somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নৃত্যসঙ্গিনী

১৮ ই জুন, ২০২০ রাত ২:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



নৃত্যসঙ্গিনী
--------------- রমিত আজাদ

আমার তখন বয়স কুড়ি, ছাত্র ছিলাম ভীনদেশে;
লেখাপড়া করার আশায় উড়াল দিলাম বৈদেশে।
নতুন দেশে গিয়ে কত নতুন বিষয় দেখি,
তরুণ চোখে সতেজ স্রোতে নবীন ধারা মাখি।

তুহীন শীতে তুষার মাখা বৃক্ষগুলো কাঁদে,
শীতের দেশে গ্রীস্মঋতু নতুন সাজে মাতে।
পত্রবিহীন গাছের শাখায় সবুজ পাতা আসে,
নবীন সাজে পাতায় পাতায় মিষ্টি সবুজ হাসে।

শীতল নীরব মানুষগুলোও সতেজ হয়ে ওঠে,
গ্রীস্ম রাঙা রবির আলোয় নতুন প্রভা ফোটে।
পিঁয়াজ খোসার মতন পড়া ড্রেসের উপর ড্রেস,
নিজের চেয়ে পোষাক ভারী, এমনতরো দেশ!
অবশেষে গরম এলে হালকা পোষাক গায়ে,
ফুরফুরা মন হল্লা যাচে, সবুজ বনের ছায়ে।

কেউ ছুটে যায় নদীর পারে, কেউ ছুটে যায় বনে,
কেউ বা হ্রদের তীরে শুয়ে, উলের কাটা বোনে।
তরুণ নয়ন দৃষ্টি হানে নও বালিকার চোখে,
বহ্নিশিখা ঝলকে ওঠে বিজলী রোমান্স সুখে!

এমন দিনে কেউবা আবার টেবিল সাজায় ভোজের,
খানাপিনার আসর হবে, নৃত্য হবে সাঁঝের।
অতিথিরা আসে সবাই ক্যাফে বারের হলে,
রঙ বেরঙের সাজে সবাই নামে খুশির ঢলে।

এমন একটি ভোজের সভায় পেয়েছিলাম নিমন্ত্রণ,
তখন আমার বয়স কুড়ি, নও জীবনের আমন্ত্রণ।
টেবিল ঘিরে বসে গেলাম, থালায় থালায় অন্ন অশন,
কোনটা রেখে কোনটা খাবো, কোনটা হবে নব্য প্রাশন?

কেউবা আবার খানার চেয়ে পিনায় বেশি উৎসাহী,
শরাব পিয়ে গুলিস্তানে মনের ডেরায় বাদশাহী!
নেশার চোখে যারেই দেখে তারেই ভাবে নূরজাহান,
সাকির পিয়াস জেগে ওঠে, নেশার ঘোরে শাজাহান!

পেটের পূজো মিটলে কিছু, উঠলো বেজে বাজনা,
এবার হবে নাচের আসর, তাল বেতালের সাজনা।
ধম ধমাধম ড্রামের বিটে দ্রুত লয়ের নৃত্য-নাচ,
নাচ জানো আর নাইবা জানো লাফিয়ে চলাই কাজ!

একটা দুটো ধমধমা গান, তারপরে হয় ধীরের লয়,
জোড়ায় জোড়ায় নাচবে এবার, আলতো হাতে জড়িয়ে তায়!
কেউ এসেছে জোড়া বেঁধে, কেউ এসেছে একজনা,
জোড় বাঁধারা চলছে নেচে, একলা খোজে অঙ্গনা।

পড়লে চোখে অঙ্গনা এক, হাত বাড়িয়ে দেয় তরুণ,
অপেক্ষাতেই থাকে তারা, ললনাদের এই ধরন।
হাত বাড়ালেই ধরে সে হাত, আলিঙ্গনে রয় আধো,
জড়িয়ে কটি আলতো হাতে নাচের তালে রয় বাঁধো।

এমন করে সেই আসরে চলছিলো নাচ খানাপিনা,
হঠাৎ করেই সবার চোখে পড়লো যে এক রূপ ললনা।
অষ্টাদশী হবে সে যে, সদ্য ফোটা কস্তুরী ফুল,
পূর্ণ শশীর রূপের ছটায়, ছাপিয়ে ওঠে নদীর দুকূল!

শ্লথ লয়ের গান বাজলেই ছুটছে সবাই শশীর কাছে,
হাত বাড়িয়ে আমন্ত্রণে ডাকছে তাকে জোড় নাচে।
মিষ্টি হেসে অষ্টাদশী সব লোকেরেই দেয় ফিরিয়ে,
ব্যর্থ হয়ে ফিরছে সবাই, এই আসরে মন হারিয়ে!

