সময়ের সবচাইতে আলোচিত বিষয় পুলিশের বিশেষ শাখার এসবি মাহফূজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমান তার নিজ বাসভবনে খুন হয়েছে । ইদানীং কালে এ রকম প্রায়ই হয়ে থাকে তাই এ খবরে আপাতত অবাক হওয়ার ততোটা কারন বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে নেই । কিন্তু যখনই জানতে পারলাম এ দম্পতির বড় মেয়ে ইংরেজী মিডিয়ামের ও লেভেলের ছাত্রী তার বাবা মাকে কিছু বখে যাওয়া বন্ধুদের প্ররোচনায় খুন করেছে তাতে অবাক না হয়ে পারলাম না । সন্তানের হাতে বাবা মা খুন হওয়া যে কেয়ামতের লক্ষন, তাহলে কেয়ামত কি আমাদের খুবই নিকটবর্তী । আমি আপনাদের বিবেকের কাছে কিছু প্রশ্ন মুলক লেখা উপস্থাপন করব । হয়ত আপনাদের ভাবনা আমার কাছে পৌঁছবে না তবুও মানুষের আদি সত্তায় তার বিবেক তাকে এ ব্যাপারে সত্য বলা থেকে আশা করি ধোঁকা দিবে না । ঐশী রহমানকে নিন্দিত বলব নাকি নন্দিত বলব সেটা নিয়ে খুবিই সংশয়ের মধ্যে আছি । অনেক চিন্তা ভাবনার পর মনে হল তাকে নন্দিত ও নিন্দিত দু’টো বলাই যায় । আশা এ ব্যাপারে আমি আপনাদেরকে নন্দিত এবং নিন্দিতের ব্যাপারটা প্রমান করে দেখাতে পারব । পাঠক আমার আজকের লেখার শিরোনামের প্রতি আপনারা অবশ্যই আগে লক্ষ্য করেছেন তবুও আপনাদেরকে আরেকবার স্মরণ করিয়ে দেই “নিন্দিত-নন্দিত ঐশী রহমান : দায়ভার পরিবেশ, রাষ্ট্র, নাকি পরিবারের” । ছোট বেলায় সঙ্গ বোঝার আগেই মুখস্ত করে ফেলেছিলাম ‘সৎ সংগে স্বর্গ বাস অসৎ সংগে সবর্নাশ’ একথা একেবারেই গোপন নয় আমাদের দেশের ইংরেজী মাধ্যমের স্কুল গুলো এবং বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে শিক্ষার নামে বেহায়পণার এক চরম প্রদর্শনী হয় । সেরকম এক উচ্চবিলাসী ইস্কুলের ও লেভের ছাত্রী হালের আলোচিত ঐশী । (বাবা মাকে খুন করার জন্য এখন থেকে ঐশীর সাথে তার বাবা মায়ের উপাধির রহমান শব্দটি ব্যবহার করব না ) মাত্র ১৭ বছর বা ১৯ বছর ৪ দিন বয়সী এক তরুনী মেয়ের দুই ডজনের মত উচ্ছৃঙ্খল ছেলে বন্ধু । যারা বন্ধুত্বের ছদ্দবেশে থাকা দেহলোভী হিংস্র প্রজাতীর মানব । অবশ্য এক্ষেত্রে শুধু ছেলেদের দোষ দিয়ে লাভ নেই । সমাজের এ স্তরের মেয়েরা তাদের দেহকে অন্যকে বিলিয়ে দেয়ার জন্য সবসময় আগ বাড়িয়ে থাকে । ( আমাকে ভূল যাতে না বুঝেন তার জন্য একটা বিষয় অবতারনা করে রাখি, সমাজের বহুলাংশের কথা উল্লেখ করছি , সুতারং যারা এ লেখাকে নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়ে আমার সাথে বিতর্ক করতে আসবেন তাদের ব্যাপারে আমার কোন কথা নেই) ।
আমার এক স্বনাম ধন্য শ্রদ্ধেয় শিক্ষক নারী অধিকার নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বলেছিলেন , আমাদের নারীরা আজ শ্লোগান দিচ্ছে “ আমার দেহ আমার সিদ্ধান্ত , যাকে ইচ্ছা তাকে দেব ” । কথাটা আংশিক সত্য তবে আমরা সমাজে বাস করি সুতরাং সমাজের নিয়মকানুন আমাদের মেনে নিতে হবে । নারীর দেহ নারীরাই বন্টন করবে তবে নারী যেহেতু মানুষ সেহেতু কোন জন্তু জানোয়ারের মত যত্রতত্র যে ভাবে-সেভাবে ভোগ করা তো মানুষের চরিত্র হতে পারে না । এক্ষেত্রে ঐশী পুরোপুরি ভাবে নিন্দিত । ঐশী তার স্বাধীনতাকে অপব্যবহার করেছে । আশির দশকে আমাদের দেশেটায় নেশার দ্রব্য আসতে