somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বন উজাড়,পাহাড় কাটা,পাহাড় ধস এবং শবমিছিল

০১ লা জুলাই, ২০১২ দুপুর ১২:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পাহাড় কেটে আবাসন কোম্পানির সুউচ্চ ভবন নির্মাণ, অপরিকল্পিতভাবে সড়ক নির্মাণ, প্রভাবশালীদের বেপরোয়া কায়দায় মাটি বিক্রির ব্যবসা এবং অবাধে বন উজাড় করার ফলে প্রতিবছর পাহাড় ধসে বিপুল সংখ্যক মানুষের প্রাণহানি ঘটছে। অথচ এই পরিবেশগত বিপর্যয় ও পাহাড় ধসে বিপুল প্রাণহানি রোধে সরকারের ইতিবাচক কোন পদক্ষেপ নেই।
বৃহত্তর চট্টগ্রামের পাহাড়গুলো সাধারণত বেলে মাটির। এ মাটি নরম ও ঝুরঝুরে হয়। প্রচণ্ড গরমে পাহাড়গুলোতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ফাটল ধরে এবং প্রবল বর্ষা শুরু হলে বৃষ্টির পানি এসব ফাটলে ঢুকে বৃহদাকার ধস নামায়। তাছাড়া বর্ষা শুরু হওয়ার সাথে সাথে পাহাড়ের উপর পড়ে থাকা গাছপালা ও খড়কুটো পরিষ্কার হয়ে যায়। তাই সহজেই বৃষ্টির পানির সাথে ধসে পড়ে পাহাড়ি এসব মাটি। নিচে পড়া ঐ মাটি ট্রাকে করে বিক্রি করা হয়। এভাবে পাহাড়ের ভেঙ্গে পড়া ঢালু অংশে বেড়া দিয়ে ঘর তুলে নিম্ন আয়ের মানুষদের ভাড়া দেয়া হচ্ছে। এভাবে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে হাজার হাজার পরিবার। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ছিন্নমূল মানুষ এসব পাহাড়ে নামমাত্র ভাড়া দিয়ে বাস করছে। কমদামে পাওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষেরা মৃত্যুর কথা জেনেও এসব পাহাড়ে বাস করছে।
চট্টগ্রামে একের পর এক পাহাড় কেটে গড়ে তোলা হচ্ছে ইটভাটা ও বসতি। ফলে বৃষ্টি নামলেই পাহাড় ধসে পড়ছে। আর প্রাণহানি ঘটছে শত শত মানুষের। বিগত ৫ বছরে ৫শ'রও বেশি মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে এসব জায়গায়। এর মধ্যে আবার শিশুর সংখ্যাই শতাধিক। বান্দরবানে দেশের বড় বড় শিল্পপতিদের রয়েছে হাজার হাজার একরের পাহাড়ি প্লট। এসব প্লটে প্রভাবশালীরা বিলাসবহুল বিভিন্ন ফলের বাগান এবং বাড়ি বানাতে গিয়ে পাহাড়ি গাছ কেটে সাবাড় করে চলেছে। পাহাড়খেকো এসব রাঘববোয়ালরা আবার রাজনৈতিক দিক থেকে প্রভাবশালী হওয়ায় তারা থেকে যাচ্ছে পর্দার আড়ালে বা ধরাছোঁয়ার বাইরে। এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে এই পাহাড় কর্তনকারী কোন ব্যক্তি বা সংগঠনের নাম পর্যন্ত নেই।
স্বাধীনতার পর থেকে শতাধিক পাহাড় কাটা হলেও জড়িতরা রয়েছে সকল ধরণের আইনি আবর্তের বাইরে। ২০০৭ সালে পাহাড়ধসের পর বিভাগীয় কমিশনারকে প্রধান করে পাহাড়ধস ব্যবস্থাপনা ও পুনর্বাসন কমিটি গঠন এবং প্রাণহানির ঘটনা এড়াতে এই কমিটি বেশ কিছু সুপারিশ করেছিল। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী এসব সুপারিশের কোনটিই বাস্তবায়ন করেনি সংশ্লিষ্ট মহল।
এই সমস্যা সমাধানে নিম্নরূপ কিছু করণীয় হতে পারে -
#পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সুনির্দিষ্ট জাতীয় পাহাড় ব্যবস্থাপনা নীতিমালা প্রণয়ন করা।
#যে সমস্ত পাহাড়ের পাদদেশ ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেগুলোকে পূরণ করে পাহাড়ের আরও ক্ষয়রোধ করা।
#আইন করে পাহাড় থেকে যত্রতত্র বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ করা।
#নির্বিচারে পাহাড় কাটার সাথে জড়িত প্রভাবশালী ব্যক্তি, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা।
#পাহাড়ধসে যারা মারা গেছেন তাদের পরিবারের জীবিত সদস্যদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করা।
#বিভিন্ন পাহাড়ে যারা ঝুঁকিপূর্ণভাবে বাস করছে তাদের স্থানান্তর ও পুনর্বাসন করা।
#পাহাড় কাটার সঙ্গে জড়িতদের নামে মামলা দায়ের করা এবং মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা।
#পাহাড়ি এলাকার ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কোন ইটভাটা নির্মাণের অনুমতি না দেয়া।
#পাহাড়ি এলাকার ৫ কিলোমিটারের মধ্যে কোন আবাসন প্রকল্পের অনুমোদন না দেয়া।
#পরিবেশ অধিদপ্তরকে আরও শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা।
#ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন- ১৯৮৯,ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা-১৯৮৯,পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫,পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা-১৯৯৭,পরিবেশ আদালত আইন-২০০০,ইমারত নির্মাণ বিধিমালা-১৯৯৬ এবং এই সংক্রান্ত অন্যান্য আইন ও বিধি সংশোধন করে যুগোপযোগী ও অবিলম্বে সেগুলো কার্যকর করা।
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×