ঈদের ছুটিতে বাড়ি ফেরার পর থেকে বেশ অলস সময় কাটছে। বলতে গেলে সারাদিন ঘুম আর খাওয়া ছাড়া কোন কাজ নেই। ইচ্ছে হলেই বিছানায় গা এলিয়ে দেই, সকাল-দুপুর-রাত-সকাল যখন তখন। এইতো ক'দিন আগেও ঘুমাতে হয়েছে মেপে মেপে। কী আজব এই ধরণী, কী আজব সে ধরণীর মাখলুকাতের ঘুম! হাতে কাজ না থাকায় ঘুম-খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে ফেসবুকে ঢুকে সবার স্টাটাসে চোখ রাখি। ভালো লাগলে লাইক বা কমেন্ট করি, না লাগলে স্ক্রল করে নিচে দি দৌড়। তবে মতিকন্ঠের নতুন কোন লেখার লিঙ্ক পেলে মোটেও হাতছাড়া করি না বরং মনোযোগ দিয়ে পড়ি। আর সুবেহ সাদিকসহ অধিকাংশ পত্রিকার লিঙ্ক পেলে বিজলীবেগে স্কিপ করি। সংবাদপত্রগুলির ইদানিং যা অবস্থা! আমার মনে হয় মতিকন্ঠই একমাত্র অনলাইন পত্রিকা যে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে পাঠকের আস্থার জায়গাটুকু পুরোপুরি দখল করে রাখতে সক্ষম হয়েছে।
ছুটিতে বাড়ি এলে প্রতিটা সন্ধ্যা কেটে যায় বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে। যদিও এবার এসে প্রথম দিন কথা দিয়েও আড্ডায় যোগ দিতে পারিনি হাজার বছরের জমে থাকা ঘুমের কারনে! ঘুম যে কি জিনিস ভাই; যে ঘুমায় সেই জানে! ঘুম থেকে উঠে দেখি ডজনের বেশি মিসড কল আর একটা মেসেজ। বুঝতে পারলাম কাম সারা! মেসেজ খুলে দেখি পোলাপাইন বয়কট করছে আমাকে। সাথে সাথে কল দিলাম এক এক করে কয়েকজনকে। হায় আল্লা, কেউ রিসিভ করে না। মেসেজ দিলাম, রিপ্লাই দেয় না। কি বেয়াদব আজকালকার ছেলেপেলেরা! তবে এই ভেবে ভালো লাগলো যে দে মিসড মি সো মাচ! পরের দিন ভয়ে ভয়ে আড্ডাস্থল স্কুলের শহীদ মিনারে গিয়ে উপস্থিত হই। যাওয়ার সাথে ফাইন করে। বলে কাইল আসস নাই ক্যা? এখন সবাইকে বেনসন খাওয়াতে হবে নাইলে কোন কথা নাই। জানি এদের হাত থেকে বাঁচা মোটেও কোন সহজ কাজ না। তাই ছেঁড়া চুলে খোঁপা না বেঁধে বেনসন কেনার জন্য শ'টাকার নোট বের করে দিয়ে আড্ডায় বসার বৈধতা নেই। নিজে সিগারেট খেলেও কোনদিন একটার বেশি সিগারেট কিনিনি। সবার কাছ থেকে একটান দুইটান করে পার করে দিতাম। চোরের দশদিন গেরস্থের একদিন, খাইলাম ধরা। জীবনে প্রথম এতো টাকা সিগারেট কেনার জন্য দিয়ে বুকের ভিতরে কেমন চিন চিন ব্যাথা লাগলো।
ফাইন দেয়ার পর থেকে মাথার মধ্যে সিগারেট নিয়ে নানান চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। কখন কিভাবে কবে সিগারেট খাওয়া শুরু করলাম, সিগারেট খেলে তার উপকারীতা কি, অপকারীতা কি, আমিই বা সিগারেট খেয়ে কতটুকু উপকৃত হচ্ছি কিংবা কতটুকু ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি এসব আরকি। সেই ধুরপাক খাওয়া চিন্তা থেকে এই হাবিজাবি লেখা। কেউ সিগারেট সম্পর্কীয় আজগুবি এই লেখা পড়ে সময় নষ্ট করলে দায়ী থাকবো না।
আমি সিগারেটের নিতম্বে প্রথম চুমু দেই সম্ভবত সাত বছর বয়সে। ছিয়ানব্বইয়ে আওয়ামীলীগ সরকার যখন ক্ষমতায় আসে তখন। সে বাল্যকালের কথা। ও চুমুতে মুখে বিপুল পরিমান ধোঁয়া পেলেও ওটাকে যে সিগারেট খাওয়া বলে না তা তখন বুঝতে পারিনি। প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় পরে বুঝি আসলে সিগারেট খাওয়া মানে ধোঁয়া ধোঁয়া খেলা না!