শুরু করলেও নব্বইয়ের দশকে পানির মত আসতে শুরু করে ইয়াবা নামক মরন ওষুধ । আমদানি কারকরা এগুলো ছড়াতে থাকে অভিজাত শ্রেনীর মধ্যে । প্রশাসন এর গতি রোধ করতে চেয়েছে বার বার । তবে ঐ যে কথায় বলে না ঘরের ইদুর বান কাটলে সে ঘর কি আর টেকে ? তেমনি দশা প্রশাসনের । প্রশাসনের মধ্যকার কিছু অসাধু অফিসার মোটা অংকের টাকার বিনময়ে ইয়াবাকে আরও বিস্তৃত হওয়ার সুযোগ প্রদান করেছে । ইয়াবা সেবীরা স্লোগান দেয় এটা খেলে সারা জীবন স্লিম থাকা যায় , চিন্তা দূর হয় সবচেয়ে বড় কথা যৌন উত্তেজনা বৃদ্ধি করে । এই আকর্ষণীয় স্লোগান শুনে কথিত স্মার্ট প্রগতিশীল যুবক-যুবতী এর দিকে ঝুঁকবে এটা অস্বাভাবিক নয় । এর থেকে আমাদের সন্তান সন্ততিকে ফিরিয়ে রাখার জন্য তাদেরকে ধর্মীয় নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে । এ শিক্ষা না দেয়ার ফলশ্রুতিতে সন্তান তার জন্মদাতা বাবা মায়ের গলায় চাকু ধরে ইয়াবা সেবনের টাকা নিয়ে যায় । বড়লোকের বখে যাওয়া ছেলেরা রাস্তার অলিতে গলিতে দাঁড়িয়ে ছিনতাই রাহাজানি করতেও দ্বিধাবোধ করে না । সম্ভ্রম রক্ষার ক্ষেত্রে আপন মা বোনও এদের থেকে নিরাপদ নয় । সেই রকম একদল প্রতারকের খপ্পরে পড়েছিল একালের ঐশী । আমাদের সামাজিক পরিবেশ ঐশীদের এই পথ থেকে ফেরাতে পারেনি বরং আষ্টে-পৃষ্ঠে জড়িয়ে যেতে সাহায্য করেছে । আমাদের রাষ্ট্রও ঐশীদের তৈরি করতে কম সাহায্য করে না । আমি রাষ্ট্র বলতে গনতান্ত্রিক বাংলাদেশের সকল সরকারকে নির্দেশ করব । আপনারা অবশ্যই ভূলে যাননি আত্মসমর্পণ করার আগ মূহুর্ত পযর্ন্ত আমরা ঐশীর বয়স জানতাম মাত্র ১৭ বছর । অথচ সতের বৎসরের শুরুতে যৌবনে কেবল শুড়শুড়ি পাওয়া নাবালিকা ঐশীরা কোন আইনেরবলে অভিজাত ড্যান্সার ক্লাবে নাচার এবং নাচানোর সুযোগ পায় । যেখানে অশ্লীলতা আর বেলাল্লাপনার ছড়াছড়ি ছাড়া আর কিছুই হয় না । একটা মেয়েকে তার গভীর রাতে ফেরার কারনে আপন গর্ভধারিনী মা যদি বেশ্যা বলতে পারে তাহলে তার কতটুকু অবনতি হয়েছিল সেটা আর ভাবতে ? অথচ আমাদের রাষ্ট্র এখানে নিরব ভূমিকা পালন করেছে । তাহলে কি ঐশীদের তৈরিতে সরকারই বেশি ভূমিকা পালন করেছে । ঐশরি বাবা মাহফুজুর রহমান এবং মা স্বপ্না রহমান কোন সাধারণ মা বাবা ছিলেন না । তারা উভয়েই ছিলেন আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত প্রগতিশীল দম্পতি । তাহলে আধুনিক শিক্ষা কি নৈতিকতা শিক্ষা দিতে ব্যর্থ ? ঐশীর বাবা কর্মের সুবাদে প্রায়ই বাসার বাহিরে থাকতেন । ঐশীর সুইসাইডাল ১২ পৃষ্ঠার ডায়েরী পড়ে যেটা মনে হয়েছে বাবা-মা কারো সংঙ্গেই ঐশীর বন্ধুত্ব হয় নি । সময়্মত হাত খরচের চাইতে অনেক বেশি টাকা পেয়েছেন কিন্তু সন্তানের যে সহচার্য একান্ত দরকার সেটা বয়সন্ধির পর থেকে মোটেই পায়নি ঐশী । যার কারনে শান্তশিষ্ঠ ঐশী ইতিহাসের এক ঘৃন্যতম পৃষ্ঠায় স্থান করে নিয়েছে । সুতারং একথা অস্বীকার করার উপায় নেই ঐশী মোটেই স্বভাবিক স্বভাবের অন্য সাধারণ মেয়েদের মত নয় তবে ঐশীকে এরকম কে বানালো তার সঠিক কারন আমাদের অবশ্যই জানতে হবে । ( এ হত্যাকান্ডে আমি ঐশীর বন্ধু জনি এবং তার বন্ধু, যে হত্যাকান্ড ঘটাতে সরাসরি সহায়তা করেছে তাদের নাম বা বিষয় উল্লেখ সম্পূর্ন এড়িয়ে গিয়েছি । আমি শুধু ঐশী এবং তার মা-বাবা কে এ লেখার মূল চরিত্রে নিয়ে এসে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি ) । আমাকে যদি কেউ ঐশীর বখে যাওয়ার কারন জিজ্ঞাসা করে তবে আমি অকপটে এর দায়ভার পরিবেশ, রাষ্ট্র, এবং পরিবারকে দেব ।
