২০০৯ সালের জানুয়ারিতে মহাজোট সরকার গঠিত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা করা হয় ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীকে। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই প্রভাব-প্রতিপত্তি খাটিয়ে তিনি হয়ে ওঠেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের একচ্ছত্র অধিপতি। একের পর এক অভিযোগ উঠতে থাকে তাঁর বিরুদ্ধে। গত পাঁচ বছরে দুর্নীতিসহ বিদেশি কম্পানির স্বার্থ রক্ষার মতো বেশ কিছু অভিযোগের তীরে বিদ্ধ হন তিনি। গণমাধ্যমেও তিনি সমালোচিত হন সমানতালে। এসব কারণে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টার তালিকা থেকে তাঁর নাম বাদ পড়ে যায়। এখন তাঁর বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ ও মামলাগুলোর বিচার কী হয়, সেটাই দেখার অপেক্ষায় সুধীমহল।
শেভরন কেলেঙ্কারিতে তৌফিক-ই-ইলাহী : অভিযোগ রয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা থাকাকালীন তৌফিক-ই-ইলাহী মার্কিন বহুজাতিক কম্পানি শেভরনকে ৫৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের (৩৭০ কোটি টাকা) একটি গ্যাস কম্প্রেসর কেনার কাজ পাইয়ে দিয়ে মোটা অঙ্কের ঘুষ নিয়েছেন। তৌফিক-ই-ইলাহীর বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে লিখিত এ অভিযোগ করেন পেট্রোবাংলার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষে জনৈক আবু সিদ্দিকী। প্রধানমন্ত্রী অভিযোগটি তদন্তের নির্দেশ দেন। জ্বালানি মন্ত্রণালয় পেট্রোবাংলার কাছে তদন্তের ভার দিলেও পেট্রোবাংলা কোনো তদন্ত না করে মন্ত্রণালয়ের কাছেই তা ফিরিয়ে দেয়। পরবর্তী সময়ে জ্বালানি মন্ত্রণালয় তদন্তের দায়িত্ব নেয়। তবে তৎকালীন জ্বালানিসচিব মোহাম্মদ মোহসিনের বিরুদ্ধেও অভিযোগ থাকায় এ তদন্তের কোনো ফল আজও প্রকাশিত হয়নি।
এ বিষয়টি দৈনিক আমার দেশে প্রকাশিত হলে তৌফিক-ই-ইলাহীর পক্ষ থেকে ওই দৈনিকটির বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করা হয়। মামলার অভিযোগে বলা হয়, জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এনামুল হক, সচিব মোহাম্মদ মোহসিন ও পেট্রোবাংলার সাবেক চেয়ারম্যান মোক্তাদির আলীর পারস্পরিক যোগসাজশে আন্তর্জাতিক তেল-গ্যাস কম্পানি শেভরনকে অপ্রয়োজনীয়ভাবে প্রায় ৩৭০ কোটি টাকার সমান ৫২ দশমিক ৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে কম্প্রেসর স্টেশন বসানোর কাজ পাইয়ে দিয়েছে। অভিযোগে বলা হয়, কাজটি শেভরনকে পাইয়ে দেওয়ার জন্য তৌফিক-ই-ইলাহী পাঁচ মিলিয়ন ডলার (৩৫ কোটি টাকা) ঘুষ নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর তদন্তের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও গত চার বছরেও এ তদন্তকাজ শেষ হয়নি।
শেভরনকে কম্প্রেসর কেনার কাজ পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে পাঁচ মিলিয়ন ডলার ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানার জন্য গতকাল তৌফিক-ই-ইলাহীর ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে কল করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। তবে জ্বালানি উপদেষ্টা থাকাকালীন কালের কণ্ঠের এ প্রতিবেদককে তিনি এ বিষয়ে বলেছিলেন, 'এ রকম একটি তথ্য প্রকাশ হওয়ার পর আমি দৈনিক আমার দেশের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছি। বেনামি একটা চিঠির ভিত্তিতে খবরের কাগজ এভাবে চরিত্র হনন করার কারণে আমি মানহানির মামলা করি। বিষয়টি বিচারাধীন রয়েছে।' এ বিষয়ে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের তদন্ত সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'একটা উড়ো চিঠির ওপর, একটা বেনামি চিঠির ওপর; যার অস্তিত্ব নেই তার ওপর ভিত্তি করে সংবাদ প্রকাশিত হয়।'
