somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আইয়াপ্পা পানিকরের কবিতা

০২ রা নভেম্বর, ২০০৯ রাত ১:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[আইয়াপ্পা পানিকর (১৯৩০--২০০৬ খ্রী.)-এর জন্ম কেরালায়। মালয়ালাম সাহিত্যে আধুনিকতার সূত্রপাত এঁরই কবিতার মধ্য দিয়ে। মালয়ালাম ও ইংরেজি উভয় ভাষাতেই কবিতা রচনা করেছেন। খ্যাত ছিলেন ক্রিটিক এবং পণ্ডিত হিসেবেও। কবিতার জন্য কেরালা সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পান ১৯৭৫ সালে। ক্রিটিসিজমেও একই পুরস্কার পান ১৯৮৪ সালে। ওই বছরই পেয়েছেন কেন্দ্রীয় সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কারও। পদ্মশ্রী পান ২০০৪ এ। এগুলো ছাড়াও কবিতার জন্য আরও অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা তিনি পেয়েছেন। ২০০৫ সালে ভারতের সাহিত্য অকাদেমি থেকে বাংলায় তাঁর কাব্যসংগ্রহ প্রকাশিত হয়েছে উৎপলকুমার বসুর অনুবাদে। সেটা যারা পড়েছেন তারাও এই অনুবাদগুলো পড়ে দেখতে পারেন।]

এটা কি আমাদের জন্য লজ্জাজনক নয়?

প্রতিদিন
রাতে
রান্নাঘরে
সামান্য খাবার
রাখতে হবে অবশ্যই।

ধরো,
চোরকে আসতে হলো
যদি সে ক্ষুধার্ত থাকে
খাবার খুঁজে না পায়
সে
হয়তো রেগে যাবে
এবং পার হয়ে যাবে
আর ফিরে যাবে
একটা কিছু চুরি না করেই।

এটা কি আমাদের জন্য লজ্জাজনক নয়?


শাদা মেঘ

শাদা মেঘ থেকে হয়তো কখনোই বৃষ্টি হয় না!
তারা কেবল অলসভাবে ভেসে যায় আকাশপথে!
কালো মেঘ বৃষ্টিতে ভিজিয়ে দেয় মাটি
বজ্র শিহরিত করে ধরিত্রীকে
বিদ্যুচ্চমক আলোকিত করে আকাশকে
সাগর কালো মেঘকে প্রীতি সম্ভাষণ জানায় তার ভাঁজ করা বাহু দিয়ে।
যখন ওইসব তুলোর শাদা বল
আলতোভাবে ভেসে যায় নীলাকাশ দিয়ে
আমরা দেখি, তা কতই না সুন্দর!
তুমি থেমে যাও আর তাকিয়ে থাকো অপলক
ওই শাদার সৌন্দর্য কোথায় খুঁজে পাবে আর?


এপিটাফ

এখানে শায়িত আছে মি. পানিকরের দেহ
যিনি তার আতঙ্কের দিনগুলোর শেষে
কিছুকালের জন্য কবুল করেছেন শুয়ে থাকা।
জানা যায়নি তার আত্মার ভাগ্যে কী ঘটেছে
যদি আদতেই ওরকম কিছু থেকে থাকে।
যখন বেঁচে ছিলেন একদম আলাদারকম ছিলেন না তিনি আমাদের থেকে;
তার মাংসপেশী সত্যি বলতে কি মাঝেমধ্যে বিদ্রোহ করেছে
আর উল্টেপাল্টে দিয়েছে তার সূক্ষ্ম সংবেদনশক্তিকে।
স্থানকে তিনি কখনোই তার পছন্দের উপযোগী করতে পারেননি;
তার সময়জ্ঞান আপনারা জানেন খুব একটা জোরালো ছিল না।
তার পকেট-বইতে অবশ্যই ছিল হরেক মতবাদ;
যা কিছুই তিনি স্পর্শ করতে পারতেন
সেসব তাকে বলত আলাদা কাহিনি।
সমস্ত জীবন তিনি ধৈর্য ধরে শিখছিলেন,
কোন্ ভাবে বেঁচে থাকাটা ঠিক হবে না মোটেও।
তিনি সম্ভবত জানতেন
আরেকবার সুযোগ দেয়া হলে
আগের বারের চেয়ে এক্ষেত্রে অনেক ভালো করবেন অবশ্যই।
এবং যে-তুমি যাচ্ছ পাশ দিয়ে
বেশি সময়ের জন্য দাঁড়িয়ো না এখানে
বরং চুপচাপ চলে যাও কাছাকাছি কোনো কবরস্থানের দিকে
যেটি হয়তো অপেক্ষা করে আছে তোমার জন্য।


আরশোলা

যখন আরশোলা বিড়ালকে খেলো,
ইঁদুর বিষণ্ন হয়ে বসে থাকল:
আমাকে এখন কে খাবে, হায়!
ভাগ্যও কি আরশোলার মতো?