এখন আসি বিতর্কিত বিষয়ে । ঐশী নিন্দিত তাতে কোন সন্দেহ নাই । তবে কেন আমি ঐশীকে নন্দিত বললাম এটা অনেকেই জিজ্ঞাসা করবেন ? ঐশীর বাবা মাহফুজুর রহমান সম্বন্ধে আপনারা অনেকেই জানেন । তবুও আপনাদের সদয় অবগতির জন্য আবার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি , মাহফুজুর রহমান সাহেব পুলিশের বিশেষ ব্রাঞ্চের একজন পরিদর্শক ছিল। খুবই মেধাবী মানুষ । রাষ্ট্রকে দেয়ার মত অনেক কিছুই ছিল । মাহফুজুর রহমান বেতন পেত অনুর্ধ ৩৫ হাজার টাকা । মধ্যবিত্ত একটা পরিবার চলার জন্য যে টাকাটা অবশ্যই যথেষ্ট । অথচ মাহফুজুর রহমানের দুই সন্তানের মধ্যে বড় সন্তান ঐশীকেই প্রতিমাসে হাতখরচ বাবদ দিতে হত লক্ষাধিক টাকা । তারপর তার পরিবারের খরচ । প্রিন্ট মিডিয়া ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া অনুসন্ধান করে তার অবৈধপথে আয়ের যে ফিরিস্তি বের করেছে তা ৮ লক্ষ টাকাকে ছাড়িয়ে গেছে । আর এ টাকার সম্পূর্ণটাই আসতে ঘুষের পথে । যে ইয়াবাসেবী মেয়ের হাতে মাহফুজুর রহমান ও স্বপ্না রহমান নিহত হল সেই ইয়াবা বাজারে ছাড়ার জন্যও হয়তোবা মাহফুজুর রহমান কোন একদিন ঘুষ নিয়েছিলেন । তাহলে এটা কি খাল কেটে কুমির আনার মত অবস্থা নয় ? মাহফুজুর রহমান যে টাকাটা অবৈধ রাস্তায় আয়করত সেটা অবশ্যই এদেশের মেহনতি মানুষের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে রোজগার করা টাকার একটা অংশ । এরকম একজন মানুষকে খুন করে ঐশী রাষ্ট্রকে অনেক বড় ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করেছে । এ দিকটা বিবেচনা করে আমি ঐশীকে নন্দিত বলেছি । ঐশী এই সমাজে এক ভয়ংকর দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে । যা থেকে শিক্ষা নিয়ে অন্তত আর কোন পুলিশ অফিসার অথবা অন্যকোন ব্যক্তি অবৈধ পথে কামানো টাকায় তার সন্তানদেরকে ইয়াবা সেবী বানাতে সাহায্য করবে না । গরীবের টাকায় আর কোন বিলাস-মহলও গড়ে উঠবে না । আমি ব্যক্তিগত ভাবে ঐশীর ব্যাপারে সন্দিহান । ঐশী কি কিশোর অপরাধী নাকি পূর্ন বয়সী অপরাধী হিসেবে শাস্তি পাবে তা নিয়ে এখন চলছে গভীর গবেষণা । ঐশীর জন্ম সনদে বয়স ১৭ বছর । যা কিশোর অপরাধের সীমায় পড়ে । কিন্তু তাতে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সন্তুষ্ট নন । তাদেরও যে সন্তান আছে । পরবর্তীতে তাদের সন্তানের হাতে তারা আর খুন হতে চান না । এ জন্য ঐশীকে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি পাওয়ানোর জন্য যে টুকু করা দরকার তা করতে তারা মরিয়া । ঐশীকে নেয়া হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজে , যেখানে ‘ডি এন এ’ টেষ্ট করার মাধ্যমে ঐশীর আসল বয়স নির্ণয় করা হবে । জাতি ভয় করছে এর মধ্যে কতটুকু স্বচ্ছতা থাকবে । ঐশীর ব্যাপারে যে সিদ্ধানতই হোক আমি আশা করি তার উপর অন্যায় যেন কিছু করা না হয় । তার অপরাধ এবং সবির্ক দিক বিবেচনায় তার শাস্তি হোক এটাই কামনা করি ।