গণতন্ত্র বলতে আমরা বুঝি গনমানুষের তন্ত্র।বহুদলের অংশগ্রহনে নির্বাচন হবে এবং জনগন ভোট দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সরকার নির্বাচন করবে।মোটা দাগে গনতন্ত্রের বাস্তবিক প্রয়োগ বলতে আমরা এমনটাই বুঝি।বাংলাদেশের জন্ম থেকে এ পর্যন্ত এ দেশে বহুবার রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হয়েছে।দুজন প্রেসিডেন্টকে হত্যা করা হয়েছে।স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে লড়াই করে জীবন দিতে হয়েছে এ দেশের অনেক মানুষকে।তারপর গনতন্ত্রের নামে দ্বিদলীয় বৃত্তের শৃঙ্খল এ দেশকে বারবার অধঃপতিত করেছে।এ দেশের কোন শাসকগোষ্ঠীই রাষ্ট্র এবং জনগনের সেবার জন্য রাষ্ট্র পরিচালনা করেনি।ক্ষমতালোভী এসব শাসকগোষ্ঠী মুনাফালোভী সাম্রাজ্যবাদী চক্রের কূটকৌশলে নিজেদের সামিল করে দেশের উন্নয়নের নামে এ দেশের সম্পদ লুট করেছে।বিভ্রান্ত করে তারা বারবার এ দেশের সাধারন মানুষকে প্রতারিত করেছে।ক্ষমতা এবং মুনাফার লোভে আমাদের দেশের প্রধান দুটি দল নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব টিকিয়ে রেখেছে।বুঝতে হবে এটি কোন আদর্শের লড়াই নয়।এ লড়াই হচ্ছে কুৎসিত ভাবে ক্ষমতা দখলের লড়াই।কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এ দেশের জনগন কেন গনতন্ত্রের নামে দ্বিদলীয় বৃত্তের শৃঙ্খলে আবদ্ধ।
জনগনের কোন প্রত্যাশাই সাশকগোষ্ঠীর কর্মকাণ্ডে প্রতিফলিত হয় না।তারপরও এদেশের মানুষ ভোট হলে উৎসবমুখোর পরিবেশে ভোট দিতে যায়।যাদের দ্বারা বারবার প্রতারিত হয় তাদেরকেই আবার ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে।৫ ই জানুয়ারির মত একতরফা নির্বাচন হলে এ দেশের বুদ্ধিজীবীরা গনতন্ত্রের মৃত্যু ঘটল বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলে।এসব দেখে মনে হয়,আমাদের দেশের জনগন এবং বুদ্ধিজীবীরা গনতন্ত্র বলতে বুঝে শুধু বহুদলের অংশগ্রহনে নির্বাচন করা। এ দেশের অধিকাংশ মানুষ এখনও মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্ছিত।যে দেশের অধিকাংশ মানুষ এখনও নিয়মিত পেট ভরে ভাত খেতে পারেনা সে দেশে গনতন্ত্র একটি প্রহসন ছাড়া আর কিছু নয়।
ধর্ম হচ্ছে ক্ষমতা দখলের আদিম হাতিয়ার। মানুষ এবং প্রকৃতির দ্বান্দিক প্রতিক্রিয়া থেকে ধর্মীয় মতবাদের আবির্ভাব হয়। অর্থনৈতিক ভিত্তির উপর নির্ভর করে সমাজ কাঠামো গড়ে উঠে।ধর্ম হচ্ছে গড়ে উঠা আর্থ সামাজিক কাঠামোর একটি উপরিকাঠামো।প্রাচীনকালে রাজতন্ত্রের প্রাথমিক পর্যায়ে প্রজাদেরকে বশে রাখার জন্য অলৌকিক দেবতার ধারনা সৃষ্টি করতে হয়েছিল।প্রজাদেরকে বলা হয়েছিল রাজাদের সাথে দেবতার পবিত্র সম্পর্কের কথা।