শ্রীনিবাস রামানুজান এক বিস্ময়কর প্রতিভার নাম। একজন ভারতীয় গণিতবিদ, যাঁর জীবনকাল খুব অল্পসময়ের হলেও গণিতের জগতে যিনি রেখে গেছেন অসামান্য সুদূরপ্রসারী অবদান।
রামানুজান ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দের ২২ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন ভারতের সেকালের মাদ্রাজ প্রদেশের বর্তমান তামিলনাড়ুর তাঞ্জোর জেলায় এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে। পাঁচ বছর বয়সে তাঁকে এলাকার পাঠশালায় ভর্তি করা হয় এবং সাত বছর বয়সে তিনি ভর্তি হন টাউন হাইস্কুলে। রামানুজান সব সময় কম কথা বলতেন। তাঁকে দেখলে মনে হতো যেন ধ্যানগ্রস্ত। বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে গাণিতিক উপপাদ্য ও অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করতেন। তিনি ২- এর মান যেকোনোসংখ্যক দশমিক স্থান পর্যন্ত বলতে পারতেন। এমন আশ্চর্য প্রতিভা যে তিনি নিজেও তা উপলব্ধি করতে পারেননি।
তাঁর এক বন্ধু তাঁকে জিএস কর-এর লেখা Synopsis of elementary results in Pure and Applied Mathematics বইটি পড়তে দেন। এ ছাড়া তাঁর কাছে অন্য কোনো সহায়ক গ্রন্থ না থাকার ফলে এই বইয়ের সব সূত্রের পরীক্ষা করা ছিল তাঁর কাছে মৌলিক গবেষণার মতো।
তিনি ম্যাজিক স্কোয়ার গঠনের পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। তার ম্যাজিক স্কয়ার সম্পর্কে যদি না জানেন তবে বিস্তারিত জানতে গুগলে বাংলায় ম্যাজিক স্কয়ার লিখে সার্চ দিন।পেয়ে যাবেন বিস্তারিত। বৃত্তের বর্গসম্পর্কীয় তাঁর গবেষণা পৃথিবীর বিষুবরৈখিক পরিধির দৈর্ঘ্য নির্ণয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। জ্যামিতির সীমাবদ্ধতা দেখে তিনি শুরু করেন বীজগণিত বিষয়ে গবেষণা। রামানুজানের চিঠিতে সাড়া দিয়ে কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজের ফেলো জি এইচ হার্ডি তাকে ডেকে পাঠালে তিনি ইংল্যান্ডে যান এবং তাঁর সঙ্গে গবেষণার সুযোগ পান।
কিন্তু বিধি বাম!!ইংল্যান্ডের আবাহাওয়া ও খাবারের সাথে তিনি সহজে মানিয়ে নিতে পারছিলেন না।
তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলছিল। রামানুজান অসুস্থ হয়ে পড়েন।
রামানুজান তখন অসুস্থ, একদিন Geoffrey Hardy তার সাথে দেখা করতে হাসপাতালে এলেন। তিনি জানতেন,
রামানুজান সংখ্যা খেলতে ভালবাসতেন। কথা প্রসঙ্গে তিনি বলে উঠলেন," আমি যে ট্যাক্সিতে এসেছি তার নাম্বার ১৭২৯, কি সাধারন একটা সংখ্যা !!!"রামানুজান সাথে সাথে প্রতিবাদ করে উঠলেন, "কে বলেছে, এটা সাধারন সংখ্যা?? এটা হচ্ছে, সেই ক্ষুদ্রতম সংখ্যা, যাকে দুটি ভিন্ন উপায়ে দুটি সংখ্যার কিউবের সমষ্টি আকারে লেখা যায়।" .
১৭২৯ কে আমরা ১২ কিউব + ১ কিউব উপায়ে লিখতে পারি, আবার ১০ কিউব + ৯ কিউব উপায়েও লিখতে পারি। তাই
১৭২৯ কে প্রথম ধনাত্মক সংখ্যা বলা হয়, যাকে দুটি ভিন্ন উপায়ে দুটি সংখ্যার কিউবের সমষ্টি আকারে লেখা যায়।
১৭২৯ কে ramanujan's number বলা হয়।
১৯০৯ সালে রামানুজান বিয়ে করেন। কোনো স্থায়ী কর্মসংস্থান না থাকাতে তিনি স্বভাববিরুদ্ধ নানা কাজের সন্ধান করতেন। তাই তাঁর নিরবচ্ছিন্নভাবে গবেষণা করারও সৌভাগ্য হয়নি। ইংল্যান্ড গমনের পর তিনি স্বস্তিতে কাজ করেন জীবনের বাকি দিনগুলো।
১৯১৭ সালের বসন্তকালে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে ভর্তি করা হয় কেমব্রিজের একটি নার্সিং হোমে। কিন্তু এর পর তিনি আর কখনো সুস্থ হয়ে ওঠেননি। ১৯১৯ সালে তিনি ভারতবর্ষে ফিরে আসেন। ১৯২০ সালের ২৬ এপ্রিল মাত্র ৩২ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:২৫