে নিয়েছে। এখনো অপেক্ষার কোন মানে হয় না। না, আমি অপেক্ষা করি না, করি না কোন আবেদন। শুধু প্রাপ্ত কিছু মুহূর্ত সঙ্গী করে নিয়েছি। এটুক আমার, শুধুই আমার। কোন দায়বদ্ধতা থেকে নয়, কিন্তু কেন? তাও আমি জানি না।
“রোজ সকালে ঘুম ভেঙ্গে যায়
দুচোখ তোমায় খুঁজে বেড়ায়
এলোমেলো ছোট ঘরে
ভালবাসায় ধুলো পড়ে।“
অন্যায় কিছু কি কখনো করেছিলাম? এ যাবত করিনি বলে মনে হয়। নিজের পাপ দেখার যদি কোন আয়না থাকতো! শুধরে নেয়ার চেষ্টা করতাম। যেখানে সব হারাতে হয় সেখানে পাপবোধ জন্ম নেয়াটা কি অস্বাভাবিক কিছু? তাহলে আমিও হারিয়ে যাব নিশ্চয়ই। কিছুদিন অনেকের হৃদয়ে একটি দাগ হয়ে থাকব। তারপরে বছরে দুবার সমবেদনা। ধীরে ধীরে ভুলে যাবে একটি নাম, মুছে যাবে আমার সৃতি। হয়ত কোন গল্প হয়ে শেষ হবে একটি অধ্যায়। সব ধোঁয়াটে। অথবা কেউ জানবে না হঠাত গর্জে উঠা একটি মেঘের নীরব ঝরে যাওয়া। কোন এক কবিতার চরন বারবার ডেকে যাবে, বৃথা ডেকে যাবে।
“চলেই নাহয় গেলাম আজ
কিছু প্রহর মেঘের সাঁজ
বৃষ্টিবেলায় পড়লে মনে
বাঁ পাশেতে হাতটা রেখে
আমায় ভেবো অনুক্ষণ
আসবো আমি ভেজাব মন”
কারো পদধ্বনি কি শুনতে পাবো? অথবা কেউ কি রেখে যাবে রক্তগোলাপ? সেই সম্ভাবনা নেই, কারন সাধারনের চলে যাওয়া অতিসাধারন, ঘটা করে তো আর হয় না। নীরবে, নিঃশব্দে। হয়ত পরিপাটী সাজানো থাকবে একটি ঘর, সৃতি বয়ে নিয়ে বেড়াবে। চৌকোনা ফ্রেমে বন্দী একটি মুখ। হাসিটা তখন করুণ দেখাবে কি?
বন্ধু আড্ডা হাসি তামাসা থেমে যাবে না, হয়ত কিছুটা সময় স্তদ্ধ থাকবে। চায়ের দোকানের সামনের বেঞ্চিতে আড্ডা থামে না কখনো। একদলের প্রস্থানে অন্যদলের আগমন ঘটে। তিনটাকা দামের চা কিংবা সিগারেটে সুখটান দেয়া হবে না। আমাকে ছারা আড্ডা কেমন জমে দেখতে ইচ্ছে করে। আড্ডার মাঝে কেউ আমার কথা তুললে কি নীরবতা আসবে? মনে হয় না, কিছুক্ষন আফসোস করবে, এখন যেমন করে। থেকেও না থাকার মত অনেক দূরে পরে আছি। রাতে সেই চায়ের দোকানে পকেট ফাঁকা করে বাড়ি ফেরা হয় না।
যদি কখনো মনের ভুলে
হয়ত কোন কথার ছলে
এসেই পরি তোদের মাঝে
সময়টা কি কাটবে বাজে?