এদিকে অনলাইন মিডিয়া উইকিলিকসের ফাঁস করা গোপন তারবার্তা থেকেও শেভরনের গ্যাস কম্প্রেসর কেনার সঙ্গে তৌফিক-ই-ইলাহীর সংশ্লিষ্টতার বিষয় জানা যায়। ২০১০ সালের ২১ ডিসেম্বর ফাঁস হওয়া উইকিলিসের এক গোপন তারবার্তায় (যার রেফারেন্স আইডি : ০৯উঐঅকঅ৭৪১) বলা হয়, চলমান জ্বালানি সংকট থেকে উত্তরণের একটা উপায় হতে পারে বাংলাদেশের প্রধান সরবরাহ লাইনে কম্প্রেসর যুক্ত করা। কম্প্রেসর যুক্ত করলে শেভরনের বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস সরবরাহ বাড়বে। তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী জবাবে জানান, বাংলাদেশ শেভরনকে তিনটি কম্প্রেসরের মধ্যে একটি বসানোর অনুমোদন প্রদানের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে।'
উইকিলিকসে ফাঁস হওয়া গোপন তারাবর্তার সূত্র ধরে দেশের জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শেভরনের কাছ থেকে একটি কম্প্রেসর কেনার ব্যাপারে আগেই তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে কথা দিয়েছিলেন তৌফিক-ই-ইলাহী। কম্প্রেসর কেনাবাবদ শেভরন তৌফিক-ই-ইলাহীকে মোটা অঙ্কের ঘুষ দেবে, এটাই স্বাভাবিক। এ প্রসঙ্গে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ কালের কণ্ঠকে বলেন, পুরো বিষয়টিই হয়েছে অনিয়মের মধ্য দিয়ে। যদি নতুন একটি কম্প্রেসর মেশিন কেনা হয়, তাহলে তার বাজারমূল্য হতো ৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। সেখানে পুরনো কম্প্রেসর মেশিন শেভরনের কাছ থেকে কেনা হয়েছে প্রায় ৫৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে। যেহেতু এটা পুরনো মেশিন, তাই এটার দাম ৩৫ মিলিয়ন ডলারও নয়। তিনি জানান, পেট্রোবাংলার এক কর্মকর্তার বরাতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই দুর্নীতি তদন্ত করার জন্য বিস্তারিত একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। আমরা যদি ওই চিঠির সূত্র ব্যবহার না-ও করি, তাহলে পারিপার্শ্বিক বিবেচনায় এটা বলা যায়, এখানে বড় ধরনের দুর্নীতি হয়েছে। কারণ, যেখানে নতুন মেশিনের দাম ৩৫ মিলিয়ন ডলার, সেখানে ৫৩ মিলিয়ন ডলার খরচ করে পুরনো মেশিন কেনার কারণই হলো বড় ধরনের ঘুষের লেনদেন।
নাইকো কেলেঙ্কারিতেও তিনি : বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তৌফিক-ই-ইলাহী জ্বালানিসচিবের দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় তাঁর বিরুদ্ধে কানাডিয়ান কম্পানি নাইকো রিসোর্সকে ব্যাপক দুর্নীতির মাধ্যমে কাজ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এ অভিযোগে গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দায়ের হওয়া নাইকো মামলায় তৌফিক-ই-ইলাহীকে গ্রেপ্তার করা হয় ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর। নাইকো মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় যে তাঁর মাধ্যমে বিনা দরপত্রে নাইকোকে গ্যাসক্ষেত্র বরাদ্দ দেওয়ার ফলে রাষ্ট্রের বিপুল ক্ষতি সাধিত হয়েছে। উল্লেখ্য, একটি অভিজ্ঞতাহীন কম্পানি নাইকো রিসোর্সকে টেংরাটিলায় গ্যাস উত্তোলনের কাজ দেওয়া হয়। পরে ওই কূপটিতে আগুন লেগে সাড়ে সাত শ কোটি টাকার গ্যাস পুড়ে যায়। অভিযোগ আছে, আগুন লাগার পেছনে নাইকোরই হাত রয়েছে।