কি হলে ঐ রূপ ললনার, কেন সে আজ একরোখা?
সবার পুরুষের এক জিগীষা, ঐ ললনার মন রাখা!
আড় চোখে কেউ দেখছে তাকে মন তিয়াসা চায় তারে,
আলিঙ্গনের সুখ পেতে চায়, জড়িয়ে কোমর নাচ ঘরে।

আমার তখন বয়স কুড়ি, ছাত্র আমি ভীনদেশে;
ঐ ললনার রূপের শায়ক আমার মনেও বিঁধলো এসে!
শেতাঙ্গিনী অষ্টাদশী চাই তোমাকে আলিঙ্গনে,
এটাই হবে আমার চ্যালেঞ্জ জেদ চেপে যায় এই মনে!

রঙিন আলোর নাচের ঘরে বাজনা বাজে দৃশ্যপটে,
ধীর গতিতে গেলাম আমি অষ্টাদশীর সন্নিকটে।
হাত বাড়িয়ে আমন্ত্রণে ডাকটি দিলাম জোড় নাচে,
মুখের ভাবে আস্থা আছে, কাঁপছে তবু বুকটা যে!

পূর্ণ শশী অষ্টাদশী চাইলো আমার নয়ন পাতে,
মিষ্টি হেসে হাত বাড়ালাম, চোখ রেখে চোখ দৃষ্টিপাতে!
রূপসীও হাত বাড়ালো, রাখলো সে হাত আমার হাতে,
তার আঁখিও উঠলো নেচে, চিরল দাতে মধুর হেসে!

ঘর ভরা সব ব্যর্থ পুরুষ চাইলো এবার আমার পানে,
আমার কি আর সময় আছে, ঐ ইর্ষার জবাব দিতে?
আলিঙ্গনের সুখে তখন বিভোর আমি জলসা ঘরে,
নৃত্যসুধা পান করে যাই, শেতাঙ্গিনীর কোমর ধরে।

আমার তখন বয়স কুড়ি, তরুণ আমি ভীনদেশে;
সমর্পিত অষ্টাদশীর রূপ ভেসেছে আমায় ঘেসে।
পেলব তাহার কায়ার মায়ায় মনটা আমার ছন্নছাড়া।
যুদ্ধে জয়ী যোদ্ধা আমি, আনন্দে হই আত্মহারা!
-------------------------------------------------------------------------

রচনাতারিখ: ১৮ই জুন, ২০২০ সাল
রচনা সময়: রাত ০২টা ৩৫ মিনিট

Dance Partner
---------------------- Ramit Azad

(পেইন্টিং আকাশজাল থেকে নেয়া)






সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুন, ২০২০ রাত ২:৫৪
১৭৩ বার পঠিত
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গল্পেও যেনো থাকে সামাজিক দ্বায়-বদ্ধতা.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২২ শে জানুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ১:১৮

বহু বছর আগে লিও তলস্তয়ের একটি প্রতীকী ছোটগল্প পড়েছিলাম। সারমর্মের জন্য যে গল্প চিরস্মরণীয় হয়ে থাকার যোগ্য। নিজের ভাষায় গল্পটি তুলে ধরার চেষ্টা।
গল্পটি এ'রকমঃ-

এক বাড়িতে মনিব তাঁর গৃহ ভৃত্য সহ... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাফ-লেডিস বলছি.......

লিখেছেন জটিল ভাই, ২২ শে জানুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ১:৫৮


(ছবি নেট হতে)

আজ ব্লগ না থাকলে কবেই আত্মহত্যা করতে হতো। জ্বী আমার কথাই বলছি। আমার মতো উপযোগহীণ গর্দভ টক্সিক ব্যক্তি বেঁচে আছি শুধু ব্লগের জন্যে। কিভাবে? তবে বলছি শুনুন।

ছোটবেলা হতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ভুলে যাচ্ছি কত কিছু=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে জানুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৫:৪২



ভুলে যাচ্ছি মমতার ঋণ, বাবার আদর
ক্রন্দনরত দিন, বৃষ্টির ঝুম আওয়াজ
ভুলে যাচ্ছি কত কিছু দিন দিন
বিছানো ছিল কোথায় যেন স্নেহের চাদর।

ভুলে যাচ্ছি দেহের শক্তি, সরল মন
কঠিনের মাঝে ডুবে ধীরে
ভুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। জাপানের সমুদ্রের গর্ভে লক্ষ কোটির বিরল গুপ্তধন!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২২ শে জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ৮:০৫





জাপানের সমুদ্রে হদিস মিলল গুপ্তধনের। জাপানের বিজ্ঞানীরা এমন কিছু মূল্যবান খনিজের ভান্ডার আবিষ্কার করেছেন যা জাপানের অর্থনীতির মোড় ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। বিভিন্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রেমিট্যান্স যোদ্ধা!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২২ শে জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ১০:৫৬


সদ্যই আমেরিকার নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সপরিবারে হোয়াইট হাউসে উঠেছেন। নির্বাচনে যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন তাদেরসহ অন্যান্য সবাইকে এক প্রীতিভোজের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। নিরাপত্তা রক্ষীরা যাচাই-বাছাই করে সেসব অতিথিদের ভেতরে ঢুকতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×