২৪শে এপ্রিল ২০১৩ বাংলাদেশের ইতিহাসে ঘটে গেল ভয়াবহ এক মানব সৃষ্ট দুর্ঘটনা। উদ্ভোদন করার তিন বছরের মাথায় ধসে পড়ল সাভারের রানা প্লাজা। নিহত হলো ১১৩৭ জন গার্মেন্ট শ্রমিক। আহত অবস্থায় উদ্ধার হলেন ২৪৩৭ জন। ঘোষনা করা হলো জাতীয় শোক। দুর্ঘটনা স্থল দেখতে গেলেন অনেক ভি আই পি লোকজন।বললেন নানা ধরনের সহায়তার কথা। কিন্ত তাতে কি? একটি জীবনের মূল্য কি মাত্র ২০,০০০ টাকা? অনেকে উদ্ধার কাজ নিয়ে সরকারের সমালোচনা করলেন। আবার সরকারের বু্দ্ধি প্রতিবন্ধী মাননীয় মন্ত্রী বললেন ভবন ধরে ঝাকাঝাকির কারণে এ ঘটনা ঘটতে পারে। মাননীয় প্রধান মন্ত্রী নিজে উদ্ধার কাজের তদারকি করলেন। উনি টকশো কারীদের আহবান করলেন উদ্ধার কাজে অংশগ্রহণ করতে। কিন্ত রাষ্ট্র পতি এ ধরণের একটি দুর্যোগের মুহূর্তে গেলেন জাতির জনকের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে। উনার সাভার আসার সময় হলোনা। অনেকের কাছে শুনেছি বঙ্গবন্ধু কে তাঁর জন্ম দিনের কথা জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেছিলেন, “রাখো তোমার জন্ম দিন আমার কাছে দেশের জনগণের চিন্তা আগে” আজ হয়ত তিনিই সবচেয়ে বেশী কষ্ট পেয়েছেন। যাই হোক উদ্ধার কাজে অংশগ্রহণ করার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের বাচার আকুতি কতটা বেদনা দায়ক, মর্মস্পর্শী উদ্ধার কাজে প্রথম দিন থেকেই সেনা বাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, র্যাব, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের পাশাপাশি দলমত নির্বিশে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহন ছিল সবচেয়ে বেশী। উদ্ধার কাজে অংশ নেয়া সেনা সদস্যরা সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে ব্যার্থ হয়েছে। সাধারণ মানুষরা যেসব জায়গায় নির্বিগ্নে প্রবেশ করেছে সেনা সদস্যরা সেসব জায়গায় প্রবেশ করতে বেশ কয়েকবার চিন্তা করেছে। তবে ফায়ার সার্ভিস তাদের সবোর্চ্চটা দিতে সক্ষম হয়েছে বলে আমার বিশ্বাস। উৎসুক জনতার ভিড় ছিল প্রচুর। বিজিবি, পুলিশ ও র্যাব বাহিরের মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করতেই হিমশিম খেয়েছে তারা উদ্ধার কাজে সরাসরি অংশ নিতে পারেন নাই। দ্বিতীয় দিন বিমান বাহিনীর একটি দল (সম্ভবত ২৫-৩০ জন হবে) উদ্ধার কাজে অংশ নিতে আসে। তারা উদ্ধার কাজ করতে এসেছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ২ টি সনি ভিডিও ক্যামেরা। এদের সম্পর্কে আর কিছুই বললাম না এই ক্যামেররা কথা থেকে বুঝে নেন। এদিকে সাধারণ মানুষরা প্রথম দিন থেকেই মাথায় সাদা কাপড় বেধে ঝাপিয়ে পড়ে। কিন্ত চতুর্থ দিন মুন্নী সাহা নামের একজন সাংবাদিক এদেরকে হেফাজত কর্মী বলে চালিয়ে দেন অনেক কে মাতার কাপড় খুলতে বাধ্য করেন। সেই সাথে তিনি দামি দামি ছোট ছোট যন্ত্রপাতি গুলো চুরি হওয়ার আশং কা করেন। এবং তা টিভি তে প্রচার হয়। যেখানে অন্য সব মিডিয়া এসব সাধারণ মানুষের প্রশংসা করেছে আর তিনি এদেরকে হেফাজত কর্মী এবং চোর বানিয়ে দিলেন। হায়রে মানবতা।
যাই হোক সবাই কাধে কাধ মিলিয়ে কাজ করেছে। অনেক ছোট ছোট যন্ত্রপাতির অভাব চরম ভাবে লক্ষ করা গেছে। আমার কাছে বোধগম্য নয় যে বাংলাদেশ সরকারের এত অভাব কেন হলো যে, উদ্ধার কাজে অংশ নেয়া বাহিনীর কাছে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ছিল খুবই অল্প পরিমাণে। সানগ্লাস, মাস্ক, হ্যাচকো ব্লেড, অক্সিজেন, গ্রিল মেশিন, কাটার, এগুলো চেয়ে টিভি রেডিওতে বিজ্ঞাপন দিতে হয়েছে। অথচ এগুলোর দাম খুবই অল্প। যেহেতু আধুনিক যন্ত্র চতুর্থ দিন ব্যবহার করা হয়েছে তাই ছোট যন্ত্রপাতির জন্য এত হাহাকার। সরকারের বা সেনা বাহিনীর উচিত ছিল এসব ছোট ছোট জিনিসগুলৈা প্রচুর পরিমাণে সরবরাহ করা। কিন্ত তারা তা পারেনি উল্টা মানুষের কাছে নির্লজ্জ ভাবে হাত পেতেছে। যে সরকারের কাছে চার হাজার কোটি টাকা কোন বিষয় না তাদের কাছে কেন এসব জিনিসের এত মূল্য? আমাদের একটা দোষ আমরা অতীত থেকে শিক্ষা নেয়না। ঢাকা শহরে যেহেতু প্রচুর বিল্ডিং রয়েছে যে গুলো সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের সতর্ক বার্তা আছে তাই এখন সরকারের উচিত এসব বিল্ডিং গুলো সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া এবং সেই সাথে দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করা। সবশেষে যে কথাটি বলব আমার এ লেখনির দ্বার যদি সেনাবাহিনীর আত্মমর্যাদায় আঘাত লেগে থাকে তাহলে আমি সত্যিই দু:খিত। সেখানে উপস্থিত জনতা এর থেকে অনেক কঠিন ভাষায় মিডিয়ার সামনে মন্তব্য করেছে।
শাহীনার মৃত্যু ও রেশমার জীবিত উদ্ধার এবং কায়কোবাদের জীবন বিসর্জন আমাদের দিয়েছে মানবতার উৎকৃষ্টতম উদাহরণ।