আমাদের হোটেলের নাম ছিল Mona Homestay । এই হোটেল agoda.com এ অনেক খুঁজে তারপর পেয়েছি। পার ডে বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ১৫০০ টাকার মত । সুবিধা খুব ভাল ছিল কিন্তু Breakfast include ছিল না। রান্না ঘর আছে, তাতে চা কফি থেকে শুরু করে হাড়ি পাতিল সব আছে।আপনি নিজে রান্না করে খেতেও পারবেন আবার রুমের ফ্রীজে রাখতেও পারবেন। যখন রবি আমাদের হোটেলে নামিয়ে দিল ততক্ষণে সন্ধ্যা ০৬ টা বেজে গেছে।
গাড়ীতে আসতে আসতে Money Exchange এর ডিজিটাল বোর্ডে ডলারের রেট দেখলাম। ঐদিন রেট ছিল ১০০ ডলার=১৩,৪০০k IDR. বালিতে ডলার ভাঙ্গানোর একটা Tricks আছে। যেটা এই লেখার শেষে বলছি। হোটেলে পৌছে আমরা কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে ফ্রেশ হয়ে আবার বের হলাম। উদ্দেশ্য রাতের খাবার খাওয়া এবং ডলার ভাঙ্গানো। যেহেতু আমাদের মূল মিশন শুরু হবে আগামী কাল থেকে তাই আমাদের হাতে আজকে রাতটাই ছিল। আমরা ডলার ভাঙ্গিয়ে হোটেলে সেগুলো রেখে আবার বের হলাম।
এবার গেলাম Warung Little Bird নামের খাবার রেস্টুরেন্টে। ছবি নীচে দেয়া আছে। Trip advisor থেকে এই রেস্টুরেন্ট টা খুজেঁ পেয়েছিলাম যা হোটেল থেকে ৫ মিনিটের পথ। ওদের রেটিং খু্ব ভাল। দামে সস্তা কিন্তু উপচানো ভীড়। কারণ খাবারের স্বাদ। আশে পাশের সব বিদেশি এখানে খাবার খেতে আসে। আমরা পরে আরো ০২ দিন সানুরে ছিলাম এবং তিনবেলাই এখানে খেয়েছি। ঢাকার হোটেল সালাদিয়াহ টাইপ লুক কিন্তু খাবারের স্বাদ এবং ডেকোরেশনের কারণে ৫স্টার রেস্টুরেন্টের থেকে কোন অংশে কম না। সানুর এবং আইল্যান্ডে একটা ব্যাপার লক্ষ্য করলাম সেটা হলো তাদের খাবার। ব্রান্ড রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে ঝুপড়ি দোকান সব জায়গাতে সেম ফুড হাইজিন মেনটেন্ট করে। বাসি কোন খাবারই নাই। প্রতিবেলায় রান্না করে, একবেলার খাবার আরেকবেলায় চালায় না। আমরা যে কয়েকদিন ছিলাম কোন ধরনের পেটের সমস্যা হয় নাই। খাবারের টেস্ট হয়ত আপনার ভাল না লাগতে পারে কিন্তু খাবার টাটকা।
এদের খাবারে লবণ ঝাল দুইটাই কম। আমরা এই দুইটাই কম খাই বলে আমাদের কোন সমস্যা হয় নাই। তবে ঝাল চাইলে এরা আপনাকে আলাদা শুকনা মরিচের ভর্তা দিয়ে দিবে। আমরা খেয়েছিলাম ফ্রায়েড নাসি গোরাং মানে চিকেন ফ্রাইড রাইস, সাথে ছিল ডিম পোচ আর একটা পাপঁড় যা একজনের জন্য পারফেক্ট। পার পারসন ৩৫,০০০ IDR, পানি ১০,০০০ IDR, একটা গাজরের কেক খেয়েছিলাম ২০,০০০ IDR। ব্যাস রাতের খাবার শেষ।
