somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অরুণ কোলাৎকারের কবিতা

১২ ই অক্টোবর, ২০০৯ রাত ১২:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অরুণ কোলাৎকারের কবিতা

[অরুণ কোলাৎকারের (১৯৩২--২০০৪ খ্রী.) জন্ম ভারতের মহারাষ্ট্রে। মারাঠি ও ইংরেজি উভয় ভাষাতেই কবিতা লিখেছেন। ইংরেজি ভাষায় লেখা তাঁর কাব্যগ্রন্থ জেজুরি (১৯৭৬) কমনওয়েল্থ কবিতা পুরস্কার পায় ১৯৭৭ সালে। জেজুরি ৩১ টি অংশে বিভক্ত একটি দীর্ঘ কবিতা। পশ্চিম মহারাষ্ট্রের একটি ছোট শহর জেজুরি। সেখানে খাণ্ডব মন্দিরে ভ্রমণের কাব্যিক দিনপঞ্জী এই কবিতাটি। জেজুরি থেকে ৬ টি সহ আ গেম অফ টাইগারস এন্ড শিপ নামের আরেকটি কবিতার অনুবাদ এখানে পোস্ট করা হলো।]

বাঘ ও ভেড়ার খেলা

কে বাঘ আর কে ভেড়া নিয়েছে
মনে হয় না তাতে কখনো পার্থক্য হয়েছে।
ফলাফল সব সময়ে একই:
সে জেতে,
আমি হারি।
তবে কোনো কোনো সময় যখন তার বাঘেরা
হুঙ্কার ছেড়ে ছুটছে
আমার ভেড়ার দলের অর্ধেকটা নিঃশেষ,
সাহায্য আসে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে:
উপরের দিক থেকে।
জংধরা বর্মধারী
তখনো পর্যন্ত যে নিরপেক্ষ,
জয়পুস্প ছুঁড়ে দেয় নিচে
ফুটপাতে কাঠকয়লায় আঁকা চৌখুপি ছকের উপর--
হলুদ এবং অপ্রাসঙ্গিক,
একটি বাঘের আরামকে নাশ করে দিয়ে,
এবং আরেকটিকে হুমকির মুখে ফেলে;
এবং শীঘ্রই নেমে আসে
আরেকটি ফুল--
হলুদটির মতোই
আর একই রকমভাবে অপ্রাসঙ্গিক-- কেবল
এইটুকু ছাড়া যে এটি নেমে আসে এমনকি আরো ধীরগতিতে;
কোনোরকম তল্লাশির পরোয়ানা ছাড়া একটি ফুল
তার কানের লতিকে ঢেকে দিয়ে
গণ্ডদেশ চারণ করে
অদৃশ্য হয়ে যায়
নিচু করে কাটা তার ব্লাউজের আড়ালে--
সচরাচর যেখানে সে লুকিয়ে রাখে
টুকরা টাকরা গোপন জিনিস--
কিছুটা চেতনা অসাড় করা
কিন্তু অতিশয় হতবিহ্বলকর গন্ধে
তাকে এমনকি আরো বেশি বিভ্রান্ত করে দিয়ে।


জেজুরি থেকে

মাকারান্দ

শার্ট খুলে রেখে
ভেতরে যাব পূজা করতে?
না, ঠিক আছে।

আমি না।
বরং তুমি যাও
যদি সেটাই তুমি চাও।

যাবার আগে
আমাকে কি একটা ম্যাচবক্স
দিয়ে যাবে?

আমি বাইরে এই উঠানেই থাকছি
যেখানে কেউ কিছু মনে করবে না
যদি আমি সিগারেট ধরাই।


মনোহর

দরজা খোলা ছিল
মনোহর ভাবল
এটা বুঝি আরও একটা মন্দির।

সে ভেতরে তাকাল।
কোন্ দেবতাকে
না জানি দেখতে পাওয়া যায়।

ত্বরিৎ ঘুরে দাঁড়াল সে
যখন আয়ত চোখ এক বাছুর
ফিরে তাকাল তার দিকে।

অন্য কোনো মন্দির তো এটা নয়।
সে বলল,
এ তো স্রেফ একটা গোয়ালঘর।


চৈতন্য

আঙুরের মতো মিস্টি
জেজুরির পাথর
বলেছিলেন চৈতন্য।

তিনি অকস্মাৎ মুখে পুরেছিলেন
একটা পাথর
আর থুক করে বের করেছিলেন দেবতাদের।


আঁচড়

দেবতা কী
আর পাথর কী
তার ভেদরেখা
যদি থাকেও
তবে তা খুবই সূক্ষ্ম
এই জেজুরিতে
আর অন্যসব পাথরই
হয় দেবতা নয়তো তার কোনো জ্ঞাতি

দেবতা ছাড়া
এখানে কোনো শস্য নাই
এবং দেবতারই চাষ হয় এখানে
সমস্ত বছর ধরে
এবং প্রতি প্রহরে
অনুর্বর মাটি
আর কঠিন পাথর থেকে

ঐ বিশাল প্রস্তর খণ্ড
শোবার ঘরের মতো আকার
ওটা হলো পাথরে রূপান্তরিত খাণ্ডবের স্ত্রী
গায়ে যে ফাটল
একদা তিনি ক্রোধবশত আঘাত হেনেছিলেন
খড়গ দিয়ে
ওটা তারই ক্ষতচি‎হ্ণ