মন খারাপ মনেই থাক
জড়তা সব কেটে যাক
এক চিলতে হাসির ভাজে
ডুবিয়ে দিস কাজের ফাঁকে।“
পৃথিবী থেমে থাকে না। সব কিছু নিজের গতিতে এগিয়ে চলে। স্থবিরতা হয়ত কিছুটা সময়ের। আবার সব ফিরে পাবে প্রান। আগের মতই গড়িয়ে চলবে সময়। সকাল সকাল ফেরিওয়ালার হাক। অথবা বৈদ্যুতিক তারে বসে থাকা কাকের কর্কশ ধ্বনি। ধূল বালির শহরে সব কিছুই একদিন ধুলোয় ঢেকে যায়। ধুলোয় ঢাকা মন, শরীর, চারপাশ। আবছা সব। সবকিছু অস্পস্ট। এ শহরের কোথাও কেউ এসেছিল, তা হয় কেউ মনে রাখবে না। এভাবেই চলে আসছে, চলছে এবং চলবে।
আমি সেদিনের শিশু
চোখ ফুটে এ যাবত শুধুই অন্ধকার দেখেছি
আঁধারের মানুষ, আঁধারের জীবন;
হাত বাড়িয়ে আলো দেখায়নি আমার পূর্বপুরুষ
অনিশ্চিত এক ধরণীতে কালোর সাথে লড়ে যেতে শেখায়নি
আলোর মশাল জ্বেলে কেউ অপেক্ষায় ছিলনা
তবু আশা জাগে মনে
এখনো শেষ হয়নি সব;
এখনো চেয়ে থাকি কেউ একজন মশাল ধরবে
সেই আগুনের পরশে মশাল জ্বলবে প্রতিটি হাতে
আলোর দেখা মিলবে,
অনেক অনেক আলো।
এই সিরিজটির প্রতিটি শব্দ খুব আপন। নিজের জন্যই লিখা শুরু করেছিলাম। অনেক দিন লেখা হয়নি। ইচ্ছে করছিল এই সিরিজটি শেষ করতে। তাই এখানেই ইতি টানলাম। মিটিমিটি আলো প্রজ্বলিত নিয়ন বাতির পথে একাই হেটে চলা শুরু করলাম। দেখি, কতদুর যেতে পারি, কোথায় যেয়ে থামে আমার যাত্রাপথ।
শ্যাডো এন্ড রিফলেকশন অব মাই মাইন্ড.......part 4
শ্যাডো এন্ড রিফলেকশন অব মাই মাইন্ড.......part 3
শ্যাডো এন্ড রিফলেকশন অব মাই মাইন্ড.......part 2
শ্যাডো এন্ড রিফলেকশন অব মাই মাইন্ড.......part 1
২০১১ সালের আজকের দিনে অর্থাৎ ৫ জানুয়ারী লন্ডনে ইষ্টহামের ১০ এ স্টানডন ওয়াল্কে চাচার বাসায় বসে ফেসবুকে আড্ডা দিচ্ছিলাম। হোম পেইজে রাসয়াত রহমান জিকো ভাইয়ের ফ্যান পেইজ "৩২ থাপ্পর দিয়া ১টা দাঁত ফালায়া দিমু" -তে খলিল একটা লিংক চোখে পড়লো। ক্লিক করে ঢুকে পড়লাম সামহোয়্যারইন নামের বিশাল এক জগতে। একা একা হাটতে শুরু করলাম একটি পথ ধরে। সেদিন রাতেই রেজিস্ট্রেশন করে একটা পোষ্ট দিয়ে ফেললাম "ভাষার টানে লেখা" নামে। এখন সেই একা জগৎটা অনেকটা পরিবারের মত। হাটছি তো হাটছি। ক্লান্তি ধরে না। সকল ব্লগার যারা এ পর্যন্ত সাপোর্ট দিয়ে এসেছেন সবাইকে অনেক ধন্যবাদ। ধন্যবাদ "৩২ থাপ্পর দিয়া ১টা দাঁত ফালায়া দিমু" এবং "সামহোয়্যার ইন ব্লগ ডট নেট" -কে। লাভ ইউ অল ব্লগারজ।