নারী ও পুরুষের সম্মিলিত অংশগ্রহণের মাধ্যমে সুন্দর সমাজ নির্মাণ করা সম্ভব। রাজনীতি, অর্থনীতি ও শাসন ব্যবস্থায় নারীর সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যায় তাহলেই সত্যিকার উন্নয়ন আসবে। আর এই সমান অংশগ্রহণের বিধান রচনা করে সুশাসন। বাংলাদেশে সরকার ও বিরোধী দলের প্রধান নারী, কিন্তু এটা বাংলাদেশের রাজনীতিতে নারীর দৃঢ় অবস্থান প্রমাণ করে না। এখনো বাংলাদেশের রাজনীতি ও গণতান্ত্রিক কাঠামোতে নারীর সংখ্যাগত অবস্থান, মত
ামত ও গ্রহণযোগ্যতা প্রান্তিক পর্যায়ে রয়েছে। শুধু রাজনীতি নয়, সরকার ব্যবস্থার প্রতিটি স্তরে নারীর প্রতিনিধিত্ব বাড়াতে হবে। সর্বক্ষেত্রে কমপক্ষে ৩৩ শতাংশ অংশগ্রহণ থাকা চাই নারীর। এটা পর্যায়ক্রমে ৫০ শতাংশ করা গেলে আরও ভালো হয়।
নারীর প্রতি সবল বৈষম্য দূরীকরণ সনদে(সিডও সনদ) নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করাকে সমগ্র মানবজাতির নৈতিক দায়িত্ব হিসেবে স্বীকার করে নেয়া হয়েছে। সিডও সনদের মূল বিষয় হচ্ছে সমতার নীতি। সিডও সনদে সমতার নীতির যে ব্যাখ্যা দিয়েছে, তা হল সুযোগের সমতা এবং সমান ফলাফলের নিশ্চয়তা। সমাজে নারী ভোগ করবে সম অধিকার, সমান সুযোগ ও অর্জিত হবে সমান ফলাফল। দেখা যায় বিভিন্ন দেশে নারীর সম অধিকার হয়তো সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত কিন্তু বাস্তবে নারী সমান সুযোগ পায় না। অনেক সময় সমান সুযোগ পেলেও, সমান ফলাফল অর্জিত হয় না। অর্থনীতি, রাজনীতি, আইন ইত্যাদি বিষয়ে শুধু পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে যেমন সমগ্র মানবসমাজের দৃষ্টিভঙ্গির অতিসাধারণীকরণ করা হয়, তেমনি তার ঠিক উল্টো করেই সৌন্দর্য, প্রদর্শনী, শিশুর পরিচর্যা, গৃহকর্ম ইত্যাদি বিষয়ে নারীকে অতিবিশেষায়িত রূপে উপস্থাপন করা হয়। নারীকে কেবল কনজিউমার বা ভোক্তা নয়, প্রডিউসার বা উৎপাদক এবং সক্ষম হিসেবেও দেখতে হবে। এসব ক্ষেত্রে নারীকেই মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে। নানা ক্ষেত্রে নিজেদের যোগ্যতা, বিচার ও বুদ্ধিমত্তা দিয়ে প্রমাণ করতে হবে যে তারা কোনভাবেই দুর্বল না।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে নারী কর্মীর সংখ্যা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয় কিংবা কোন নিরপেক্ষ গবেষণা সংস্থা মিডিয়া মনিটরিংয়ের দায়িত্ব নিতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সাংবাদিকতার পাঠ্যক্রমে জেন্ডার সংবেদনশীলতার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সংবাদপত্রে নারীর ইতিবাচক ইমেজ তৈরিতে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয় ও নারী সংগঠনগুলোকে বৃহত্তর ভূমিকা নিতে হবে। পণ্য হিসেবে নারীর উপস্থাপন বন্ধ করা অতি প্রয়োজন। সব মিলিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কর্মক্ষেত্রে নারীর জন্য শক্ত ও যৌক্তিক নীতিমালা না থাকলে কখনো নারীরা তার লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে না।