আঁচড় দাও কোনো শিলাখণ্ডে
ঠিকরে বেরুবে কীংবদন্তি


স্টেশন কুকুর

স্থানটির আত্মা বাস করে
ঘেয়ো স্টেশন কুকুরটির
দেহের ভেতর

প্রায়শ্চিত্ত করছে সে
গত তিনশো বছর ধরে
আসবার ও যাবার গাছটির নিচে

কুকুরটি তার ডান চোখ খোলে
বেশ বড় করে যাতে দেখতে পায়
তুমি কোনো মানুষ নাকি উপদেবতা

নাকি অষ্টভূজা রেলওয়ে টাইমটেবলটি
বাড়ি মারতে আসে মাথায়
তার নিরাময়ের হাত দিয়ে

এবং তাকে স্বর্গে নিয়ে যেতে
কুকুরটি মনস্থ করে
সেইদিন এখনো আসে নাই।


এক বৃদ্ধা

এক বৃদ্ধা তোমার
জামার হাতা আঁকড়ে ধরে
আর চলতে থাকে পেছন পেছন।

সে চায় পঞ্চাশ পয়সার একটা মূদ্রা।
সে বলে তোমাকে দেখিয়ে দেবে
অশ্বক্ষুর মন্দিরে যাবার পথ।

তুমি সেটা ইতোমধ্যে দেখে ফেলেছ।
তবু সে খুঁড়িয়ে চলে তোমার পেছনে
এবং আরও শক্ত করে এঁটে ধরে তোমার জামা

যেতে সে দেবে না তোমাকে।
তুমি জানো বৃদ্ধারা কী রকমের হয়।
তারা আটকে থাকে চোরকাঁটার মতো।

তুমি ঘুরে দাঁড়িয়ে মুখোমুখি হও তার
একটা এস্পার ওস্পার করতে।
তুমি চাও এই প্রহসনের ইতি ঘটুক।

তুমি যখন তাকে বলতে শুনলে,
‌‌‍’এই অভিশপ্ত পাহাড়ে
একটা বুড়ো মানুষ কী আর করতে পারে তোমার?’

তুমি সোজা তাকালে আকাশের দিকে।
তার চোখে যে বুলেট কোটর ছিল
তার স্বচ্ছতার ভেতর দিয়ে।

আর তুমি তাকিয়ে আছো যখন
যে ফাটল ধরা শুরু হয়েছে তার চোখের চারিদিকে
সেটা ছড়িয়ে গেল তার চামড়ার বাইরে।

এবং চৌচির হলো পাহাড়গুলো।
এবং ফাটল ধরল মন্দিরগুলোতে।
এবং ভেঙে পড়ল আকাশ

প্লেট-গ্লাস ভাঙার ঠনঠন শব্দে
অবিচল বুড়িটির চতুর্দিকে
যে দাঁড়িয়ে আছে একা

আর তার হাতের ভেতর
তোমার বদল ঘটল
খুব অল্পই।


ব্যবহৃত ছবির লিংক
http://en.wikipedia.org/wiki/Arun_Kolatkar





সর্বশেষ এডিট : ১২ ই অক্টোবর, ২০০৯ রাত ১২:৫৬
৪৫৬ বার পঠিত
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার সাজিদ কমেন্ট অফ রাখায় এখানে লিখছি (সাময়িক)

লিখেছেন মিরোরডডল , ২৩ শে নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:০৫


সাজিদের বিদায় পোষ্ট দেখলাম, কমেন্ট সেকশন বন্ধ রাখায় ভাবলাম এখানেই লিখে যাই।

জানিনা কি বলবো, হয়তো এটাই দেখা বাকি ছিলো।
চলে যাবার কারণ জানিনা কিন্তু অনুমান করতে পারছি।
Man! you shouldn't leave.

ব্লগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখ হাসিনা রাজনৈতিক নিপীড়নের শিকার হতে যাচ্ছেন?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৫৭


আজকাল মানুষ চেনা বড্ড কঠিন হয়ে পড়ছে। কে কোন উদ্দেশ্য নিয়ে কার পক্ষে দাঁড়াচ্ছে তা বুঝা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। রাজনীতিতে এই কথা আরো বেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কখনো বিদায় বলতে নাই

লিখেছেন ডার্ক ম্যান, ২৩ শে নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



ব্লগে কিছুদিন ধরে অনিয়মিত হওয়ায় কখন কি ঘটে জানি না।
কিছুক্ষণ আগে মিররডলের একটা পোস্টে জানতে পারলাম , ব্লগার আমি সাজিদ ঘোষণা দিয়ে ব্লগ ছেড়েছেন । তার সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তীব্র নিন্দা জানাই

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৩ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:০৭



চাঁদগাজী একজন গ্রেট ব্লগার। তার তুলনা হয় না।
সামু তার সাথে বারবার অন্যায় করেছে। একটা দিন তাকে শান্তিতে ব্লগিং করতে দেওয়া হয়নি। সামুর ইতিহাসে তাকে সবচেয়ে বেশি বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

দৃষ্টি আকর্ষণঃ সৌহার্দ্যপূর্ণ ব্লগ কমিউনিটি গঠনের আহ্বান।

লিখেছেন সামহোয়্যারইন ব্লগ টিম, ২৪ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:২৫

সম্মানিত ব্লগারগণ,

আপনাদের সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা। সামহোয়্যারইন ব্লগ টিমের পক্ষ থেকে আমরা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, যা আমাদের এই কমিউনিটির পরিবেশকে আরও সুন্দর, সমৃদ্ধ এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×