নিসিম এজেকিয়েলের কবিতা স্বতঃস্ফূর্ত ও স্বচ্ছন্দ। শব্দের দরজা উন্মুক্ত যেন সবখানে, তবু বাকবিভূতির এমন এক সূক্ষ্ম নিয়ন্ত্রণ সর্বত্র বজায় থাকে যে তা কিছুতে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় না, ঠিক যে জায়গাটায় কবির অভিজ্ঞতা সবচেয়ে বেশি জীবন্ত, পাঠক অনায়াসে সেখানে এসে দাঁড়াতে পারে। কবিতায় কবির নিজের সঙ্গে যে যোগাযোগ তা পাঠককে একীভূত করে নেয়। এই কবির লিখনভঙ্গিমা এমন যে, রচনার সময় তার জ্ঞান জীবন্ত রূপে ছড়িয়ে পড়ে কবিতায় আর তা জৈব রূপ নিয়েই আহ্বান করে পাঠককে। এজেকিয়েল নিজে যদিও বলেন যে, এই প্রক্রিয়া একেবারেই ব্যক্তিগত নিরাময়ের উদ্দেশ্যজাত, তবু তার কবিতা পাঠককে একইভাবে নিজের রাজ্যে স্বাধীন করে দেয় এবং তার জন্যেও একইভাবে বয়ে আনে আরোগ্য।
এজেকিয়েল নিজের সম্পর্কে বলেন, তিনি হিন্দু নন, তার ইহুদি পরিচয় তাকে নিজ বাসভূমেই করে তুলেছে বহিরাগত। পরিস্থিতি এবং তার নেয়া সিদ্ধান্তগুলো তাকে যুক্ত করেছে ভারতবর্ষের সঙ্গে। এজেকিয়েল সমস্ত দুঃস্বপ্নের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসতে চেয়েছেন শব্দকে আশ্রয় করে। দেখেছেন, শব্দ বিশ্বাসঘাতকতা করে না বরং কবিতাকে জন্মাতে দেয়।]
বৃশ্চিকের রাত
আমার মনে আছে সেই রাতটির কথা যে রাতে আমার মাকে
বৃশ্চিক হুল ফুটিয়েছিল। দশ ঘন্টার
একটানা বৃষ্টির তাড়া খেয়ে
সেটি গুটিশুটি মেরে ঢুকে গিয়েছিল একটা চালের বস্তার নিচে।
বিষ ঝেড়ে দিয়ে--অন্ধকার ঘরে নারকীয়
লেজের এক চকিত ঝাপটা--
সে আবারও নেমে গিয়েছিল বৃষ্টির ভেতর।
চাষিরা এলো মৌমাছির ঝাঁকের মতো দলবেঁধে
আর গুঞ্জন তুলল শতবার ঈশ্বরকে ডেকে
যাতে শয়তানের আছর দূর হয়।
মোমবাতি আর লন্ঠন নিয়ে
সূর্য-পোড়া দেয়ালগুলোর উপর
বৃশ্চিকের বিকট ছায়া ফেলে ফেলে
তারা তাকে খুঁজল: পাওয়া গেল না।
তারা জিহ্বায় চুক চুক শব্দ তুলল।
বৃশ্চিকটি তার সমস্ত কায়দায় বিষ ঢুকিয়েছে
মায়ের রক্তে, তারা বলল।
এখনো হয়তো সে রয়েই গেছে, তারা বলল।
আজ রাতেই হয়তো তোমার গতজন্মের
সব পাপ নিঃশেষ হয়ে যাবে পুড়ে, তারা বলল।
তোমার এই দুঃখভোগ হয়তো আগামী জন্মের
দুর্ভাগ্যকে কমিয়ে দেবে, তারা বলল।
সমস্ত পূণ্যের যোগফলের তুল্যে
মায়ার এই দুনিয়ায়
তোমার যন্ত্রণাভোগ হয়তো নস্যাৎ করে দেবে
সমস্ত মন্দের যোগফলকে, তারা বলল।
