বুয়েটের হলগুলোর মধ্যকার লেন আক্ষরিক অর্থেই মুভির ভাণ্ডার। দেশ-বিদেশের মুভির বিশাল কালেকশন একেকজনের; সেগুলো তারা লেনে শেয়ার করে রাখে। বাংলা, ইংরেজি, কোরিয়ান এবং হিন্দি মুভির পাশাপাশি হালে যোগ হয়েছে তামিল-তেলেগু মুভি। এইসব তামিল-তেলেগু মুভির কোন ফোল্ডার পেলে মুভিগুলো একটু টেনে টেনে দেখে নেই। না, ইপ্পিডু-টিপ্পিডু টাইপের শব্দসমৃদ্ধ কোন ভাষার মুভি দেখার উদ্দেশ্য আমার নেই। উদ্দেশ্য একটাই, কোন মুভিতে কাজাল আগারওয়াল আছে কিনা তা দেখে নেয়া। আশা করি কারণটা বিস্তারিত ব্যাখ্যার কোন দরকার নেই।
সেদিন এভাবেই কাজাল আগারওয়াল কে খুঁজতে খুঁজতে একটা মুভিতে ক্লিক করলাম। মুভির স্পেশাল ইফেক্ট দেখে চোখ ঝলসানোর উপক্রম!! পদার্থবিজ্ঞানের সকল তত্ত্বকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে একের পর এক অভাবনীয় স্টান্ট দিচ্ছে একটা মাছি!!! ভাবলাম নিখাদ বিনোদনের জন্য এইসব মুভির চেয়ে ভাল আর কি হতে পারে! তাছাড়া কাজাল আগারওয়াল না থাকলেও এই মুভির নায়িকাটাও বুকের বামপাশে চিনচিনে ব্যাথার উদ্রেক করেছিল।
অতএব দেখা শুরু করলাম।
মুভির নাম EEGA। তেলেগু ভাষায় যার অর্থ মাছি।
প্রথম আধাঘন্টা বোরিং। নায়িকাকে পছন্দ করার অপরাধে লম্পট ভিলেন নায়ককে খুন করে। কিন্তু শুধুমাত্র একবার খুন করলেই নায়ক মরবে কেনো! একটু পরেই দেখা যায় এক আস্তাকুঁড়ে একটা কোকুনের খোলস ভাঙছে। সেই কোকুন থেকে হাত কচলাতে কচলাতে বের হয়ে আসে মাছি হিসেবে পুনর্জন্ম পাওয়া নায়ক! আর ব্যাকগ্রাউন্ডে হাই বিটে বাজতে থাকে “আই অ্যাম ব্যাক, আই অ্যাম ব্যাক...।”
নড়েচড়ে বসলাম। কারণ এরপর একের পর এক এমন অসাম সব দৃশ্য শুরু হল যা দেখে আমার eyeball কোটর থেকে বের হওয়ার জন্য ছটফট শুরু করলো।
কোকুন থেকে বের হওয়ার পর পরই একের পর এক বিপদের সম্মুখীন হতে থাকে নায়ক। নানা ট্রাজেডির মধ্য দিয়ে “পড়বি তো পড় ভিলেনের চায়ের কাপে” স্টাইলে নায়ক একেবারে ভিলেনের চায়ের কাপেই এসে পড়লো। ভিলেন চিনি গোলার জন্য চামচ দিয়ে নাড়ানী দিতেই এক ঝাঁকুনিতে মাছিরূপি নায়কের পূর্বজন্মের স্মৃতি ফিরে আসলো। অতএব পুনরায় হাত কচলাতে কচলাতে ভিলেনকে মারার প্রতিজ্ঞা করে বসলো নায়ক। এই মাছি আবার তেলেগু এবং ইংরেজিতে সমান পারদর্শিতায় লিখতে পারে! সে নায়কের গাড়ির উইন্ডশিল্ডে লিখে দিলো, “ I will kill you”। ইচ্ছে হচ্ছিলো মরে যাই, কারণ মাছির হ্যান্ডরাইটিং আমার চেয়ে ভালো
মাছিরূপী নায়ক প্রথমে কানের কাছে ভনভন করে ভিলেনকে বিরক্ত করে মারার প্রয়াস নিলো। ভিলেনতো বটেই, হেডফোনে ভনভন শুনতে শুনতে আমারই মাথা ধরে গেলো। ভিলেনকে চিরতরে শেষ করতে সাহায্যের জন্য নায়িকাকে খুঁজে বের করলো মাছি। এরপর সে তার চারজোড়া পা এবং ডানা দিয়ে সাইন ল্যাঙ্গুয়েজের মাধ্যমে( ) নায়িকাকে বুঝিয়ে দিলো যে সে মাছি হিসেবে পুনর্জন্ম নিয়ে ফিরে এসেছে। আপনি হয়তো ভাবছেন এসব কি ধরণের অবৈজ্ঞানীক কথাবার্তা বলছি আমি! কিন্তু আপনাকে ভুলে গেলে চলবে না এই মুভির নায়িকা যে একজন মাইক্রো আর্টিস্ট! আণুবীক্ষণিক জিনিস নিয়েইতো তার কাজ! ম্যাগনিফাইং গ্লাসের মধ্য দিয়ে এই ভাবের আদান-প্রদান একেবারে মনটা ছুঁয়ে গেল। যাইহোক নায়িকা-মাছি মিলে ভিলেনকে মারার জন্য একের পর এক ব্যার্থ প্রচেষ্টা চালায়। একসময় ভিলেন তাদের এই জোট সম্পর্কে জেনে যায়। মাছিকে চিরতরে শেষ করার জন্য বিশেষ প্রযুক্তির চশমা এবং ডেডলি সব বন্দুক নিয়ে মাছিকে আক্রমণ করে। মাছি ম্যাট্রিক্স লেভেলের সব স্টান্ট দেখিয়ে বুলেট স্কিপ করতে থাকে। শেষমেশ মাছির গায়ে আগুন দেয়া হয়। কিন্তু মাছি একা মরবে কেনো! জ্বলন্ত দেহ নিয়ে বারুদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে মাছি, এবং বিস্ফোরণে ভিলেনকে সাথে নিয়ে মারা যায়।
নায়কের শোকে বুক ভাসানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, ঠিক তখনই মাছি হিসেবে নায়কের দ্বিতীয়বার পুনর্জন্ম হয়!! সবশেষে একটি মাছিসঙ্গীতের সাথে ব্রেকড্যান্স দিতে দিতে মুভির ইতি টানেন গুরু।
মুভির IMDB লিঙ্কঃ View this link
IMDB তে একজনের রিভিউ দেখলাম, "It Deserves an Oscar."। মনে মনে বললাম," ঠিক কয়েছেন সাহাব"।
এবার একটা সিরিয়াস কথা।
আমার খুব দুঃখ লাগে যখন দেখি এসব মুভির রেটিং ‘মাটির ময়না’র চেয়ে বেশী......।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:২৬