নিজের ষষ্ঠ পায়ে লাফিয়ে,
আরশোলা এসে বলল:
ইঁদুর, তোমার কান্নার দরকার নেই;
আমি তোমাকেও খাব, প্রিয়।
কিন্তু যদি, তার আগে,
তুমি এক টুকরো বিড়ালের মাংস খেয়ে নিতে পার
তোমাকে আমার খেতে আরও সুস্বাদু লাগবে;
আর আমি সেটা খুব পছন্দ করব।

ইঁদুর যখন বিড়ালের লেজ খেলো,
ইঁদুরের লেজ তখন আরশোলার মুখে।
যে যুক্তিবাদী বিষাদভরে আরশোলার লেজ দেখছে,
সে কি একজন মানুষ?
সেই মানুষটা কি একজন যুক্তিবাদী?


চুরি

আমি না হয় কিছু জিনিস চুরিই করেছি
তার জন্যে আমাকে তোমরা চোর বলবে কেন?

কিন্তু তুমি আমাদের জামাকাপড় চুরি করেছ!

যদি আমি চুরি করে থাকি তোমাদের জামাকাপড়, তোমাদের জামাকাপড়,
সেটা কেবল তোমাদের লজ্জাবোধকে রক্ষা করতে,
সেটা কেবল তোমাদের লজ্জাবোধকে রক্ষা করতে।

তুমি আমাদের মুরগীও চুরি করেছ!

যদি আমি চুরি করে থাকি 'আমাদের মুরগী', যেমন তুমি বললে,
সেটা কেবল মুরগীটাকে ফ্রাই করে খাব বলে,
সেটা কেবল মুরগীটাকে ফ্রাই করে খাব বলে।

আর গরু যে চুরি করেছ আমাদের তার কি হবে?
গরু যে চুরি করেছ আমাদের তার কি হবে?

তুমি বলছো, গরু?
বেশ, যদি আমি চুরি করে থাকি তোমাদের গরু, তোমাদের গরু,
সেটা করেছি, সেটা করেছি আমি গরুর দুধ খাব বলে।

আমার ডাক্তার, খেয়াল করো, ফ্রাইকরা মুরগী
বা গরুর দুধ খেতে বারণ করেন নি।

যখন কেউ চুরি করে ভালো কোনোকিছু, ভালো কোনোকিছু,
তোমরা অহেতুক কলরব জুড়ে দাও
আর তাকে খেতাব দাও চোর, একটা চোর!

এটা তোমাদের আইনের দোষ,
এটা তোমাদের আইনের দোষ।

তোমরা তাহলে তোমাদের আইন পাল্টাও, আমি বলছি,
নাহলে তোমাদের আইনই পাল্টে দেবে তোমাদের!

ছবির লিংক:
Click This Link
৪৫৬ বার পঠিত
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার সাজিদ কমেন্ট অফ রাখায় এখানে লিখছি (সাময়িক)

লিখেছেন মিরোরডডল , ২৩ শে নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:০৫


সাজিদের বিদায় পোষ্ট দেখলাম, কমেন্ট সেকশন বন্ধ রাখায় ভাবলাম এখানেই লিখে যাই।

জানিনা কি বলবো, হয়তো এটাই দেখা বাকি ছিলো।
চলে যাবার কারণ জানিনা কিন্তু অনুমান করতে পারছি।
Man! you shouldn't leave.

ব্লগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখ হাসিনা রাজনৈতিক নিপীড়নের শিকার হতে যাচ্ছেন?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৫৭


আজকাল মানুষ চেনা বড্ড কঠিন হয়ে পড়ছে। কে কোন উদ্দেশ্য নিয়ে কার পক্ষে দাঁড়াচ্ছে তা বুঝা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। রাজনীতিতে এই কথা আরো বেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কখনো বিদায় বলতে নাই

লিখেছেন ডার্ক ম্যান, ২৩ শে নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



ব্লগে কিছুদিন ধরে অনিয়মিত হওয়ায় কখন কি ঘটে জানি না।
কিছুক্ষণ আগে মিররডলের একটা পোস্টে জানতে পারলাম , ব্লগার আমি সাজিদ ঘোষণা দিয়ে ব্লগ ছেড়েছেন । তার সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তীব্র নিন্দা জানাই

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৩ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:০৭



চাঁদগাজী একজন গ্রেট ব্লগার। তার তুলনা হয় না।
সামু তার সাথে বারবার অন্যায় করেছে। একটা দিন তাকে শান্তিতে ব্লগিং করতে দেওয়া হয়নি। সামুর ইতিহাসে তাকে সবচেয়ে বেশি বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

দৃষ্টি আকর্ষণঃ সৌহার্দ্যপূর্ণ ব্লগ কমিউনিটি গঠনের আহ্বান।

লিখেছেন সামহোয়্যারইন ব্লগ টিম, ২৪ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:২৫

সম্মানিত ব্লগারগণ,

আপনাদের সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা। সামহোয়্যারইন ব্লগ টিমের পক্ষ থেকে আমরা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, যা আমাদের এই কমিউনিটির পরিবেশকে আরও সুন্দর, সমৃদ্ধ এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×