সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের আজ ৭৬৭ তম দিন !!!!
এভাবে সংখ্যার পেছনে সংখ্যা বসতেই থাকবে। সরকার বদল হবে, দেশে বিশ্বকাপ হবে আরও কতো কি । কিন্তু আমার আপুটাকে এভাবে মেরে ফেলার কোন বিচার হবে না।
আমার ভীষণ খারাপ লাগে, কষ্ট লাগে, কিন্তু কেনো জানিনা চোখ দিয়ে অশ্রুপাত হয় না, হয়তো অস্রুও তার পরিণতি জেনে বসে আছে।
রুনি আপুকে লেখা একটি চিঠি সামহোয়্যার ইন ব্লগের পাঠক ও সহব্লগারদের জন্য প্রকাশ করছি।
প্রিয় রুনি আপু,
কি খবর? কেমন আছো? দুলাভাইয়ের খবর কি? পিচ্চিটা কি করে? অবাক হয়ে গেলে!! আরে তোমার সাথে যখনই ফেসবুকে চ্যাট হতো তখনতো এমনি করেই কথা বলতাম। এখন তুমি একটু দূরে বলে কি অন্যভাবে কথা বলবো নাকি? তুমি আমকে খুব ভালভাবেই চিনো, আমি বদলাতে পারি না, বদলাবোও না। এভাবেই কথা বলবো।
আজ হঠাৎ ভাবলাম তোমাকে একটা চিঠি লিখি। জানি, তুমি হাসছো। আমিও খুব ভালভাবেই জানি আমাকে দিয়ে চিঠি লেখা হয়না, তবুও লিখবো। বোনকে চিঠি লিখতে আবার কিছু জানা লাগে নাকি? ভাই যা লিখবে আমার আপুটা তাই পড়বে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, মাথায় সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে,কিভাবে শুরু করবো বুঝতে পারছিনা।
মনে আছে আপু, তোমার সাথে আমার পরিচয় কিন্তু হয়েছিলো একটা ব্লগেই। এক্স-শাহীনদের একটা ফোরামে। তখন মাত্র মেডিকেলে ভর্তি হয়েছি। বেশ কিছুক্ষণ আলাপ করার পর যখন জানলে আমি একুশে টেলিভিশনের ‘মুক্তখবর’এ কাজ করতাম তখন যে তুমি কি খুশি হয়েছিলে তা আমার আজও মনে পড়ে। তুমি তখন এটিএন বাংলায় কাজ করতে। ঢাকা আসবো জানলেই বলতে অফিসে নয়তো বাসায় এসে দেখা করতে। ঢাকায় এসে নানান ব্যস্ততার মাঝে আর দেখা করা হয়ে উঠেনি।
শাহীন কলেজের ১ম পুনর্মিলনীতে অবশেষে দুই ভাইবোনের দেখা হয়। অবশ্য সেদিন খুব একটা কথা বলতে পারিনি, দুজনেই বেশ ব্যস্ত ছিলাম বলে। মজার ব্যাপার হল, ফেসবুকের চ্যাটে কিন্তু অনেক কথা হতো তোমার সাথে।
এমন একদিনও হয়নি যে, তুমি অনলাইন হয়ে আমকে নক করো নি। নক করেই জিজ্ঞেস করতে, কিরে ডাক্তার হতে আর কয়দিন বাকি? তারপরই শুরু হতো তোমার সেই বিখ্যাত খোঁচা, এখন কয়জনের সাথে প্রেম করিস? এটা কতো নাম্বার গার্লফ্রেন্ড? আরও কতো কথা...। কথার ফাঁকে ফাঁকে মেঘকে খাওয়াতে উঠে যেতে। ফিরে এসেই পিচ্চিটার দুষ্টুমির কথা বলতে। আমার ভীষণ মজা লাগতো।
তুমি যখন দুলাভাইকে নিয়ে জার্মানি গেলে,তখনও চ্যাট হতো। আর কি ঝাড়ি যে মারতে আমাকে, আমি নাকি পড়াশুনা বাদ দিয়ে সারাদিন ফেসবুক নিয়ে পড়ে থাকি।
আপু জানো, তোমার সাথে কথা বলার সময় আমি কখনো বড় বোনের অভাব বুঝতাম না। এখন কেন জানি আমার খুব খালি খালি লাগে। এখনও আমি প্রায়ই তোমার প্রোফাইল চেক করি, তোমাদের ছবিগুলো দেখি। আমার মনে হয়, তোমরা আছো, আশেপাশেই কোথাও। এই বুঝি আমাকে নক করবে, এই বুঝি বলবে, যা অনেক চ্যাট হয়েছে, এবার পড়তে যা।
সেদিন ক্লাস শেষে হলে ফিরে যখন ‘প্রথম আলো’টা হাতে নেই, আমি নিজের চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছিলাম না। কয়েকদিন আগে তোমার সাথে কথা হল, আর পেপারে লেখা তোমরা খুন হয়েছো। কিভাবে বিশ্বাস করি বল, যা কোনদিন ভাবতেই পারিনি তা বিশ্বাস করবো কিভাবে?
আপু, আজ যাই। বুকের ভেতর কোথায় জানি খুব কষ্ট হচ্ছে ।পরে আবার কথা হবে। মেঘকে নিয়ে তোমরা চিন্তা করো না,আমরাতো আছি। আমার জন্য দোয়া করো। আমি তো সবসময়ই তোমাদের জন্য দোয়া করি, যাতে তোমরা যেখানেই থাকো ভালো থাকো, শান্তিতে থাকো।
ইতি,
তোমার আদরের ছোট ভাই
অনু।
জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ,বাজিতপুর,কিশোরগঞ্জ
১৫/৫/২০১২