somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের সেই ঐতিহাসিক ভাষণ

১৭ ই জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র তার বক্তৃতার মাধ্যমে ঘোষণা দেন জাতিগত বৈষম্যের দিন শেষ করার। তিনি তার ভাষণে শ্বেতাঙ্গদের কৃষ্ণাঙ্গদের ওপর নির্যাতন ও বঞ্চনার আর বৈষম্যমূলক আচরণের কথা তুলে ধরন। তার ভাষণটি ছিল এরকম—

এই দিনে আমি আপনাদের সঙ্গে মিলিত হয়ে খুশি। ইতিহাস এই দিনটি মনে রাখবে, আমাদের জাতির ইতিহাসে মুক্তির মহান সমাবেশ হিসেবে।
কিন্তু ১০০ বছর পর মর্মান্তিক সত্য হচ্ছে, নিগ্রো আজও মুক্ত নয়। শতবর্ষ পরও নিগ্রোরা আজও দুঃখজনক ভাবে বিচ্ছিন্নতার শেকলে আর বৈষম্যের জিঞ্জিরে বাঁধা। শতবর্ষ পরও নিগ্রোদের জীবন যেন ধন-সম্পদের বিরাট সমুদ্রের মাঝখানে এক নিঃসঙ্গ দারিদ্র্যের দ্বীপ। শতবর্ষ পরও নিগ্রোরা মার্কিন সমাজের এক কোণে নির্জীব দশায় পড়ে আছে, হয়ে আছে নিজভূমে নির্বাসিত। তাই আজ আমরা এখানে আমাদের দুর্দশাকে তুলে ধরতে এসেছি।
এক অর্থে আমরা আমাদের রাজধানীতে এসেছি একটা চেক ভাঙাতে। আমাদের প্রজাতন্ত্রের স্থপতিরা যখন সংবিধানের সেই দারুণ কথাগুলো লিখছিলেন এবং দিয়েছিলেন স্বাধীনতার ঘোষণা, তখন তাঁরা এমন এক চেকে সই করছিলেন, প্রতিটি আমেরিকান যার উত্তরাধিকারী। সেটা ছিল সব মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অধিকার, মুক্তি ও সুখ সন্ধানের নিশ্চয়তার প্রতিশ্রুতি।
আজ পরিষ্কার হয়ে গেছে, আমেরিকা সেই প্রতিশ্রুতিপত্র খেলাপ করেছে, অন্তত তার কালো নাগরিকদের বেলায়। সেই পবিত্র দায়িত্ব মান্য করার বদলে আমেরিকা নিগ্রো মানুষদের হাতে যে চেক ধরিয়ে দিয়েছে, তা ফেরত এসেছে, ‘তহবিল ঘাটতি’র চিহ্ন নিয়ে। কিন্তু ন্যায়বিচারের ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে গেছে—এ আমরা বিশ্বাস করতে রাজি না।
আমরা মানতে রাজি না, এই জাতির সুযোগ ও সম্ভাবনার সিন্দুকে যথেষ্ট তহবিল নেই। তাই যে চেক চাইবা মাত্র মুক্তির দৌলত আর ন্যায়বিচারের নিরাপত্তা দেবে, আজ আমরা এসেছি সেই চেক ভাঙাতে। এখনই সময় ঈশ্বরের সব সন্তানের জন্য সুযোগের সব দ্বার অবারিত করে দেওয়ার। এখনই সময় বর্ণবৈষম্যের চোরাবালি থেকে আমাদের জাতিকে ভ্রাতৃত্ব-বন্ধনের পাথুরে জমিতে তুলে ধরার।
যত দিন না নিগ্রোরা তাদের নাগরিক অধিকার ভোগ করতে পারবে, তত দিন আমেরিকায় বিরাম ও শান্তি থাকবে না। যত দিন না ন্যায়ের সুদীপ্ত দিন আসছে, তত দিন বিদ্রোহের ঘূর্ণিঝড় আমেরিকার ভিতকে কাঁপিয়ে দিতে থাকবে।