কিন্তু মানুষকে সব সময় অন্ধকারে রাখা যায় না। তাই এক সময় সাধারন মানুষ বিজ্ঞানের অগ্রসরের ফলে এসব ধ্যান ধারনা থেকে বেরিয়ে আসে। সামাজিক বিবর্তনের ফলে রাজতন্ত্রের পতন হয়। শাসকগোষ্ঠী সব সময় তাদের বিধান আমজনতার উপর চাপিয়ে দেওয়ার জন্য এক এক যুগে সে যুগের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ধর্মীয় মতবাদকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যাবহার করেছে।অপরদিকে অন্ধকারে থাকা মানুষ আধ্যাত্মিক ধ্যান ধারণাকেই খড়কুটোর মত আঁকড়ে ধরেছিল।আমাদের দেশের প্রধান দুটো রাজনৈতিক দল সবসময় জনগনের তথাকথিত ধর্মীয় অনুভূতি নিয়ে নোংরা রাজনৈতিক খেলা খেলে আসছে।মানুষের ধর্মীয় চেতনায় আঘাত করা মানে নির্বাচনে ভোট হারানো।তাই মৌলবাদী গোষ্ঠীর সাথে আপোষ করতে এ দেশের কোন শাসকগোষ্ঠী কখনই পিছপা হয়নি।
সরকার তসলিমা নাসরিনকে নির্বাসিত করতে বাধ্য হয়েছিল কারন তারা জানে এ দেশের মানুষ নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন না হলেও ধর্ম নামক আফিমের নেশায় মত্ত।এ দেশের অধিকাংশ মানুষ এখনও মনে করে এ দেশে বসবাস করার অধিকার তসলিমা নাসরিনের নেই। যদি ভোটের মাধ্যমে ঠিক করা হত তবে তসলিমাকে হয়তোবা পাথর ছুঁড়েই মারা হত।লতিফ সিদ্দিকি বছরের পর বছর মানুষের সম্পত্তি লুট করে রাজত্ব করে এসেছে।দেশের জনগন তাতে কিছু মনে করেনি বরং বারবার তাকে নির্বাচিত করেছে।কিন্তু যখন ইসলাম নিয়ে কথা বললেন তখন জনগন তার শাস্তি দাবি করল।চোরকে নির্বাচিত করতে কোন সমস্যা নেই কিন্তু ইসলাম নিয়ে কটূক্তিকারীকে নির্বাচিত করা যাবে না।তার মানে চোর যদি ধর্মের কথা বলে চুরি করে তাহলে কোন সমস্যা নেই!
যখন সুন্দরবন বাঁচানোর আন্দোলন হয় তখন গুটিকয়েক মানুষ সে আন্দোলনে সামিল হয়।সরকার সে আন্দোলন নিয়ে বিচলিত ছিলনা।কারন তারা জানত ভোটের রাজনীতিতে এটা কোন প্রভাব ফেলবে না।কিন্তু যখন লতিফ সিদ্দিকির বিচারের দাবিতে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নামল সরকার ভয় পেয়ে গেল।সুন্দরবন ধ্বংস হল কি হল না তা নিয়ে এ দেশের জনগনের কিছু আসে যায় না কিন্তু লতিফ সিদ্দিকি ইসলাম নিয়ে কটূক্তি করলে সমস্থ দেশ তোলপাড় হয়।এ দেশের জনগনের মনস্তাত্ত্বিক প্রতিফলন এমন হলে শাসকগোষ্ঠী কেমন হবে তা সহজেই অনুমান করা যায়।তাই শুধু ক্ষমতালোভী নেতাদের দোষ দিলে হবে না।এ সব কিছুর দায়ভার আমাদের নিজেদের কাঁধে তুলে নিতে হবে।আমরা যারা বুঝিনা এবং বুঝেও অন্যকে বুঝাতে পারিনা তাদেরক প্রথমে গণতন্ত্র এবং গণতন্ত্রের চর্চার নামে মৌলবাদী দর্শনের চর্চার মধ্যে পার্থক্য বুঝতে হবে।তা না হলে গনতন্ত্রের নামে এ দেশে চলতে থাকবে মধ্যযুগীয় চেতনার বিকাশ।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৪৮