গিলি আইল্যান্ডসের পথে যাত্রা শুরু:
সকাল ৬:০০টায় রবির আসার কথা। আমরা ৫:০০ টায় ঘুম থেকে উঠে রেডী হতে হতে রবি এসে হাজির। আমরা মালপত্র সব গাড়িতে উঠিয়ে হোটেল থেকে বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম পেদাং বে-র উদ্দেশ্য। যেখান থেকে গিলি আইল্যান্ডস (গিলি মেনো, গিলি এয়ার, গিলি টি), নুসা আইল্যান্ড এবং লম্বকের উদ্দেশ্যে ফাস্ট বোট আর পাবলিক বোট ছাড়ে।
আগেই বলছি বালি হলো ফটিকচাঁদের জায়গা। আমি চেষ্টা করেও ওদের পাবলিক বোটের টিকেট কাউন্টার বের করতে পারি নাই। এরা চায় না আপনি পাবলিক বোটে যান । কারণ পাবলিক বোটে ভাড়া কম আর ফাস্ট বোটের ভাড়া পাবলিক বোটের প্রায় ৪/৫গুণ বেশী। এদের কথায় যা বুঝলাম পাবলিক বোটে টাইম বেশী লাগে আর ফাস্ট বোট কম সময়ে যায়। খুব বেশী তাড়াহুড়া না থাকলে আমার মতে পাবলিক বোট যাওয়া সবচেয়ে ভাল। করণ ভাড়া কম, আর সময় ফাস্ট বোটের চেয়ে সর্বোচ্চ ২ ঘন্টা বেশী লাগতে পারে। কিন্তু ভাড়ার পার্থক্যটা হিউজ।
আমরা গিয়েছিলাম একাজায়া ফাস্ট বোটে। ভাড়া পার পারসন রির্টান সহ ৯,০০০০০ IDR উইথ হোটেল pick & drop ফ্রি। আমাদের রুট ছিল পেদাং বে-গিলি মেনো-গিলি টি-পেদাং বে। বাংলাদেশে থাকার সময়ই আমরা রবিকে বলছিলাম আমাদের জন্য টিকেট করতে । পরে ওদের ওয়েবসাইটে দেখলাম অনলাইন থেকে কাটলে পার পারসন রির্টান সহ ৬,৫০০০০ IDR পড়তো উইথ হোটেল pick & drop । আর আপনি নিজে পেদাং বে –তে এসে দামাদামি করে কিনলে আরো কমে পাবেন। তবে তার জন্য আপনাকে আসতে হবে ভ্রমণের ০১/০২ দিন আগে। দিনে এসে দিনের টিকেট পাওয়াটা একটু টাফ। আর পাবলিক বোটের কথা তো পেদাং বে-তে এসে শুনলাম। ওয়েদার ভাল থাকলে জার্নি খু্বই আরামের কিন্তু খারাপ ওয়েদারে ফাস্ট বোটগুলো জার্নি ক্যানসেল করে দেয়। আপনারা গুগলে fastboat for Gili Island লিখে সার্চ দিলে সব ফাস্ট বোট কোম্পানির নাম, ভাড়া, কখন ছাড়ে সব পাবেন।
যে ফাস্ট বোটগুলো পেদাং বে থেকে ছাড়ে তা প্রথমে যায় গিলি টি, তারপর গিলি মেনো, গিলি এয়ার এবং সর্বশেষ যায় বাংসাল যা লম্বকের হার্বার পোর্ট । যা বুঝলাম লম্বক থেকে গিলির আইল্যান্ডগুলোতে যেতে সর্বোচ্চ সময় লাগে ১৫-২০ মিনিট। আর অধিকাংশ লোক মানে যারা অনেক বার বালিতে এসেছে তারা লম্বক হতে গিলি আইল্যান্ডগুলোতে যায়। লম্বক ও নাকি খুব সুন্দর জায়গা আর বালি থেকে আরো সস্তা। বালি থেকে domestic flight এ লম্বক যেতে সময় লাগে প্রায় ০১ ঘন্টা আর গাড়ীতে গেলে ফেরী পার হওয়া সহ লাগে ৫ ঘন্টা। ওদিকে বালি মানে সানুর থেকে পেদাং বে পর্যন্ত আসতে আমাদের সময় লাগছে ০২-২.২৫ ঘন্টা। ৬:০০ টায় রওনা দিয়ে ৮:১৫ তে পৌছায়ছি। আর পেদাং বে থেকে গিলির আইল্যান্ডে যেতে সময় লাগে ২ঘন্টা। আমি পরে ওয়েবসাইট ঘেটে দেখলাম পেদাং বে-তেও থাকার হোটেল আছে। পেদাং বে সী বীচও খুব সুন্দর আর নিরিবিলি।
আমাদের বোট ছাড়ার কথা। ৯:০০ টায় একাজায়া ফাস্ট বোটের এসিস্ট্যান্ট আমাদের টিকেট আর একটা ট্যাগ দিল । তাতে লেখা গিলি মেনো। সেই ট্যাগ জামার সাথে আটকায়ে দিল যাতে সহজে বুঝা যায় আমরা কোথায় নামবো। আর দিল রির্টান টিকেটের একটা কপি, যা গিলি টি-র একাজায়া অফিসে দেখালে মূল রির্টান টিকেট দিয়ে দিবে। সব দেখে শুনে হিন্দী সিরিয়ালের অভিনেত্রীর মত মনে মনে বললাম ওকে next time লম্বক ট্রাই করতে হবে।