মাগুরছড়ায়ও তৌফিকের নাম : মৌলভীবাজার জেলার মাগুরছড়ায় ১৯৯৭ সালে মার্কিন কম্পানি অক্সিডেন্টাল আগুন ধরিয়ে দিলে ভয়াবহ ক্ষতি সাধিত হয় গ্যাসকূপ ও চারপাশের এলাকায়। এ কারণে বাংলাদেশের প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকার মতো ক্ষতি সাধিত হয়। অক্সিডেন্টাল থেকে ক্রমান্বয় হাত বদল হয়ে এলাকাটি বর্তমানে শেভরনের হাতে। তবে প্রধানমন্ত্রীর সাবেক জ্বালানি উপদেষ্টার সুপারিশে এ ক্ষতিপূরণ মাফ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি থেকে শেভরনকে রেহাই দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, সরকার শেভরনের কাছ থেকে যেন ক্ষতিপূরণ আদায় না করতে পারে, এ জন্য তৌফিক-ই-ইলাহীর নির্দেশে মডেল পিএসসি ২০০৮-এর অধীনে শেভরনকে মাফ করে দেওয়া হয়েছে। শেভরনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানায়, এ বিষয় তারা কোনো তথ্য দিতে বাধ্য নয়। কারণ এটা চুক্তিরই অংশ।
তৌফিকের তদবিরেই সাগরের তেল-গ্যাস পেয়েছে বিদেশিরা : অভিযোগ আছে, তৌফিক-ই-ইলাহী বঙ্গোপসাগরের তেল-গ্যাস মার্কিন আরেক কম্পানি কনোকো-ফিলিপসকে পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত জে এফ মরিয়র্টিকে। মরিয়র্টি তৌফিক-ই-ইলাহীর দেওয়া প্রতিশ্রুতি ওয়াশিংটনে গোপন তারবার্তায় পাঠিয়ে দেন ২৯ জুলাই ২০০৯ সালে। এ তারবার্তাটিও উইকিলিকস ফাঁস করে দিয়েছে। ২০০৯ সালের ২৯ জুলাই পাঠানো তারবার্তায় মরিয়র্টির বক্তব্য দিয়ে বলা হয়, রাষ্ট্রদূত সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু মীমাংসা করার ব্যাপারে তাগাদা দেন, যার মধ্যে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য সাগরের গ্যাস ব্লকের অনুমোদন এবং কয়লাখনির অনুমোদনের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত। উপদেষ্টা ইঙ্গিত দিয়েছেন, কনোকো-ফিলিপসকে সাগরের দুটি নির্বিরোধ গ্যাস ব্লক প্রদান করা হবে। তারবার্তায় আরো জানা যায়, গত ২৩ (২০১০) জুলাই অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে জ্বালানি উপদেষ্টা কনোকো-ফিলিপসকে সাগরের দুটি বিরোধবিহীন গ্যাস ব্লক ইজারা দেওয়ার সম্ভাবনার কথা রাষ্ট্রদূতকে জানান। এ তারবার্তাটি উইকিলিকস একই সময় ওই তারবার্তার সঙ্গে যুক্তভাবে প্রকাশ করে।
উইকিলিকসে ফাঁস হওয়া তারবার্তার তথ্যের সঙ্গে তাল মিলিয়েই যেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় ২০১১ সালের ২৩ মে সাগরের দুটি ব্লক কনোকো-ফিলিপসের কাছে ইজারা দেয়। এ চুক্তির মধ্য দিয়ে ৮০ শতাংশ গ্যাসের মালিকানা পেয়ে যায় মার্কিন কম্পানিটি। শুধু ৮০ শতাংশ মালিকানাই নয়, একই সঙ্গে গ্যাস রপ্তানিরও সুযোগ পেয়েছে কম্পানিটি।
এ সম্পর্কে কালের কণ্ঠের পক্ষ থেকে জ্বালানি উপদেষ্টা থাকাকালে তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল। তিনি তখন বলেছিলেন, 'কনোকো-ফিলিপস একটি মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সিলেক্টেড হয়েছে। এর মাধ্যমে তারা অনেক ব্লক চেয়েছিল। কিন্তু বাকিগুলোর ওপর মিয়ানমার ও ভারতের ওভারলেপিং ক্লেইম আছে। এ কারণে ওগুলো বাদ দিয়ে মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে কনোকো-ফিলিপসকে ওই দুটো ব্লক দেওয়া হয়েছে, যেটা শুরু হয়েছিল বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়।' ইউকিলিকসের ফাঁস হওয়া তারবার্তার সঙ্গে কনোকো-ফিলিপসের সাগরে গ্যাস ব্লক পাওয়ার কোনো সম্পর্ক আছে কি না- জানতে চাইলে তখন তৌফিক-ই-ইলাহী আরো বলেছিলেন, 'উইকিলিকসে কী তথ্য ফাঁস হয়েছে, জানি না। সত্য হলো, মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে তারা কাজ পেয়েছে।'
জানা যায়, জ্বালানি উপদেষ্টার পদ থেকে বিদায় নেওয়ার আগেই অগভীর সমুদ্রের ৭ নম্বর ব্লকটি কনোকো-ফিলিপসকে দেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে প্রধান ভূমিকা রাখেন তৌফিক-ই-ইলাহী। আগামী ২ ডিসেম্বর কনোকো-ফিলিফসের সঙ্গে ৭ নম্বর ব্লকের উৎপাদন বণ্টন চুক্তি (পিএসসি) স্বাক্ষর করবে পেট্রোবাংলা।