বিষ হয়তো শুদ্ধ করে দেবে তোমার
বাসনার শরীরকে, আর তোমার আকাঙ্ক্ষার শক্তিকে,
তারা বলল, এবং তারা মেঝেতে বসে থাকল
আমার মাকে মাঝখানে রেখে,
বোধের প্রশান্তি প্রত্যেকের মুখে।
আরও মোমবাতি, আরও লণ্ঠন, আরও প্রতিবেশী,
আরও কীট-পতঙ্গ, এবং অন্তহীন বৃষ্টি।
আমার মা চিৎকার করতে করতে
একেবারে বেঁকেচুরে যেতে থাকলেন মাদুরের উপর।
আমার বাবা, সন্দেহবাদী, যুক্তিনিষ্ঠ,
ভালোমন্দ সব ভাবেই চেষ্টা করলেন,
পাউডার, মিক্সচার, লতাগুল্ম আর দোআঁশলা।
তিনি এমনকি হুলবিদ্ধ পায়ের আঙুলে একটু প্যারাফিন রেখে
তাতে দেশলাইয়ের আগুনও ধরিয়ে দিলেন।
আমি দেখলাম আগুনের শিখা খেয়ে ফেলছে আমার মাকে।
আমি দেখলাম এক সাধু কৃত্য করছেন
তার মন্ত্রোচ্চারণ দিয়ে বিষকে বশীভূত করতে।
কুড়ি ঘন্টা পর
বিষক্রিয়ার ইতি ঘটল।
আমার মা কেবল বললেন,
ঈশ্বরকে ধন্যবাদ যে, বৃশ্চিকটি আমার ছেলেমেয়েদের বাদ দিয়ে
আমাকে বেছে নিয়েছিল।
মিস পুস্প টি. এস.-এর বিদায়সভা
বন্ধুরা,
আমাদের প্রিয় বোন
দু'তিন দিনের মধ্যে
বিদেশ চলে যাচ্ছেন,
এবং
আমরা তার শুভভ্রমণ কামনা করতে
সভা করছি আজ।
আপনারা সবাই জানেন, বন্ধুরা,
কী মাধুর্য ধারণ করেন মিস পুস্প।
আমি কেবল বাহ্যিক মাধুর্যের কথা বোঝাচ্ছি না
বলছি আভ্যন্তরীণ মাধুর্যের কথাও।
মিস পুস্প সর্বদাই হাসেন
এমনকি কোনো কারণ ছাড়াই
তিনি যে অনুভব করছেন স্রেফ এই কারণে।
অতি উচ্চ কুল থেকে
এসেছেন মিস পুস্প।
তার বাবা ছিলেন নামকরা একজন উকিল
বালসার বা সুরাটে,
আমার এখন ঠিক মনে পড়ছে না কোন্ জায়গাটা।
সুরাট? ও হ্যাঁ,
কেবল একবারই আমি সুরাটে ছিলাম
আমার চাচার খুব পুরানা বন্ধুর
পরিবারবর্গের সঙ্গে--
চমৎকার রান্না করতেন তাঁর স্ত্রী...
সে অনেক দিন আগের কথা।
ফিরে আসি মিস পুস্পের কথায়
অত্যন্ত জনপ্রিয় তিনি
পুরুষদের কাছে এবং মহিলাদের কাছেও।
যখনই আমি তাকে কোনোকিছু করতে বলেছি,
তিনি বলেছেন, আমি এক্ষুনি
করে দিচ্ছি কাজটা। এতে আছে
প্রশংসনীয় উদ্দীপনার প্রকাশ। আমি সব সময়েই
উদ্দীপনার প্রশংসা করি।
পুস্প মিস কখনোই না বলেন না।
যখনই আমি কিংবা কেউ কোনো কিছুর জন্য অনুরোধ করেছি
তিনি সব সময় হ্যাঁ বলেছেন,
আর আজ তিনি যাচ্ছেন
নিজের উন্নতি ঘটাতে
এবং আমরা তার শুভভ্রমণ কামনা করছি।
এখন আমি বক্তব্য রাখতে বলি অন্য বক্তাদের
এবং অতঃপর মিস পুস্প
যোগ করে নেবেন সবার কথা।
পশ্চাদ্পট, অসতর্কভাবে
১.
