শিরোনাম পড়েই হয়ত অনেকে আমার সাম্প্রতিক সময়ের রুচি বোধ নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন। যে ব্যক্তি একদা রবীন্দ্রসাহিত্যের সমালোচনা করতো, ডা ভিঞ্চির মোনালিসা যার হাত থেকে রক্ষা পায়নি (আপনারা আবার অন্য কিছু মনে কইরেন না), মোজার্টের সুরের মূর্ছনায় মূর্ছিত হত যে, পাবলো নেরুদাকে যে পকেটে রেখে ঘুরে বেড়াতো তার আজ এ কি হালত! হে বিদগ্ধ পাঠক, আমার এই বদলে যাওয়ার জন্য দায়ী প্রথম আলো। দুই বেলা প্রথম আলোর বিনোদন পাতায় সানি লিওনের দিগম্বরী অবয়ব দেখে অভ্যস্ত লোচন এখন আর বোরকাবৃত মোনালিসার হাসি হেরিয়া হয়রান হয় না।
সে যাই হোক কাজের কথায় আসি। আপনারা অস্বীকার করলেও আমি জানি আপনাদের মধ্যে শতকরা আশি ভাগ আলোচ্য সিনেমাটি অবলোকন করেছেন। সুতরাং আপনাদের নিশ্চয় জানা আছে কাহিনীর শুরু হয় ইরাকে। র’ এর তুখোড় এজেন্ট, যার দাপটে এসপিওনাজ জগতের বাঘ আর ছাগল এক ঘাটে পানি খায়, যাকে লক্ষ্য করে লক্ষটা গুলি ছুঁড়লেও ফসকে যায় সবকটা সেই দামাল, কামাল, আবাল সন্তান সালমান খান ইরাকের ছাদে ছাদে লাফিয়ে বেড়াচ্ছিল। লাফাতে লাফাতে সে টপাটপ কয়েক জন টপ এজেন্ট কে টপে মানে উপরে অর্থাৎ পরোপারে পাঠিয়ে দিল। দুই পক্ষ কম করে হলেও শ;দুয়েক গুলি ছুঁড়ল পরস্পরকে লক্ষ্য করে। স্কোর, সালমান খান দশ পিএসআই শূন্য। তুমুল গুলাগুলি দেখে ভয় হচ্ছিল দুই একটা গুলি হয়ত টিভির স্ক্রিন ভেদ করে আমার গায়েও লেগে যেতে পারে। কিন্তুক দেখা গেল সালমানের হাতের টিপ যেমন ভালো, ভিলেন ছাড়া কারু গায়ে লাগে না। তেমনি ভিলেনদের হাতের টিপ নিদারুণ বাজে, কারো গায়েই লাগে না। বাগদাদের বাজারের হাজারটা লোক, অথচ এত ডামাডোলের মাঝেও এক জনের গায়েও একটা গুলি লাগলো না!
যায় হোক গুলাগুলি শেষে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে আসলো। মহল্লার বিবাহিত মহিলাদের মাঝে বয়ে গেল খুশির জোয়ার। তারা কেন এত খুশি সেইটা অবশ্য বুঝা গেল না। কারণ তার আগেই সালমানের বেরিয়ে পড়তে হল দ্বিতীয় আর এক মিশনে। স্কটল্যান্ড না কোথায় যেন ভারতীয় এক প্রফেসর আছেন যিনি এক এ্যান্টি মিসাইল ডিভাইস ডেভেলপ করছেন এবং সেইটা হাতানোর জন্য পিএসআই ঘুরঘুর করছে। সালমানের মিশন তাদে ঘুরাঘুরি থামানো। তো সেইখানে দেখা মিলল লাস্যময়ী ক্যাটরিনার। পঞ্চাশ বছরের সালমান আর পঁচিশ বছরের ক্যাটরিনা জুটি দেখে মনে আবার বল ভরসা ফিরে পেলাম। যাক আমার আশা এখনো শেষ হয় নাই। মনের ব্যাকগ্রাউন্ডে বেজে উঠলো “এ্যাই তুমি কচি মেয়ে” গানটি। তো ক্যাটরিনার প্রেমে সালমান হাবুডুবু, মূল মিশন ছেড়ে খালি ক্যাটরিনার পিছনে লাইন মারতে যায়। তা সালমানেরও দোষ দেওয়া যায় না। একদা আমিও প্রেমে পড়েছিলাম। প্রেমে পড়লে পেট খালি খালি লাগে, বুক ভার ভার লাগে, গলার ভিতর সারাক্ষণ পোটলার মতো কি জানি আটকে থাকে। সে বিস্তর ঝামেলার জিনিস। আর এই অবস্থার মধ্যে যদি জানা যায় প্রেমিকাটি ছলনাময়ী নারী, শত্রু দুর্গের চর তাইলে কারই বা মাথা ঠাণ্ডা থাকে। সুতরাং সালমান দিল গুলি করে। সিনেমার ইন্টারভেল। আমিও ছুটলাম আমার নিজস্ব মিনি মিশনে।
