উক্ত ব্রিজে আমি দাড়ানো ছিলাম বিকাল ৫:৩০ টার দিকে। একটা ইফতার পার্টির দাওয়াত ছিলো তাই ওদিকে যাওয়া, হাতে পর্যাপ্ত সময় থাকায়, ভাবলাম আগেভাগে গিয়ে বসে থাকার চাইতে এখানে একা একা কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থাকি। দাড়িয়ে-দাড়িয়ে লোকজনের আসা-যাওয়া, চলা-ফেরা, কাজকারবার দেখি। আমার অনতিদুরেই এক ছিন্নমূল লোক বসা তার পাশেই আমার মেয়ের বয়সী এক মেয়ে; বয়স ৫-৬ হবে। তাদের ভাব-সাব দেখে মনে হচ্ছে তারা বাপ-বেটি। লোকটার গায়ে কম্বল জড়ানো, খুব শ্যালো-শটকার্ট একটা চেহারা; যেমনটা চেহারা সব বাস্তুহারা-ফুটপাতবাসী লোকজনের হয়ে থাকে- চেহারায় কোনো মায়া-মমতা নেই, কোনো ভাল-মানুষী নেই, নেই কোনো শান্ত-স্থিরতাপুর্ণ অবয়ব। তবে বালিকাটির চেহারা খানিকটা আমার মেয়ের মতো, এবং এখনো তার চেহারা হতে শিশুত্বের ঝিকিমিকি ভাবটি বিলিন হয়ে যায়নি। রাস্তার পাশে এই দাড়িয়ে থাকা আমাকে ক্লান্ত করেনা। আমাকে ভাবায়। বিজ্রের নিচে দেখি ছোটোমোটো একটা ফুলবাগান, তাতে আবার বেশ ফুলও ফুটেছে।
এদিকে কোথায় যেন নায়িকা পরীমনি'র বাসা, আমি চিনিনা। আমাদের ড্রাইভারকে কতোবার বলেছি যে ওই বাসার সামনে দিয়ে একদিন আমারে নিয়ে যাবার জন্য, ও-বেটা যায়না, খালি মিচকি মিচকি হাসে। ওই বেটা ওই হাসির কি হইলো, পরীমনি হইলো এদেশের সব'চে সেরা সুন্দরী ।
ক্ষুধার্ত অবস্থায় দুটি কাজ করতে হয়না- ১. বাজার করা এবং ২. ঝগড়া করা। পাচতারকা হোটেলের ইফতার পার্টিতে আমরা প্রথম কাজটির মতো একটা কাজ করলাম বলতে গেলে সবাই। খাবারে সবার প্লেট উপচে-উপচে পড়ছে, হাজারো পদের-নানা রকমের খাবার। লোকজন যা
প্লেটে নিয়েছিলো তার সিকি ভাগও খায়নি, সব ফেলনা যাবে...আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি যা নিয়েছে তার সবটুকু খেতে। এজন্যই বোধহয় আল্লাহ বলেছেন "তোমরা খাও-পানাহার করো, কিন্তু অপচয় করোনা"। আর আজ আমরা যা করলাম তা অপচয়ের চুড়ান্ত।
বৃষ্টিভেজা পথ মাড়িয়ে আমরা যখন এসির বাতাস খেতে গন্ত্যবে রওয়ানা হলাম, তখনো আনমনে রাস্তায় আমার মেয়ের মতো দেখতে মেয়েটিকে খুজছিলাম; হয়তো সন্ধ্যায় শিশুটি তেমন কিছু খায়নি, আর আমরা কিছুই নষ্ট করতে বাদ রাখিনি।