এক কবি-বদমাশ-ভাঁড়ের জন্ম হলো,
ভয়-পাওয়া শিশুটি যে খাবে না
ঘুমাবেও না, শীর্ণ হাড়ের এক বালক।
সে কখনো ঘুড়ি ওড়াতে শেখেনি,
তার ধার-করা লাটিম ঘুরতে অস্বীকৃতি জানায়।
রোমান ক্যাথলিক স্কুলে গেলাম আমি,
নেকড়েদের মাঝে এক পরিশ্রমী ইহুদী।
তারা আমাকে বলল, আমি খৃস্টকে খুন করেছিলাম,
ওই বছর আমি ধর্মশাস্ত্রের পুরস্কার পেলাম।
এক মুসলমান খেলোয়াড় আমার কানে ঘুসি মারল।
আমি বড় হলাম মতাবান কিন্তু
অপুষ্ট হিন্দু ছোকরাদের ত্রাসের ভেতর,
তাদের প্রসর্গ ব্যবহার সব সময়ই ভুল,
আমাকে হটিয়ে দিল নিস্ক্রিয়তা দিয়ে।
এক হট্টগোলের দিনে আমি চাকু ব্যবহার করলাম।
শুক্রবারের রাতগুলোতে, বাড়িতে, ডাকা হলো
প্রার্থনাকারীদের। আমার নৈতিক অবক্ষয় ঘটে গেছে।
আমি যোগ এবং জেনের কথা শুনলাম।
আমার কি ধর্ম-যাজক হবার সম্ভাবনা আছে কোনো?
যত বেশি হাৎড়াই তত কম সম্ভাবনা দেখি।
যখন বাইশ: বিদেশে যাবার সময়।
প্রথমত, সিদ্ধান্ত, তারপর ভাড়া মেটাবার জন্য
একজন বন্ধু। দর্শন,
দারিদ্র এবং কবিতা, তিন সঙ্গী
আমার অন্তঃস্থ ঘরের বাসিন্দা।
২.
লন্ডনের ঋতুগুলো অতিক্রম করে গেল আমাকে।
একা একা আমি বিছানায় শুয়ে কাটালাম দুটি বছর,
আর তারপর এক মহিলা আমার আগ্রহী কানের কাছে এসে
বলল আমি মানবপুত্র।
আমি জানি যে আমি ব্যর্থ হয়েছি
সমস্ত কিছুতে, এক বিরক্তিকর ভাবনা।
তাই এক ইংরেজ কার্গো-জাহাজে যা
ফরাসী আগ্নেয়াস্ত্র ও মর্টার শেল
নিয়ে যাচ্ছিল ইন্দো-চীনে, পাটাতন ঘষামাজার কাজ,
এবং হাসতে শিখল সে স্বগৃহে আবার।
গৃহের অনুভব কীভাবে করল সে, সেটাই হল ব্যাপার।
কিছু পঠন-পাঠন শেষ হলো, কিন্তু কী
দেখলাম আমি, নিজের ক্রোধকে
উস্কে দেয়া ছাড়া? সব হিন্দুই
ওই রকম, বলতেন আমার বাবা,
যখন কেউ উচ্চ স্বরে কথা বলত, কিংবা
পাপাত্মার মতো করাঘাত করত দরজায়।
তার খক খক করে কাশত আর থুতু ফেলত। হাত-পা ছড়িয়ে শুয়ে থাকত।
আরও বেশি মন্দের জন্য প্রস্তুত হলাম আমি। বিয়ে করলাম।
চাকুরী পাল্টালাম, এবং নিজেকে একটা বোকা রূপে দেখতে পেলাম।
আমার অভিজ্ঞতার গান গাওয়া হলো,
জানলাম এখনও সবই গাওয়া বাকী।
আমার পূর্ব পুরুষেরা, তাদের জাতের মধ্যে
ছিল পরদেশী রুটির জন্য যারা বীজ ভাঙত
(ঢাকা দেয়া বৃষ শুরু করল তার পালা)।
৩.