কনোকো-ফিলিপসের সাগরে একাধিক ব্লক পাওয়া সম্পর্কে মহাজোটের অন্যতম শরিক দল বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য বিমল বিশ্বাস কালের কণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশের খনিজ সম্পদ যারা বিদেশিদের হাতে তুলে দিতে চায়, তারা জাতীয় স্বার্থবিরোধী ব্যক্তি। দেশ, জাতি ও জনগণের স্বার্থ বিকিয়ে দিতে তাদের বাধে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তিনি আরো বলেন, 'তৌফিক-ই-ইলাহী হলেন সাম্রাজ্যবাদের দেশীয় এজেন্ট। তিনি আমাদের দেশের জাতীয় সম্পদ বিদেশিদের হাতে তুলে দিতে চান। তাঁকে অবিলম্বে বিচারের মুখোমুখি করা উচিত।'
এশিয়ান এনার্জির পক্ষে তৌফিক-ই-ইলাহীর ওকালতি : দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে উন্মুক্ত কয়লাখনির প্রতিবাদে ২০০৬ সালের ২৬ আগস্ট পুলিশ ও বিডিআরের (বর্তমানে বিজিবি) গুলিতে তিনজন নিহত হয়। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলনরত জনগণের ছয় দফার সঙ্গে একাত্ম ঘোষণা করে বলেন, আওয়ামী লীগ যদি ক্ষমতায় যায় ফুলবাড়ীতে কোনোভাবেই উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লাখনি হবে না।' তবে অভিযোগ উঠেছে, তৌফিক-ই-ইলাহী নিজ দলের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির সঙ্গে বেইমানি করে এশিয়ান এনার্জির পক্ষে উন্মুক্ত কয়লাখনি করার পক্ষে একাধিকবার তদবির করেছেন। তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মরিয়র্টি এশিয়ান এনার্জিকে উন্মুক্ত কয়লা খনি করার অনুমতি দেওয়ার জন্য তৌফিক ইলাহীকে অনুরোধ করেন। ২১ ডিসেম্বর ২০১০ সালে ফাঁস হওয়া উইকিলিকসের ওই গোপন তারবার্তায় জানা যায়, ফুলবাড়ী এলাকার জমিতে দরিদ্র এবং ঐতিহাসিকভাবে শোষিত ক্ষুদ্রজাতির বসতি থাকার কারণে প্রস্তাবিত কয়লাখনি প্রকল্পটির সিদ্ধান্ত রাজনৈতিকভাবে বেশ স্পর্শকাতর বলে জ্বালানি উপদেষ্টা (ড. তৌফিক ইলাহী) মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, সরকার স্থানীয় সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষার উপায় বের করবে এবং সংসদীয় পদ্ধতিতে প্রকল্পটির পক্ষে সমর্থন তৈরি করবে।'
এ বিষয়ে বিমল বিশ্বাস বলেন, এশিয়ান এনার্জি পাবে ৯৪ শতাংশ আর পরিবেশ-প্রতিবেশ ধ্বংস করে বাংলাদেশ তার নিজের কয়লা পাবে মাত্র ৬ শতাংশ, এ রকম কোনো অসম চুক্তি জনগণ কখনোই মেনে নিতে পারে না।
চুক্তি না করার আহ্বান : তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ ও সদস্যসচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ গতকাল বৃহস্পতিবার এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, সংবাদপত্রের মাধ্যমে জানা গেছে, বর্তমান নির্বাচনকালীন সরকার ২ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে সংশোধিত 'পিএসসি ২০১২' অনুযায়ী কনোকো-ফিলিপসের সঙ্গে একটি ৭ নম্বর গ্যাস ব্লক চুক্তি করতে যাচ্ছে। একই ধারায় সরকার আরো দুটি ব্লকে শিগগিরই চুক্তি করবে বলেও জানা গেছে। এ ধরনের চুক্তি স্বাক্ষর করা নির্বাচনকালীন সরকারের এখতিয়ারবহির্ভূত। উপরন্তু এই চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে বিদেশি কম্পানিকে এত বেশি সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে যে নিজ দেশের গ্যাসসম্পদ ব্যবহারের সামান্য সুযোগও বাংলাদেশের জনগণ পাবে না।
জাতীয় কমিটির পক্ষ থেকে নির্বাচনকালীন সরকারকে নিজেদের স্বাভাবিক কর্মপরিধির বাইরে গিয়ে এই জনস্বার্থবিরোধী চুক্তি স্বাক্ষর থেকে বিরত থাকার দাবি জানানো হয়।
লিঙ্কঃ Click This Link