ডিম লাইটের নিয়ন আলোয় চোখ নামিয়ে কিবোর্ডের দিকে দৃষ্টি অনুপাত করে
একটা একটা করে বোতাম চেপে যাচ্ছি।
অন্ধকারাচ্ছন্ন রাত।
জ্যোৎস্না বিলুপ্ত হয়েছে আমাবর্ষায়!
রাতের গভীরতা বাড়ছে।
নড়বরে হাতল ভাঙ্গা চেয়ারে উদাসীন বসে আছি আমি।
দেয়াল ঘড়ির টিক টিক শব্দটা সময়ের শৃঙ্খলতা বর্ণনা করছে।
চক্রাকারে বিহব্বলতা কানায় কানায় পূর্ণ।
অবাঞ্চিত ধ্বনিমুক্ত শহর নিস্প্রান ঘুমে আচ্ছন্ন।
কলঘর থেকে টিপ টিপ জ্বল পড়া শব্দ শোনা যাচ্ছে। কিছু সময়ের জন্য কেদারা ছেড়ে
উঠে দাঁড়ালাম। উদ্দেশ্যে ট্যাপ টা বন্ধ করা ভালো করে।
দরজা পেরিয়েছি মাত্র,
সাদার উপর ড্র কাঁটা ঘরের বেড়ালটা ডেকে উঠলো ম্যা ম্যা করে।
আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে।
খটকা লাগলো মনে। সর্বনাশ অন্ধকারে ভুল করে বিড়ালের লেজ পাড়িয়ে ধরেছি!
এটা পোষা প্রাণী। কামড়ায় না।
খেতে বসলে আমার গাঁ বেয়ে ওঠে। ঘুমিয়ে থাকলে
ফজরের সময় ম্যা ম্যা শব্দ করে নিদ্রা পরিহার করায়।
আবার রাতে খুব ক্ষুধা পেলে
সারা বাড়ি গোঙানি সুর তুলে ঘুম ভাঙ্গিয়ে দেয় সবার।
মাঝ রাতে পেট পুরে খাবে!
বছরে চারবার করে বাচ্চা দিয়ে আসছে গত পাঁচ বছর ধরে!
এ বেড়ালটার বাচ্চা আমি একটাও রাখতে পারলাম না।
ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগে থেকেই বুকিং হয়ে যায়।
পাড়া প্রতিবেশীরা বেশ আগ্রহ নিয়ে বাচ্চা গুলো নিয়ে যায়।
অনেকটা হৈ চৈ করতে করতে।
বেড়ালটার লেজ বিদেশী কুকুরের মতো। মোটা এবং লোমে পরিপূর্ণ।
দেখতে ভালোই লাগে। এর বাচ্চা গুলাও হয় দেখার মতো।
লেজ গুলি মায়ের মতোই হয়।
একারনেই বোধহয় বাচ্চার চাহিদা বেশী! শুধু এজন্য বললেও ভুল হবে।
প্রতিটা বাচ্চায় ঘরকুনো হয়। বেড়াল টা আমার দিকে খুব মায়া চোখে চেয়ে থাকে।
মানুষ হলে নিশ্চিত কথাপকথন করতো। এই কেমন আছো? খেতে দাও না ঠিক মতো।
নিজে মাছ খাও আর আমাকে মাছের কাঁটা দাও? খুব দুষ্টু তুমি! নানান প্রশ্ন ছুড়ে লজ্জায় ফেলতো।
ভাগ্যিস কথা বলতে পারে না।
আঁধারে কিঞ্চিৎ ভুল হয়েছিল,
লেজ পাড়িয়েছিলাম। তড়িঘড়ি পা সরিয়ে নিয়ে কলঘরের দিকে অগ্রসর হলাম।
বেরিয়ে বেড়ালটাকে আগের অবস্থানে নিশ্চিত করতে পারলাম না।
সেখানে নেই।
ভেবে নিলাম বরাবরের মতো ডাইনিংয়ের
নিচে চলে গেছে। খেতে বসলে সারাক্ষণই পায়ের কাছেই থাকে।
মাঝে মাঝে ভয় লাগে পায়ে আঁচড় না দিয়ে বসে। একবার প্রচুর জ্বরের মধ্যে বিড়ালের আঁচড় খেয়ে ছিলাম।
সেটা অন্য এক বিড়াল ছিলো। মশারীর উপর থেকেই আঁচড় দিয়েছিলো। খুব ডেঞ্জারাস বিড়াল। যাক তবুও আমি
কোন ইঞ্জেকশন লাগিয়েছিলাম না। কুকুর, বিড়াল কাটলে নাকি ১৪ টা ইঞ্জেকশন দেওয়া লাগে। আমাকে তো আর কামড়াই নাই শুধু আঁচড় দিয়েছে। তাই ইঞ্জেকশনের দিকে যায় নাই। অবশ্য কামড় খেলেও ইঞ্জেকশন ঢুকাইতাম না। ছোট বেলা থেকে ইঞ্জেকশন
খুব ভয় করি। একবার তো লাত্থি মেরে এক ডাক্তারের দাঁত ভেঙ্গে ফেলছিলাম ইঞ্জেকশন নিয়ে কাছাকাছি আসাতে। লাস্ট যেবার
রক্ত টেস্ট করাইতে গেলাম সেবার এক বাচ্চার চিৎকার শুন মাথা ঘুরে পড়েছিলাম।
ঘরে ফিরে আবার চেয়ারটাতে বসেছি।
অন্ধকারে এক হাতে কি বোর্ড ধরে টুকটুক করে লিখে যাচ্ছি।
পায়ের কাছে কি যেন বিড়বিড় করছে।
হৃদস্পন্দন বেড়ে গেলো। কৌতূহলী চোখ নামিয়ে
আবিষ্কার করলাম বেড়ালটা জ্বলন্ত চোখ নিয়ে চেয়ে আছে আমার দিকে।
প্রথমে একটু ভয় পেয়েছিলাম।
ভয় কাটিয়ে বেড়ালটাকে পা দিয়ে সরিয়ে সরিয়ে বাহিরে নিয়ে গেলাম।
পেছনে না ফিরে আবার সামনে অগ্রসর হলাম।
বেসিংয়ের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।
চোখে পানি দিচ্ছি। কিছু ভ্রম লেগেছে। ঘোরের মধ্যে আছি।
ক্রমশই হারাচ্ছি অতীতে।
কি হচ্ছে আজ! এখনো ঘুরপাক খাচ্ছে মাথায়।
দু মিনিট আগের কথা চিন্তা করছি।
পাশে এখনো বেড়ালটার উপস্থিতি টের পাচ্ছি।
মুখে পানি ছিটিয়ে পাশে তাকালাম।
বেড়ালটা নাই!
থাকবেই বা কি করে?
৩ দিন আগে বেড়ালটা হঠাৎ করে মারা গিয়েছে!
মাথার মধ্যে ক্রমাগত ঘুরপাক খাচ্ছে। বেড়ালটা একেবারেই পিছু ছাড়ছে না আমার!
ইলুশনে ভুগছি। মুক্তি মিলছে না। চোখের সামনে ভাসছে বেড়াল টার নিস্তেজ দেহ!