তাদের মধ্যে একজন যুদ্ধ করে করে শিখল,
ব্রিটিশ অস্ত্রধারী এক মেজর।
তিনি আমার বাবাকে ওলন্দাজ যুদ্ধের
বিষণ্ন গল্পগুলো বললেন। আমি স্বপ্নে দেখলাম
হিংস্র মানুষগুলো আমার হাত-পা বেঁধে ফেলেছে।
পরের স্বপ্নগুলোর সবই ছিল শব্দ নিয়ে।
আমি জানতাম না যে শব্দ বিশ্বাসঘাতকতা করে
বরং জন্মাতে দেয় কবিতাকে, এবং হারিয়ে ফেলে
বস্তুসমূহের উপর তার অধিকৃতির লৌকিক পুরস্কার।
ওই রকম যন্ত্রণাভোগ করব না আমি আর।
নিজের তালাশ করব এখন আমি, আর চেষ্টা করব
সরল একটা দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি করতে:
জ্ঞানীরাই টিকে থাকে এবং উপযোগী হয়--
নির্বোধদের নিয়ে খেলতে, ভেতরের এবং বাইরের
ঝড়-ঝঞ্ঝা থেকে মুনাফা করতে।
ভারতীয় ভূদৃশ্য আমার দৃষ্টিকে অসাড় করে দেয়।
বিদেশীদের দেখার বিষয় হয়ে
আমি এখন তার অংশ হয়ে গেছি।
তার বলে আমি অনন্য।
তাদের চিঠিগুলো ঘটনাকে অতিরঞ্জিত করে।
আমার দায়বদ্ধতাগুলোকে স্থির করেছি আমি এখন।
এটা একটা: যেখানে আমি আছি সেখানেই থাকা,
অন্যেরা যেমন নিজেদের জন্য দূরবর্তী
এবং পশ্চাদ্পদ কোনো স্থানকে বেছে নেয়।
আমার পশ্চাদ্পদ স্থান হলো যেখানে আমি আছি।
অধ্যাপক
আমাকে মনে আছে? আমি অধ্যাপক শেঠ।
একসময় তোমাকে ভূগোল পড়িয়েছি। এখন
অবসরে শরীর-স্বাস্থ্য যদিও ভালো। ক'বছর আগে আমার স্ত্রী মারা গেছে।
ঈশ্বরের দয়ায় আমার সব সন্তানই
প্রতিষ্ঠিত হয়েছে জীবনে।
একজন বিক্রয় ব্যবস্থাপক,
একজন ব্যাংক ম্যানেজার,
দুজনেরই গাড়ি আছে।
অন্যেরাও ভালো করছে, খুব ভালো যদিও নয়।
সব পরিবারেই কুলাঙ্গার থাকে।
সরলা এবং তরলার বিয়ে হয়েছে।
তাদের স্বামীরা খুব ভালো ছেলে।
তুমি হয়তো বিশ্বাস করবে না আমার এগারটি নাতি-নাতনি,
তোমার বাচ্চাকাচ্চা ক'টি? তিনটি?
খুব ভালো। এখন তো পরিবার পরিকল্পনার যুগ।
আমি এর বিরুদ্ধে না। সময়ের সাথে তো আমাদেরকে বদলাতেই হবে।
গোটা দুনিয়াটাই বদলাচ্ছে। ভারতবর্ষে
আমরাও তাল মেলাচ্ছি। আমাদের প্রগতি গতিপ্রাপ্ত হচ্ছে।
পুরাতন মূল্যবোধ বিদায় নিচ্ছে, নতুন মূল্যবোধ আসছে।
সবকিছুই ঘটছে অতি দ্রুতগতিতে।
আমি বাইরে যাই কালেভদ্রে, মাঝে মধ্যে
কেবল, বুড় বয়সের পাওনা এটা
কিন্তু আমার স্বাস্থ্য ভালো, ব্যথা এবং পীড়া সেটা সাধারণ।
ডায়াবেটিস নাই, রক্তচাপ নেই, হার্ট এটাক নাই।
যুবাবয়সের উত্তম অভ্যাসের ফল।
তোমার শরীর কেমন?