খাবার শেষ করে আশে পাশের দোকান দেখতে দেখতে হোটেলে চলে এলাম । তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়তে হবে। রবি বলে গেছে next day তে সকাল ০৬:০০টায় সময় আমাদের Pick করবে। আমরা যেন রেডী থাকি। ঠিকসময়ে যেন ঘুম থেকে উঠতে পারি, তাই কোন ঘুরাঘুরি না করে সোজা হোটেলে আসলাম। কারণ পরের দিন থেকে শুরু হবে আমাদের আসল মিশন। মিশন গিলি আইল্যান্ডস। টুকটাক গোছগাছ করে ঐদিনের হোটেল ভাড়া দিয়ে সব রেডী রাখলাম। যেহেতু গিলি আইল্যান্ডস থেকে ফিরে আমরা এখানেই আবার উঠব তাই আগোদা বুকিং-এর কাগজটা ওদের আগেই দিয়ে রাখলাম।
এখন শুরু হয়ে গেল কাউন্ট ডাউন..................।গিলি আইল্যান্ডস আমরা আসছি......। আপাতত ১ম পর্বের এখানেই সমাপ্তি।
*** বালিতে ডলার ভাঙ্গানোর Tricks :-
১) বালিতে ডলারের রেট কত চলছে তা আপনি বাংলাদেশে বসেও জানতে পারবেন এই http://www.balibestrate.com থেকে । এটা একটি Money Exchange ওয়েবসাইট। এদের Foreign Currency রেট এবং দোকান দুটোই অথেনটিক। বালির বিভিন্ন জায়গায় ওদের অনেকগুলো ব্রাঞ্চ আছে সেগুলোর ঠিকানা ওয়েবসাইটে পাবেন, আপনার সুবিধাজনক জায়গা থেকে ডলার ভাঙ্গাবেন।
২) সবসময় ডলার ভাঙ্গাবেন Lunch time এ। মানে দুপুর ১২:৩০- ২:৩০ এর মধ্যে। তখন যেকোন Foreign Currency ইন্দোনেশিয়ান রুপিয়াহতে Convert করলে সর্বোচ্চ রেট পাওয়া যায়। এইটা আমি জেনেছি Trip advisor থেকে। খুব বেশী তাড়াহুড়া না থাকলে ১ম দিন এসে অল্প করে ডলার ভাঙ্গিয়ে পরের দিন রেট দেখে বেশী করে ভাঙ্গাবেন। বালিতে ডলারের দিনের রেট আর রাতের রেটের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য থাকে। ডলার ভাঙ্গানোর পর অবশ্যই রিসিট নেবেন।
৩) অনেক ঘুপচি দোকান পাবেন যাদের Dollar Conversion Rate উপরের ওয়েবসাইট থেকেও বেশী। ঐসব দোকানে গেছেন কি মরছেন। এইগুলাই বালির সেই বিখ্যাত ভুয়া Money Exchange এর দোকান। এমন কৌশলে আপনাকে টাকা কম দিবে আপনি ধরতেও পারবেন না। কারণ বালিতে ১০০ ডলার ভাঙ্গালে প্রায় ১৩/১৪ লাখের কাছাকাছি ইন্দোনেশিয়ান রুপিয়াহ পাবেন। ইন্দোনেশিয়ান রুপিয়াহর সাথে ট্যুরিস্টরা অপরিচিত, তাই ১লাখ আর ১০ লাখের নোটের মধ্যে তালগোল পাকায়ে ফেলে। আর এই সুযোগ গুলো নেয় এই সব Money Exchange এর দোকান।
[ইমিগ্রেশন সংক্রান্তঃ
বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন-প্রথমেই জিজ্ঞাসা করবে কোথায় যাবেন। স্পষ্ট করে বলবেন কোথায় যাবেন। যদি বলে ভিসা কৈ তখন বলবেন ইন্দোনেশিয়াতে অন-এরাইভাল ভিসা। যদিও বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন জানে ব্যাপারটা। রির্টান টিকেট আর হোটেল বুকিং দেখতে চাইতে পারে। স্বামী স্ত্রী একসাথে গেলে ইমিগ্রেশনে বলবেন যে আমরা স্বামী স্ত্রী। পাসপোর্টেও যেন বিষয়টা উল্লেখ থাকে। আর চাকরী করলে NOC মাস্ট সাথে রাখবেন। অনেকে মনে করে ভুয়া একটা NOC বানায়ে নিলেই তো হয়। কিন্তু কোন কারণে যদি কোন ধরনের সমস্যা হয় আর ওরা আপনার এই ভুয়া NOC ধরতে পারে তাহলে কিন্তু শেষ। আরেকজন ভুয়া NOC দিয়ে ঘুরে আসছে, তার কিছু হয় নাই বলে আপনারও যে কোন সমস্যা হবে না এই গ্যারান্টি আপনি নিজেও দিতে পারবেন না। আপনি চাকরীজীবী হন বা না হন ইমিগ্রমনে সঠিক তথ্যটাই দিবেন। আর স্বামী স্ত্রী একসাথে গেলে দুইজনই দুইজনের NOC তে উল্লেখ করবেন আপনি আপনার স্বামী/ স্ত্রীর সাথে ভ্রমণ করছেন।
বালি ইমিগ্রেশনঃ স্বামী/ স্ত্রীর হলে ইমিগ্রেশনে প্রথমেই বলবেন আমরা স্বামী/ স্ত্রী। তাদের জন্য আলাদা কাউন্টার আছে যেখানে শুধুমাত্র হোটেল বুকিং আর রির্টান টিকেট দেখে ছেড়ে দেয় যদি বিশেষ সন্দেহ না হয়। এখানেও NOC বিষয়ে একই কথা যা বাংলাদেশী ইমিগ্রেশনে বলেছি। বেশ কিছু বাংলাদেশীদের পেয়েছিলাম যাদের বালি ইমিগ্রেশনে ইন্টারোগেটের মধ্যে পড়তে হয়েছিল। এমন হলে NOC, রির্টান টিকেট, হোটেল বুকিং দেখান। স্পষ্ট করে বলুন কেন আসছেন আর কতদিন থাকবেন, Dollar Endorsement এর বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে কত Dollar Endorse করছেন তা জানান। ঘাবড়ে না গিয়ে সুন্দরমত সব বলুন, ভিসা পেয়ে যাবেন।
আসলে বেশ কিছুদিন আগে বাংলাদেশের কিছু মানুষ ইন্দোনেশিয়া হয়ে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার ট্রাই করে অস্ট্রেলিয়ার পুলিশের হাতে ধরা খাইছে। তারপর থেকেই অস্ট্রেলিয়া আর মালয়েশিয়া যৌথভাবে ইন্দোনেশিয়ার উপর চাপ দিছে যার ফলাফল ইমিগ্রেশনে বাংলাদেশী ইয়াং পিপল দেখলেই ইন্টারোগেটের মধ্যে পড়তে হচ্ছে।
বালি এবং গিলি আইল্যান্ডসের Security এবং Waste Management নিয়ে আমার কিছু কথা আছে। সেগুলো ধীরে ধীরে লেখাতেই চলে আসবে। ..............।চলবে......................
যেখানে সেখানে ময়লা না ফেলে ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট জায়গাতে নিজে ময়লা ফেলুন এবং বাচ্চাদেরও নির্দিষ্ট জায়গাতে ময়লা ফেলতে উদ্ধুদ্ধ করুন।
ভ্রমণের ১ম দিনের ২য় ভাগের লেখা পড়তে ক্লীক করুনঃ Click This Link
ভ্রমণের ১ম দিনের ১ম ভাগের লেখা পড়তে ক্লীক করুনঃ Click This Link
ফেসবুকের Visit Bangladesh (বেড়াই বাংলাদেশ) পেজে পড়তে ক্লীক করুনঃ
Click This Link
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ১০:৫৭