একটা বিবর্তনবাদী ব্লগে samiul alam chowdhury বলেছেন :
বিবর্তনবাদীরা বলে থাকে যে CHANCE বা ভাগ্যের কারণে এই পৃথিবীতে প্রাণ সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু গাণিতিকভাবে হিসাব করলে দেখা যায় যে যদি কারও কোন নিয়ন্ত্রণ ছাড়া প্রান সৃষ্টি হয় তাহলে সম্ভাব্যতার সূত্রানুসারে সেটা হবে অসম্ভব একটি ব্যাপার।
এক্ষেত্রে স্যার ফ্রেড হোয়েল এবং চার্লস ভিক্রমসিং একটি বিখ্যাত উক্তি দেন। সেটি হলঃ
“Belief in the chemical evolution of the first cell from lifeless chemicals is equivalent to believing that a tornado could sweep through a junkyard and form a Boeing 747.”
তাঁরা এখানে বলেন -
“প্রাণহীন রাসায়নিক দ্রব্যাদি থেকে প্রথম কোষের রাসায়নিক বিবর্তনের উপর বিশ্বাস করা হল একটি টর্নেডোর প্রচুর আবর্জনা ভর্তি একটি স্থান থেকে বোইং ৭৪৭ তৈরি করতে পারার উপর বিশ্বাস করার সমান।”
স্যার ফ্রেড হোয়েল এবং চার্লস ভিক্রমসিং এর কথা অনুসারে একটি টর্নেডো ময়লা আবর্জনা ভর্তি একটি স্থান দিয়ে যাবার সময় সঠিক পার্টগুলো খুঁজে বের করে একটি বোইং ৭৪৭ তৈরি করতে পারে এই কথায় বিশ্বাস করা এবং রাসায়নিক বিবর্তন এর মাধ্যমে প্রাণহীন বস্তু থেকে প্রথম কোষের উদ্ভব হওয়ায় বিশ্বাস করা একই কথা। মানে তাদের কথা থেকেই বোঝা যায় যে রাসায়নিক বিবর্তনের মাধ্যমে প্রাণের উদ্ভব হওয়াটা কতটুকু অবাস্তব একটি ব্যাপার। এর কারন হল রাসায়নিক বিবর্তনের দ্বারা প্রথম কোষের উৎপত্তির সম্ভাবনা অতি ক্ষীণ, এতই ক্ষীণ যে একে অসম্ভব হিসেবে বললেও কিছুমাত্র ভুল হবে না।
এবার একটু দেখা যাক যে রাসায়নিক বিবর্তন দ্বারা প্রাণের উৎপত্তি ও উন্নতির সম্ভাবনা ঠিক কতটুকু। স্যার ফ্রেড হোয়েল এবং চার্লস ভিক্রমসিং RANDOM PROCESS এর মাধ্যমে প্রোটিন তৈরি হবার সম্ভাব্যতা গননা করেন। তাঁরা বলেন যে, RANDOM PROCESS এ CHANCE দ্বারা শুধুমাত্র একটি এনজাইম বা প্রোটিন অনু গঠিত হবার সম্ভাবনা 1 IN 10 TO THE POWER 20 (1/10^20) এর বেশি নয়। বর্তমান পৃথিবীর জীবজগতে ২০০০ এরও বেশি এনজাইম আছে । এই দুই বিজ্ঞানী গননা করেন যে RANDOM PROCESS এ CHANCE দ্বারা এই সমস্ত এনজাইম গঠিত হবার সম্ভাবনা হল 1 IN 10 TO THE POWER 40,000(1/10^40000)। তবে দুঃখের বিষয় হল যে বর্তমানে আর তাদের এইসব গননা ব্যাবহার করা হয় না! কারন বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে তাঁদের সম্ভাব্যতা সম্পর্কিত এইসব গণনা ভুল হিসেবে গণ্য হয়!! বর্তমানে জীববিজ্ঞান ও রসায়নবিজ্ঞানের বহু উন্নতি সাধিত হয়েছে। মানুষ এখন জীববিজ্ঞান ও রসায়নবিজ্ঞান সম্পর্কে এমন অনেক কিছু জানে যা স্যার ফ্রেড হোয়েল এবং চার্লস ভিক্রমসিং এর সময় মানুষ জানতো না। এখনকার জীববিজ্ঞান ও রসায়নবিজ্ঞানের জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে প্রান সৃষ্টির ক্ষেত্রে যে সম্ভাব্যতা গননা করা হয় তা আসলে আরও ভয়াবহ!!!! এখনকার গননা অনুসারে CHANCE এর মাধ্যমে ২০০ টি এমিনো এসিড অণু সম্বলিত শুধুমাত্র ১ টি প্রোটিন অণু গঠন হবার সম্ভাবনা হল 1 IN 10 TO THE POWER 260 বা 1/10^260।