ভালো? খুশী হলাম শুনে।
এ বছর আমি ঊণসত্তুরে পড়ব
আর আশা করছি শতবর্ষী হব।
কত হালকা পাতলা ছিলে তুমি, কাঠির মতো,
এখন ওজনদার আর গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি,
এটা একটা চমৎকার কৌতুক।
এদিকটায় হঠাৎ যদি কখনো তুমি আসো,
এসো আমার অনাড়ম্বর বাড়িটাতেও।
আমি থাকি আমার সামনের বাড়িটার ঠিক পেছনে।
মুম্বাইয়ে ইহুদী বিয়ে
তার মা দু'এক ফোটা চোখের পানি ফেললেন কিন্তু আসলে কাঁদছিলেন না। এটা করতে হয়, তাই প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করতে করতে তিনি তা করলেন। আমাকে সমবেদনা জানাতে দেখে কনে হাসল এবং বলল, বোকার মতো কোরো না।
তার ভাইদের কাছে আমার একপাটি জুতা ছিল এবং সেটা ফেরৎ পেতে
তারা আমাকে দিয়ে অর্থ প্রদান করাল, প্রতিবেশীদের বাচ্চাকাচ্চারা খেলাটি দেখে মজা পাচ্ছিল, তারা একবারের জন্যেও দৃষ্টি সরাল না আমার উপর থেকে যে এই দিনটির অনিচ্ছুক এক বিবাহার্থী।
যৌতুকের কোনো ব্যাপার ছিল না কারণ তারা জানত আমি 'আধুনিক'
এবং তারাও নিজেদেরকে দাবি করত আধুনিক বলে। তার বাবা আমাকে জিজ্ঞাসা করল কী পরিমাণ অলঙ্কারাদি তার কন্যাকে আমি দিতে চাচ্ছি।
যখন আমি বললাম, আমি জানি না, তিনি হেসে এড়িয়ে গেলেন।
সিনেগগের বাইরে কোনো ব্যান্ড-পার্টি ছিল না তবে আমার মনে আছে একটি দুটি গায়কদলের কথা, কিছু কৃত্য, আঁটসাঁট অনেক টুপি, পশমি হ্যাট, অলংকৃত শাল এবং বর-কনের মতো একরকম গ্লাসে দেয়া আঙুর রস।
গ্লাস ভাঙল মনে পড়ে, এবং সমবেতদের করতালি যার মানে হলো মুছার বিধান অনুসারে খুব ভালোভাবে এবং সত্যিকারভাবে সম্পন্ন হয়েছে আমাদের বিবাহ।
হ্যাঁ এই হলো সব। আমার মনে হয় না এত এমন কিছু ছিল যাকে গুরুগম্ভীর বা সুন্দর বলে চিহ্ণিত করতে পারি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে, আমরা
আমরা আহ্লাদিত ছিলাম এবং অন্যেরাও। কে জানে কতটা বিশ্বাস ছিল আমাদের মনে?
এমনকি সবচেয়ে যারা গোঁড়া বলা হলো তারা গোমাংস খেয়েছে কেননা
এটাই অপেক্ষাকৃত শস্তা। কেউ কেউ এমনকি শুকরের মাংসের স্বাদ নিয়ে ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিল নিজেরদের আত্মাকে।
স্যাবাথের দিন ছিল জুয়া, প্রতিশ্রুতি আর মদ্যপানের।
অসংযত কিছুই ছিল না, লক্ষ্যণীয় ব্যাপার যে, সবকিছুই ছিল সীমিত মাত্রায় আর খুব ভদ্রভাবে রাখা ছিল নিয়ন্ত্রণের ভেতর। আমার বাবা বলতেন, গোঁড়াপন্থী এইসব লোকেরা জানে কীভাবে তাদের
অমার্জিত চালচলনে সীমারেখা টানতে হয়। তিনি নিজেও উদারপন্থী ধর্মমতের দিকে চলে গিয়েছিলেন, আমাদেরকেও নিয়েছিলেন সঙ্গে।
আমার মা 'প্রগতিপন্থী' হয়েছিলেন বলে খুব গর্ব বোধ করতেন।