এখন পর্যন্ত সিগারেট খাওয়ার উপর যতজন সেচ্ছায় টিপস দিয়েছে তার মধ্যে বন্ধু সিফাত থেকে পাওয়া শিক্ষা উল্লেখযোগ্য। আর বাকীদের টিপস গোঁজামিল গোঁজামিল লেগেছে। কেউ বলছে এমনে টেনে এমনে ধোঁয়া ছাড়বি, কেউ বলেছে এমনে না এমনে টেনে ওমনে ছাড়বি, ইত্যাদি ইত্যাদি টিপস। কে জানে হয়তো তারাই এখনও জানে না হাউ টু স্মোক! আসলেই পৃথিবীতে সঠিক শিক্ষার জন্য সঠিক লোক খুঁজে পাওয়া বড়ই দুষ্কর।
শুনেছি অনেকে অনেক কারনে সিগারেট খাওয়া ধরে। কেউ কৌতূহলের বশে একটান দুইটান দিয়ে নেশায় পড়ে যায় আর ছাড়তে পারে না, কেউ প্রেমে ছ্যাঁকা খেয়ে, কেউ হতাশায় পড়ে, কেউ বদমাইশ পোলাপাইনের খপ্পরে পড়ে, কেউবা স্মার্ট থেকে স্মার্টতর হতে গিয়ে এবং আরো আরো অনেক কারনে। বলে রাখি এসবের কোন কারনই আমার বেলায় প্রযোজ্য না। যদি বলেন ক্যান খাইতেছি? সোজা উত্তর এমনি। আবার এও হতে পারে, জাতির জনকে পাইপ সিগারেট খাইছে, চে'ও সিগারেট খাইছে, বন্ধুবান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশী অনেকেই খায় তাই আমিও খাই।
এইতো মাস চারেক আগেও ঠিকমত সিগারেট ধরাতে পারতাম না। সে বড় দুঃখের আর লজ্জার কথা! একদিন বেনসন লাইট ধরাতে গিয়ে ম্যাচের কাঠি একটা দুইটা তিনটা পুড়িয়ে ফেলি কিন্তু সিগারেট আর ধরাতে পারি না। বান্দর বন্ধুরা আমার একের পর এক ম্যাচের কাঠি জ্বালানোর দৃশ্য দেখে ফেলে, দেখে একসাথে হো হো করে হেসে উঠে। কেউ একজন বলে তোকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। আমি ওদের আশ্বস্ত করে বলি হবে হবে আমাকে দিয়েই হবে। ওরা আবার একযোগে বলে না হবে না। এরপর আমারও তাই মনে হয় আমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না! তারপরও প্রবল মানসিক শক্তির অধিকারী হওয়ায় এসব তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য উপেক্ষা করে, উঁচু নিচু পথ পেরিয়ে এখন মোটামুটি সিগারেট খাওয়া শিখে গেছি।
অনেকে বলেন সিগারেট খেলে নাকি মাথা খুলে, আমার খুলেনি। প্রেমিকার ফোন বন্ধ থাকাকালীন সিগারেট টেনশন ফ্রী করে, এটা অভিজ্ঞতার বাইরে। অনেক চাপে থাকলে মাথা ফ্রেশ করে, আমার ঘুম ধরে। অনেক বন্ধু সিগারেট খেয়ে দিব্যি সারারাত প্রোগ্রামিং করে, পারিনি কোন কালে। অনেকে সিগারেটের ধূমপান করে পরীক্ষার আগের রাতে ধুমছে পড়াশুনা করে, আমার স্পষ্ট মনে পড়ে ডিস্ক্রিট ম্যাথ পরীক্ষার আগের রাতে সিগারেটে দুইটা টান দিয়ে সারারাত মাথাব্যাথায় পড়তে পারিনি! অনেকে আবার বলে থাকেন ন্যাচারাল কাজের ভেলোসিটি বাড়াতে সিগারেটের একধরনের জাদুকরী