(সংখ্যাটি এতই বড়ো যে আমার Fx-570 ms SCIENTIFIC CALCULATOR এ CALCULATION এর সময় Math ERROR দেখায়!)। এই গণনাটি করা হয় বর্তমানে পাওয়া প্রোটিনের সংখ্যা অর্থাৎ ২০ এর উপর বর্তমানে পাওয়া অ্যামিনো এসিডের সংখ্যা মানে ২০০ এর পাওয়ার(POWER) দিয়ে। অর্থাৎ 20^200 থেকে এই গণনাটি পাওয়া যায়। এই সম্ভাবনাটি এতোই সামান্য যে সারা মহাবিশ্বও যদি অ্যামিনো এসিড দ্বারা ভর্তি থাকে এবং তারা যদি ১ বিলিয়ন বছর ধরেও একটি আর একটির সাথে সংযুক্ত হতে থাকে তবুও ২০০ অ্যামিনো এসিড সম্বলিত ১ টি প্রোটিন অণুও গঠিত হবার কথা না জীবন্ত কোষ তো দূরে থাক!
আমাদের বর্তমান জ্ঞান অনুসারে মানুষের প্রতিটি জিনে গড়ে প্রায় ৩০০০ টি করে বেস থাকে। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি বেস সম্বলিত যে জিন পাওয়া গেছে সেখানে বেস আছে সর্বমোট 2.4 বিলিয়ন! মানুষের দেহে প্রায় ৩০,০০০ জিন আছে। মানুষের জেনোমে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডিএনএ বেস পেয়ার আছে। শুধুমাত্র পরিণত লাল রক্ত কোষগুলো ছাড়া মানুষের প্রত্যেক কোষে জেনোম সম্পূর্ণ রয়েছে । প্রতি কোষে প্রটিওম আছে যা প্রোটিন থেকেই আসে। জেনোম সাধারণত কখনও পরিবর্তিত হয় না। কিন্তু প্রটিওম প্রতি মিনিটেই পরিবর্তিত হয় পরিবেশের বিভিন্ন প্রায় ১০,০০০ সিগনাল পেয়ে। সবশেষে আমরা জানতে পারি যে মানব দেহে প্রায় ২ মিলিওন প্রোটিন আছে যার প্রতিটিরই আছে বিভিন্ন ধরনের কাজ। কিন্তু যেখানে মহাবিশ্বে এমিনো এসিড দ্বারা পূর্ণ থাকলেও ১ বিলিয়ন বছরে CHANCE দ্বারা ১ টি প্রোটিন অণু গঠিত হয় কিনা সন্দেহ সেখানে ২ মিলিওন প্রোটিন অণু এবং আরও অসংখ্য সূক্ষ্ম অংশ সম্বলিত এতো জটিল এবং কর্মক্ষম একটি মানবদেহ কিনা এসেছে CHANCE থেকে! আর পুরা জীবজগতের কথা তো ভাবাই যায় না যেখানে এখনও প্রচুর নতুন নতুন প্রাণী আবিষ্কার হচ্ছে!! এটা তো একটা অবিশ্বাস এবং অলৌকিক ব্যাপার!!! যারা সৃষ্টিকর্তা এবং অলৌকিকত্বে বিশ্বাস করে না তাদের জন্য এটা একটা বেশ ভালই কল্পনা প্রসূত অলৌকিক চিন্তাভাবনা!!!!!
এক্ষেত্রে এই কথাটি বেশ ভালভাবেই খেটে যায় যে -
There is no chance that the human body could have come about by chance!
তবে এই কথাটি শুধুমাত্র মানুষের ক্ষেত্রেই খাটে না বরং আসলে পৃথিবীর সকল জীবের ক্ষেত্রেই খাটে। মানুষের মস্তিষ্কের গঠন অন্যান্য জীবদের মস্তিষ্কের গঠন থেকে অনেক অনেক বেশি জটিল ও উন্নত বলেই মূলত মানব দেহের উদাহরণটি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সত্যি বলতে কি সম্ভাব্যতা অনুসারে আসলে বাহিরের কোন হস্তক্ষেপ ছাড়া বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে সরলতম এককোষী জীবটিরও অস্তিত্ব থাকার কথা নয়!
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:৪৯