এদিকে খুব খিদা লাগছে, সকালের খাওয়া এখনও হয় নাই। বালির অধিকাংশ দোকান সকাল ৯:০০ টা আগে খুলে না। আমরা হার্বারেই একটা দোকানে বসে পাউরুটি, ডিম, স্ট্ররেরী জুস, কফি দিয়ে সকালের নাস্তা করলাম। নাস্তা করার মাঝখানে এক ফরাসী আপা পাশে বসে দেখলো আমরা কি খাই । তারপর সেও খাবার অর্ডার করে জিজ্ঞাসা করল আমরা একাজায়াতে যাবো কিনা । হ্যা বলাতে সে অনলাইন থেকে টিকেট কাটার কনর্ফমেশন লেটার বের করলে একাজায়া এসিস্ট্যান্ট তাকে টিকেট কাউন্টারে গিয়ে টিকেট আনতে বলল। টিকেট এনে আপা গল্প শুরু করল। আপা গিলি টি যাবে, তার ফ্রেন্ডদের জন্য ওয়েট করতেছে। তোমরা কোথায় যাবে ? বললাম গিলি মেনো। বলল আমিও যাই নাই। তবে যাব। আপা ১৫ দিন যাবত বালি ঘুরতেছে। পরে আমারও মনে হয়েছে বালি ঘুরতে আসলে মিনিমাম ১মাস সময় নিয়ে আসা উচিৎ। যথাসময়ে বোট ছেড়ে দিল।
ঠিক ৯:০০ টায় আমাদের ফার্স্টবোট ছেড়ে দিল। বোটে সবমিলিয়ে ৫০-৬০ জন যাত্রী। আর বাকিরা বোটের স্টাফ। টিভি এয়ার কন্ডিশন, লাইফ জ্যাকেট সব আছে। সীট নির্দিষ্ট করা নাই, যার যেখানে ইচ্ছা বসতে পারে। কিন্তু বোট ছাড়ার কিছুক্ষণ পরই সবাই মোটামুটি ছাদে চলে যায়। বোটের কাচেঁর জানালা দিয়ে মহাসাগর দেখার চেয়ে ছাদে রোদ সহ্য করে বসে থাকতে পারলে ভালমত সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। আমরা বোটে উঠার কিছুক্ষণ পরই ছাদে যাই আর বাকি ২ ঘণ্টা ছাদে বসেই ভারত মহাসাগরের কিছু অংশ পাড়ি দিয়ে আইল্যান্ডে পৌছে যায়।
পেদাং বে থেকে ৩০-৪০ মিনিটের পথ পেরোলেই নুসা আইল্যান্ডগুলো দেখা যায়। খাড়া পাহাড়ের মত উঠে গেছে দ্বীপগুলো। কিছু দ্বীপ তো সমুদ্রের মাধখানে একেবারে সোজা খাড়া ভাবে দাড়িয়ে আছে। জনমানবহীন এই দ্বীপগুলোর সৈকতে মহাসমুদ্রের নীল জলরাশি যে কত যুগ যুগ ধরে আছড়ে পড়ছে কে জানে। এমনি নানা ধরনের দৃশ্য দেখতে দেখতে সামনে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা। মাথার উপর স্বচ্ছ নীল আকাশ, ভারত মহাসাগরের ঘন নীল পানির মধ্য দিয়ে বোট ছুটে চলছে আর পেছনে রেখে যাচ্ছে সাদা ফেনার মত স্রোত। চারদিকে শুধু নীল আর নীল। অসহ্য সু্ন্দর নীল।
.................চলবে...............
যেখানে সেখানে ময়লা না ফেলে ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট জায়গাতে নিজে ময়লা ফেলুন এবং বাচ্চাদেরও ময়লা ফেলতে উদ্ধুদ্ধ করুন।
১ম দিনের শেষ ভাগ- Click This Link
১ম দিনের ২য় ভাগ- Click This Link
১ম দিনের ১ম ভাগ- Click This Link
ফেসবুকে পড়তে- Click This Link
পেদাং বে হার্বার গেট
যাত্রীবাহী বোট
হার্বার পোর্ট
নীল রঙ্গের চার পেয়ে নৌকাটা মাছ ধরার বোট
কর্মব্যস্ত হার্বার পোর্ট
আমাদের বোট
যাত্রার জন্য প্রস্তুত
সমুদ্রের মাঝে দ্বীপ
সমুদ্রের মাঝে দ্বীপ
এই দ্বীপের কথা লেখায় উল্লেখ করেছি
পাহাড় আর পাহাড়
মাউন্ট রিনজানি, ইন্দোনেশিয়ার ২য় বৃহত্তম আগ্নেয়গিরি পর্বত
মহাসমুদ্র দর্শন
গিলি টি হার্বার
মুড়ির টিন মার্কা এই বোটগুলোই আন্তঃ দ্বীপিয় পাবলিক বোট
চকচকে পিচ্চি বোটগুলোই বেশী ভাড়ার আন্তঃ দ্বীপিয় প্রাইভেট বোট
স্যাটেলাইট ইমেজ-ইন্টারনেট হতে প্রাপ্ত। ডান দিক হতে গিলি টি, মাঝে গিলি মেনো আর সর্বশেষ গিলি এয়ার।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৩:৫২