পাওয়ার আছে, এমন কিছু মনে করতে পারি না আজ পর্যন্ত। অনেক স্ত্রীলোকের ধারনা পুরুষলোক সিগারেট না খেলে নাকি ম্যানলি লাগে না। সো সিগারেট পুরুষকে ম্যানলি করে তোলে, মাবুদ জানে কেমনে করে। সিগারেটের এতো এতো চমকপ্রদ উপকারের দেখা এখনও পাইনি, তার মানে মোটামুটি মানের সিগারেট খাওয়া শিখে কোনো প্রোফিটই পাচ্ছি না। তাই আমার মনে হয় সন্দেহাতীতভাবে আমাকে আরও অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে। আমারও ইচ্ছে আছে এসব সুবিধা হাত ছাড়া না করার। আর তাই চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। নিজেকে একজন পরিপক্ক ধোঁয়াপানকারী হিশেবে গড়ে তুলতে সময় পেলেই টান দেই সিগারেটে।
আবার মাঝে মাঝে ভীষণ চিন্তায় পড়ে যাই সিগারেটের ভয়াবহ কয়েকটি নেগেটিভ সাইডের কথা মনে করে। যেমন সিগারেট টানলে ঠোঁট কালো হয়ে যায়, কেমন পোড়া পোড়া হয়ে যায়। আমার আবার ছোটবেলা থেকেই ঠোঁট গোলাপী রঙের! কেউ কি চায় সিগারেট খেয়ে গোলাপী রঙের ঠোঁটটা বেগুন পোড়া করতে? ওদিকে ঠোঁট কালো হলে মুখের শ্রী অনেকটাই নষ্ট হয়ে যায়। আমাকে আবার ছোটবেলা থেকেই টম ক্রুজের মত লাগে! দাঁতের মাড়িও নাকি কালো হয়, হাতের আঙুল কালো হয়, মুখ গন্ধ করে ইত্যাদি। ভেবে দেখলাম এসব কারন শুধু আমাকে না যে কাউকে প্রেমিকার নিবিড় চুম্বন থেকে বঞ্চিত করতে পারে। মাঝে মাঝেই সিগারেট খাওয়াকে এক ধরনের শিল্প মনে হয়, মনে হয় এই শিল্পের চর্চা করতে গিয়ে দু-একটা চুম্বনই যদি বিসর্জন দিতে না পারি তবে কেমন হয় না ব্যাপারটা!
[ লেখাটা একেবারেই ফান করে লেখা। এই লেখার মাধ্যমে কাউকে ধূমপানে উৎসাহিত করা হচ্ছে না। আমি বলবো ভাই আপনারা চুমুই খান তবু সিগারেট খাইয়েন না()! চুমু স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী না হলেও অন্তত ক্ষতিকর না! সিগারেটের ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য যে কতটা ক্ষতিকর তা বলে শেষ করা যাবে না। বলা হয়ে থাকে ধূমপান বিষপান! এই সুন্দর পৃথিবী থেকে কেউই একদিন আগে বিদায় নিতে চায় না। আপনিও চান না নিশ্চয়, যদি নাইই চান তবে আজকেই ছাড়ুন ধূমপান! উল্লেখ্য আমি এখনো সিগারেট ভালো করে ধরতেও পারি না। যেহেতু ধরতেই পারি না তাই ভেবেছি আর ধরবোও না। তবে যদি কেউ এমন নিশ্চয়তা দেয় যে তুমি প্রতিদিন দশটা করে টানা এক মাস সিগারেট টানলে গোআযম-নিজামী-সাঈদীদের ফাঁসিতে ঝুলানো হবে একত্রিশ দিনের মাথায়। তবে আমি দশটা না পাঁচ দশে পঞ্চাশটা খাবো দৈনিক তারপরও কুলাঙ্গার গুলার ফাঁসি দেখতে চাই অচীরে। শুভ রাত্রি ]