বন্ধুরা, আজ আমি আপনাদের বলছি, বর্তমানের প্রতিকূলতা ও বাধা সত্ত্বেও আমি আজও স্বপ্ন দেখি। আমার এই স্বপ্নের শেকড় পোঁতা আমেরিকান স্বপ্নের গভীরে।
আমি স্বপ্ন দেখি, একদিন এই জাতি জাগবে এবং বাঁচিয়ে রাখবে এই বিশ্বাস আমরা এই সত্যকে স্বতঃসিদ্ধভাবে গ্রহণ করছি সব মানুষ সমান।
আমি স্বপ্ন দেখি, একদিন জর্জিয়ার লাল পাহাড়ে সাবেক দাস আর সাবেক দাস মালিকের সন্তানেরা ভ্রাতৃত্বের এক টেবিলে বসতে সক্ষম হবে।
আমি স্বপ্ন দেখি, একদিন মরুময় মিসিসিপি রাজ্য অবিচার আর নিপীড়নের উত্তাপে দম বন্ধ করা মিসিসিপি হয়ে উঠবে মুক্তি আর সুবিচারের মরূদ্যান।
আমি স্বপ্ন দেখি, আমার চার সন্তান একদিন এমন এক জাতির মধ্যে বাস করবে যেখানে তাদের চামড়ার রং দিয়ে নয়, তাদের চরিত্রের গুণ দিয়ে তারা মূল্যায়িত হবে। আমি আজ এই স্বপ্ন দেখি।
আমি স্বপ্ন দেখি, একদিন অ্যালাব্যামা রাজ্যে, যেখানকার গভর্নরের ঠোঁট থেকে কেবলই বাধানিষেধ আর গঞ্জনার বাণী ঝরে, একদিন সেখানকার পরিস্থিতি এমনভাবে বদলে যাবে যে কালো বালক আর বালিকারা সাদা বালক আর বালিকাদের সঙ্গে ভাইবোনের মতো হাত ধরাধরি করবে। আমি আজ এই স্বপ্ন দেখি।
আমি স্বপ্ন দেখি, একদিন সব উপত্যকা উত্তীর্ণ হবে, সব পাহাড় আর পর্বত হবে আনত, এবড়ো-খেবড়ো জমিন মসৃণ হবে, আঁকাবাঁকা জায়গাগুলো সমান হবে এবং ঈশ্বরের জয় উদ্ভাসিত হবে এবং একসঙ্গে সব মানব তা চাক্ষুষ করবে।
এই-ই আমাদের স্বপ্ন। এই স্বপ্ন নিয়েই আমি দক্ষিণে ফিরে যাব। এই বিশ্বাস নিয়ে হতাশার পর্বত থেকে আমরা সৃষ্টি করব আশার প্রস্তর। এই বিশ্বাস নিয়ে আমরা আজকের এই বেসুরো কোলাহল থেকে জন্ম দেব ভ্রাতৃ বন্ধনের সুন্দরতম সংগীতের। এই বিশ্বাস নিয়ে আমরা একসঙ্গে কাজ করব, প্রার্থনায় মিলব একত্রে, একদিন আমরা মুক্ত হব এই জেনে, একসঙ্গে শামিল হব সংগ্রামে।
সেটা হবে সেই দিন, যে দিন ঈশ্বরের সন্তানেরা গাইতে পারবে গান, ভাষায় দেবে নতুন অর্থ: ‘ও আমার দেশ, তুমি তো মুক্তির স্নিগ্ধ ভূমি। যে মাটিতে আমার পিতারা শায়িত, যে মাটি তীর্থযাত্রীদের গরিমা, তার প্রতিটি পাহাড়ের ঢাল থেকে বেজে উঠুক মুক্তির গান।’
এবং আমেরিকাকে মহান এক দেশ হতে হলে এটাই সত্য হতে হবে। তাই মুক্তি ধ্বনিত হোক নিউ হ্যাম্পশায়ারের বিপুল পাহাড়চূড়া থেকে। মুক্তি ধ্বনিত হোক নিউইয়র্কের শক্তিমান পাহাড়গুলো থেকে। মুক্তি ধ্বনিত হোক পেনসিলভানিয়ার ওই আকাশছোঁয়া আলেঘেনির শীর্ষ থেকে।
মুক্তি ধ্বনিত হোক কলোরাডোর তুষার মোড়া পাহাড় থেকে।
মুক্তি ধ্বনিত হোক ক্যালিফোর্নিয়ার বঙ্কিম চূড়া থেকে!