যাইহোক, যেমনটা বলছিলাম, সবাই করতালি দিচ্ছিল আর তারপরে
আমরা লোবো এন্ড ফার্নান্দেজ নামের ফটোগ্রাফিক স্টুডিওতে গেলাম, যারা বিয়ের পোর্ট্রটে করায় ছিল বিশ্বখ্যাত। তারও পরে,
আমার স্ত্রীর পারিবারিক বাসার রান্নাঘরে ফ্লোর-ম্যাট্রেসে আমরা শুয়ে পড়লাম এবং যদিও তখন সবে মধ্যরাত সে বলতে থাকল এই চলো করি এই চলো করি তাই আমরা তা করলাম।
দশটি বছর পার হয়ে গেছে একথা বলার আগে যে তার মনে আছে সে অতৃপ্ত ছিল। সে সম্পর্কে কি এটাই সব কথা? সে আশ্চর্য হয়েছিল। আঠার মাস আগেই লন্ডন থেকে ফিরে আমি ছিলাম যারপরনাই অনভ্যস্ত।
আমাদের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ বৈবাহিক ঝগড়ার সময় সে বলল, কেন তুমি
আমার সতীত্ব হরণ করেছ? আমি অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে তাকে তা ফেরৎ দিয়েছি, তবে সেই গ্রন্থগুলোর একটিও নয় যাতে আমি ফেরৎ দেবার নির্দেশনাগুলো পড়েছিলাম।
বিচ্ছেদের কবিতা
কেবল স্মৃতি দিয়ে বিচার করি যদি,
আমাদের ভালোবাসা আনন্দপূর্ণ ছিল
যখন বোমা ফাটছে কাশ্মীরে;
আমার জীবন বিস্ফোরিত হয়েছিল
আর মিশে গিয়েছিল তোমার জীবনে।
যুদ্ধ কোনো ব্যাপার ছিল না
যদিও আমরা সেটাকে বিবেচনায় এনেছি,
ঋতু, সময় আর স্থান
তাদের সাধারণ নামগুলো পরিত্যাগ করেছিল।
একদিন তুমি বললে,
'হঠাৎ, আমার মনে হলো,
বড় হয়ে গেছি।' মূল্য ছিল কেবল
সহস্র চুম্বন।
কোনো পুরুষ হতে পারে একটা ঘূর্ণিঝড়,
কোনো নারী বিদ্যুচ্চমক,
কিন্তু বাসগুলো আমাদেরকে নিয়ে গেল আমাদের দেখা করার জায়গায়,
ট্রেনগুলো আমাদের গন্তব্যে।
এসবে, এবং ক্যাফেগুলোতে,
সাগরপাড়ে,
এবং পার্কের বেঞ্চিগুলোতে,
তৈরি হয়ে গেল আমাদের সঙ্গীত।
আমি তোমাকে থামতে বললাম
এবং আবারও শুনতে বললাম,
কিন্তু তুমি দ্রুত অন্য গান শুনতে
ব্যস্ত হয়ে গেলে।
এটা সত্য কথা যে আমরা প্রতিধ্বনির উপর নির্ভর করে বাঁচতে পারি না।
দশ হাজার মাইল দূরে,
তুমি হয়ে গেলে চিঠির বৃষ্টি
এবং আলোকচিত্রের, নিচে দাগ দেয়া পেপার কাটিং
পেন্সিলে লেখা মন্তব্যসহ,
এবং রাত্রিকালীন গন্ধের।
আমার জন্ম ও পুনর্জন্মের
নোংরা ও রুঢ় শহরটিতে
তুমি ছিলে সত্যের দিকে হাসবার
এক নতুন ধরন।
আমি চাই ফিরে আসো তুমি
তোমার সঙ্গে থাকা রুঢ় আনন্দ সহ
যার সঙ্গে মানানসই
তোমার কাঁধ, বুক আর ঊরু।
কিন্তু তুমি এর শেষ চাইলে।
তোমার সর্বশেষ চিঠিতে লেখা ছিল:
''আমি সাথে জুড়ে দিচ্ছি
কন্নড় ভাষার একটি ধর্মীয় কবিতার
রামানুজনকৃত অনুবাদ:
'প্রভু আগুনের ফিতা নিয়ে
খেলছেন।'
আমি আগুন নিয়ে খেলতে চাই।
আমাকে পুড়ে যেতে দাও।''
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ১০:১৩