গতকাল বিকেল ৩ টার ঘটনা, একটা মাদ্রাসার বাচ্চার এক্সিডেন্টের ঘটনা
আমি আর আমার বন্ধু রাকিব মিরপুর কালশি রোডে হাঁটছিলাম। এমন সময় দেখলাম পিকআপ থেকে লাফ দিয়ে ৮-৯ বছরের একটা বাচ্চা লাফ দিয়ে নিচে পড়ে গেল। আমি ছুটে আসতে আসতে রাস্তার ওপাশ থেকে বাইক থামিয়ে একটা ছেলে রাস্তা থেকে ওই বাচ্চাটাকে উঠিয়ে একটা সিএনজিতে উঠিয়ে দেয়।
ঠিক ৪.৩০ এর সময় দেখি রাস্তায় অনেক মানুষের ভিড়। আমি আর আমার বন্ধু রাকিব এগিয়ে গিয়ে দেখি এক্সিডেন্টের করা সেই বাচ্চাটিকে রাস্তার নিচে ঘাসের উপর শুইয়ে একটা মহিলা পাখা দিয়ে বাতাস করছে। এটা দেখে আমাদের মাথায় বাজ পড়ে গেল। আমি ওই বাচ্চার পালস চেক করে দেখলাম সে এখনও জীবিত আছে। আমি বললাম একে হাসপাতালে নিয়ে যাব।
এই কথা শুনে কেউ কেউ বলে উঠলঃ
পুলিশের ঝামেলা হবে,
হাসপাতালের বিল দিবে কে?
একে নিয়ে যাওয়ার রিকশা ভাড়া দিবে কে?
আমি আর আমার বন্ধু রাকিব বললাম, দেড় ঘন্টা ধরে রাস্তায় শুইয়ে রাকছেন, যে কোন সময়ই তো মারা যেতে পারে, আর নাক একদম ফেটে গেছে, মাথা, চোয়াল দিয়ে রক্ত ঝরছে টাকা লাগলে সেটা আমরা দিব। কেউ একটা কথাও বলবেন না, পুলিশে খবর দিলে দেন তাও আমরা একে হাসপাতালে নিব।
আমি বাচ্চটাকে আমার দুহাতের উপর করে রাস্তায় আনলাম রাকিব এক হাতে তার মাথা ধরল। আমরা রিকশায় উঠলাম এবং তখনই পাশ থেকে একজন আমার হাতে বিশ টাকা ধরিয়ে দিয়ে বলল "ভাই রিকশা ভাড়া দিয়েন"। আমরা বাচ্চাটাকে নিয়ে গেলাম ঢাকা সিএমএইচ এ।
আর্মিদের নিয়মকানুন আমার ভালো করেই জানা। কেননা ৮ বছর ধরে এই সিএমএইচ এই চিকিৎসা করায়। আমি আমার আব্বুর পরিচয় দিলাম এবং ঘটনা বললাম। তারা আমাকে ড্রেসিং রুমে পাঠাল। বাচ্চাটা তখনও অজ্ঞান। ড্রেসিং করে আইসিইউ তে পাঠাল এবং টিটেনাস ও স্যালাইন লাগাল। তখন সময় ৭.৩০ মিনিট।
এদিকে আমার বাসা থেকে বার বার ফোন দিয়ে বাবা-মা বার বার বাসায় আসতে বলছেন। কিন্তু কিভাবে বাচ্চাটাকে ফেলে যাব? প্রথমে মাদ্রাসা থেকে ঠিকানা নিয়ে ১০.৩০ মিনিটে কালশি কবরস্থানের পাশে একটা বাসা থেকে বাচ্চার বাবাকে খুঁজে বের করল রাকিব। লোকটা গার্মেন্টসে চাকরি করে। সিএমএইচ এসে তার বাচ্চাকে করে তাকে আমরা একটা সিএনজি তে উঠিয়ে দেই রাত ১১.৪৫ মিনিটে।
সিএমএইচ এর বিল সরকারি খাতে লিখে দেয় কর্তৃপক্ষ। আমাকে ডাক্তাররা অনেক ধন্যবাদ জানায় কিন্তু এতটুকু ভালো লাগে নি। কিন্তু যখন ছেলের বাবা আমার হাত ধরে বললঃ
"বাবা অনেক বড় উপকার করছেন আপনারা, আমার ছেলেকে বাঁচাইছেন, আমি কোনদিন আপনাদের ঋণ পরিশোধ করতে পারব না (তার চোখের কোণায় এক ফোঁটা জল)"