গুলি করলে দিলেও আমি জানতাম সে গুলি ক্যাটরিনার গায়ে লাগে নাই। লাগলে সিনেমা শেষ। আমি জানি আমার মতন আপনারাও সেটা জানতেন। এইসব জানার জন্য সবজান্তা হতে হয় না। যে কোন জন্তুও জানবে হিন্দি সিনেমার আগাপাছতলা। সুতরাং সালমান ক্যাটরিনার গন্ধ শুকে শুকে গেল ইস্তাম্বুল। ইস্তাম্বুলে তারা দুইটাতে মেলা কান্নাকাটি করল। তারপর সিদ্ধান্ত নিলো দুইজনে বাসা ছেড়ে পালাবে। এবং তারা পলাল। র’ আর আইএসআই হ্যারিকেন জ্বালিয়ে খোঁজা আরম্ভ করল তাদের। এই জায়গাতে আমার মনে হল পালাবিই যদি বাপ তাইলে আর একটু প্ল্যান ট্যান করে পালালেই তো পারতিস। দুইটা ডেড-বডিতে সালমানের মানিব্যাগ আর ক্যাটরিনার গলার লকেট ঝুলিয় গাড়িতে আগুন ধরিয়ে পাহাড় থেকে ফেলে-টেলে দিলেই ল্যাঠা চুকে যেত। কিন্তু না, তারা আমার কথা রাখলেন না, তারা রাখলেন ভুট্টো সাহেবের কথা। সুতরাং যা হবার তাই হল।
তো তারা পালিয়ে গেল কিউবাতে। সেইখানে নাচ গান শেষে রাতে বাড়ি ফেরার কালে কতিপয় দুষ্কৃতিকারীদের হাতে আক্রান্ত হলে তারা হেভি ফাইট দেয়। সেই ফাইট আবার সিসিটিভিতে ধরা পড়ে। সেই সিসিটিভি ফুটেজ দেখে আবার হাজির হয় আইএসআই আর র’ এর এজেন্টকুল প্রেমিকপ্রমিকা যুগলকে ঠাণ্ডা করতে। কিউবার পথে প্রান্তরে বাসার ছাদে ছাদে সালমান ক্যাটরিনা আবার দৌড়াদৌড়ি শুরু করে।
ধ্যাত্তেরি! এই লেবা’র সিনেমা শেষ হয় না ক্যান! আমার আর ধৈর্য নাই। বাকিটা আপনারা লিখেন।
টাইগারের ট্রেলার আর চিরকুমার সালমানের ব্যক্তি জীবনের সম্মিলিত প্রয়াসে একখানা মিমি তৈরি করলাম। কেমন হইছে?

আলোচিত ব্লগ
নিষিদ্ধ নয়, শুধু নড়াচড়া বন্ধ: আওয়ামী লীগ, ‘কার্যক্রম’ ও বিরোধীদের বিভ্রান্তির রাজনীতি
“আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হয়ে গেছে”—এই লাইনটি ফেসবুকে ঝড় তুলেছে, চায়ের কাপে তুফান এনেছে, এবং কিছু বিরোধী রাজনীতিকের মুখে সাময়িক হাসি ফিরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু একটু থামুন ! খেয়াল করুন: বলা হয়েছে,... ...বাকিটুকু পড়ুন
আঁচলে বাঁধা সংসার
আমি তখন কলেজে পড়ি। সবেমাত্র যৌথ পরিবার ভেঙে মায়ের সঙ্গে আমাদের ছোট্ট একটা সংসার হয়েছে। নতুন সংসার গুছিয়ে নিতে, মা দিনের প্রায় সবটা সময় ঘরকন্নার কাজে পার করে দিতেন। ঘরের... ...বাকিটুকু পড়ুন
প্রেমিকাকে বা বউকে প্রেম নিবেদনের জন্য সেরা গান
নীচের দেয়া গানটাতে হিন্দি, বাংলা, গুজরাটি, পাঞ্জাবী এবং ইংরেজি ভাষায় প্রেম নিবেদন করা হয়েছে। নীচে গানের লিরিক্স এবং বাংলা অর্থ দিলাম। আশা করি গানটা সবার ভালো লাগবে। এই হিন্দি... ...বাকিটুকু পড়ুন
আজকের ডায়েরী- ১৫৩
কেন জানি মন মেজাজ বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে।
কিছুই ভালো লাগছে না। ইচ্ছা করছে ঘোড়ায় চড়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ি। হাতে থাকবে চাবুক। যেখানে অন্যায় দেখবো লাগাবো দুই ঘা চাবুক। সমস্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন
একটি ঐতিহাসিক দিন: বাল সাম্রাজ্যের পতন
একটি ঐতিহাসিক দিন: বাল সাম্রাজ্যের পতন
প্রিয় পাঠক, গতকাল ১০ মে ২০২৫। এই দিনটি কোনো সাধারণ দিন ছিল না। এটি ছিল ঐতিহাসিক এমন একটি দিন, যা বাংলাদেশের... ...বাকিটুকু পড়ুন