মানুষটার একটা নাম আছে। তবে নামটা গুরুত্বপূর্ণ না। অর্থ্যাৎ তার নাম না জানলেও চলবে। যেটা জানা প্রয়োজন তা হচ্ছে তিনি একজন মন্ত্রী। তার আরো কিছু পরিচয় আছে। তিনি শ্রমিক নেতা। এবং একজন গডফাদার। আপাতত এসব তথ্য জানলেই হবে। অন্তত পক্ষে তার ক্রাইসিসটা কিছুটা হলেও অনুভব করা যাবে। এবার তবে গল্পটা শুরু করা যাক।
মন্ত্রী সাহেব খুব নিষ্ঠুর প্রকৃতির মানুষ। আবেগ তার ভেতর খুব একটা কাজ করেনা। এবং তিনি সাহসী। কোন জীবত মানুষকে তিনি ভয় পান না। নিজের এসব গুনাবলী নিয়ে তিনি খুব গর্বিত। কিন্তু হঠাৎ করেই তিনি এক গভীর সংকটের ভেতর পরে গেছেন। তিনি তার চারপাশে মৃত মানুষ দেখা শুরু করেছেন। তিনি শুধু মানুষগুলোকে দেখছেন এমননা, তাদের সাথে কথাও বলছেন। এবং এসব মানুষদের মধ্যে একটা মিল আছে। তারা সবাই বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে। তাদের একটাই দাবী। সেটা হচ্ছে মন্ত্রীর সংঙ্গ। মৃত্যুর পর তারা খুব নিংসঙ্গ হয়ে গেছে। তারা তাদের সে একাকীত্বের গল্পটা বলতে চায়। কিন্তু শোনার মত কেউ নেই। তারা চেষ্টা করেছে। কিন্তু কোন জীবিত মানুষের সাথে তারা কম্যুনিকেট করতে পারেনি। শুধুমাত্র মন্ত্রীর বেলায় সফল হয়েছে। মন্ত্রী তাদের দেখছে। তাদের কথা শুনতে পারছে।
এসব মৃত মানুষরা মন্ত্রীর কাছে দিনের পর দিন একটা আবদার করে আসছে। সেটা হচ্ছে তারা মন্ত্রীর একটা মাজার বানাতে চায়। সে মাজারের চারপাশে জিকির করে তারা তাদের মৃত্যু পরবর্তী জীবন কাটিয়ে দেবে। কিন্তু এখানে মূল সমস্যাটা হচ্ছে মন্ত্রী জীবিত । তার মাজার বানাতে হলে তাকে মরতে হবে। এবং তার অপমৃত্যু হতে হবে।
প্রথমে কিছুটা ভয় পেলেও তিনি বিষয়টা নিয়ে গভীর ভাবে ভেবে দেখেছেন। মরতে তাকে হবেই একদিন। তবে এদের প্রস্তাব শুনলে মৃত্যুর পর তিনি পীর হয়ে থাকতে পারবেন। তার মাজার হবে। সেখানে এসব মৃত মানুষরা তার পূজা করবে। মৃত্যুর পরও তিনি গডফাদার হয়ে থাকতে পারবেন। মন্ত্রী সাহসী মানুষ। তিনি সাহস করে একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন।
একদিন মন্ত্রী দ্রুতগামী এক ট্রাকের সামনে ঝাপ দিলেন। ট্রাক তার উপর দিয়ে চলে গেল। কিন্তু তার কিছুই হলোনা। তিনি বাসের সামনে ঝাপ দিলেন। ট্রেনের চাকার নিচে পরলেন। কিন্তু তার শরীরে বিন্দুমাত্র কোন ক্ষতের সৃষ্টি হলোনা।
মৃত মানুষরা মন্ত্রীকে বলল, স্যার আমরা সমস্যাটা নিয়ে গবেষনা করেছি। এবং সমাধানও খুঁজে পেয়েছি। আপনাকে শুধু আত্মহত্যা করলেই হবেনা। আপনাকে আত্মহত্যা করতে হবে হাসি মুখে। ভেবে দেখেন মৃত্যুর পরেও আপনি গডফাদার হয়ে, পীর হয়ে ক্ষমতায় থাকতে পারবেন। শুধু আপনাকে হাসিমুখে আত্মহত্যা করতে হবে।
মন্ত্রীর মৃত্যু ভয় নাই। তিনি বহুবার বাস, ট্রাক, ট্রেনের সামনে ঝাপ দিয়েছেন। তার ভেতর কোন ভয় কাজ করেনি। তবে তিনি হাসিমুখে কাজটা কোন ভাবেই করতে পারছেন না। তিনি জিদি মানুষ। সহজে হাল ছাড়েন না।
এ গল্পের আপডেট হচ্ছে তিনি হাসিমুখে নিজের অপমৃত্যুকে বরন করে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে কোন ভাবেই সফল হচ্ছেন না। তিনি এখনো জীবিত আছেন। মৃত মানুষরা তাকে নিয়মিত মোটিভেট করে যাচ্ছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা আগস্ট, ২০১৮ রাত ১১:৩৭