শুধু তা-ই নয়, মুক্তি ধ্বনিত হোক জর্জিয়ার স্টোন মাউন্টেইন থেকেও!
মুক্তি ধ্বনিত হোক টেনেসির লুকআউট পাহাড় থেকে!
মুক্তি ধ্বনিত হোক মিসিসিপির প্রতিটি টিলা ও পাহাড় থেকে। প্রতিটি পাহাড়ের খাঁজ থেকে বেজে উঠুক মুক্তির গান।
যখন আমরা মুক্তিকে ধ্বনিত হতে দেব যখন প্রতিটি গ্রাম, প্রতিটি বসতি, প্রতিটি রাজ্য এবং শহরে বাজবে মুক্তির গান তখন আমরা সেই দিনকে আরও কাছে নিয়ে আসতে পারব, যেদিন কালো মানুষ ও সাদা মানুষ, ইহুদি ও জেন্টাইল, প্রোটেস্ট্যান্ট ও ক্যাথলিক—সবাই হাতে হাত ধরে গাইবে সেই নিগ্রো মরমি সংগীত ‘এত দিনে আমরা মুক্ত হলাম! এত দিনে পেলাম মুক্তি! ও সর্বশক্তিমান ঈশ্বর, তোমাকে ধন্যবাদ, আমরা আজ মুক্ত!’ ‘ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের কোনো প্রাপ্তি নেই যতক্ষণ নিগ্রোরা পুলিশের বর্ণনাতীত নির্যাতনের শিকার হবে। ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের কোনো প্রাপ্তি নেই যতক্ষণ ভ্রমণ-ক্লান্ত নিগ্রোরা শহরের হোটেল বা মোটেলে বিশ্রামের অধিকার পাবে। ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের প্রাপ্তি নেই যতক্ষণ আমাদের শিশুরা 'কেবলমাত্র শ্বেতাঙ্গদের জন্য' লেখা সাইনবোর্ড দেখবে। আমি জানি, তোমরা কেউ এসেছ দূর-দূরান্ত থেকে। কেউ জেলের কুঠরি থেকে। কেউ পুলিশের টর্চার সেল থেকে। তোমরা যার যার ঘরে ফিরে যাও। কিন্তু কাদা পানিতে ডুব দিয়ে থেক না। হয়তো আজ বা আগামীকাল আমাদের জন্য সংকটময় হবে। তবুও আমি স্বপ্ন দেখি, এই স্বপ্ন-গাথা আছে আমেরিকার অস্তিত্বে। আমি স্বপ্ন দেখি, একদিন এই জাতি জাগ্রত হবে এবং মানুষের এই বিশ্বাসের মূল্যায়ন করবে, সব মানুষ জন্মসূত্রে সমান।

সুত্রঃ অনলাইন
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১:০৫
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পার্বত্য চট্টগ্রাম- মিয়ানমার-মিজোরাম ও মনিপুর রাজ্য মিলে খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠনের চক্রান্ত চলছে?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:০১


মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমা সেপ্টেম্বর মাসে আমেরিকা ভ্রমণ করেছেন । সেখানে তিনি ইন্ডিয়ানা তে বক্তব্য প্রদান কালে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী chin-kuki-zo দের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠনে আমেরিকার সাহায্য চেয়েছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×